বৌদ্ধ মার্গক্রমকে কীভাবে এবং কেন অনুসরণ করবেন

মার্গক্রম কী এবং এটা কীভাবে বুদ্ধের শিক্ষা থেকে প্রাপ্ত হয়েছিল?

মার্গক্রম, লাম-রিম, আমাদের জীবনে বৌদ্ধশিক্ষাগুলিকে উপলব্ধ এবং সংহত করার একটা উপায়। ২৫০০ বছর আগে, বুদ্ধ একটা ভিক্ষু সংঘ এবং পরবর্তীকালে একটা ভিক্ষুণী সংঘ নিয়ে বাস করেছিলেন। তিনি শুধু প্রব্রজিত সংঘদের শিক্ষাদান করেননি, বরং প্রায়শই বিভিন্ন লোকজনদের বাড়িতে আমন্ত্রণ জানানো হতো এবং সেখানে তাকে ভোজন দান করা হতো। ভোজন গ্রহণের পর তিনি সেখানে একটা উপদেশ দিতেন।

বুদ্ধ সবসময় আমাদের এমনভাবে শিক্ষাদান করেছিলেন যাকে আমরা কুশল উপায় বলি। এর অর্থ তাঁর শিক্ষাদানের এমন উপায়কে বোঝায় যা অন্যরা বুঝতে সক্ষম হয়। এটার প্রয়োজনও ছিল কারণ বুদ্ধি এবং আধ্যাত্মিক বিকাশের বেশ কয়েকটি স্তর ছিল এবং অবশ্যই এখনও আছে। এর ফলে বুদ্ধকে বিভিন্ন স্তরে বিভিন্ন বিষয়ের উপর শিক্ষাদান করতে হয়েছিল।

বুদ্ধের অনুগামীদের অনেকেরই অসাধারণ স্মৃতি ছিল। সেই সময় কিছু লিখিত উপাদান ছিল না। ভিক্ষুরা শিক্ষাগুলি মুখস্থ করে রেখেছিলেন যা মৌখিকভাবে পরবর্তী প্রজন্মদের কাছে হস্তান্তরিত করা হয়েছে। সর্বশেষে শিক্ষাগুলি লেখা হল এবং সূত্র হিসাবে পরিচিত হ’ল। বহু শতাব্দী পরে, অনেক মহান ভারতীয় আচার্যগণ ঐ উপাদানগুলি সংগঠিত করার এবং সেগুলির উপর ভাষ্য বা টীকা লেখার চেষ্টা করেছিলেন। অতীশ নামক একজন ভারতীয় আচার্য তিব্বতে গিয়েছিলেন। তিনি একাদশ শতাব্দীতে এই উপস্থাপনটির আদি রূপ “মার্গক্রম (লাম-রিম)” নির্মাণ করেছিলেন।

অতীশের আদিরূপ (নমুনা) এমন একটি পদ্ধতি উপস্থাপন করেছিল যার মাধ্যমে প্রত্যেকে নিজেরাই বুদ্ধ-অবস্থার জন্য বিকাশ করতে পারে। শুধু যথেচ্ছভাবে সূত্রের পাঠ আমাদের একটা স্পষ্ট আধ্যাত্মিক পথ প্রদর্শন করে না যে কোথা থেকে শুরু করতে হবে বা কীভাবে বোধিলাভ করা যাবে। যদিও সব উপাদান সেখানে আছে কিন্তু এটাকে একসাথে রাখা সহজ নয়।

এটা ঠিক তাই যা মার্গক্রম (লাম-রিম) শ্রেণীবদ্ধ ক্রমে উপাদান উপস্থাপন করে। অতীশের পরে, তিব্বতে বিভিন্ন এবং আরও বিস্তৃত সংস্করণ রচনা করা হয়েছে। আমরা পঞ্চদশ শতাব্দীতে চোঙ্‌খাপা দ্বারা রচিত সংস্করণটি দেখব, সম্ভবতঃ যা সামগ্রীর বৃহত্তম বিস্তৃতিটা গঠন করে। চোঙ্‌খাপার কাজে একটা অসাধারণ বৈশিষ্ট্য হ’ল- এতে সূত্র এবং ভারতীয় ভাষ্য বা টীকাগুলির উদ্ধরণ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর ফলে আমরা সুনিশ্চিত হতে পারি যে তিনি শুধু কিছু তৈরীই করেননি।

