আপনাদের মধ্যে যারা তিব্বত থেকে এসেছেন এবং বিপুল সংখ্যায় চীনারা যারা এখানে উপস্থিত আছেন, আপনাদের সকলকে একটা বিষয়ে সুনিশ্চিত হতে হবে। যখন কোন ভণ্ডামীপূর্ণ, মিথ্যা আধ্যাত্মিক গুরুর সাথে আপনাদের সাক্ষাৎ হবে, তখন আপনাদেরকে তার মিথ্যা এবং প্রতারণা প্রকাশ করতে হবে। এই বিষয়ে আপনাদের নিশ্চিত হতে হবে।
তিব্বত ও চীন থেকে বিশাল সংখ্যায় যারা আজ এখানে এসেছেন তাদের একটি বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে। আপনারা যদি কোন ভণ্ড এবং নকল ধর্মগুরুর খোঁজ পান, তাদের মিথ্যাচার ও প্রতারণার মুখোশটি খুলে দিতে হবে। এ বিষয়ে আপনাদের দৃঢ় নিশ্চয় হবার প্রয়োজন আছে।
কয়েক বছর আগে ধর্মশালায় পশ্চিম থেকে আগত কয়েকজন শিক্ষক একটি সম্মেলনে তিব্বতী বৌদ্ধধর্ম, জেন বৌদ্ধধর্ম ইত্যাদি নিয়ে শিক্ষা দান করেছিলেন। সম্মেলনের অধিবেশনে কতিপয় শিক্ষক অভিযোগ করলেনঃ “বর্তমানে জেন গুরুদের মধ্যে এমন কয়েকজন আছে যাদের বলা যেতে পারে যে ওরা ভীষণ দুরাচারী। তেমনই তিব্বতী লামাদের মধ্যেও কয়েকজন রয়েছেন যারা ভীষণ দুরাচারী। এমন অবস্থায়, তাদের নিরস্ত করার জন্য আমাদের কিছু উপায়-কৌশল অবলম্বন করতে হবে।”
আমি তখন বলেছিলাম: “তাদের নিরস্ত করার জন্য আমাদের বিশেষ কিছু করার প্রয়োজন নেই। ভগবান বুদ্ধ পরিষ্কার ক’রে সুনির্দিষ্ট আদেশে কী গ্রহণীয় ও কী বর্জনীয় সেটা বলেছেন। উদাহরণ স্বরূপ, তিনি সুনির্দিষ্টভাবে বলেছেন- ‘অন্যদের এই শিক্ষার লক্ষ্য অনুরূপ আচরণ করার জন্য প্রেরণা দাও আর তোমরাও এই লক্ষ্যানুযায়ী নিরবচ্ছিন্নভাবে কর্ম কর।” কিন্তু ওরা সেটা শোনে না, তার কোনও মূল্যই দেয় না। ওরা যদি ভগবান বুদ্ধের বাণীরই কোন মূল্য না দেয় তাহলে আমাদের কথায় কী কাজ হবে? কোন কাজই হবে না। ঘটনাগুলিকে আপনাদের প্রকাশ্যে আনা প্রয়োজন। পত্রিকায় প্রকাশ করুন, লোকগুলির নাম উল্লেখ করে লিখুন যে এই লোকগুলি ধর্মোপদেশ দেয় কিন্তু ঘৃণ্য কাজ করে। বিষয়টি প্রচার করুন। এতে কিছুটা হলেও বন্ধ হবে এবং উপকার হবে। এই ছাড়া আমাদের কথায় ওরা থামবে না। আমি সেটা বলেছিলাম।
এটা ওই রকম আপনাদের সেটা বুঝতে হবে। যখনই কোন ভণ্ড, মিথ্যা শিক্ষাগুরু এমন ঘটনা ঘটাবে তাদের নাম প্রকাশ্যে আনুন এবং যদি গ্রেফতার করানোরও প্রয়োজন হয় তাহলে তাদের গ্রেফতার করান। আমেরিকাতে এমন ঘটনা ঘটেছে এবং কয়েকজন গ্রেফতার হয়েছে। সম্ভবতঃ তাইওয়ানেও কিছু রয়েছেন যারা গ্রেফতার হবেন। আইন যেন তাদের কোনভাবেই না ছাড়ে।
যখন এই ধরণের কিছু লামা নামধারী ধর্মগুরু মানুষের চোখে অশ্রদ্ধার পাত্র হয়ে ওঠে, আপনাদের দুশ্চিন্তা করার প্রয়োজন নেই যে এর কারণে বৌদ্ধধর্মের ক্ষতি হবে। কয়েকবছর আগের একটি ঘটনা, আমি তখন ইংল্যান্ডে ছিলাম। কোন এক ব্রিটিশ ধর্ম প্রতিষ্ঠানের একজন লামা নারীর প্রতি অশোভন কুকর্ম করায় কলঙ্ক ক’রে বসল। এর কারণে তাকে আমেরিকাতে গ্রেফতার করা হল। তার শিষ্যরা আমায় বলেছিল যে তারা ভীষণ উদ্বিগ্ন। তারা উদ্বিগ্ন হয়েছিল, কারণ ঐ ঘটনাটি হয়তো বৌদ্ধ ধর্মোপদেশের উপর প্রভাব ফেলবে। আমি বলেছিলাম যে, উদ্বিগ্ন হওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। ভগবান বুদ্ধের আবির্ভাবের পর দুই হাজার পাঁচ শত বছর অতিবাহিত হয়েছে। বর্তমানে এমন কয়েকজন ধর্মগুরু আছেন যারা অশ্রদ্ধার পাত্র হয়ে গিয়েছিল। এরা বুদ্ধের উপদেশের কোন ক্ষতি করতে পারবে না। এই তথাকথিত গুরুরা, যারা আজ অশ্রদ্ধার পাত্র বলে চিহ্নিত হয়েছে, তারা বুদ্ধোপদেশের কোনও ক্ষতি করতে পারবে না। আমি সেটা বলেছিলাম। আমি এই বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী।