সেরকোঙ্‌ রিনপোছের জীবন এবং ব্যক্তিত্ব

দালাই লামার সহায়ক শিক্ষক রূপে রিনপোছের ভূমিকা

চেনশব সেরকোঙ্‌ রিনপোছে একজন বৃহৎ আকারের মানুষ ছিলেন- একজন ভিক্ষুর বেশে মুন্ডিত মাথা, লাল চীবর এবং গভীর রেখাযুক্ত মুখমন্ডল। এর কারণে তিনি নিজের বয়সের থেকে বেশী বয়স্ক মনে হতো। তাঁর বিনীত এবং বিজ্ঞ আচরণ তথা ভদ্র হাস্য স্বভাবের জন্য তাঁকে পৌরাণিক গ্রন্থে বর্ণিত আদর্শ জ্ঞানী ঋষি বেশী মনে হতো। তাঁর সাথে দেখা করতে আসা পাশ্চাত্য জগতের মানুষজন তাঁর এই গুণের কারণে প্রভাবিত না হয়ে থাকতে পারতেন না। উদাহরণস্বরূপ, তাঁর সাথে ধর্মশালায় দেখা করার পর লোকপ্রিয় সিনেমা “স্টার ওয়ারস্‌”-এর নির্মাতাগণ সিনেমাটিতে আধ্যাত্মিক মার্গদর্শকের রূপে য়োডা নামক চরিত্রটি তাঁর ব্যক্তিত্বের উপর আধারিত করার নির্ণয় নিয়েছিল। রিনপোছে এই সিনেমাটি কখনও দেখেননি, কিন্তু কোনো সন্দেহ নেই যে, তাঁর ব্যক্তিত্বের এই মজাদার অনুকরণটি দেখে তিনি না হেসে থাকতে পারতেন না। কিন্তু পরম পূজ্য দালাই লামার সাথে তাঁর সম্পর্ক রিনপোছের সবথেকে বড় বৈশিষ্ট্য ছিল।

দালাই লামা হলেন তিব্বতের আধ্যাত্মিক এবং পার্থিব নেতা। তার উত্তরাধিকারের পরম্পরা পুনর্জন্মের মাধ্যমে চলতে থাকে। একজন দালাই লামার মৃত্যুর পর তার নিকটতম সহযোগী একটি জটিল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটি ছোট বালক রূপে তাঁর পূনর্জন্ম সনাক্ত এবং স্থাননির্দেশ করেন। পরবর্তীকালে প্রত্যেক নতুন দালাই লামাকে সবথেকে যোগ্য শিক্ষকদের মাধ্যমে সর্বোত্তম শিক্ষা প্রদান করা হয়। এই শিক্ষক মন্ডলীতে একজন বরিষ্ঠ শিক্ষক, একজন কনিষ্ঠ শিক্ষক আর সাতজন চেনশব থাকেন, যাদের সামান্য অনুবাদের ভাষায় “সহায়ক শিক্ষক” বলা হয়।

তিব্বতী বৌদ্ধধর্মের প্রধান চারটি পরম্পরা আছে। এগুলি আলাদা-আলাদা বংশানুক্রমের মাধ্যমে ভারত থেকে প্রসারিত হয়েছে। আলাদা হওয়া সত্ত্বেও তাদের মৌলিক শিক্ষাগুলির মধ্যে বড় কোনো অন্তর্বিরোধ নেই। দালাই লামার নয়টি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষক গেলুগ পরম্পরা থেকে আসেন। এই পরম্পরাটি চারটি শাখার মধ্যে সবচেয়ে বড়। তাদের মৌলিক শিক্ষা পূর্ণ করার পর দালাই লামা বাকী তিনটি পরম্পরা, যথা- ঞিঙ্‌মা, কাগ্যুদ্‌ এবং সাক্য, গুরুদের থেকেও শিক্ষা গ্রহণ করেন। সাতজন চেনশব মনোনীত হয় তিব্বতের রাজধানী ল্‌হাসার নিকটবর্তী সাতটি প্রমুখ গেলুগ মঠ থেকে এক-এক জন করে। এই শিক্ষকদের বাছাই করা হয় তাদের জ্ঞান, ধ্যান-সাধনা আর সবচেয়ে বড় কথা, তাদের চারিত্রিক উন্নয়নের উপর আধার ক’রে। সেরকোঙ্‌ রিনপোছে গাদেন জংসে থেকে নিযুক্ত চেনশব ছিলেন। গেলুগ পরম্পরার সংস্থাপক চোংখাপা এই মঠের স্থাপনা করেছিলেন। ১৯৪৮ সালে যখন রিনপোছে চেনশব হিসাবে নিজের কার্যভার নিয়েছিলেন তখন তাঁর বয়স ছিল ৩৪ বছর; সেই সময় দালাই লামার বয়স ছিল ১৩ বছর। সাতজন চেনশবের মধ্যে তিনি একাই ছিলেন, যিনি ১৯৫৯ সালে ভারতে পরম পূজ্যের নির্বাসনের সময় তাঁর সাথে এসেছিলেন।

