মানুষের সমস্ত রকমের সমস্যার উৎস হল মন এবং যদি সঠিক ভাবে পরিচালিত করা হয়, তাহলে আমাদের সমস্ত সমস্যার সমাধানও মন। যারা অনেক জ্ঞান অর্জন করেছেন কিন্তু ভালো হৃদয়ের অভাব রয়েছে, তাদের উদ্বেগ এবং অস্থিরতার শিকার হওয়ার আশঙ্কা থাকে, যা ইচ্ছা পরিপূর্ণ করতে অক্ষমতার কারণে এই পরিবর্তনটা ঘটে। বস্তুগত জ্ঞান সহজেই নেতিবাচক চিন্তা-ভাবনা এবং অনুভূতির উৎস হতে পারে। এর বিপরীতে, আধ্যাত্মিক মূল্যবোধের আসল বোধগম্যতা নিয়ে আসে শান্তি। - চতুর্দশ দালাই লামা
ম্যাসাচুসেটাস্ ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে স্থাপিত দালাই লামা সেন্টার ফর এথিক্স অ্যান্ড ট্রান্সফরমিটিভ ভ্যালু-তে পরম পূজ্যজী ব্যাখ্যা করেছিলেন যে কেন সার্বজনীন নৈতিকতা সম্পর্কে আমাদের কথা বলা দরকার। তিনি বলেছিলেন, এই গ্রহের সাত বিলিয়ন মানুষের একটি উল্লেখযোগ্য অংশের মধ্যে, কোন বিশেষ আস্থা বা বিশ্বাস নেই। তিনি এও বলেছিলেন যে আমরা এই মানুষগুলিকে একটি নির্দিষ্ট ধর্মের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত মনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা প্রদান করতে পারি না। তিনি বলেছিলেন, এই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাটি ধর্ম-নিরপেক্ষ শিক্ষায় প্রতিষ্ঠিত হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তখনই আমেরিকাতে আর্থিক সংকটের বিস্ফোরণ ঘটেছিল। আর একই উপলক্ষে তিনি বলেছিলেন যে ওয়াল স্ট্রিটের অধিকাংশ নেতারা আইভী লিগ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসেছেন। এটা কীভাবে হতে পারে? যে সংকটের সময় এতো লোভ এবং প্রতারণা তাদের শিক্ষার সময় মোকাবিলা করা হয়নি? আবেগ কীভাবে আমাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক হয় এবং আমাদের দ্বারা গৃহীত সিদ্ধান্তের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবসমূহ বুঝে লোভ, ছলনা এবং নেতিবাচকতাকে কীভাবে মোকাবিলা করা যায়, বর্তমানে এম.আই.টির. এই কেন্দ্রটি তা শেখাতে নিযুক্ত আছে।
সার্বজনীন নীতিকে কীভাবে অনুশীলন করতে হবে তার সম্পর্কেও পরম পূজ্যজী তিনটি বিষয় উল্লেখ করেছেনঃ
- সংযমের নৈতিকতা
- পুণ্যের নৈতিকতা
- পরকল্যাণ ও করুণার নৈতিকতা
সংযমের নৈতিকতা হ’ল কীভাবে আমাদের শারীরিক এবং বাচিক নেতিবাচক অভ্যাসগুলি বর্জন করা যায়। পরম পূজ্যজী বলেছেন যে শরীর হল স্থূল এবং মন সূক্ষ্ম। আমরা যদি শরীরকেও নিয়ন্ত্রণ করতে না পারি, তাহলে মনকে নিয়ন্ত্রণ করার আমাদের কী আশা আছে? সর্বপ্রথম শরীর ও বাক্ এবং তারপর মনের নেতিবাচক অভ্যাসগুলি পর্যবেক্ষণ করে আমরা নৈতিক সংযম অনুশীলন করি। এটা আমাদেরকে তখন পুণ্যের নৈতিকতায় যুক্ত হওয়ার অনুমতি দেয়। এর অর্থ হ’ল, আমাদের ইতিবাচক আচরণ, যেমন- করুণা, দয়া, ক্ষমা এবং বিচক্ষণতার বৃদ্ধি করা। পরিশেষে এটা আমাদের পরকল্যাণ অথবা করুণার নৈতিকতায় নিয়ে আসে যার মধ্যে আমরা আমাদের জীবন অপরের জন্য উৎসর্গ করি।