আরও একটা অসাধারণ বৈশিষ্ট্য হ’ল- চোঙ্‌খাপা সমস্ত বিবিধ বিষয়গুলির খুব বিস্তৃত, যুক্তিসঙ্গত প্রদর্শন প্রস্তুত করেছেন। এর ফলে আমরা যুক্তি এবং কারণের উপর আধারিত শিক্ষা (উপদেশ)-গুলির বৈধতার প্রতি আরও দৃঢ় বিশ্বাস অর্জন করি। চোঙ্‌খাপার বিশেষ বৈশিষ্ট্য হ’ল- তিনি পূর্ববর্তী লেখকদের থেকে আলাদা ছিলেন, যারা কঠিনতম বিষয়গুলি এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখিয়েছিলেন, কিন্তু তিনি সেগুলির উপর মনোনিবেশ করতেন।

চারটি তিব্বতী বৌদ্ধ পরম্পরার মধ্যে চোঙ্‌খাপা থেকে উদ্ভব পরম্পরাটি “গেলুগপা” পরম্পরা হিসাবে পরিচিত।

আধ্যাত্মিক মার্গের অর্থ কী এবং এটা কীভাবে গঠন করা যায়?

প্রশ্নটি আসলে একটা আধ্যাত্মিক মার্গ কীভাবে গঠন করা যায়? সাধারণতঃ ভারতে বহু বিভিন্ন পদ্ধতি শেখানো হয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ, বুদ্ধের সময় সমস্ত ভারতীয় পরম্পরাতে সমাধি বিকাশের পদ্ধতিগুলি সাধারণ ছিল। এটা এমন কিছু নয় যা তিনি নিজে আবিষ্কার করেছেন বা নির্মাণ করেছেন। প্রত্যেকেই একমত হয়েছিল যে আমরা কীভাবে নিজের বিকাশ করতে পারি এবং সে সম্পর্কে আমাদের চলার পথে কীভাবে সমাধি ও অন্যান্য সমস্ত দিকগুলি উৎপন্ন করতে পারি সেটা আমাদের দেখতে হবে।

কীভাবে নিজের বিকাশ করা যায় তার জন্য অনেকগুলি বিষয় বোঝার জন্য স্বাভাবিকভাবেই বুদ্ধের বিভিন্ন ব্যাখ্যা ছিল। তবে যেটা সত্যিই সুনির্দিষ্ট সেটা হ’ল আধ্যাত্মিক লক্ষ্যগুলি সম্পর্কে তাঁর জ্ঞান। এই আধ্যাত্মিক লক্ষ্যগুলির মূল নীতি এবং যা বিভিন্ন ক্রমে স্থাপন করা হয় সেটা হ’ল আমাদের অনুপ্রেরণা।

এই সাহিত্যটার জন্য “লাম-রিম” শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। এখানে “লাম” শব্দকে “মার্গ” হিসাবে অনুবাদ করা হয়েছে এবং “রিম”-কে সেই মার্গের ক্রমবদ্ধ অবস্থাকে বোঝায়। এই মার্গটি হ’ল মনের বিভিন্ন অবস্থা যা আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছনোর জন্য একটা শ্রেণীবদ্ধক্রমে বিকাশ করতে হয়।

এটা ঠিক যেমন আমাদের ভ্রমণ করার মতো; আমরা যদি রোমানিয়া থেকে ভারতে যেতে চাই, তাহলে ভারত হবে আমাদের চুড়ান্ত লক্ষ্য। কিন্তু সর্বোপরি, আমাদের ভারত পৌঁছনোর আগে আমাদের তুরস্ক, ইরান এবং আরও অনেকগুলি জায়গা দিয়ে যেতে হবে।

আধ্যাত্মিক অনুপ্রেরণাঃ আমাদের জীবনে অর্থ রাখা

“মার্গক্রমে” যা শ্রেণীবদ্ধ করা হয় সেটা সাধারণতঃ আমাদের অনুপ্রেরণা। বৌদ্ধ উপস্থাপনা অনুযায়ী এটা দুটো অংশের জিনিস। অনুপ্রেরণা একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্যের সাথে সংযুক্ত যা আমাদের আছে এবং একটা আবেগ যা আমাদের ঐ লক্ষ্যে পৌঁছতে পরিচালনা করে। আরও স্পষ্ট করে বলতে গেলে, আমরা কেন একটা লক্ষ্যে পৌঁছতে চাই তার একটা কারণ রয়েছে এবং সেই সাথে আছে একটা আবেগ যা আমাদের সেখানে পরিচালনা করে।