রিনপোছের দক্ষতার ক্ষেত্র

১৯৮৩ সালে তাঁর পরিনির্বাণের সময় পর্যন্ত, রিনপোছে প্রথমে ল্‌হাসা এবং পরবর্তীকালে ধর্মশালায় নিষ্ঠাপূর্বক পরম পূজ্যের সেবা করেছিলেন। তাঁর প্রমুখ দায়িত্ব ছিল পরম পূজ্য দ্বারা অর্জন করা সব শিক্ষায় উপস্থিত থাকা এবং পরে তাঁর সাথে শাস্ত্রার্থ করে এটা সুনিশ্চিত করা, যাতে প্রদত্ত শিক্ষাগুলি পরম পূজ্য সঠিক ভাবে বুঝে নেন। আসলে পরম পূজ্যই চেয়েছিলেন যে, তিনি যেন সব শিক্ষাসভায় তাঁর সাথে থাকেন, যাতে কম করে একজন লামা তাঁর সাথে-সাথে সেই শিক্ষাটি এবং প্রশিক্ষণটি গ্রহণ করে নেয়। এই ভাবেই পরম পূজ্যের মতো রিনপোছে তিব্বতী বৌদ্ধধর্মের প্রধান চারটি পরম্পরার পন্ডিত হয়ে গিয়েছিলেন। তিনি বৌদ্ধ প্রশিক্ষণের দুটি প্রমুখ শাখার, সূত্র এবং তন্ত্রের সব দিকগুলি সম্বন্ধে জ্ঞানার্জন করেছিলেন। সূত্র প্রাথমিক শিক্ষা প্রেরণ করে, অন্যদিকে তন্ত্রে আত্ম-পরিবর্তনের গভীরতম বিধিগুলি বিদ্যমান আছে।

রিনপোছে পারম্পরিক বৌদ্ধ কলা এবং বিদ্যায়ও সুদক্ষ ছিলেন। উদাহরণস্বরূপ, তিনি তান্ত্রিক অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত প্রতিকাত্মক দুই বা তিন স্তরীয় লোকধাতু (মণ্ডল) এবং পুরাবশেষ রাখার জন্য স্তুপের মাপ-জোক এবং নির্মাণ কার্যে বিশেষজ্ঞ ছিলেন। এছাড়াও তিনি তিব্বতী ভাষার কাব্য, রচনা এবং ব্যকরণেরও বিশারদ ছিলেন। এই কারণে তাঁর প্রশিক্ষণ শৈলীতে একপ্রকারের সুরুচীপূর্ণতা ছিল এবং সংবেদনশীলতা ছিল যা প্রায়োগিক বিবরণের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কটা খুব সুন্দরভাবে ভারসাম্য থাকত।

সেরকোঙ্‌ রিনপোছে তিব্বতী বিধানের ভবিষ্যৎবাণী (মো)-এরও বিশেষজ্ঞ ছিলেন। এই ব্যবস্থার সাধক ধ্যান-সাধনার গভীর অবস্থায় পৌঁছে অনেকবার তিনটি পাশা ছোড়েন এবং তাঁর পরিণামের ব্যাখ্যা করে কঠিন নির্ণয় নিতে লোকেদের সহায়তা করেন। এছাড়াও তাঁর তিব্বতী জ্যোতিষ শাস্ত্রেরও জ্ঞান ছিল। এই বিদ্যায় গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থানের গণনা করার জন্য জটিল গণিতের উপর পূর্ণ দক্ষতা অর্জন করা আবশ্যক। কিন্তু এই গূঢ় বিদ্যাগুলির প্রতি তাঁর দৃষ্টিকোণ সর্বদা ব্যবহারিক এবং সহজই ছিল। তিনি মানতেন যে এই বিদ্যাগুলির প্রয়োগ ব্যবহারিক জ্ঞানের স্থান নেওয়ার জন্য নয়, বরং সেটার অনুপূরক রূপে করা উচিত।

