এমন কিছু লোক আছে যারা আজ বিশ্বাস করে যে জীবনে নৈতিক আচরণ করার জন্য ধর্মের প্রয়োজন হয় না। তারা অনুভব করে, মৈত্রী এবং করুণার মতো মূল্যবোধগুলি যেকোন ধর্মেই স্বতন্ত্র। আমি এই মূল্যগুলিকে “সার্বজনীন নৈতিকতা” বা “সার্বজনীন বিশ্বাস” বলি। এমনকি ধর্ম ব্যতীত, নাস্তিক হয়েও আমরা জীবনে নৈতিকতার প্রচার করতে পারি।
সার্বজনীন নীতির প্রাথমিক আধার হল সুখী হওয়া, ভালোবাসা পাওয়া এবং সম্মানিত হওয়ার ইচ্ছা থাকার ক্ষেত্রে সকলেই সম্পূর্ণ ভাবে সমান। ভারতের সংবিধানের আধারটি সার্বজনীনতার সার্বজনীন নীতির উপর ভিত্তি ক’রে তৈরি, যা সমস্ত পরম্পরা এবং সমস্ত ধর্মকে পক্ষপাত ব্যতীত ভাবে সম্মান করে। ভারতীয় জ্ঞানের লক্ষ্য সর্বদা নৈতিক শিক্ষা এবং নৈতিক সচেতনতার মাধ্যমে আরও বেশি শান্তিপূর্ণ বিশ্ব নির্মাণ করায় বচনবদ্ধ। শিক্ষা প্রকৃতপক্ষে বিজ্ঞান, অর্থনীতি, রাজনীতি, প্রযুক্তি, শিল্প ও সাহিত্যের ক্ষেত্রে মাইলফলক (ধারাবাহিকতার ধাপ) স্থাপন করেছে। কিন্তু তারা কি আজ সাধারণ মানুষ যে সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে তার তুলনায় অ-হৃদয়স্পর্শী নয়?
শিক্ষার রূপান্তর মূলক রীতি সার্বজনীন নীতির উপর তিনি করে যে, সমস্ত মানব জাতিই একটা পরিবার। মানবিকতা এবং অখন্ডতার গুণাবলী, আর যুক্তি, সহানুভূতি, নৈতিক যুক্তি এবং স্বজ্ঞাত- এর অনুষদদেরকে শিক্ষার্থীদের মন এবং আবেগের সম্পূর্ণ সম্ভাবনা উপলব্ধি করা প্রয়োজন। সার্বজনীন নৈতিকতা ব্যতীত শিক্ষা প্রায় সর্বদা অর্থনৈতিক বিকাশের দিকেই সক্রিয় থাকে, যা ব্যক্তি স্তরে মানসিক সমস্যা বা ম্যাক্রো স্তরের সামাজিক সমস্যা গুলির সমাধান করে না।
প্রযুক্তিতে পরিবর্তনগুলি যদি “করা” এর নতুন উপায়ে প্রচার করে, তাহলে সার্বজনীন নীতি “সত্তার” একটা নতুন উপায়ে প্রচার করবে। মানুষ যখন “করা”-কে আলিঙ্গন করে তখন ঘটে বিবর্তন। প্রযুক্তির তাৎপর্যপূর্ণ বৃদ্ধি গুরুতর প্রশ্নগুলির দিকে পরিচালিত করে, যেমন- সার্বজনীন নৈতিকতা কীভাবে স্ব-রূপান্তরকে উৎসাহিত করতে পারে, মানবতার জন্য শান্তি ও স্বাধীনতা নিয়ে আসতে পারে এবং আমরা কীভাবে নিজের একটা দৃঢ় ও মজবুত চরিত্র গঠন করতে পারি?
মুক্ত মন ছাড়া আমরা বড় হতে পারি না। শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী উভয়েরই পরিবর্তন প্রয়োজন। আপনি যদি একজন ভালো মানুষ হতে চান তাহলে নৈতিক উপায় এবং মূল্যবোধ অবলম্বন করা ছাড়া কোন উপায় নেই। আমার নিজের একটা পরিচয় আছে, তবে আমাকে অবশ্যই মেনে নিতে হবে যে সমাজে একাধিকত্ব বিদ্যমান আছে। সার্বজনীন নীতি আমাদের মজবুত এবং স্ব-বাস্তবায়িত করে। মানুষ কখনও কখনও বিভ্রান্ত হয়ে যায়, এই ভেবে যে আপনি যদি বস্তুবাদী বিশ্বে বা ভৌতিক জগতে বিজয়ী হতে চান, তাহলে আপনাকে নৈতিকতা ত্যাগ করতে হবে। কিন্তু বাস্তবে, ভৌতিক জগতে আপনি যদি কোটিপতি হতে চান তাহলে আপনাকে নির্ভরযোগ্য বা বিশ্বস্ত হতে হবে। নির্ভরযোগ্য হওয়ার জন্য আপনাকে নৈতিক এবং সৎ হতে হবে। ধরুণ, আপনার বাড়িতে যদি একজন সুন্দর পাচক (রাঁধুনী) থাকে এবং আপনি তার খুব প্রশংসা করেন। একদিন আপনি জানতে পারেন, সে আপনার পকেট থেকে টাকা-পয়সা চুরি করা শুরু করেছে। আপনি তখন তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেবেন। আপনি যদি নিজের অধীনস্থদের অসততা সহ্য করতে না পারেন, তাহলে আপনি কীভাবে আপনার বস-কে আপনার অসততা মেনে নেবেন বলে আশা করেন?
এই বিষয়গুলি বুঝতে খুব সহজ। এগুলি মোটেই জটিল নয়।