সোশ্যাল নেটওয়ার্ক এবং টেক্সট ম্যাসেজিং-এর প্রতি আসক্তি

পুনঃমূল্যায়ন

আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অভিজ্ঞতায় আমাদের মনোভাব-প্রশিক্ষণ অথবা চিত্ত-প্রশিক্ষণ সম্পর্কে আলোচনা করেছি। আমরা স্বয়ং জীবনযাপন করি এবং প্রতিটি মুহূর্ত নিজেরাই অনুভব করি অথবা যা কিছু করি সেগুলিকে ফেসবুক অথবা টুইটারে যতই সম্প্রচার করি না কেন, সেগুলির অনুভব আমরা একাই করি।

আজকাল এরকম দেখতে পাওয়া যায় যে অনেক লোকজনদের মধ্যে তাদের অনুভূতি এবং ক্রিয়াকলাপগুলিকে ফেসবুক এবং টুইটারে টেক্সট ম্যাসেজ (পাঠ্যবার্তা) এবং পোষ্ট করার প্রতি আসক্তি থাকে। অন্যের দৈনন্দিন জীবন এবং আমাদের দৈনন্দিন জীবনের পরিপ্রেক্ষিতে এই জিনিসগুলি পড়ার মধ্যে পার্থক্য কী আছে? এটা স্পষ্ট যে আমাদের নিজেদের জীবনের অনুভব এবং অন্যরা জীবনে যা কিছু অনুভব করে তার মধ্যে কিছু দূরত্ব থাকে, বিশেষ করে যখন সেটাকে অল্প শব্দে ব্যক্ত করা হয়। 

অন্যদের জীবনে যা কিছু ঘটতে থাকে যদিও আমরা তার প্রতি সহানুভূতিশীল হতে পারি, তা হলেও আমরা যে সুখ, দুঃখ অথবা সমতার অনুভূতি উপভোগ করি সেটা তাদের অনুভূতির সমান হয় না। সবচেয়ে মৌলিক স্তরে আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আমরা এই পরিস্থিতিরই মোকাবিলা করি; কখনো-কখনো আমরা সুখী হই আবার কখনো হই দুঃখী। আবার কখনো-কখনো মনে হয় আমাদের মধ্যে কোন অনুভূতিই জাগে না। আমরা সুখী থাকতে চাওয়া সত্ত্বেও আমাদের মেজাজের সর্বদা উত্থান এবং পতন হতে থাকে আর আমরা যা করতে থাকি সেটা সবসময় আমাদের মনোভাবের অনুরূপ হয় না ব’লে মনে হয়। প্রায়শই মনে হয় যে আমাদের মেজাজের উপর খুব বেশি নিয়ন্ত্রণ নেই। মনোভাব প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আমরা চাই যে আমাদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে যে সমস্ত পরিস্থিতি উৎপন্ন হয় এবং ঘটনা ঘটে আমরা যেন সর্বোত্তম ভাবে সেগুলির মোকাবিলা করতে পারি।

আমরা জীবনের পরিস্থিতিকে কীভাবে মোকাবিলা করতে পারি সেই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা দুটি প্রধান বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি; আমরা যা অনুভব করি তার গুরুত্বকে অতিরঞ্জিত করে দেখি। উদাহরণ স্বরূপ, আমরা আমাদের দুঃখের অনুভূতিকে বড় ক’রে তুলি যার ফলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে যায়। অন্যদিকে আমরা যখন আনন্দিত হই আমরা অনিরাপদ বোধ করি, যার ফলে আমাদের আনন্দ নষ্ট হয়ে যায়। একইভাবে আমরা যখন নিরপেক্ষ বোধ করি তখনও আমরা হতভম্ভ হয়ে পড়ি, কারণ আমরা মনে করি যে আমাদের সর্বদা বিনোদনে মেতে থাকা প্রয়োজন। আমরা শান্ত এবং স্বাচ্ছন্দ্য বোধে সন্তুষ্ট হই না, বরং আমরা চাই যে সবসময় কিছু না কিছু একটা হতে থাকুক, তাতে সেটা টেলিভিশন হোক, সংগীত হোক বা অন্যকিছু। এই ধরণের উদ্দীপনা সর্বক্ষণ প্রয়োজন বোধ করি, কারণ এটা আমাদের জীবনে একধরণের অনুভূতি প্রদান করে।

আমার একজন মাসি আছেন। যিনি সবসময় টেলিভিশন চালিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। আসলে টেলিভিশনটি দিনে-রাতে পুরো চব্বিশ ঘন্টা চলতে থাকে। তিনি বলেন যে তিনি এটা পছন্দ করেন কারণ যদি রাত্রে কখনো তাঁর ঘুম ভেঙে যায় তখনও টেলিভিশন চলতে থাকা পছন্দ করেন। তিনি নিস্তব্ধতাকে ভীষণ ভয় পান। বিষয়টা একটু অদ্ভূত মনে হয় কিন্তু আমি এটাকে একটু দুঃখজনক মনে করি।