দালাই লামার শিক্ষক হওয়ার পর রিনপোছের বিনম্রতা

নিজের আধিকারিক অবস্থানের গুরুত্ব এবং বিস্তীর্ণ জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও রিনপোছে সবসময় বিনম্রই ছিলেন। যদিও তিনি পরম পূজ্যের প্রমুখ শিক্ষকদের মধ্যে একজন ছিলেন বিশেষতঃ তন্ত্রবিদ্যার সবথেকে জটিল বিষয় কালচক্রের, আর যদিও তিনি তাঁর প্রতিষ্ঠিত শিষ্যের জন্য অনেকগুলি তান্ত্রিক অভিষেক সম্পন্ন করেছিলেন, কিন্তু তিনি কখনই নিজের জন্য ইংরেজি ভাষার “অ্যাসিস্ট্যান্ট টিউটর”-এর সম্বোধন পছন্দ করতেন না। তাঁর ইচ্ছা ছিল যে, তাঁর চেনশব উপাধির শাব্দিক অনুবাদ “শাস্ত্রার্থ সেবক” রূপেই করা হোক, কিন্তু শেষে তিনি “আচার্য শাস্ত্রার্থ সহযোগী”-এর অনুবাদে সহমত পোষণ করেছিলেন।

সেরকোঙ্‌ রিনপোছে আনুষ্ঠানিক এবং অনানুষ্ঠানিক, দুই প্রকারেই পরম পূজ্যের সেবা করেছিলেন। উদাহরণস্বরূপ, পরম পূজ্য ঘনঘন সাধারণভাবে সমগ্র বিশ্বের জন্য এবং বিশেষ করে নিজের লোকেদের জন্য ধ্যান-সাধনা অনুশীলন এবং আনুষ্ঠানিক সমারোহের (পূজা) আয়োজন করেন। এর মধ্যে কিছু অনুষ্ঠান তিনি ব্যক্তিগতভাবে, কিছু নির্বাচিত ভিক্ষুদের সাথে একান্তে করেন, এবং অন্যান্য অনুষ্ঠানগুলি বৃহৎ জন সমুদয়ের উপস্থিতিতে। পরম পূজ্য রীতিমত রিনপোছেকে এই অনুষ্ঠানগুলিতে যোগ দেওয়ার জন্য অথবা পরম পূজ্য ব্যস্ত থাকার পরিস্থিতিতে তাঁর পক্ষ থেকে এই অনুষ্ঠানগুলি সম্পন্ন করানোর জন্য অথবা এর সঞ্চালন করার জন্য অনুরোধ করতেন। এছাড়াও যখন পরম পূজ্য উপদেশ দিতেন তখন রিনপোছে তাঁর ডান দিকে বসতেন এবং পরম পূজ্যের আবশ্যক হলে কোনো শব্দের সরবরাহ করতেন অথবা পরম পূজ্য দ্বারা কোনো প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হলে অথবা সংশয় ব্যক্ত করলে তার সমাধান বলতেন। যখন অন্য শিক্ষকদের পরম পূজ্যকে সরাসরি কোনো শিক্ষা প্রেষিত করতে সংকোচ অনুভব হতো তখন সেটা তারা রিনপোছের মাধ্যমে প্রেষিত করতেন। কোনো আধ্যাত্মিক চুঙ্গির মাধ্যমে রিনপোছে সেই নির্দেশগুলি পরম পূজ্য অবধি পৌঁছে দিতেন।

কূটনৈতিক কৌশল

পরম পূজ্য প্রায়শই বলতেন যে, রিনপোছে তাঁর নীতিগুলিকে মঠ এবং জনসাধারণ পর্যন্ত পৌঁছানোর পরামর্শদাতা এবং মুখ্য প্রতিনিধি ছিলেন। এর কারণ এটাই ছিল যে, রিনপোছে ধার্মিক তথা সাংসারিক উভয় ক্ষেত্রেরই কুশল নীতিজ্ঞ ছিলেন। রিনপোছে প্রায়শই স্থানীয় বিচারের মধ্যস্থতা করতেন আর নিজের বিশেষজ্ঞতার ক্ষেত্রগুলিতে স্থানীয় শিষ্টাচারের বিষয়ে পরম পূজ্যের কার্যালয়গুলিতে পরামর্শ দিতেন।

তাঁর আবেগপূর্ণ রসিকতাবোধ তাঁর কুটনৈতিক কৌশলকে আরও অধিক প্রখর বানাত। মানুষ তাঁকে কৌতুক এবং রসিকতাপূর্ণ ঘটনা শোনাতে আসত, কারণ তিনি স্বয়ং এগুলি শুনে আনন্দিত হতেন, আবার অন্যদেরকেও তিনি এই ঘটনাগুলি শোনাতেন। হাসার সময় তাঁর পুরো শরীর নড়তো, এবং তাঁর হাসি আশেপাশের সব লোকের উপর হাসির প্রভাব ফেলত। নিজের ব্যবহারিক জ্ঞান এবং রসিকতাবোধের কারণে তিনি সকলের কাছে প্রিয় ছিলেন।