এটা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের নিরিখে মোটামুটি অর্থ বোঝায়। আমাদের জীবনের বিভিন্ন পর্যায়েও রয়েছে আমাদের বিভিন্ন লক্ষ্য। উদাহরণস্বরূপ, আমরা শিক্ষা অর্জন করতে চাই, আজীবন সঙ্গীর সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করতে চাই অথবা একটা ভাল কাজ খুঁজে পেতে চাই ইত্যাদি। এর সাথে ইতিবাচক আবেগের পাশাপাশি নেতিবাচক আবেগও জড়িয়ে থাকতে পারে; আর এটা ব্যক্তি বিশেষের মধ্যে পার্থক্য হয়ে থাকে। যাইহোক, ক্রমবদ্ধ অনুপ্রেরণার এই উপস্থাপনাটি এমন একটা বিষয় যা আমাদের সারা জীবনে প্রযোজ্য।

একই জিনিস আমাদের আধ্যাত্মিক অনুপ্রেরণার ক্ষেত্রে সত্য। এগুলি মনের অবস্থা যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সাথে সম্পূর্ণভাবে প্রাসঙ্গিক। আমরা আমাদের জীবন দিয়ে কী করছি? ঠিক আছে, সেখানে একটা “লৌকিক স্তর” রয়েছে, যেখানে আছে আমাদের পরিবার, চাকরী ইত্যাদি। কিন্তু আধ্যাত্মিক স্তরে কী করছি? এটাও আমাদের জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করে। এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে, আমাদের জীবনের এই দুটি দিক পরস্পর-বিরোধী বা পরস্পর একতরফা নয়, বরং সমন্বয়পূর্ণভাবে মিশ্রিত হয়ে আছে। তাদের শুধু সমন্বয়পূর্ণ হলেই হবে না, বরং একে-অপরের সমর্থন করাও দরকার। আমাদের আধ্যাত্মিক জীবনকে আমাদের স্বাভাবিক লৌকিক জীবন-যাপনের জন্য শক্তি জোগানো উচিত। অন্যদিকে আমাদের লৌকিক জীবনকে আমাদের আধ্যাত্মিক জীবন অনুশীলন করার জন্য সক্ষম হতে সংস্থানের ব্যবস্থা করা উচিত। মার্গক্রমের শ্রেণীবদ্ধ ক্রমপর্যায়গুলির মধ্য দিয়ে আমরা যা শিখি সেটাকে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োগ করা দরকার।

একজন শ্রেষ্ঠতর ব্যক্তি হয়ে ওঠা

তাহলে এখানে উপস্থাপিত বৌদ্ধ অনুশীলনের মধ্যে আমরা কী অনুশীলন করছি? সাধারণতঃ বৌদ্ধ অনুশীলনকে কয়েকটি কথায় সংক্ষিপ্ত করা যায়। সহজ ভাষায় আমরা শ্রেষ্ঠতর ব্যক্তি হওয়ার জন্য নিজের উপর কাজ করছি। “শ্রেষ্ঠতর ব্যক্তি”- এই শব্দটা বৈচারিক-এর মতো শোনায় কিন্তু এখানে কোনও বিচার একেবারেই বোঝানো হয়নি। বিষয়টা আসলে ওটা নয়। আমরা কেবল ক্রোধ, লোভ, স্বার্থপরতা ইত্যাদির মতো ধ্বংসাত্মক আচরণ এবং নেতিবাচক আবেগগুলি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি।

বৌদ্ধধর্ম কোনওভাবেই একতরফা একমাত্র ধর্ম, দর্শন বা অনুশীলন নয় যা এই ধরণের লক্ষ্যকে দৃষ্টিপাত করে। আমরা একই জিনিস খ্রিস্টান, ইসলাম, ইহুদী এবং হিন্দুধর্মে খুঁজে পাই আর এটা পাই মানবতাবাদেও। এটা সর্বত্রই আছে। আমরা অন্যান্যগুলিতে যা পাই তার মতোই বৌদ্ধ পদ্ধতিগুলি আমাদের শ্রেণীবদ্ধভাবে আরও ভাল ব্যক্তি (শ্রেষ্ঠতর) হওয়ার দৃষ্টিভঙ্গি প্রদানের মাধ্যমে এই ধরণের লক্ষ্য অর্জন করতে সহায়তা করতে পারে।

একজন “শ্রেষ্ঠতর ব্যক্তি” হওয়ার জন্য আমাদের প্রথমে ধ্বংসাত্মক উপায়ে কাজ-কর্ম করা বন্ধ করতে হবে, যার মাধ্যমে আমরা অন্যের ক্ষতি করি। এর জন্য আমাদের একটু আত্মনিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আরও গভীর স্তরে, একবার আমরা এটা করতে সক্ষম হয়ে গেলে, তারপরে আমাদের ক্রোধ, লোভ, আসক্তি, ঈর্ষা, বিদ্বেষ ইত্যাদি যে কারণ আমাদেরকে ধ্বংসাত্মকভাবে কাজ করায়, সেগুলিকে অভিভূত করার জন্য মনোনিবেশ করতে পারি। এটা করার জন্য আমাদের বুঝতে হবে যে, এই নেতিবাচক আবেগগুলি কীভাবে উত্থিত হয় এবং তারা কীভাবে কাজ করে। এইভাবে আমরা এক ধরণের বোধগম্যতার বিকাশ করি যা এই বিরক্তিকর আবেগগুলি হ্রাস করতে বা দূর করতে সহায়তা করে।