আমি যা অনুভব করেছি তাতে বিশেষ বলতে কিছু নেই

জীবনের উত্থান-পতন সম্পর্কে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি উন্নত করার জন্য সর্বপ্রথম আমাদের যেটা বুঝতে হবে সেটা হল এটা বিশেষ কিছু নয়। এখানে বিশেষ বা নির্দিষ্ট বলতে কিছু নেই, যার কারণে আমরা কখনো-কখনো আনন্দিত হই, কখনো-কখনো আনন্দিত হই না আবার কখনো-কখনো আমরা শান্ত এবং সংযত হই। এটা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। এটা সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো কখনো-কখনো ঢেউ উঁচু হয়, কখনো আপনি উঁচু ঢেউয়ের মধ্যে থাকেন আবার কখনো-কখনো সমুদ্র সম্পূর্ণ শান্ত থাকে। এটা তো সমুদ্রের স্বভাব, তাই নয় কি? এটা কোন বড় কথা নয়। কখনো-কখনো বিশাল এবং অশান্ত ঢেউয়ের কারণে প্রচন্ড ঝড় হয়, তবে আপনি যদি সমুদ্রের গভীরতা থেকে ভূ-পৃষ্ঠ পর্যন্ত চিন্তা-ভাবনা করেন আপনি বুঝতে পারবেন সমুদ্রের গভীরতায় কিন্তু সত্যিই কোন অশান্ত ভাব থাকে না, থাকে কি? এটা তো ভূ-পৃষ্ঠে বিদ্যমান আবহাওয়ার মতো অনেক কারণ এবং পরিস্থিতির ফলস্বরূপ এরকম ঘটতে দেখা যায়। সেখানে আশ্চর্য হওয়ার তো কিছু নেই।

আমাদের মন এই সাগরের মতো। এটাকে এইভাবে চিন্তা-ভাবনা করলে আমাদের লাভ হয় যে ভূ-পৃষ্ঠের উপর সুখ, দুঃখ এরকম-ওরকম আবেগের ঢেউ দেখা যেতে পারে, কিন্তু গভীরতায় আমরা সত্যিই এর কারণে অশান্ত হই না। এর অর্থ এই নয় যে আমাদের শান্ত এবং সুখী মনের অবস্থায় থাকার জন্য চেষ্টা করা উচিত নয়, কারণ এই ধরণের মনোবৃত্তি ঝোড়ো মনোবৃত্তির চেয়ে অনেক ভালো। তবে যখন চরম আবেগ এবং অনুভূতির ঝড়ের উত্থান হয় আমরা তখন সেটাকে অত্যন্ত ভয়াবহ সামুদ্রিক ঝড়ে রূপান্তরিত হতে দিই না। আমরা তার বাস্তবিকতাকে বিবেচনা ক’রে তার সাথে মোকাবিলা করি।

অনেকে বৌদ্ধ সাধনার অনুশীলন করে এবং কয়েক বছর ধরে সাধনা অনুশীলন করার পর তারা ফলাফল দেখতে পায় যে তারা বেশি ক্রোধিত অথবা ঈর্ষান্বিত হয় না, অন্যের প্রতি নিষ্ঠুর হয় না ইত্যাদি। এরপর অনেক বছর পর এমন ঘটতে দেখা যায় যে তারা সত্যিই অত্যন্ত ক্রোধিত হয়ে ওঠে অথবা ভীষণভাবে প্রেমে পড়ে যায় এবং চরম আসক্তি আর মানসিক অস্থিরতা অনুভব করে, যার কারণে তারা নিরুৎসাহিত হয়ে ওঠে। তাদের এই নিরুৎসাহের উৎস হল যে তারা “বিশেষ কিছু নয়”- এর পুরো দৃষ্টিকোণকে ভুলে যায়। কারণ আমাদের প্রবণতা এবং অভ্যাসের ভিত অত্যন্ত গভীরভাবে রোপিত হয়ে থাকে আর সেটাকে কাটিয়ে উঠতে প্রচুর সময় লাগে এবং প্রচেষ্টার প্রয়োজন হয়। আমরা অস্থায়ীভাবে এটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি কিন্তু আমরা যতক্ষণ পর্যন্ত ঐ বিষয়টার মূলে না যাব যে আমরা কেন ক্রোধিত হই, মাঝে-মাঝে ঐ মনোভাবটির পুনরাবৃত্তি হতে থাকবে। সুতরাং এগুলির যখন পুনরাবৃত্তি ঘটে তখন আমাদের নিশ্চিত হতে হবে যে আমরা যেটার সম্পর্কে ভাবতে থাকি সেটা “বিশেষ কিছু নয়।” যেহেতু আমরা এখনও মুক্ত প্রাণী নই, সেইজন্য আসক্তি এবং ক্রোধ বারবার অবশ্যই জাগবে। আমরা যদি প্রয়োজনের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিই তাহলে আমাদের প্রগতি থেমে যাবে।