মঠগুলির পুনঃস্থাপনা আর রাজ্যের ভবিষ্যৎ বক্তাদের মাধ্যমগুলির প্রশিক্ষণ

রিনপোছে ভারতে এমন অনেক মঠ এবং ভিক্ষুণীদের মঠের পুনঃস্থাপন করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন যেগুলি চীনা আক্রমণের সময় নষ্ট করে দেওয়া হয়েছিল। এই জন্য তিনি অভিষেক প্রদান করেছিলেন আর উপদেশ দিয়েছিলেন, যাতে এই স্থানে পারম্পরিক বিধি-অনুষ্ঠান পুনরায় শুরু করা যায়। এটা নেচুঙ্‌ এবং গাদোঙ্‌ রাজ্যের ভবিষ্যৎবাণীর দুটি মঠের বিষয়ে বিশেষভাবে বলা যায়। জীবনভর এই দুটি মঠের সাথে তার গভীর সম্পর্ক ছিল। যেভাবে রিনপোছে পরম পূজ্যের মানবীয় পরামর্শদাতা রূপে কাজ করতেন, তেমনভাবেই দালাই লামার দৈবিক পরামর্শদাতা হলেন রাজ্য ভবিষ্যৎবক্তা। ভাবনা-সমাধির অবস্থায় তারা তাঁর কথা বলেন। রিনপোছে স্বয়ং মধ্যস্থকারীদের আধ্যাত্মিক প্রশিক্ষণের দেখাশোনা করতেন যাতে তারা উচ্চ জ্ঞানের পবিত্র বাহক হতে পারে।

রিনপোছে বুদ্ধের শিক্ষা গ্রহণ করা অথবা সেটা অন্যদের প্রদান করার পথে কষ্ট পেলেও কখনও বিচলিত হতেন না। উদাহরণস্বরূপ, এক গ্রীষ্ম কালে তিনি বুদ্ধগয়ার তীব্র গরম কেবল খুনু লামা রিনপোছের থেকে কালচক্রের শিক্ষা গ্রহণ করার জন্য সহ্য করেছিলেন। ভারতের দিকের হিমালয়ের কোলে অবস্থিত তিব্বতী সংস্কৃতির কিন্নোরের এই মহান আচার্য আধুনিক সময়ের একমাত্র জীবিত আচার্য ছিলেন, যাকে তিব্বতী লোকজন বোধিসত্ত্ব মনে করত। বোধিসত্ত্ব তাকেই বলা হয় যিনি পূর্ণতঃ নিঃস্বার্থবান এবং পরহিতের উদ্দেশ্যে বোধিলাভের জন্য পুরোপুরি সমর্পিত। বুদ্ধগয়া হল সেই পবিত্র স্থান যেখানে বুদ্ধ বোধিবৃক্ষের নীচে বুদ্ধত্ব লাভ করেছিলেন। এই স্থানটি ভারতের সবথেকে গরিব এবং তীব্র গরম প্রদেশে অবস্থিত। গরম কালে এখানে তাপমাত্রা ১২০ ডিগ্রী ফারেনহাইট অর্থাৎ মোটামুটি ৫০ ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত পৌঁছে যায়। বার-বার ইলেকট্রিক চলে যাওয়া, জলের অভাব আর বাতানুকুল যন্ত্র না চলার কারণে সেখানে থাকা খুবই কষ্টকর হতে পারে। খুনু লামা সেখানে জানালা ছাড়া একটি ছোট ঘরে থাকতেন যেখানে একটা পাখাও ছিল না।

হিমালয়ের স্পিতি উপত্যকায় বৌদ্ধধর্মের পুনর্গঠন

রিনপোছে বৌদ্ধধর্মের শিক্ষা প্রদান করার জন্য ব্যাপকভাবে ভারত, নেপাল, দুইবার পশ্চিম ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকা ভ্রমণ করেছিলেন। যদিও তিনি শুধু প্রমুখ শহরগুলিই ভ্রমণ করেছিলেন, কিন্তু তিনি সবসময় ছোট এবং দূরবর্তী জায়গাতে যাওয়া পছন্দ করতেন, যেখানে শিক্ষক খুব বিরল এবং বাইরে থেকে কোনো শিক্ষক যেতে চাইতো না। উদাহরণস্বরূপ, কখনও-কখনও তিনি ভারত-তিব্বতী সীমান্তে থাকা ভারতীয় সেনার তিব্বতী বিভাগের সৈনিকদেরকে উপদেশ দেওয়ার জন্য চমরীগাই-এ চেপে যেতেন। কষ্ট এবং অসুবিধার চিন্তা না ক’রে তিনি উচ্চ পর্বতের শিখরে খোলা আকাশের নীচে তাঁবুতে নিজের শিবির স্থাপন করতেন।

