আজ মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যার মধ্য দিয়ে যাওয়া তরুণদের সংখ্যা অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে। এটা আজকের বিশ্বের একটা বড় সংকট। এর সাথে প্রশ্ন ওঠে কীভাবে সমস্যাটির সমাধান করা যায়।
আমরা ধর্মের নামে অনেক যুদ্ধ, দ্বন্দ্ব এবং সন্ত্রাসী আক্রমণ ঘটতে দেখি। পরম পূজ্য দালাই লামা যেখানেই ভ্রমণ করেন সেখানেই মানুষ, শিক্ষাবিদ, সমাজকর্মী এবং চিকিৎসা বিশেষজ্ঞগণ সকলেই একটা প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেনঃ বিশ্বের সমস্যাটা কী? বিশ্ব সন্ত্রাসবাদ, দুর্নীতি, লিঙ্গ বৈষম্য, ধনী-দরিদ্রের মধ্যে ব্যাবধান এবং তারপরে যুবকদের মানসিক সমস্যা, এই ধরণের সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আজ, মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যায় অল্পবয়সীদের সংখ্যা অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাচ্ছে- এটা এতটাই বৃদ্ধি পাচ্ছে যে এটা একটা বড় সংকটে পরিণত হয়েছে। সুতরাং আমরা কীভাবে এই সমস্যাগুলির সমাধান করতে পারি?
মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যাগুলির ক্ষেত্রে আমাদের জিজ্ঞাসা করা দরকার, কেন এই সমস্যাগুলি এত বৃদ্ধি পাচ্ছে, যখন কিনা আধুনিক শিক্ষা বলতে বোঝায় এই সমস্যাগুলির সমাধান করা। সমস্যাটি ঠিক কী? এটা কীভাবে উত্থিত হয়? এটা পরম পূজ্যকে জিজ্ঞাসা করা একটা সাধারণ প্রশ্ন। বিনা দ্বিধায়, পরম পূজ্য বলেন, এর কারণ হল আমাদের আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থায় একটা ফাঁক আছে, আর ফাঁকটি হল আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাটির অভিসন্ধি বা রূপরেখাটি প্রাথমিকভাবে বুদ্ধি বৃদ্ধির জন্য তৈরী করা হয়েছে। একটি শ্রেণীতে আমরা যদি বলি দুই আর দুই যোগ করলে চার হয়, তাহলে আমরা পাশ করে যাই। কিন্তু একটা অত্যন্ত সুন্দর হৃদয়, পরোপকারী ভাবনা এবং অনন্যসাধারণ প্রতিভা যা আমাদের মধ্যে আছে, তার সাথে যদি আমরা বলি দুই আর দুই যোগ করলে চার-ইশ হয়, তাহলে আমরা অনুত্তীর্ণ হয়ে যাই। আমাদের হৃদয়কে কেউ গণনা করে না। শুধু মস্তিষ্ককে বিশ্বাসযোগ্যতা দেওয়া হয়।
এটাই দায়ী। একমাত্র মস্তিষ্কের বিকাশ বিশ্বের জন্য সুখের গ্যারান্টি দেয় না বা তার কারণে মানবতার মধ্যে আস্থা, মৈত্রী এবং করুণা থাকবে। ব্যবহারিক স্তরে, মানবতাকে বৃহত্তর শান্তি ও সম্প্রীতির দিকে পরিচালিত করার প্রেরণার চালিকা শক্তি কী হতে পারে? এটা হল হৃদয়, আমাদের মানব হৃদয়।
এই হৃদয়কে আপোষ না করে বিশ্ব যাতে উন্নতি করতে পারে সেটা নিশ্চিত করার জন্য প্রজ্ঞারও প্রয়োজন। প্রজ্ঞা এবং হৃদয়কে একসাথে যেতে হবে। এটাকে মনে ধারণ করে, নৈতিকতা এবং শীলের নোঙর রূপে যা সার্বজনীন ভাবে কাজ করে, সেটা হল করুণাময় হৃদয়। কেউ একথা অস্বীকার করে না। নাস্তিক বা ধার্মিক, শিক্ষিত বা অশিক্ষিত যাই হোক না কেন, তাতে কিছু আসে যায় না। কারও প্রতি স্নেহ এবং উদ্বেগ প্রকাশ করলে প্রত্যেকে আনন্দিত হয় এবং ভালোবাসে। মনে রাখবেন, নীতির মূলে থাকে করুণা- অন্যের প্রতি মৈত্রী এবং করুণা।
পরের প্রশ্নটি হল আমরা কী করতে পারি? আমরা কীভাবে এটা প্রচার করতে পারি? প্রথমতঃ বিশ্বজুড়ে স্থাপিত কেন্দ্রগুলি সহায়তা করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, এই দিল্লীতে অবস্থিত রামানুজন কলেজের নীতি ও মূল্যবোধ কেন্দ্রে সার্বজনীন নৈতিকতার প্রচারের জন্য পরম পূজ্য দালাই লামার পৃষ্ঠপোষকতায় একটা বিশাল প্রকল্প পরিচালিত হচ্ছে।
তারপর আমাদের ভাবতে হবে কীভাবে আমরা অন্যকে আরও করুণাময় হওয়ার জন্য অনুপ্রেরণা জোগাতে পারি? এটাকে কোন ধর্মানুষ্ঠানের আকারে হওয়া উচিত নয়, বরং উন্মুক্ততা, বিবেচনা এবং উষ্ণতার আকারে হওয়া উচিত। আমরা বিশ্বে নাটকীয় পরিবর্তন আনতে সক্ষম হতে পারি না, তবে আমাদের আশপাশে যারা আছেন তাদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করতে পারি, যারা অবশ্যই আরও করুণার সাথে আচরণ করতে পারে, তবে তাদের মধ্যে এই বিষয়ে কোন ধারণা নাও থাকতে পারে। তাহলে আমরা কীভাবে অন্যকে প্রভাবিত করতে পারি? বিশ্বকে প্রভাবিত করতে পারে এমন লোকজনদের সাথে যদি আমরা সাক্ষাৎ করতে অক্ষম হই, তাহলে আমাদের তদন্ত করতে হবে যে আমরা কীভাবে অন্যান্য ব্যক্তির মধ্যে, বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে নির্বিশেষে কমপক্ষে করুণার গুরুত্ব সম্পর্কে এই শব্দটি প্রচার করতে পারি? সর্বোপরি, ভবিষ্যতের আশা আজকের তরুণদের কাছে প্রত্যাশিত।