বৌদ্ধ-মুসলিম সম্প্রীতির দৃষ্টিকোণ

বৌদ্ধ এবং মুসলিমের মধ্যে সংলাপের কী কী দৃষ্টিকোণ আছে?

আমি মনে করি সেখানে বৃহৎ সম্ভাবনা আছে। সম্ভবতঃ ১৯৯৭ সাল থেকে বিগত বারো বছর ধরে আমি নিজে এই সংলাপের সাথে যুক্ত আছি। ইসলামিক জগতের ভিন্ন-ভিন্ন প্রান্তে ভ্রমণ ক’রে আমি এটা বুঝেছি যে সেখানকার মানুষ তথ্যের জন্য ভীষণ লোলুপ। প্রায়শই তারা বলে, “অনুগ্রহ করে আপনি সবাইকে বলুন যে আমরা সবাই সন্ত্রাসবাদী নই।”

পরম পূজ্য দালাই লামা ধার্মিক সম্প্রীতি স্থাপন করা, বিশেষ ক’রে মুসলিম জগতের সাথে সংলাপ প্রসার করার উপর জোর দিয়েছেন। তিনি এই বিষয়ের উপর জোর দেন কারণ আমাদের যেটা প্রয়োজন সেটা হল শিক্ষা যাতে আমরা একে-অপরকে ধর্মান্তরিত করার উদ্দেশ্য বা ইচ্ছা ছাড়া একে-অপরের ধর্মমতকে বুঝতে পারি। এমন কয়েকটা ধর্মমত আছে যাদের সম্পর্কে আমাদের মধ্যে অবশ্যই আলাদা চিন্তা-ভাবনা আছে, কিছু তার উপর মনোনিবেশ করার কোন অর্থ বা লাভ থাকে না। আমাদেরকে একে-অপরের ধর্মমতকে সম্মান করতে হবে এবং এই বোঝার ও উপলব্ধি করার চেষ্টা করতে হবে যে কীভাবে একটা ধর্মের বিশ্বাস ঐ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে উপকারী হয় যারা সেটা পালন করে। আর সেই বিষয়ের উপর একসাথে কাজ করার জন্য জোর দিতে হবে যে বিষয়টা আমাদের ধর্মে অভিন্ন দেখতে পাওয়া যায়। এই বিষয়টা বিশেষ ক’রে মৌলিক নৈতিকতার উদ্ব্যক্তির উপর আধারিত, যাকে পরম পূজ্য দালাই লামা ‘সার্বজনীন মূল্যবোধ’ বলেন।

এইভাবে আমাদের শান্তি এবং সম্প্রীতির প্রসারের দিকে অগ্রসর হওয়ার জন্য কাজ করতে হবে যেটার কামনা আজ সবাই করে। এর অর্থ হল, আমরা যা কিছুই করি, সমস্ত কাজে মুসলমানদের সম্মিলিত করতে হবে এবং কখনও “আমরা” বনাম “তোমরা”- এই মনোভাব বা দৃষ্টিকোণ থাকলে হবে না। উদাহরণ স্বরূপ, আমার ওয়েবসাইটের বৌদ্ধ এবং ইসলাম খন্ডকে ইসলামী দেশের কয়েকটি ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে আর আমরা এটা জেনে-শুনেই করেছি যে অনেক লোকজন ঐ ভাষায় প্রস্তুত খন্ডটাকে নাও পড়তে পারে। তবুও এটা মুসলিমদের প্রতি সম্মান ভাব দর্শায়। সম্মানভাব প্রদর্শন করাটা খুব খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং পরম পূজ্য দালাই লামা সবসময় এর জন্য উৎসাহিত এবং সমর্থন করেন।

বৌদ্ধ এবং ইসলাম, এই দুটি সংস্কৃতির মধ্যে যে সম্বন্ধ আছে তার ইতিহাস সম্পর্কে আমি যে কাজ করেছি, সেখানে শুধু প্রাচীন মতবাদের পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে, যেমন মুসলিমরা ভারতে বৌদ্ধ সম্পর্কিত সমস্ত কিছু ধ্বংস করে দিয়েছে, তার পরিবর্তে বেশি ক’রে বস্তুনিষ্ঠ ছবি প্রস্তুত করার চেষ্টা করেছে। এইভাবে প্রস্তুত করলে সেই ইতিহাস মুসলিম রাজাদের ধর্মান্ধরূপে দর্শায় কিন্তু তাদের উদ্দেশ্য এবং প্রেরণা ঐরকমই ছিল যা অন্যান্য বিজয়ী ব্যক্তিদের থাকেঃ ধন, ক্ষমতা ইত্যাদি। এর পরিবর্তে, আমাদের ঐ ইতিবাচক যোগদানের উল্লেখ ক’রে তার উপর জোর দিতে হবে যে একটি সংস্কৃতি অন্য সংস্কৃতির জন্য কী করেছেঃ মুসলিমদের কাছ থেকে আমরা আধুনিক বিজ্ঞান ইত্যাদি সম্পর্কে অনেককিছু পেয়েছি। আমরা মুসলিম সংস্কৃতির এই ইতিবাচক যোগদানের উপর যতবেশী জোর দেব এবং যতবেশী সেগুলিকে সম্মানের সাথে আমাদের ক্রিয়াকলাপে অন্তর্ভুক্ত করব, আমার মনে হয় সেটা সহযোগিতার ক্ষেত্রে সম্ভাবনা খুবই ভাল হবে। আমি যে সমস্ত মুসলিম নেতাদের সাথে সাক্ষাৎ করেছি এবং তাদের সাথে আলোচনা করার সৌভাগ্য হয়েছে, আমি বুঝেছি যে তাঁরা এই ধরণের দৃষ্টিকোণ অবলম্বন করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত উদার।

Top