তারপরে আমরা আমাদের নিজের স্বার্থপরতা এবং স্বার্থকেন্দ্রিক পদ্ধতিকে সনাক্ত ক’রে আরও গভীরতর স্তরে যেতে পারি এবং কাজ করতে পারি এটা জানার জন্য যে, এই সমস্ত বিরক্তিকর আবেগের মধ্যে আমরা সত্যিই কী অন্তর্নিহিত আছে। আমরা সাধারণতঃ ভাবি, “আমাকে সবসময় আমার নিজস্ব উপায়ে থাকা উচিত।” আমরা যখন আমাদের উপায়ে সফল না হই আমরা তখন ক্রোধিত হই, এমনিতেও আমরা সবসময় সবকিছুকে আমাদের মতো হওয়াতে চাই, কিন্তু এটা সেরকম হবে কেন? একেবারেই কোনও কারণ নেই; তাসত্ত্বেও আমরা এটাকে সেইরকম চাই। প্রত্যেকে একইরকমভাবে চিন্তা-ভাবনা করে এবং আমরা সবাই সঠিক হতে পারি না।

আমরা আস্তে-আস্তে সময়ের সাথে-সাথে কাজ করব যেখানে আমরা এই অতি মৌলিক সমস্যার সৃষ্টিকর্তাকে কাটিয়ে উঠতে পারি। আমাদের স্বার্থপরতা, যখন আমরা বিশ্লেষণ করি, আমাদের “আমি বা অহং” এবং “আমার বা স্ব” ধারণার উপর নির্ভর করে। অন্য কথায়, কীভাবে আমাদের অস্তিত্ব রয়েছে সেটা এই ধারণাটির উপর আধারিত যে, “আমি বিশেষ কিছু”, অর্থাৎ আমরা প্রত্যেকেই জগতের কেন্দ্রবিন্দু, সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এবং যে অন্য সকলের থেকে স্বাধীন। আমাদের এই ধারণাটির খোঁজ করতে হবে। তার কারণ হ’ল এটা পরিষ্কার যে, সেখানে কিছু একটা বড় ভুল এবং বিকৃতি রয়েছে। শ্রেণীবদ্ধ মার্গ এটাই ব্যাখ্যা করে।

অনুপ্রেরণার প্রগতিশীল স্তরঃ ধর্ম-লাইট (ধর্মজ্যোতি)

বুদ্ধ দ্বারা শেখানো পদ্ধতিগুলি এই ধরণের লক্ষ্যের জন্য খুবই সহায়ক। মূলতঃ, আমাদের এমন একটা কারণ রয়েছে যার ফলে আমরা ক্রোধ এবং স্বার্থপরতার মতো ধ্বংসাত্মক আচরণ এবং নেতিবাচক আবেগগুলি এড়াতে চাই। সম্ভবতঃ এটাই হ’ল কারণ যার ফলে আমরা বুঝতে পারি যে, আমরা যখন এগুলির অধীনে প্রভাবিত থেকে কাজ করি তখন সেটা মনোরম হয় না। এগুলি তখন নিজের এবং অন্যদের সমস্যার কারণ হয়ে ওঠে। আমরা এই সমস্যাগুলি চাই না।

আমরা শ্রেণীবদ্ধ পদ্ধতিতে এই সমস্যা তৈরীর কাছে যেতে পারি। আমি যদি নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে কর্ম করি তাহলে এটা এখনই সমস্যা এবং অসুবিধা তৈরী করবে। উদাহরণস্বরূপ, আমরা যদি কারও সাথে লড়াইয়ে জড়িত হই এবং তাদের আহত করি তাহলে আমরাও আহত হতে পারি বা কারাগারে যেতে হতে পারে। আরও গভীর স্তরে, আমরা আমাদের ধ্বংসাত্মক আচরণের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবগুলিও দেখতে পারি, কারণ আমরা শুধু এখন বলে নয় বরং ভবিষ্যতেও সমস্যা এড়াতে চাই। এটাকে আরও বিকাশ করে আমরা আমাদের পরিবার, প্রিয়জন, বন্ধু-বান্ধব এবং সমাজের জন্য ঝঁঞ্ঝাট ও সমস্যা তৈরী এড়াতে চাইব। এগুলি সবই এই জীবনকালের সীমানার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। আরও একটু এগিয়ে গিয়ে, আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বৈশ্বিক উষ্ণতার মতো সমস্যা তৈরী করা এড়াতে চাইবার মতো আরও পরিবেষ্টিত শব্দে ভাবতে পারি।

