শূন্যতা মানে অস্তিত্বহীন নয়। এর মানে এই নয় যে কিছুই অস্তিত্বে নেই এবং তাই আপনি আপনার সব সমস্যা ভুলে যান, কারণ সেগুলি অস্তিত্বে নেই। শূন্যতার অর্থ হল একটি সম্পূর্ণ অনুপস্থিতি, একটি অসম্ভব ভাবে অস্তিত্বের অনুপস্থিতি। কীভাবে সমস্ত কিছু অস্তিত্বে আছে সে বিষয়ে আমাদের অভিক্ষিপ্ত কল্পনা বাস্তবতার সাথে মিল খায় না। আমাদের সমস্যা সহ বস্তুর পক্ষ থেকে কিছুই তাদের নিজস্ব শক্তি দ্বারা এগুলির জন্য সমস্যার সৃষ্টি করে না। সাংবৃতিকভাবে বা প্রচলিতভাবে এগুলির একটা সমস্যা হতে পারে যার যত্ন নেওয়া প্রয়োজন হয়। তাই আমরা প্রচলন বা নাম দ্বারা সংজ্ঞায়িত ধারণা এবং সমস্যা নামক শব্দটির ক্ষেত্রে তাদের সমস্যা হিসাবে বিবেচনা করতে পারি।

শূন্যতা শব্দটি সাধারণত ইংরেজী ভাষায় “এমটিনেস্‌” নামে পরিচিত। এটি হল বুদ্ধের অন্যতম অন্তর্দৃষ্টি। বুদ্ধ বোধগম্য করেছিলেন যে আমাদের প্রত্যেকের জীবনের সমস্যার গভীরতম উৎস হল তাদের বিভ্রান্তি অর্থাৎ তারা, অন্যরা এবং যেসব কিছু অস্তিত্বে আছে সে বিষয়ে বিভ্রান্তি। তাদের মন সমস্ত কিছুর উপর অসম্ভব ভাবে অস্তিমান থাকা হিসাবে অভিক্ষিপ্ত করে। তারা এই বিষয়ে অজ্ঞ যে তারা যা কিছু অভিক্ষিপ্ত করে সেগুলি বাস্তবতার সাথে মিল খায় না। মানুষ অজ্ঞতার বশে নিজেদের জন্য সমস্যা এবং দুঃখ-কষ্টের জন্ম দেয়। উদাহরণ স্বরূপ, আমরা যদি নিজেরাই নিজেদের উপর অভিক্ষিপ্ত করি যে আমরা পরাজয়ী এবং যা কিছুই করি না কেন আমরা জীবনে কখনোই সফল হতে পারব না। তাহলে আমরা না কেবল স্ব-সম্মানের সাথে হতাশ হয়ে যাই বরং এর সাথে আমাদের আত্মবিশ্বাসেরও অভাব হতে থাকে। ফলে আমরা আমাদের উন্নতি করার প্রচেষ্টা ত্যাগ করে দিতে পারি আর আমরা স্বয়ং জীবনের নিম্নস্তরের জন্য আমাদের অবস্থান ত্যাগ করে দিতে পারি।

শূন্যতার অর্থ হল পূর্ণ অনুপস্থিতি, প্রকৃতরূপে অস্তিত্বের একটি অনুপস্থিতি। যেটা মিল খায় তার সাথে আমরা যেটাকে সহজাতভাবে অভিক্ষিপ্ত করি। আমাদের কল্পনাগত স্বভাবের বিশ্বাসের কারণে আমরা বাধ্যতামূলক ভাবে তাদের অভিক্ষিপ্ত করি যে আমাদের ধারণাগত কল্পনাগুলি হল বাস্তব। উদাহরণ স্বরূপ, “পরাজয়ী” এটা হল একটা শব্দ এবং ধারণামাত্র। আমরা যখন “একজন পরাজয়ী”, এই ধারণার সাথে নিজেদেরকে মনোনীত করি এবং এই পরাজয়ী শব্দ দিয়ে নিজেদের নামকরণ করি তখন আমাদের বুঝতে হবে যে এগুলি হল নামমাত্র। এটা সঠিক হতে পারে যে আমরা জীবনে অনেক সময় ব্যর্থ হয়ে থাকি অথবা বাস্তবে ব্যর্থ হইনি তবে পরিপূর্ণতার কারণে আমরা অনুভব করি যে যথেষ্ট ভালো না হওয়ার কারণে আমরা অসফল। উভয় ক্ষেত্রেই সাফল্য এবং ব্যর্থতা ছাড়াও আমদের জীবনে অনেক কিছু ঘটেছে। কিন্তু নিজেদেরকে পরাজয়ী হিসাবে নামকরণ ক’রে আমরা মানসিকভাবে নিজেদেরকে একটা বাক্সে ফেলে রাখি যাকে বলা হয় পরাজয়ী। আর বিশ্বাস করি যে আমরা সত্যিই এই বাক্সটিতে কোনরূপে অস্তিমান আছি। প্রকৃতপক্ষে, আমরা কল্পনা করি যে সেখানে আমাদের সম্পর্কে সহজাতভাবে ভুল বা খারাপ কিছু রয়েছে যা নিশ্চিত ভাবে আমাদের এই বাক্সে থাকা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করে। স্বতন্ত্রভাবে আমরা আমাদের জীবনে যা কিছু করেছি আমরা বা অন্যরা যা কিছুই ভেবেছি, এটা নিজের বল থেকে আমাদের এই বাক্সে থাকা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করে।

