Study buddhism aryadeva 400

আর্যদেব

আর্যদেব শ্রীলঙ্কায় একটি রাজপরিবারে জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন। তিনি খ্রিষ্টীয় ২য় শতকের মধ্য থেকে ৩য় শতকের মধ্য পর্যন্ত বসবাস করিয়াছিলেন। কয়েকটি বৃত্তান্ত অনুযায়ী তাহার জন্ম একটা পদ্মফুল থেকে হইয়াছিল। অল্প বয়সেই তিনি একজন ভিক্ষু হইয়া গিয়েছিলেন। রাজা উদয়িভদ্রের সাতবাহন রাজ্যে নাগার্জুনের সান্নিধ্যে অধ্যয়ন করার জন্য দক্ষিণ ভারতে প্রস্থান করার পূর্বে তিনি সেখানে সম্পূর্ণভাবে বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ, ত্রিপিটক, অধ্যয়ন করিয়াছিলেন। সুহৃল্লেখ এবং রত্নাবলী নামক গ্রন্থের প্রাপ্তকর্তা ছিলেন রাজা উদয়িভদ্র। আর্যদেব নাগার্জুনের সংসর্গে থাকিয়া শ্রীপর্বতে অবিরতভাবে অধ্যয়ন করিয়াছিলেন। ঐ শ্রীপর্বতই হল সেই উপেক্ষিত পবিত্র পর্বত যেটা বর্তমান সময়ে সাতবাহন রাজ্যের অন্ধ্রপ্রদেশে অবস্থিত নাগার্জুনকোন্ডা নামক উপত্যকা।

ঐ সময় মাতৃচেত নামে শিবের একজন ভক্ত, নালন্দায় শাস্ত্রার্থে সবাইকে পরাজিত করিতেছিলেন। আর্যদেব ঐ প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হওয়ার জন্য সেখানে গিয়েছিলেন। প্রস্থানকালে একজন বৃদ্ধ স্ত্রীর সঙ্গে তাহার সাক্ষাৎ হয়। ঐ স্ত্রীটি বিশেষ বল অর্জনের জন্য চেষ্টারত ছিলেন যার জন্য একজন জ্ঞানী ভিক্ষুর চক্ষুর প্রয়োজন ছিল। করুণাবশে আর্যদেব তাহার একটি চক্ষু ঐ স্ত্রীটিকে দান করিয়াছিলেন। কিন্তু ঐ চক্ষুটা নেওয়ার পর ঐ স্ত্রীটি সেটাকে একটা পাথরের টুকরো দিয়ে চুর্ণ-বিচুর্ণ করিয়া ফেলিয়াছিলেন। তারপর থেকে আর্যদেব কানা (একচোখো) নামে বিখ্যাত হইয়া পড়িলেন। আর্যদেব শাস্ত্রার্থ এবং বিশিষ্ট বলে মাতৃচেতকে পরাজিত করিয়াছিলেন, এবং তারপর মাতৃচেত আর্যদেবের শিষ্য হইলেন।

আর্যদেব বহু বৎসর নালন্দায় অবস্থান করিয়াছিলেন। কিন্তু জীবনের পরবর্তীকালে তিনি নাগার্জুনের নিকট ফিরে এসেছিলেন, যিনি তাহার মৃত্যু পূর্বে তাহার সমস্ত উপদেশ আর্যদেবের কাছে গচ্ছিত রাখিয়া গিয়েছিলেন। আর্যদেব দক্ষিণ ভারতের এলাকায় অনেক বিহার নির্মাণ করিয়াছিলেন, ব্যাপকভাবে ধর্মোপদেশ দিয়াছিলেন, ‘বোধিসত্ত্বযোগাচার-চতুঃশতকশাস্ত্র-কারিকা’ নামক গ্রন্থ রচনা করিয়া মহাযান পরম্পরা, বিশেষ করে মাধ্যমিক সিদ্ধান্ত স্থাপনা করিয়াছিলেন। ঐগ্রন্থটি সংক্ষেপে ‘চতুঃশতক’ নামে পরিচিত। নাগার্জুনের মতো আর্যদেবও গুহ্যসমাজ তন্ত্র-এর উপর টীকা লিখিয়াছিলেন।


Top