এই সমস্ত অনুপ্রেরণার সাথে, এমনটা নয় যে আমরা যখন পরেরগুলি বিকাশ করি তখন আগেরগুলি ত্যাগ করি। পরিবর্তে সেগুলি জমা হয় এবং একে-অপরের সাথে যুক্ত হয়। এটি শ্রেণীবদ্ধ মার্গের সাধারণ নীতি। উপরে বর্ণিত সমস্ত কিছুকে আমি “ধর্ম-লাইট” বলি। এটা কেবল জীবনের জন্য বৌদ্ধ শিক্ষাগুলিকে “ধর্ম” উপস্থাপন করে, সেখানে পুনর্জন্মের কোনও উল্লেখ নেই। আমি এই শব্দগুলি “ধর্ম-লাইট” এবং “রিয়েল-থিং ধর্ম (ধর্ম আসল বস্তু)” যেটাকে কোকাকোলা লাইট এবং আসল চিনি যুক্ত প্যাকড কোকাকোলার সমান্তরালে তৈরী করেছি।

পুনর্জন্মকে সন্দেহের সুবিধা প্রদান ক’রে শুধুমাত্র এই জীবনকে উন্নত করার জন্য চিন্তা-ভাবনা করা

“ধর্ম” একটা সংস্কৃত শব্দ যা বুদ্ধের শিক্ষাকে বোঝায়। “লাইট”-এর অর্থ এই নয় যে এতে কোনও সমস্যা আছে, বরং এইটুকু যে এটা দৃঢ় নয়, বাস্তব সংস্করণ। তিব্বতী পরম্পরায় আমরা মার্গক্রম (লাম-রিম)-এর যে উপস্থাপনার সন্ধান পাই সেটা আসল মার্গক্রম, তবে এটা আমাদের অনেকের পক্ষে শুরুতে খুব বেশী হয়ে যেতে পারে। এর মূল কারণ হ’ল, এটা পুরোপুরিভাবে ধরে নেওয়া হয়েছে যে, আমরা পুনর্জন্মে পুরোপুরি বিশ্বাস করি এবং সমস্ত বিষয় পুনর্জন্মের ভিত্তিতে উপস্থাপন করা হয়। এই দৃষ্টিকোণ থেকে, আমরা আমাদের ভবিষ্যতের জীবনে সমস্যা এড়াতে এবং তাদের উন্নতির কাজ করতে শুরু করি।

আমরা যদি ভবিষ্যতের জীবনে বিশ্বাস না করতাম, তাহলে আমরা কীভাবে সম্ভবতঃ তাদের উন্নতি করার অনুপ্রেরণায় আন্তরিক হতে পারতাম? এটা কোনওভাবেই সম্ভব নয়। যখন আমাদের পূর্ব এবং অপর জন্মের ধারণাগুলি সম্পর্কে প্রশ্ন থাকে এবং যখন আমরা নিশ্চিত হই না বা তাদের বুঝতে পারি না, তখন আমাদের ধর্ম-লাইট দিয়ে শুরু করা দরকার। আমরা আমাদের আধ্যাত্মিক অনুশীলনে আসলে কী লক্ষ্য রেখেছি তার বিষয়ে আমাদের নিজেদের সাথে সৎ হতে হবে।

আমাদের মধ্যে বেশীর ভাগ মানুষ সম্ভবতঃ এই জীবনটাকে আরও একটু উন্নত করার লক্ষ্য করি। এটা একটা সম্পূর্ণ বৈধ লক্ষ্য। এটি একটি সূচনা এবং খুবই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। আমরা যখন ধর্ম-লাইটের এই স্তরে আছি তখন এটাকে স্বীকার করা দরকার যে, এটা ধর্ম-লাইট, আসল জিনিস নয়। দুটোতে বিভ্রান্ত হয়ে আমরা বৌদ্ধধর্মকে কেবলমাত্র থেরাপি বা স্বনির্ভররূপে হ্রাস করি। এটা একেবারে সীমিত এবং বৌদ্ধধর্মের পক্ষে শুভ নয়।