এই প্রত্যন্ত সীমান্ত প্রদেশগুলির মধ্যে কিন্নোরের কাছাকাছি অবস্থিত স্পিতি উপত্যকার সাথে রিনপোছের বিশেষ সম্পর্ক ছিল। কিন্নোরের পর স্পিতিই হ’ল ভারতীয় হিমালয়ের উপত্যকা। এখানেই তাঁর দেহবসান হয়েছিল আর এখানেই তাঁর পুনর্জন্মও হয়েছিল। এক হাজার বছর পূর্বে এই অনুর্বর, ধুলো-ধূসরিত এলাকাটি তিব্বতে অন্তর্ভুক্ত ছিল আর বৌদ্ধধর্মের পুনর্জাগরণের কেন্দ্রও ছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে যেমন এক সহস্রাব্দ পূর্বে হয়েছিল, সেরকমই পরবর্তীকালেও সেটা ঘটেছিল। ভিক্ষুগণ ব্রহ্মচর্যের সম্বর এবং মদ্যপান না করার সম্বরগুলিকে উপেক্ষা করতে থাকত। না তারা বুদ্ধের বাস্তবিক শিক্ষাগুলির অধ্যয়ন করত, আর না তারা সেগুলির পালন করত।

উপত্যকায় তাঁর পাঁচটি পরিদর্শনের মাধ্যমে রিনপোছে সেখানে আরও একবার পুনর্জাগরণের প্রচেষ্টা করেছিলেন। এই জন্য তিনি স্পিতির সবচেয়ে পুরোনো মঠ তাবো গোনপাকে পুনরায় উৎসর্গ করেছিলেন এবং সেখানকার পারম্পরিক অনুষ্ঠানের জন্য সেখানকার ভিক্ষুদের অভিষেক প্রদান করেছিলেন এবং আগম (মৌখিক শিক্ষা) দিয়েছিলেন। তিনি বাইরে থেকে বিদ্বান আধ্যাত্মিক শিক্ষকদের নিয়ে এসে সেখানে নিযুক্ত করেছিলেন। পরিশেষে ১৯৮৩ সালের জুলাই মাসে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে কালচক্রের দীক্ষা সংস্কারের জন্য তিনি পরম পূজ্য দালাই লামাকে তাবো মঠে আমন্ত্রণ করেছিলেন। ১০২৭ সালে ভারত থেকে তিব্বতে কালচক্রের শিক্ষাগুলি শুরু করা একটা অব্যবস্থিত সময় পরে তিব্বতে বৌদ্ধধর্মের পুনঃস্থাপনার দৃষ্টিতে একটা মাইলফলক ছিল। রিনপোছেরও আশা ছিল যে, এই অভিষেক দ্বারাও সেই উদ্দেশ্যটা আরও একবার অর্জন করা সম্ভব।

মঠগুলিতে ব্যাপক দান

সেরকোঙ্‌ রিনপোছে বৌদ্ধধর্মের শিক্ষাগুলিরও বড় পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। উদাহরণস্বরূপ, স্পিতি উপত্যকায় যা কিছু অর্ঘ্য প্রাপ্ত হয়েছিল, তিনি সব কিছুই পুনরায় মঠে দিয়ে দিয়েছিলেন। তাঁর এই উদারতার জন্য তাবো গোনপায় বার্ষিক প্রার্থণা মহোৎসবের সূচনা করা সম্ভব হয়েছিল, যেখানে স্থানীয় মানুষজন তিনদিন “ওঁ মণি পদ্মে হুঁ” নামক মন্ত্র জপ করার জন্য একত্রিত হয়েছিল। এই পবিত্র মন্ত্র করুণার প্রতিমূর্তি, বুদ্ধকায় (ইষ্টদেব) অবলোকিতেশ্বরের সাথে যুক্ত। আর তিব্বতী বৌদ্ধধর্মের সব অনুযায়ীদের জন্য বিশেষ মহত্ব থাকে। এই মন্ত্রের উচ্চারণ সমস্ত জীবের প্রতি মৈত্রী ভাব রাখার ভাবনার উপর ধ্যান-কেন্দ্রিত রাখতে সহায়ক হয়।

রিনপোছে পাশ্চাত্য জগতে তাঁর প্রথম ভ্রমণকালে প্রাপ্ত অর্ঘ্যের রাশি দ্বারা কালচক্র চিত্রিত একটি বিশাল গোটানো বুদ্ধচিত্র তৈরী করিয়েছিলেন। সেটি তিনি পরম পূজ্যকে উপহার স্বরূপ দিয়েছিলেন, যাতে তিনি বিভিন্ন স্থানে তাঁর ভ্রমণের সময় সেখানে অভিষেক প্রদান করার সময় উপযোগ করতে পারেন। এই অর্ঘ্যের বাকীটা দিয়ে তিনি চোঙ্‌খাপার জীবনের উপর আধারিত একটা থংকা (পটচিত্র)-এর সেট তৈরী করিয়েছিলেন, যেটা তিনি তাঁর নিজের মঠ, গান্দেন জংসেতে উপহার দিয়েছিলেন। কিছু বছর পূর্বে তিনি দক্ষিণ ভারতে মুন্ডগোড নামক স্থানে এই মঠটি পুনঃস্থাপন করতে সহায়তা করেছিলেন। পাশ্চাত্য জগতে নিজের অন্য ভ্রমণের সময় প্রাপ্ত দানের রাশি থেকে তিনি ১৯৮৩ সালের মার্চ মাসে ভারতে প্রথম পূর্ণ মোনলামের জন্য ড্রেপুঙ্‌ মঠে একত্রিত ৪০০০ হাজারের অধিক ভিক্ষু এবং ভিক্ষুণীদের জন্য উদারতাপূর্বক দান করেছিলেন। মোনলাম হল একটি প্রার্থনা মহোৎসব যেটা পারম্পরিক ভাবে ল্‌হাসাতে আয়োজন করা হতো, যেখানে সব মঠবাসী একমাসের জন্য পূজা-অর্চনার জন্য একত্রিত হতো।

