What is enligtment abhijeet gourav

বোধি-এর অর্থ হল বুদ্ধ হওয়া, যা হল মানবীয় বিকাশ এবং সামর্থ্যের শৃঙ্গ। বৌদ্ধ ধর্মের পরম লক্ষ্যই হল এটি। এটি এমনই একটা জিনিস যাকে লাভ করার ক্ষমতা পৃথিবীর প্রত্যেক প্রাণীর মধ্যে আছে।

এই মুহুর্তে আমরা বুদ্ধ নয়। এর পরিবর্তে আমরা শুধু সমস্যা এবং নিয়মিতভাবে উত্থান-পতনে পরিপূর্ণ একটা জীবন-যাপন করছি; আমরা এইভাবে বিদ্ধ হয়ে আছি। তার কারণ হল আমাদের মন স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রত্যেকটি বস্তুর বিষয়ে অর্থহীন পরিকল্পনা করে এবং আমরাও সত্যি-সত্যিই মনে করি যে সেটা বাস্তব। আমরা সেই ভাবে চিন্তা-ভাবনা করি, আচরণ করি যে ওটা বাস্তবিক সুখ নিয়ে আসবে, কিন্তু শেষ করি কেবল দুঃখ নিয়ে এসে।

সাধারণত আমরা যা চাই তাই করি; থাকে সামান্য ধারণা যে এটা কেমন করে অন্যদের প্রভাবিত করবে। এর কারণ হল আমরা অনুভব করি যে আমরা হলাম এই জগতের কেন্দ্র, একমাত্র যার গণনা হয়। এই ধরণের চিন্তা-ভাবনা বাস্তবের সঙ্গে মেল খায় না। এটা হল স্বার্থপরায়ন ভাবনা যা নিজের এবং অন্যদের জন্য দুঃখ নিয়ে আসে। উদ্বুদ্ধ হওয়ার জন্য, সর্বপ্রথম আমাদের শুরু করার প্রয়োজন হল-

  • নিজের এবং অন্যদের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত আচরণের পরিণামকে জানতে হবে এবং ধ্বংসাত্মকভাবে কাজকর্ম করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • সবকিছু প্রকৃতপক্ষে কেমন করে অস্তিমান আছে, সেটা হৃদয়ঙ্গম করতে হবে।

আমরা যখন চিত্তের অভিক্ষেপকে বিশ্বাস করা বন্ধ ক’রে দিই তখন আমরা বিভ্রান্তির উপর আধারিত ক্রোধ, দ্বেষ, লোভ এবং ঈর্ষাদি ক্লেশের জন্ম হওয়া বন্ধ হয়ে যায়। এর কারণে আমরা আর কখনও নেতিবাচক অনুভূতির সঙ্গে বাধ্যতামূলকভাবে আচরণ করি না। এসবের জন্য প্রয়োজন হল-

  • মূর্খতাপূর্ণ ব্যবহার থেকে বিরত থাকার জন্য শক্তিসহ নৈতিক আত্মশীল (আত্মশাসন)।
  • চিত্তবিক্ষেপ অথবা নীরসতা থেকে দূরে থাকার জন্য সমাধি (ধ্যান)।
  • কোনটা উপকারী বা অপকারী, অথবা কোনটা সত্য বা মিথ্যা, এর বিচার করার জন্য প্রজ্ঞা।
  • মৈত্রী এবং করুণার মতো ইতিবাচক গুণের উৎপাদনের জন্য ভারসাম্য আবেগ।

যদিও আমরা এঁর থেকে মনের শান্তি লাভ করি, কিন্তু সেটাও যথেষ্ট নয়। এর দ্বারাও আমরা দেখতে সক্ষম হব না যে সমস্ত বস্তু এবং সব প্রাণী সম্পূর্ণভাবে পরস্পর নির্ভরশীল এবং সংযুক্ত। অতএব পরকল্যাণের সর্বোত্তম উপায় বিষয়ে কখনও আমাদের বেশ নিশ্চিত হওয়া উচিৎ না।