ধারণাটি হল যে আমরা যদি বুঝতে পারি এবং নিশ্চিত হয়ে যাই যে আমরা যা অনুভব করি এবং মনে করি সেখানে “বিশেষ কিছু নেই” তাহলে যা কিছুই ঘটুক না কেন, এমনকি এটা কোন অসাধারণ অন্তর্দৃষ্টিও হয় আপনি সেটার মোকাবিলা করবেন। অন্ধকারে আপনি পায়ের আঙুলে টেবিলের সাথে ধাক্কা খেলে আঘাত লাগে এবং সেখানে ব্যথা হয়। এইরকম পরিস্থিতি থেকে আপনি কী আশা করেন? এটা স্পষ্ট যে আপনার বুড়ো আঙুলে ধাক্কা খেলে আপনার চোট লাগবে। আমরা পরীক্ষা করে দেখতে পারি যে আঙুলের হাড়টি ভেঙে গেছে কিনা। তারপর আমরা এগিয়ে যাই। বিষয়টা বড় কিছু নয়, সেখানে লাফানো-ঝাপানোর কোন প্রয়োজন নেই, এই ভেবে যে মা এসে চুমু খাবে আর ব্যথা ঠিক হয়ে যাবে। এইভাবে আমরা সহজ, স্বাচ্ছন্দ্যময় পথে আমাদের জীবন-যাপন করার চেষ্টা করতে পারি। জীবনে যা কিছুই ঘটুক না কেন অথবা আমরা যা কিছু অনুভব করি না কেন এই দৃষ্টিকোণ আমাদের শান্ত থাকতে সহায়তা করে।

আমি কোন দৃষ্টিতে বিশেষ কিছু নই

পুনরায়, দ্বিতীয় বিষয়টিও হল অত্যুক্তি বা অতিরঞ্জনা। এখানে অনুভূতির পরিবর্তে আমরা আমাদের নিজেদের গুরুত্বকে অতিরঞ্জিত করে তুলি। প্রকৃতপক্ষে এটা হল মনোভাব-প্রশিক্ষণ (চিত্ত প্রশিক্ষণ)-এর প্রধান বিষয় সম্পর্কিত শিক্ষা, কারণ আমাদের সমস্ত সমস্যা এবং অসুবিধা ইত্যাদি একই বস্তু থেকে উৎপন্ন হয়ঃ স্ব-লালন অর্থাৎ নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করার ভাবনা। এর অর্থ হল আমরা সর্বদা কেবল “আমি”-এর প্রতি আসক্ত থাকি এবং কেন্দ্রীভূত হয়ে থাকি আর শুধু আমাকে নিয়েই উদ্বিগ্ন থাকি। এর মধ্যে থাকে অহংবোধ আর অহংকারের সাথে থাকে স্বার্থপরতা ও আত্ম-তন্ময়তা। এই মনোভাব এবং এর সাথে অন্য যে ভাবনাগুলি উৎপন্ন হয় সেগুলিকে অনেক ভাবে ব্যাখ্যা করা যায়।

আমরা যখন নিজেকে বিশেষ কিছু বা বিশেষ কেউ হিসাবে গড়ে তুলি, এটাই প্রকৃতপক্ষে আমাদের সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আমরা মনে করি, “আমি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং আমি যেটা অনুভব করি সেটা সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ।” আমরা যদি, “আমি, আমি, আমি” নিয়ে বেশী উদ্বিগ্ন হই তাহলে অবশ্যই আমরা এই “আমি” সুখী, দুঃখী অথবা সমতা ভাবে থাকবে কিনা সেটা নিয়ে চিন্তিত হতে থাকব।

আমরা কেন সামাজিক নেটওয়ার্কগুলিতে আমাদের অনুভূতি শেয়ার করি?