আনুষ্ঠানিকতা অপছন্দ এবং সরলতা অনুশীলন

যদিও রিনপোছে আচার-বিধি এবং রীতি-নীতির শিক্ষক ছিলেন, কিন্তু তিনি সর্বদা বিনম্র আচরণ করতেন এবং আনুষ্ঠানিকতা অপছন্দ করতেন না। উদাহরণ স্বরূপ, যখন তিনি পাশ্চাত্য দেশগুলিতে ভ্রমণে যেতেন, তখন আচার-বিধির জন্য সজ্জিত সরঞ্জাম অথবা চিত্র সাথে নিয়ে যেতেন না। যখনই তিনি সেখানে অভিষেক প্রদান করতেন, তিনি তার জন্য আবশ্যক চিত্র নিজেই বানিয়ে নিতেন, মাখা আটার বলির (তোরমা) স্থানে বিস্কুট এবং কেক প্রয়োগ করতেন, আর আচার-বিধির কলশ-এর স্থানে ফুলদানি অথবা দুধের বোতলের প্রয়োগ করতেন। যদিও কখনও এমন হতো যে, ভ্রমণের সময় দ্বিমাসিক গণ-পূজার জন্য বিশেষ প্রস্তুতি হয়নি- এই আয়োজনের জন্য পবিত্র মদ, মাংস, বলি এবং মিছরি অর্ঘ্য হিসাবে অর্পন করা হয়- তখন তিনি যে ভোজন সামগ্রীই প্রস্তুত করা হত, সেটা বিনা কোনো প্রতিবাদে আহূতি রূপে প্রয়োগ করে নিতেন।

এ ছাড়াও রিনপোছে সর্বদা বুদ্ধের শিক্ষাগুলিকে তাঁর শ্রোতাদের আবশ্যকতা অনুযায়ী প্রস্তুত করতেন। একবার রিনপোছেকে উডস্টক, নিউ ইয়র্ক শহরের কাছেই মাউন্ট ট্রেমপের জেন মন্দিরে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। সেখানকার সদস্যগণ তাঁর কাছে মঞ্জুশ্রী, অর্থাৎ বুদ্ধের প্রজ্ঞা-রূপের সাধনার জন্য একটি অনুজ্ঞা অনুষ্ঠান (জেনাঙ্‌) করার অনুরোধ করেছিলেন। অতি সরলতার সাথে জেন পরম্পরার পালন করতে রিনপোছে কোনো সিংহাসনে বসার বদলে মেঝেতেই বসে পড়েছিলেন এবং কোনও প্রকারের আনুষ্ঠানিক সামগ্রী এবং সজ্জিত-সরঞ্জাম ছাড়া তিনি অনুজ্ঞা অনুষ্ঠান সম্পাদন করেছিলেন।

নিরহঙ্কারী এবং বিনম্র হওয়া

পরম পূজ্য প্রায়ই চেনশব সেরকোঙ্‌ রিনপোছের উল্লেখ করার সময় বলতেন যে, তিনি একজন বাস্তবিক কদমপা গেশে ছিলেন। কদমপা গেশে এগারো শতক থেকে তেরো শতক পর্যন্ত তিব্বতী বৌদ্ধ আচার্যরা ছিলেন যারা নিজের সোজা, সত্য সাধনা এবং বিনয়ের জন্য বিখ্যাত ছিলেন। উদাহরণস্বরূপ, একটি প্রবচনের সময় পরম পূজ্য রিনপোছের উল্লেখ করে বলেছিলেন যে, এখানে কেবল তিনিই একজন ব্যক্তি যিনি তাঁর মান ছেড়ে বসে আছেন, যার কোনোরকম চাওয়া-পাওয়া নেই, যদিও এখানে উপস্থিত অন্য সবাই অহংকারপূর্বক বসে আছেন। একবার রিনপোছেকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, তাঁর মুখ্য উপদেশ কী, তখন রিনপোছে উত্তর দিয়েছিলেন যে, আমাদের সকলকে সর্বদা বিনম্র, ভন্ডামি থেকে দূরে থাকতে হবে, স্নেহময়ী হৃদয় রাখতে হবে এবং সকলকে গুরুত্ব দিতে হবে।