“রিয়েল থিং ধর্ম” বিষয়টা কী সেটা আমরা না বুঝতে পারলেও স্বীকার করতে হবে; একাকী বিশ্বাস করাই যাক যে এটা সত্য। আমাদের অবশ্যই খোলা মনে চিন্তা-ভাবনা করা উচিত, “অপর জন্ম ও মুক্তি সম্পর্কে তারা যা কিছু বলেছে সেটা সঠিক কিনা তা আমি নিশ্চিত নই, তবে এই মুহুর্তে আমি ধর্ম-লাইট স্তরে কাজ করব। আমি যখন আরও বিকাশ করব এবং অধ্যয়ন ও ধ্যান করব, সম্ভবতঃ আমি “রিয়েল থিং ধর্ম” সম্পর্কে আরও বুঝতে পারব।” বুদ্ধের প্রতি শ্রদ্ধা ও দৃঢ় বিশ্বাসের আধারে এটা একটা নিখুঁত বৈধ ও নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি যে, তিনি যখন এই বিষয়গুলির উপর শিক্ষাদান দিতেন তখন তিনি কোনও অর্থহীন কথা বলতেন না।

আমরা স্বীকার করতে পারি যে, আমাদের মধ্যে কিছু নির্দিষ্ট ধারণা থাকতে পারে যা ভবিষ্যতের জীবন ও মুক্তিকে সংজ্ঞায়িত ও ব্যাখ্যা করে। উদাহরণস্বরূপ, এটা সম্পূর্ণ সঠিক নাও হতে পারে এবং বৌদ্ধধর্ম সেগুলি পূর্ব ধারণাযুক্ত সংজ্ঞা বা ব্যাখ্যা গ্রহণ করবে না। সুতরাং আমরা কোন কিছুর অর্থকে যেভাবে মনে করি বা আমরা যা হাস্যকর পাই, বুদ্ধও হাস্যকর মনে করেছিলেন কারণ এটা একটা সম্পূর্ণ ভুল বোঝাপড়া। উদাহরণস্বরূপ, আমরা এমন একটা আত্মার মতো যা ডানাযুক্ত এবং যা শরীর থেকে বেরিয়ে আসে আর পরে অন্যটিতে প্রবেশ করে। এমন একটা বিষয় বুদ্ধ কখনও গ্রহণ করেননি। বুদ্ধও এই ধারণাটিকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন যে আমরা নিজেরাই সর্বশক্তিমান ঈশ্বর হতে পারি।

অনাদি পূর্বজন্মের চিন্তা-ভাবনার সুবিধা

এই মার্গক্রমে উপস্থাপিত বেশীরভাগ পদ্ধতি “ধর্ম-লাইট” বা “রিয়েল থিং ধর্ম” উপায়ে প্রয়োগ করা যেতে পারে। তবে সেখানে এমন কিছু পদ্ধতি রয়েছে যা ভবিষ্যতের জীবনকে বোঝার উপর নির্ভর করে। উদাহরণস্বরূপ, সকলের প্রতি সমান মৈত্রী বিকাশ করতে সক্ষম হওয়ার জন্য একটি পদ্ধতিকে স্বীকৃতি দেওয়া উচিত যে, প্রত্যেকেরই অনাদি পুনর্জন্ম হয়েছিল। এবং সেখানে প্রাণীর সীমিত সংখ্যাও রয়েছে।

এই প্রারম্ভিক বিন্দু থেকে, এটা যুক্তিযুক্তভাবে অনুসরণ করে এক পর্যায়ে বা অন্য একেক সময় প্রতিটি প্রাণীই আমাদের মা এবং অন্য সকলের মা হয়েছে। তেমনভাবে আমরাও অন্য প্রতিটি প্রাণীর মা হয়েছি। যে কেউ এই যুক্তির গাণিতিক প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারে; এর কোনও আদি নেই, তবে আছে সীমিত সংখ্যক প্রাণী। যদি অসীম সময় এবং অসীম প্রাণী উভয়ই থাকত তাহলে আমরা প্রমাণ করতে পারতাম যে, এটা এইভাবে কাজ করে। স্পষ্টতই সম্পর্কযুক্ত করা একটা কঠিন বিষয়, বিশেষ করে আমরা যদি অসীম পূর্ববর্তী পুনর্জন্মের কথা কখনও না ভেবে থাকি। অসীম পুনর্জন্মের ভিত্তিতে সব প্রাণীরা আমাদের যে মাতৃ ভালোবাসা দেখিয়েছে, তার প্রশংসা করেছে এবং এর বিনিময়ে সদয় এবং মৈত্রীময় হতে চেয়েছি, সে সম্পর্কে আমরা সকলেই ভাবতে পারি। সেখানে একটা পূর্ণ বিকাশ রয়েছে যা এটার উপর আধারিত। এই প্রক্রিয়াটির অংশ দেখে যে এই ব্যক্তি বা সেই ব্যক্তিটি কখন আমাদের মা ছিলেন যে সম্পর্কে এটা সময়ের বিষয় মাত্র। আমরা দশ মিনিট, দশ দিন, বা দশ বছর ধরে আমাদের মাকে দেখেছি বা না দেখে থাকি, তাহলেও কিন্তু তিনি এখনও আমাদের মা। একইভাবে, আমরা যদি তাকে দশ জন্মকালে না দেখে থাকি তাহলেও কিন্তু তিনি এখনও আমাদের মা। এটা হ’ল ভাবনার একটা উপায় যা খুব সহায়ক হতে পারে যদি আমরা পুনর্জন্মে বিশ্বাস করি। এই বিশ্বাসটা না থাকলে, এটা একেবারে অর্থহীন হয়ে দাঁড়ায়।