এইভাবে কাউকে পরাজয়ী বাক্সে অস্তিমান থাকা এবং থাকার যোগ্য মনে করাটা হল একটি পূর্ণ কল্পনা। এটি কোন বাস্তবিকতার সাথে মিল খায় না। বাক্সে কিন্তু কেউ অস্তিমান নেই। অভাগা বা পরাজয়কারী হিসাবে আমাদের অস্তিত্ব শুধু একটি ধারণা এবং নামের উপর নির্ভর ক’রে উদ্ভূত হয়েছে যা আমরা স্বয়ং নিজেদের উপর প্রয়োগ করেছি। পরাজয়ী নামক ধারণা এবং পরাজয়ী নামক শব্দ হল নিছক একটা নাম বা প্রচলন। এগুলিকে কারও ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যেতে পারে, যেমন তারা যখন তাস খেলায় হেরে যায় ঐ পরিস্থিতিতে ব্যবহারিকভাবে তাদের পরাজয়ী বলা হয়। তবে কেউ সহজাতভাবে একজন পরাজয়ী হিসাবে অস্তিত্বে থাকে না। কাউকে বাস্তবে একজন পরাজয়ী মনে ক’রে কারও পক্ষে এটা জয় করা অসম্ভব।

আমরা যখন পরাজয়ী হিসাবে আমাদের বাস্তবিক অস্তিত্বের শূন্যতাকে উপলব্ধি করি তখন আমরা বুঝতে পারি যে এইরূপে কোন বস্তুর অস্তিত্বই নেই। এটা বাস্তবিকতার সাথে কোন মিল খায় না। আমরা একজন পরাজয়ী, এই অনুভূতিটি শুধু একটি ধারণা এবং “পরাজয়ী” নামক শব্দ দ্বারা গণ্য করা যেতে পারে। এর কারণ হল আমরা সম্ভবত কখনো কখনো কিছু করতে ব্যর্থ হয়েছি এবং সেখানে আমরা এই শব্দটা প্রয়োগ করেছি। কিন্তু সহজাতভাবে সেখানে আমাদের মধ্যে কোন ভুল নেই যে, এটা তার নিজস্ব শক্তি দ্বারা স্থায়ীভাবে আমাদেরকে একজন পরাজয়ী করে তোলে। এছাড়া আর কিছুই না। অতএব শূন্যতা হল অসম্ভবভাবে অস্তিমানের পূর্ণ অনুপস্থিতি। অতীতে, বর্তমানে এবং ভবিষ্যতে কেউ সম্ভবতঃ সেভাবে অস্তিমান থাকতে পারবে না।

আমাদের কল্পনাগুলির বিনাশ এবং সেগুলির প্রতি বিশ্বাস বন্ধ করতে সক্ষম হওয়ার আগে শূন্যতার সাথে পরিচিতি হওয়ার জন্য আমাদের অনেক সময় লাগে। তবে আমরা যদি শূন্যতার বিষয়ে ধ্যান করার জন্য নিয়মিতভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাই তাহলে ধীরে-ধীরে আমরা বুঝতে পারব যে অভ্যাসগত ভাবে আমরা নিজেদেরকে “পরাজয়ী” রূপে যেভাবে নামকরণ করি সেটা হল একটা বোকামীর পরিচয় এবং তাই আমরা আমাদের ঐ কল্পনাকে নির্মূল করে ফেলি। অবশেষে আমরা এই অভ্যাসটা উচ্ছেদ করে ফেলি এবং আর কখনও নিজেদেরকে পরাজয়ী বলে মনে করি না।

সারাংশ

অসম্ভবভাবে কিছুই অস্তিত্বে না থাকার অর্থ এই নয় যে কিছুই অস্তিত্বে নেই। শূন্যতা খন্ডন করে শুধু অসম্ভব ভাবে অস্তিমানের ধারণাকে, যেমন স্ব-প্রতিষ্ঠিত সহজাত অস্তিত্ব। এটা শব্দ এবং ধারণার প্রচলন অনুযায়ী “এইটা” অথবা “ওইটা” হিসাবে বস্তুর অস্তিত্বকে খন্ডন করে না।

Top