রিনপোছে তাঁর জীবন পুরোপুরিভাবে উপদেশ অনুরূপই পালন করতেন। একবার রিনপোছে মিলানে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের গৃহে ছিলেন। এই শহরে আসা অধিকাংশ বড়-বড় লামারা এই ঘরেই থাকতেন। এই বিষয়ে পরিবারের ঠাকুরমা বলেছিলেন, এখানে আসা সব লামাদের মধ্যে তাঁর সেরকোঙ্‌ রিনপোছেকেই সবচেয়ে বেশী পছন্দ হয়েছিল। যেখানে অন্য লামাগণ খুব বেশী রীতি অনুযায়ী নিজের ঘরেই বসে থাকতেন এবং নিজের ভোজন একাই করতেন, সেখানে অন্যদিকে সকাল-সকাল যখন ঠাকুরমা প্রাতঃরাশ তৈরী করতেন, তখন সেরকোঙ্‌ রিনপোছে তার গেঞ্জি এবং অন্তর্বাস (ঘাঘরা) পরেই রান্না ঘরে চলে যেতেন। তিনি বিনম্রভাবে রান্না ঘরের টেবিলে বসেই চা পান করতে-করতে মালা জপতেন আর মন্ত্রের জপ করতে থাকতেন। সেই সময় তিনি পুরোপুরিভাবে নিশ্চিন্ত থাকতেন এবং হাসতেন।

অন্যদের বিনম্রতার কৌশল শেখানো এবং সকলকে গুরুত্ব এবং সম্মান দেওয়া

রিনপোছে সকলকেই সব প্রকারের ভন্ডামি ত্যাগ করার উপদেশে দিতেন। একবার ফ্রান্সের লাভৌরের নালন্দা মঠের পাশ্চাত্য ভিক্ষুগণ রিনপোছেকে তিনদিন ধরে উপদেশ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ করেছিল। তাঁরা অষ্টম শতাব্দীর ভারতীয় আচার্য শান্তিদেব দ্বারা রচিত বোধিচর্যাবতারের জ্ঞান সম্বন্ধীয় একটা অত্যন্ত দুর্বোধ্য অধ্যায়ের ব্যাখ্যা করার জন্য অনুরোধ করেছিল। রিনপোছে একটি খুব সূক্ষ্ম এবং জটিল স্তরে শূন্যতার ব্যাখ্যার সাথে উপদেশ দেওয়া শুরু করেছিলেন, যেটা কেউই গ্রহণ করতে পারল না। এর পর রিনপোছে তাঁর উপদেশ দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন এবং এরকম অহংকারপূর্ণ ব্যবহারের জন্য সেই ভিক্ষুদের ভর্ৎসনা করেছিলেন। তিনি ভিক্ষুদের বলেছিলেন যে, যখন চোংখাপার শূন্যতার সঠিক অর্থ বুঝতে এত অধিক অসুবিধা হয়েছিল আর প্রারম্ভিক সাধনাগুলিতে তাকে অনেক বেশী পরিশ্রম করতে হয়েছিল, তাহলে এই মানুষগুলো কীভাবে এটা ভাবতে পারে যে, তারা সম্পূর্ণ বিষয়টা কেবল তিনদিনেই বুঝে নেবে। তারপর রিনপোছে অপেক্ষাকৃত সহজভাবে বিষয়টি বোঝাতে শুরু করলেন, যাতে সেই ভিক্ষুগণ বুঝতে পারে।

রিনপোছে একবার বলেছিলেন, তিনি পাশ্চাত্য জগতের কেবল একটা বিষয়ে প্রভাবিত যে, সেখানকার এত মানুষ বুদ্ধের শিক্ষাগুলিতে সহৃদয়পূর্ণ রুচি রাখে। এইজন্য যেই তাঁর কাছে উপদেশের জন্য অনুরোধ করত, তিনি সর্বদা তার ভাবনার সম্মান করতেন। যদিও তিনি সেই ব্যক্তিকে সেই স্তরেই শিক্ষা দিতেন যে স্তরে সেই ব্যক্তি শিক্ষাটি গ্রহণ করতে পারে। কিন্তু তিনি সবসময় সেই লোকেদের ধীরে-ধীরে তাদের কল্পিত ক্ষমতার স্তর থেকে কিছুটা উপরে নিয়ে যেতেন। সার্কাসপ্রিয় রিনপোছে বলতেন যে, যদি একটা ভাল্লুককে সাইকেল চালানো শেখানো যায়, তাহলে উপায়-কৌশল আর ধৈর্য দ্বারা মানুষদের তো সবকিছুই শেখানো যেতে পারে।