এটা প্রযোজ্য, বিশেষ করে যখন আমরা মশার কথাও ভাবি, শুধু মানুষই নয়। এই মশা আগের জন্মে নিশ্চয়ই আমাদের মা ছিল, কারণ পুনর্জন্ম তো যে কোনও মানসিক ক্রিয়াকলাপের আকারে হতে পারে। এর একটা ধর্ম-লাইট সংস্করণ রয়েছে, যেখানে আমরা দেখি যে কেউ কীভাবে আমাদের বাড়িতে ফিরিয়ে আনতে পারে, আমাদের যত্ন নিতে পারে এবং আমাদের খাওয়াতে পারে। প্রত্যেকেই এতে সক্ষম; আমরা যখন ভ্রমণ করি, আমরা প্রায়শই দেখতে পাই সম্পূর্ণ অপরিচিত ব্যক্তিরা আমাদের জন্য খুব ভাল হতে পারে এবং আমাদের আতিথেয়তা প্রদান করে। সেই ব্যক্তি পুরুষ বা স্ত্রী কিনা সেটা বিবেচ্য নয়, সকলেই আমাদের প্রতি মায়ের মতো আচরণ করতে পারে; একটা শিশু যখন সে বড় হয়, তখন আমাদের যত্ন নিতে সহায়তা করতে পারে। এটা সামান্য সীমিত হলেও খুবই সহায়ক হতে পারে কারণ এটা ভাবাই কঠিন যে আমরা যে মশাটিকে দেখি সেটা আমাকে বাড়িতে নিয়ে যেতে পারে এবং মায়ের মতো যত্ন নিতে পারে।

“ধর্ম-লাইট” এবং রিয়েল থিং ধর্ম” স্তরে কীভাবে পদ্ধতি প্রয়োগ করা যেতে পারে তার সম্পর্কে এটা কিছুটা ব্যাখ্যা করে। উভয়ই তাদের নিজস্ব উপায়ে খুব সহায়ক, তবে “ধর্ম-লাইট” সংস্করণ সীমিত। “রিয়েল থিং ধর্ম” সম্ভাবনার বৃহত্তর জগৎ সুগম করে দেয়। আমরা যে কোনও স্তরকে প্রয়োগ করি না কেন, মূল বিষয়টি হ’ল এটাকে দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োগ করা। ধরুণ, আমরা যখন ট্রাফিকের কবলে পড়ি, বা দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা করি এবং আমরা অন্যের উপর ক্রোধিত হই বা অধৈর্য্য হয়ে উঠি, ঐ সময় আমরা তাদের সবাইকে আমাদের মায়ের মতো ভাবতে পারি। আমরা এটাকে কোনও অতীত জীবনে বা এই জন্মের অংশ হিসাবে ভাবতে পারি। এইরকম ভাবনা আমাদের ক্রোধকে শান্ত রাখতে, ধৈর্য্য বাড়িয়ে তুলতে সহায়তা করে। যদি আমাদের মা সত্যিই আমাদের লাইনে আগে থাকত, তাহলে আমি নিশ্চিত যে, আমাদের আগে তিনি সেবা লাভ করলে আমরা কিছু মনে করতাম না। আসলে আমরা সম্ভবতঃ তাকে আগে সেবা পরিবেশন করতে পারার জন্য খুব খুশি হই। এইভাবে আমরা এই বোধগম্যটা প্রয়োগ করার চেষ্টা করতে পারি। আমাদের কেবল ধ্যানের আসনে বসেই আমাদের মনের এই অবস্থাগুলি বিকাশ করার কথা নয়, বরং এটাকে আমাদের দৈনন্দিন জীবনেও প্রয়োগ করতে হবে।