বৌদ্ধধর্ম সর্বদা দুটি অন্ত অথবা চরমতাকে ত্যাগ করার কথা বলে আর পরামর্শ দেয় যে, এর পরিবর্তে মধ্যম পথ অনুসরণ করা অনেক ভালো। দুটি অন্তের মধ্যে একটি “আমি” এর সাথে যুক্ত প্রত্যেকটি ঘটনাকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভেবে নেওয়া আর মনে করা যে সেটাকে সারা বিশ্বে সম্প্রচারিত হতে হবে, কারণ সকলে সত্যিই সেটাকে জানার জন্য উৎসুক হয়ে থাকে। কিন্তু বাস্তবে আজ সকালের আহারে আমি কী খেয়েছি অথবা সেটা আমি পছন্দ করেছিলাম কিনা কেউ সেটাকে গুরুত্ব দেয় না। তা সত্ত্বেও আমরা মনে করতে থাকি যে এটা সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ। আর তারপর লোকজনও আমাদের পোষ্টগুলি পছন্দ করে। তবে এই বিষয়টাকে নিয়ে আমরা উৎসুকতা দেখাব কেন যে কতজন লোক আমাদের পছন্দ (লাইক) করেছে যে আমরা সকালের ব্রেকফাস্টে কী খেয়েছি? এটা কী প্রমাণ করে? এটা একটা আকর্ষণীয় চিন্তা-ভাবনা করার বিষয়।

হয়তো মানুষের বাস্তব জীবনে কথোপকথনের অভাব আছে এবং সেইজন্য তারা অন্যদের সাথে তাদের কথা শেয়ার করতে চায়। হ্যাঁ, আমার মনে হয় সেখানে একটি একাকীত্বের অনুভূতি আছে। তবে একদৃষ্টিতে এটা আপনাকে অন্যদের থেকে আরও বিচ্ছিন্ন করে দেয়, কারণ আপনি তাদের সাথে প্রকৃত মিথস্ক্রিয়া করার পরিবর্তে নিজের কম্পিউটার অথবা সেলফোনের মাধ্যমে মিথস্ক্রিয়া করাটা বেশি সুরক্ষিত পরিবেশ বলে মনে করেন। আমি সত্যিই যে পরামর্শটা দিচ্ছি সেটা হল, আমাদের দেখতে হবে আমাদের এরকম অনুভব কেন হয় যে আমাদের ভাবনাকে শেয়ার করা উচিত? একদিকে এটা এইজন্য হয়, কারণ আমরা মনে করি যে সবাই যেন আমার প্রতি যত্নশীল হয় এবং অন্যদের জন্য এটা জানা গুরুত্বপূর্ণ যে আমরা সকালে ব্রেকফাস্টে কী খেয়েছি আর আমরা সেটা পছন্দ করেছিলাম কিনা। অবশ্যই এটা একটা মূর্খতাপূর্ণ উদাহরণ, তবে বেশি সংখ্যায় লোকজন যদি সেটা পছন্দ (লাইক) না করে তাহলে আমরা হতাশ বোধ করি। আমরা এটাকে অতি গুরুত্বপূর্ণ করে তুলি- “আমি”, আমি কী করছি, আমি কী অনুভব করছি- বিশেষ ক’রে অন্যরা এর সম্পর্কে কী মনে করে। আত্মবিশ্বাসের সাথে জীবনে এগিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে আমরা মনে করি এটা যেন সারা বিশ্বে সম্প্রচার হয়। এর কারণ হল আমরা নিজেকে এতো গুরুত্বপূর্ণ মনে করি যে মানুষ যেন সব কাজকর্ম ত্যাগ ক’রে আমাদের বার্তা পড়বে। এটা কি আমাদের গুরুত্বকে অতিরঞ্জিত করা হয় না? আর এর উপরে রয়েছে আমাদের নিরাপত্তাহীনতা যেটাকে মনের খুব শান্ত অবস্থা বলা যায় না। তারপর আমরা ক্রমাগতভাবে অন্যদের পরীক্ষা করতে থাকি যাতে আমরা কিছু মিস না ক’রে যাই।

যাইহোক, আমাদের যে দুটি অন্ত (চরমতা) ত্যাগ করা প্রয়োজন সেই দুটি হল- এইরকম চিন্তা-ভাবনা করা যে, আমরা হলাম এখন পর্যন্ত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অথবা আমরা মূলতঃ কিছুই না। হয় প্রত্যেককে জানতে হবে যে আমরা কী অনুভব করি, তাতে তারা তোয়াক্কা করুক বা না করুক অথবা আমরা আমাদের অনুভুতিগুলিকে সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষা করি।

নিঃসন্দেহে কখনো-কখনো এমন পরিস্থিতি তৈরী হয় যখন অন্যদের প্রকাশ করার প্রয়োজন হয় যে আমরা কেমন অনুভব করছি, যেমন আমাদের যদি কারও সাথে সম্পর্ক থাকে এবং সেই সম্পর্কে আমরা সত্যিই সুখী নই। যখন এটা প্রয়োজন হয় যে অন্য ব্যক্তি জেনে যায় আমরা কেমন অনুভব করছি তখন সেটাকে ভিতরে চেপে না রেখে অন্যকে প্রকাশ করাটাই ভালঃ “আপনি আমাকে যেটা বলেছিলেন সেটা সত্যিই আমাকে আঘাত করেছিল” ইত্যাদি। তবে এরকম করার সময় আমরা একটা সামঞ্জস্য বজায় রেখে করতে পারি যেখানে আমরা কোন বিষয়কে অতিরঞ্জিত ক’রে প্রস্তুত করব না, আর আমরা সেটা অস্বীকারও করব না। অবশ্যই আমরা যদি এখানে সম্পর্কের কথা বলি তাহলে সেখানে অন্তত দুজন মানুষ থাকবে আর সেইজন্য এটা ততটাই গুরুত্বপূর্ণ (এবং এটা তেমন বড় ব্যাপার নয়) যা অন্য ব্যক্তি অনুভব করে সেটা যতটা গুরুত্বপূর্ণ।