এর জন্য, আমাদের সম্যক্‌ সম্বুদ্ধ হতে হবে, যেখানে আমাদের চিত্ত কোনভাবে কোন বস্তুর উপর অভিক্ষেপ করে না। আমরা সমস্ত অস্তিমান বস্তুর পরস্পর নির্ভরশীলতার বিষয়টি স্পষ্টভাবে দেখতে পাই এবং যথাযথভাবে বুঝতে পারি যে কীভাবে অন্যের সহায়তা করতে হয়। আমাদের শরীরে অপরিমিত কর্মশক্তি আছে, আমরা সবার সাথে ঠিকভাবে যোগাযোগ করতে পারি এবং আমাদের মন সবকিছু পুরোপুরিভাবে বুঝতে পারে। ফলে প্রত্যেকটা প্রাণীর প্রতি আমাদের মৈত্রী, করুণা এবং সম-উদ্বেগ এতটা প্রবল হয়ে যায়, মনে হয় প্রত্যেকে যেন আমাদের একমাত্র প্রিয় সন্তান। [করুণা কী?] তখন বিনিময়ে কিছু পাওয়ার আশা ত্যাগ ক’রে আমরা পরকল্যাণ-এর কাজ করি। আমরা যখন বোধি লাভ করি, আমাদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে যায় ধৈর্য হারিয়ে ফেলা, ক্রোধিত হওয়া, মানুষের প্রতি আসক্ত হওয়া অথবা তাদের অবহেলা করা, কেননা আমরা খুবই ব্যস্ত হয়ে যাই বা ক্লান্ত বোধ করি।

বুদ্ধের মতো আমরাও সর্বজ্ঞ, কিন্তু সর্বশক্তিমান নয়। আমরা পরদুঃখের নিবারণ করতে পারি না, কিন্তু একটা জীবন্ত দৃষ্টান্ত-এর মাধ্যমে তাদের শিক্ষা প্রদান ক’রে পথ-প্রদর্শন করতে পারি। বোধি লাভের দিকে অগ্রসর হওয়ার উদ্দেশ্যে সব পথকে ভ্রমণ করার জন্য আমাদের প্রয়োজন:

  • ইতিবাচক শক্তির একটি অবিশ্বাসনীয় কোষ নির্মাণ করতে হবে যাতে যতদূর সম্ভব আমরা নিঃস্বার্থভাবে পরকল্যাণ করতে পারি।
  • বাস্তবকে জানার জন্য কাজ করতে হবে যাতে বিশ্বের বিষয়ে মূর্খতাপূর্ণ অভিক্ষেপ বন্ধ হয়ে যায়।

বোধি লাভের হেতু নির্মাণের জন্য আমাদের সবার কাছে কাজ-কর্ম করার উপাদান হল- আমাদের শারীরিক শরীর এবং মৌলিক মানবীয় বুদ্ধি। আমাদের চিত্ত এবং হৃদয়টি আকাশের মতো, নিজেদের স্বভাবের দিক থেকে আবেগময় বিশৃঙ্খলা এবং ক্লেশ থেকে অদুষিত। আমাদের যা কিছুর প্রয়োজন সেটা হল তাদের বিকাশ করা, যাতে তারা তাদের পূর্ণ ক্ষমতায় পৌঁছে যেতে পারে।

‘বোধি’-কে দেখে মনে হয়, এটা এমন একটা লক্ষ্য যেখানে পৌঁছনো প্রায় অসম্ভব। তবে এটাকে লাভ করা খুবই কঠিন। আজ পর্যন্ত কেউ কখনও দাবি করেননি যে এটা তাদের কাছে সহজ ছিল। কিন্তু ঐ দিকে লক্ষ্যসন্ধান করাটা আমাদের জীবনে একটা অবিশ্বাসনীয় অর্থ নিয়ে আসে। সবার সঙ্গে আমাদের সংযুক্ততার বোধটা জাগলে আমরা স্বয়ং নিজেদেরকে বিষন্নতা এবং উদ্বেগ থেকে রক্ষা করতে পারি। যখনই আমরা সবচেয়ে বড় দুঃসাহসিক কাজে নিযুক্ত হয়ে যাই, আমাদের জীবন পূর্ণ হয়ে যায় অর্থাৎ বহুজন- হিতায় বোধি লাভ করি।


Top