একবার নেশাগ্রস্থ হিপিদের মতো দেখতে পাশ্চাত্যের একজন নতুন অনুযায়ী রিনপোছের কাছে গিয়েছিল। সে রিনপোছেকে নারোপার ছয়টি যোগ-সাধনার শিক্ষা প্রদানের জন্য অনুরোধ করেছিলেন। সামান্যভাবে এই অত্যন্ত উন্নত বিষয়ের শিক্ষা বেশ কয়েক বছরের গভীর সাধনার পরেই অধ্যয়ন করা হয়। কিন্তু সেই যুবকের ইচ্ছাকে অনর্গল এবং দম্ভপূর্ণ মেনে খারিজ করার বদলে রিনপোছে তাকে বলেছিলেন যে, তিনি তাঁর আগ্রহের প্রতি খুব প্রভাবিত হয়েছিলেন এবং তাকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য সহমত হয়ে গিয়েছিলেন। রিনপোছে সেই যুবককে বলেছিলেনঃ “এর জন্য প্রথমে নিজেকে তৈরী করতে হবে।” এর জন্য রিনপোছে তাঁকে প্রারম্ভিক সাধনাগুলির অভ্যাস করিয়েছিলেন। এইভাবে আত্ম-উন্নয়নে মানুষের আগ্রহকে গম্ভীরভাবে নিয়ে রিনপোছে পাশ্চাত্য জগতের অনেক মানুষকে নিজের প্রতি গম্ভীর হওয়ার প্রেরণা দিয়েছিলেন। এই প্রেরণা সেই মানুষগুলিকে আধ্যাত্মিক মার্গে এগিয়ে যেতে সহায়তা করেছিল।

সকলের প্রতি সমান সম্মান প্রদর্শন

রিনপোছে যার সাথেই মিলিত হতেন, সেটা পরম পূজ্য পোপ হোক, অথবা রাস্তায় চলা কোনো মাতাল,অথবা শিশুদের দল সকলের সাথে সমচিত্ততার সাথে আচরণ করতেন আর সকলকে সমান ভাবে সম্মান করতেন। একবার নিউইয়র্কের ইথাকার উইসডম’স্‌ গোল্ডেন রোড সেন্টারের সদস্যগণ রিনপোছেকে অনুরোধ করেছিলেন তাদের সন্তানদের কিছু বলতে। রিনপোছে তাদের সন্তানদের বলেছিলেন যে, তিনি তাদের অনেক সম্মান করেন কারণ তারা যুবক এবং তাদের বিচার খুব উদার। তিনি আরও বলেছিলেন যে, তাদের মধ্যে জীবনে তাদের মাতা-পিতার থেকেও বেশী উন্নতি করার ক্ষমতা আছে। এইভাবে রিনপোছে সেই সন্তানদের এটার জন্য প্রেরণা দিয়েছিল যে, তারা নিজের ক্ষমতার সম্মান করুক।

বিশেষ কার্মিক সংযোগ চিনতে পারার ক্ষমতা

যদিও সেরকোঙ্‌ রিনপোছে যাদের সাথে মিলিত হতেন, তিনি বারবার সেই মানুষগুলির সাথে তাঁর কার্মিক যোগকে চিনতে পারতেন, কিন্তু তিনি নিজের ক্ষমতার উর্দ্ধে সেই মানুষগুলিকে সহায়তা করতে পারার ভান করতেন না। একবার একজন সুইস ভদ্রলোক ধর্মশালায় তাঁর কাছে এসেছিলেন এবং সেই ব্যক্তিটি রিনপোছেকে বলেছিলেন যে, সে ভূত-বিঘ্নের কারণে জর্জরিত। রিনপোছে সেই ব্যক্তিটিকে বলেছিলেন যে, তাঁর সাথে ঐ ব্যক্তির কোনো কার্মিক যোগ নেই, এবং তিনি সেই ব্যক্তিকে অন্য একজন লামার কাছে যাওয়ার জন্য বললেন যার সাথে সেই ব্যক্তির কার্মিক যোগ আছে। কিন্তু অন্য মানুষদের রিনপোছে খুব তাড়াতাড়ি চিনতে পারতেন। প্রথম সাক্ষাতেই তাঁর অনুচরদের ওই ব্যক্তির ঠিকানা লিখে রাখার নির্দেশ দিয়ে দিতেন এবং অনিবার্যভাবে সেই মানুষদের সাথে তাঁর প্রগাঢ় সম্বন্ধ বিকশিত হতো। আমি এমনই ভাগ্যশালী মানুষদের মধ্যে একজন ছিলাম, যদিও রিনপোছের আমার ঠিকানা লেখা আবশ্যক মনে হয়নি। কারণ আমাকে তো ফিরতেই হতো।

Top