নিজের উপর কাজ করার পদ্ধতি হিসাবে ধ্যান

যখন ধর্মপ্রক্রিয়াটি নিজের উপর কাজ করা হিসাবে বর্ণনা করা হয়, তখন সেটা এটাকেই বোঝায়। আমরা যখন আমাদের কক্ষে একটা শান্ত এবং নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে ধ্যান করি, তখন আমরা এই ধরণের বোধগম্য এবং এই ধরণের আরও ইতিবাচক মনের অবস্থা তৈরী ক’রে অনুশীলন করি। আমরা আমাদের কল্পনাটি অন্যান্য লোকদের সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করতে এবং তাদের প্রতি গঠনমূলক মনোভাব বিকাশের জন্য ব্যবহার করি। যদিও এটা কোনও পারম্পারিক পদ্ধতি নয়, তাসত্ত্বেও আমি মনে করি যে, আমাদের ধ্যানের ক্ষেত্রে লোকের ছবি দেখার পক্ষে এটা পুরোপুরি বৈধ। ২৫০০ বছর আগে তাদের কাছে মানুষের ছবি ছিল না। আমি মনে করি না যে এই প্রক্রিয়াটিতে আমাদের আধুনিক প্রযুক্তি গ্রহণে কোনও সমস্যা থাকতে পারে।

একবার আমরা একটা নির্দিষ্ট ইতিবাচক মানসিক অবস্থার সাথে পর্যাপ্ত পরিমাণে পরিচিতি অর্জন করার পরে, আমরা এটাকে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োগ করার চেষ্টা করি। এটাই সম্পূর্ণ উদ্দেশ্য যে, আপনি যখন গদিতে বসে আছেন শুধু তখন মৈত্রী ভাবনা করলেন, এবং তারপরে আপনার পরিবার এবং সহকর্মীদের উপর রাগ করলেন। এটা আপনার পছন্দসই ফলাফল নয়। সুতরাং ধ্যান-অনুশীলনকে কখনই আমাদের জীবন থেকে রক্ষা পাওয়ার মতো আচরণ করা উচিত নয়, যেখানে শুধুমাত্র আমরা শান্ত হওয়ার জন্য কিছুটা সময় ব্যয় করতে চাই। এটাও এক ধরণের পলায়ন যে, আমরা একধরণের অবিশ্বাস্য বস্তুর কথা ভাবতে-ভাবতে কোনো কল্পনার জগতে চলে যাই। ধ্যান-অনুশীলনটাকে একটু আলাদা হওয়া উচিত অর্থাৎ জীবনের সমস্যাগুলির সাথে মোকাবিলা করার জন্য আমরা প্রশিক্ষণ দিই। এটা একটা কঠিন কাজ। এই বিষয়ে আমাদের নিজেদেরকে বোকা বানানো উচিত নয়, বা বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে অথবা এটা দ্রুত এবং সহজ ভেবে নিজেকে বোকা বানানো উচিত নয়। স্বার্থপরতা এবং আমাদের অন্যান্য ধ্বংসাত্মক আবেগকে পরাভূত করা সহজ নয়, কারণ সেগুলি খুবই গভীর অভ্যাসের উপর আধারিত। জিনিসপত্রের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করা এবং এই ধ্বংসাত্মক বিভ্রান্তি থেকে নিজেকে মুক্ত করাটাই হ’ল সেগুলিকে পরাভূত করার একমাত্র উপায়।

সারসংক্ষেপ

বৌদ্ধধর্মের অনুশীলন দ্বারা “ধর্ম-লাইট” এবং “রিয়েল থিং ধর্ম”-এর মধ্যে পার্থক্য করা যায়। ধর্ম-লাইটের সাহায্যে আমরা আমাদের মানসিক সরঞ্জাম দিয়ে নিজেকে সজ্জিত ক’রে এই জীবনের মান উন্নত করতে চাই যাতে আমরা সমস্যাগুলির সাথে আরও ভাল ক’রে মোকাবিলা করতে পারি যে, সমস্যাগুলির মধ্যে আমরা আমাদের জীবনকে নিক্ষেপ করে রেখেছি। ধর্ম-লাইটে একেবারে কোনও দোষ নেই, তবে কোকা-কোলা লাইটের মতো এটা কখনোই আসল জিনিসের মতো সুস্বাদু হতে পারে না।

পারম্পারিকভাবে, ধর্ম-লাইটের ক্ষেত্রে আমরা যে ধারণাগুলি নিয়ে আলোচনা করেছি, লাম-রিম (মার্গক্রম) শিক্ষাগুলি সেগুলির কোনও উল্লেখ করে না। এর কারণ হ’ল- এটা অতীত এবং ভবিষ্যতের জীবনের বিশ্বাসকে ধরে রাখে। তবুও আমাদের জীবনের উন্নতি এবং আরও ভাল মানুষ হওয়ার জন্য “রিয়েল থিং ধর্ম” অনুশীলনের পথে এটা জরুরী প্রথম পদক্ষেপ।

Top