আমরা যখন মনোভাব-প্রশিক্ষণ সম্পর্কে কথা বলি তখন এটা কেবল আমার মনোভাবকে বোঝায় না বরং সকলের মনোভাবকে বোঝায় যারা সকলে এই পরিস্থিতির সাথে জড়িত। অন্যকথায়, শুধু আমার দৃষ্টিভঙ্গি গুরুত্বপূর্ণ নয়, তাই না? এটি পারিবারিক সমস্যার সমাধান করার জন্য প্রযোজ্য মনোচিকিৎসার মূল নীতির মধ্যে একটি। যেখানে পরিবারের প্রত্যেক সদস্য তার বিষয়ে অভিযোগ রাখার সুযোগ পায় যে তারা বাড়িতে কেমন অনুভব করে। সুতরাং, যদি মা-বাবা একে অপরের সাথে ঝগড়া করে তখন তারা তাদের সন্তানের কাছ থেকে শিখতে পারে যে এটা তাদের কীভাবে প্রভাবিত করে। অন্যথায় তারা হয়তো সচেতন হবে না। কেবল তাদের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গিই তাদের পরিবারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ নয়।

স্ব-লালন ভাবনা কাটিয়ে ওঠার উপায়

এরপর যে বিষয়টার উপর জোর দেওয়া হয় সেটা হল পরম্পরাগত মনোভাব প্রশিক্ষণ বা মন-প্রশিক্ষণ সাধনার মাধ্যমে স্ব-তন্ময়তাকে কাটিয়ে ওঠা, যাকে আমরা সাধারণতঃ “আত্ম-লালন বা নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা” বলি, আর অন্যদের সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করার বিষয়ে নিজেকে উন্মুক্ত রাখা। আমরা এরকম করার প্রক্রিয়ার বিষয়ে আগে আলোচনা করেছি, যেমন- আমরা কল্পনা করি যে আমরা আছি একদিকে বাকী সবাই আছে অন্যদিকে। তারপর বিচার করি, “কে বেশি গুরুত্বপূর্ণ? ব্যক্তিগতভাবে আমি, না অন্য সবাই?” পাশাপাশি আমরা ট্রাফিকের উদাহরণ ব্যবহার করেছিলাম, “ট্রাফিকে আটকে থাকা আমি কি অন্যান্যদের থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ যে আমাকে আমার গন্তব্যস্থলে যেতেই হবে এবং আমার অন্য কারও জন্য কোন মাথাব্যথা নেই?”

এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হল আমরা যখন ট্রাফিকে আটকে থাকা সকলের জন্য চিন্তা-ভাবনা করতে প্রবৃত্ত হই তখন আমাদের দৃষ্টিকোণ বাস্তবতার উপর ভিত্তি করে। বাস্তবটি হল সকলেই ট্রাফিকে আটকে আছে। কেবল আমরা আটকে নেই, তাই নয় কি? সুতরাং আমরা যখন আমাদের মনোভাবকে উন্নত করার বিষয় নিয়ে আলোচনা করি তখন সেই বিষয়টি বাস্তবিকতার উপর ভিত্তি করে; আমরা বাস্তবিকতাকে বুঝে যাই আর আমাদের মনোভাবকে তার অনুরূপ গড়ে তুলি। আমার একজন বন্ধু, যিনি হলেন একজন বৌদ্ধ শিক্ষক, বলেছিলেন যে আপনি বৌদ্ধ দৃষ্টিকোণকে একটা শব্দের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন; “যথার্থ অথবা বাস্তববাদ।”

বৌদ্ধধর্মকে মাঝে মাঝে যেভাবে উপস্থাপন করা হয় তার কারণে মানুষ প্রায়শই মনে করে যে এরমধ্যে সবই চমৎকার মানস-দর্শন এবং আচার নিহিত রয়েছে, যা হল একধরণের বৌদ্ধ ডিস্‌নিল্যান্ডের মতো কিন্তু আসলে এটা বৌদ্ধধর্মের মূল বিষয় নয়। এই বিষয়গুলি সেখানে আছে, সেটাকে অস্বীকার করার কিছু নেই তবে সেগুলিকে বাস্তবতার সাথে সামঞ্জস্য তৈরি করার প্রচেষ্টাও হল একটি পদ্ধতি। আপনি যখন এই পদ্ধতিগুলি ব্যবহার করবেন তখন আপনি বাস্তবতা এবং কল্পনার মধ্যে পার্থক্য আর তারসাথে কল্পনার শক্তিকেও বুঝতে পারবেন।

আমরা হলাম মানুষ। আমাদের মধ্যে এমন কী আছে যা আমাদের পশুদের থেকে আলাদা করে? এখানে আমরা অনেক পার্থক্য নির্দেশ করতে পারি, তবে মূল বিষয়টি হল আমাদের মধ্যে আছে বুদ্ধি এবং কল্পনা-শক্তি। আমরা এই দুটি গুণকে ব্যবহার ক’রে শিখতে পারি। এর একটি উদাহরণ হবে যখন আপনার মধ্যে কারও প্রতি প্রবল যৌন আসক্তি জাগে এটি বেশ অশান্তকারী হতে পারে। আমরা বুদ্ধি এবং কল্পনা ব্যবহার ক’রে এটাকে পরিবর্তন করতে পারি। ভারতের মহান বৌদ্ধ আচার্য তাঁর দ্বারা রচিত “চতুঃশতকশাস্ত্রকারিকাতে” বলেছেনঃ

যার প্রতি যে অনুরক্ত হয় সে নিজেকে তাতেই সন্তুষ্ট মনে করে। কুকুর আদির (পশুর) মধ্যেও (তাদের সঙ্গীর প্রতি আসক্তি উৎপন্ন করাটা) সাধারণ বিষয়। হে মূর্খ, তুমি কেন (তোমার সঙ্গীর প্রতি) আসক্ত হও?

অন্যকথায়, যদি একটি কুকুর বা শূকর তার যৌন সঙ্গীকে এত আকর্ষণীয় মনে করে তাহলে আমাদের যৌন সঙ্গীর মধ্যে এমন কী আছে যা তাকে বিশিষ্ট ক’রে তোলে? যৌন আকর্ষণের গুণ সম্পূর্ণ ব্যক্তির মন থেকে উৎপন্ন হয়; এটি আকর্ষণীয় বস্তুর স্বভাবগত কিছু নয়। অন্যথায় একটি শূকর আমাদের সঙ্গীকেও সত্যিই সুন্দর এবং আকর্ষণীয় মনে করবে আর আমাদের দিক থেকে শূকরের সঙ্গীকে আকর্ষণীয় মনে করা উচিত। বৌদ্ধিক দৃষ্টিতে এটা সম্পূর্ণ সঠিক। আমরা আমাদের কল্পনা-শক্তি দিয়ে শূকরগুলির কল্পনা করি, আর ঐ কল্পনা এটাকে অর্থপূর্ণ করতে সহায়তা করে। সুতরাং যদি আমাদের দিক থেকে কাউকে আকর্ষণীয় মনে হয় তাহলে সেখানে সত্যিই বিশেষ বলতে কিছুই থাকে না। আমি এই ব্যক্তিকে আকর্ষণীয় মনে করি আবার এই ব্যক্তিটি ঐ ব্যক্তিকে আকর্ষণীয় মনে করে। এটি ঠিক একটি রেঁস্তোরার মতোঃ একজন ব্যক্তি মেনু থেকে একটা জিনিস পছন্দ করে আবার একজন ব্যক্তি পছন্দ করে অন্যটি। তাতে কী হয়েছে? সেখানে বিশেষ বলতে কিছুই নেই।

আমরা যখন এই ধরণের মানসিকতা প্রসারিত করি তখন এটা খুব আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। আমি যেভাবে কাজকর্ম করি সেটাকে কেন প্রত্যেকের পছন্দ করা উচিত? এটা স্পষ্ট যে মানসিকতার পিছনে আছে স্ব-লালন অর্থাৎ নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করার ভাবনাঃ “আমি যেভাবে করি সেটা সঠিক।” কিন্তু তারপর আমরা বিরক্ত হয়ে যাই যখন অন্য কেউ তাদের ডেস্ক অথবা কম্পিউটারের ফোল্ডারস্‌ অন্যভাবে সাজিয়ে রাখেঃ “এটা একেবারে ভূল!” এটাকে স্বীকার ক’রে নেওয়া ভাল যে, যেমন যৌন আকর্ষণের বিষয় আলাদা-আলাদা হয় ঠিক তেমনই অন্যের কাজকর্ম করার পদ্ধতিও আলাদা হয়।

আমরা যখন মনোভাব-প্রশিক্ষণ সম্পর্কে অধ্যয়ন করি অথবা শুনি যেখানে প্রধান গুরুত্ব দেওয়া হয় স্ব-লালন ভাবনাকে ত্যাগ করা এবং অন্যদের সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা শুরু করা, তখন আমাদের এই চিন্তা-ভাবনার পরিসীমায় যেতে হবে না যে আমরা জগতের সমস্ত প্রাণীদের কল্যাণ করার জন্য কাজকর্ম করছি। অবশ্যই আমরা এমন করতে পারি যেটা আমি আগে বলেছি, “আমি এই গ্রহের সাত বিলিয়ন মানুষের মধ্যে একজন যেখানে আছে অসংখ্য পশু এবং পোকামাকড়ও। প্রত্যেকে সুখী, দুঃখী অথবা নিরপেক্ষ বোধ করছে। সুতরাং আমি কোন দৃষ্টিতে বিশেষ কিছু নই।” আমরা সকলের প্রেক্ষাপটে আমরা যা অনুভব করছি সেই বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করি আর আমাদের মন “আমি, আমি, আমি” এই ধরণের স্বাভাবিক ভাবনার পরিবর্তে অনেক বেশি উন্মুক্ত হয়ে ওঠে। এই অবস্থাটি বৈশ্বিক উষ্ণায়নের মতো, এটা কীভাবে প্রত্যেককে প্রভাবিত করবে সেটা আপনাকে বিবেচনা করতে হবে, কারণ এই বিষয়টা শুধু একজন ব্যক্তির ক্ষেত্রে উদ্বেগজনক নয়।

তবুও প্রকৃতপক্ষে স্ব-লালন থেকে পর-লালনের মতো একটি উপকারী পরিবর্তনকে বাস্তবায়নের জন্য আমাদের এতদূর যেতে হবে না। আমরা আমাদের আশপাশের পরিবেশের দিকে তাকিয়ে এই পরিবর্তনকে আরও তাৎপর্যপূর্ণ সীমার মধ্যে করতে পারি- “এই সম্পর্কের মধ্যে আমি একমাত্র নই” অথবা “এই পরিবারে আমি একমাত্র নই।” এইভাবে আমরা ধীরে-ধীরে বৃহত্তর গোষ্ঠীর জন্য উদ্বিগ্ন হয়ে পড়তে পারি। হয়তো আমরা এখন জগতের প্রত্যেক সত্ত্বকে অন্তর্ভুক্ত করতে পারি না, তবে আমরা এই ধরণের পরিমাপে শুরু করতে পারি, শুধুমাত্র ফেসবুকে পছন্দ করার উপরিতলে নয় বরং অন্যদের সাথে প্রকৃত ব্যক্তিগত সাক্ষাতের ভিত্তিতেও।

হ্যাঁ, এই ধরণের প্রচেষ্টা সীমাবদ্ধ থাকে, কারণ আমরা দৈনন্দিন জীবনে যত মানুষের কাছে পৌঁছতে পারি তার থেকে বেশি পারি সোশ্যাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে। কিন্তু যখন একটি ভার্চুয়াল সোশ্যাল নেটওয়ার্ক প্রকৃত আন্তঃব্যক্তিগত যোগাযোগ এবং সম্পর্কের স্থান নেয়, তখনই শুরু হয় সমস্যা। হতে পারে আপনি কারও সঙ্গে থাকেন কিন্তু বাস্তবে সেখানে থাকেন না, কারণ আপনি তখন অন্যান্য লোকজনদের বার্তা পাঠাতে থাকেন। এখনকার সময় এটি একটি সাধারণ ঘটনা আর শুধু কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে এই প্রচলন আছে তা নয় বরং ছোট-ছোট শিশুরাও অভিযোগ করে যে, তাদের উপেক্ষা করা হয়। এর কারণ হল তাদের মাতা-পিতা তাদের সন্তানদের দিকে মনোযোগ না দিয়ে সর্বক্ষণ টেক্সট বার্তায় ব্যস্ত থাকেন।

মন-প্রশিক্ষণ সাধনার বিভিন্ন উপায়

মন-প্রশিক্ষণ সাধনার বিভিন্ন স্তর আছে আমরা যেগুলির অনুশীলন করতে পারি। এরজন্য কোন ধরণের অসাধারণ অনুশীলনের প্রয়োজন নেইঃ আমাদের যেটা দরকার সেটা হল আমরা যেটাকে বাস্তবসম্মত মনে করি সেটাকে জানার জন্য আমাদের নিজেদের বুদ্ধির প্রয়োগ করতে হবে।

যেটা বাস্তব সেটা হল আমরা জগতের একমাত্র ব্যক্তি নই আর আমরাই যে জগতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি সেটাও নয়। তবে অবশ্যই এমনও নয় যে আমরা কিছুই নই। আমরা জগতের অনেক প্রাণীদের মধ্যে একজন, আমরা এর একটা অংশ। আমরা সহানুভূতির পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের কল্পনা-শক্তি ব্যবহার ক’রে অন্যদের পরিস্থিতি এবং অনুভূতিগুলি বোঝার চেষ্টা করতে পারি, পাশাপাশি তারা বিষয়কে যেভাবে অনুভব করে সেটাও বোঝার চেষ্টা করতে পারি।

আমাদের বুদ্ধি এবং কল্পনা-শক্তি হল দুটি বড় সরঞ্জাম যা আমরা ব্যবহার করতে পারি। যুক্তি দিয়ে আমরা আমাদের বুদ্ধিকে প্রশিক্ষিত করি আর অনুধাবনের মতো উপকরণ দিয়ে আমরা আমাদের কল্পনা-শক্তিকে প্রশিক্ষিত করি। আমরা এটা করি যাতে বুদ্ধির মাধ্যমে আমরা কম্পিউটারের মতো না হয়ে উঠি অথবা বিভিন্ন ধরণের চমৎকার বিবরণ দেখার জন্য স্বর্ণপদক জেতা পর্যন্ত সীমিত না হয়ে থাকি বরং আমাদের নিজেদের জীবনে অসুবিধা এবং সমস্যাগুলির উপর বিজয় লাভ করার যোগ্য হয়ে উঠতে পারি। ব্যাপক পরিসরে অন্যদেরকেও এরকম করতে সহযোগিতা করার জন্য আমরা এটা করি। এইধরণের দৃষ্টিকোণ খুবই বিস্তৃত এবং এটা আমাদের মধ্যে থাকা ভাল যেখানে আমরা অন্যদের পরিস্থিতি জেনে তাদের প্রতি এই দৃষ্টিতে সহানুভূতি জাগাতে পারি যে তাদের সাথে কী ঘটেছে, বর্তমানে কী ঘটছে আর ভবিষ্যতে কী কী ঘটার সম্ভাবনা আছে। এরজন্য মহান বুদ্ধি এবং কল্পনা উভয়ই যুক্ত থাকে। আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এই অনুশীলনকে অনেক ভাবে অবলম্বন করতে পারি। এর সবচেয়ে সহজ স্তর হল “বিশেষ কিছু নয়”- এর অনুভূতি যারফলে এই বোধগম্যতা জাগে যে, যা কিছুই ঘটুক না কেন- ভাল, খারাপ বা নিরপেক্ষ, সেখানে এমন কিছু থাকে না যা নির্দিষ্ট রূপে বিশেষ হয়। ইতিহাস জুড়ে, অন্ততঃ প্রাচীন গ্রীক থেকে এখন পর্যন্ত সকলেই বলে চলেছে, “এটা সবচেয়ে খারাপ সময়ঃ তরুণ প্রজন্ম সম্পূর্ণভাবে অধঃপতিত, ভয়াবহ এবং দুর্নীতিগ্রস্ত।” আপনি যদি আলাদা-আলাদা সময়ের সাহিত্যের দিকে তাকান তাহলে দেখবেন সকলেই এই কথাই ব’লে আসছে, কিন্তু বাস্তবে এটা সত্য নয়। যা কিছু ঘটছে সেখানে বিশেষ কিছু নেই, আমি কোন দৃষ্টিতে বিশেষ নই আর আমি যা অনুভব করছি সেটাও বিশেষ কিছু নয়। এটা তো কেবল একটা প্রবাহ যা অসংখ্য হেতু এবং প্রত্যয়ের মিথস্ক্রিয়ার কারণে চলতেই আছে, চলতেই আছে। আমাদের যেটা করণীয় সেটা হল শুধু আমাদের বুদ্ধি এবং কল্পনা প্রয়োগ ক’রে যতটা সম্ভব উপকারী পদ্ধতিতে এর মোকাবিলা করতে হবে। যাতে আমরা নিজেদের এবং অন্যদের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে পারি।

সারাংশ

আমরা প্রত্যেকে এই গ্রহের সাত বিলিয়নেরও বেশি মানুষের মধ্যে একজন। কিন্তু আমাদের মধ্যে কেউই অন্য কারও থেকে আলাদা নয়। আমরা যখন আমাদের স্ব-লালন মনোভাবকে কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করি তখন আমরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে আরও বাস্তববাদী হয়ে উঠিঃ আমরা বুঝতে পারি যে আমরা সবাই কীভাবে এই পরিস্থিতির মধ্যে একসাথে আছি, এমন নয় যে প্রত্যেকে আমাদের বিরুদ্ধে আছে। আমরা কোন দৃষ্টিতে নির্দিষ্ট ভাবে বিশেষ কিছু নই, এটি একটি উপলব্ধি যা আমাদের মানসিক সুস্থতা এবং অন্যদের সাথে মিথস্ক্রিয়ার গুণমানে ব্যাপক উন্নতি প্রদান করে।

Top