গৌণ পার্থক্যগুলির উপর জোর দেওয়ার অসুবিধা
প্রিয় ভ্রাতা ও ভগিনীগণ, আপনাদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পেয়ে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। মানুষের মধ্যে কথা বলার সময় প্রথমেই আমি একটি বিষয় সব সময় পরিষ্কার করে বলি। অনুগ্রহ করে আপনারা ভাবুন আমি মানুষ। তা বলতে গেলে, যেমন ধরুন ‘আমি সুইস,’ ‘আমি ইতালিয়ান’ বা ‘আমি ফরাসী’ এরকম ভাববেন না। আমার অনুবাদকেরও নিজেকে ফরাসী ভাবা অনুচিত। ‘আমি তিব্বতী’ এরকম ভাবা আমারও উচিত নয়। এর পরে নিজেকে বৌদ্ধ বলাও আমার পক্ষে অনুচিত। তার কারণ, মানুষ হিসেবে একটি সুখী ও অপেক্ষাকৃত নির্বিঘ্ন জীবনের কথাই হল আমার বক্তব্য।
সাতশত কোটি মানুষের প্রত্যেকে সুখী জীবন চায় এবং সেই লক্ষ্য লাভ করার অধিকার সবার আছে। কিন্তু আমরা যদি গৌণ বিষয়সমূহ, যেমন ধরুন ‘আমি তিব্বতী’ এর উপর জোর দিই, তাহলে বিষয়টি এমন দেখাবে যে তিব্বত নিয়ে আমি বেশী চিন্তিত। ‘আমি বৌদ্ধ’, এই ভাবনাটি অন্য বৌদ্ধদের সঙ্গে নৈকট্য অনুভব করায়। একই সঙ্গে অনায়াসে অপর ধর্মবিশ্বাসীদের থেকে সামান্য দূরত্ব বাড়িয়ে দেয়।
বর্তমান একুশ শতক তো বটেই, অতীতেও মানুষ ভয়ানক হিংস্রতা ও সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। এই ধরণের দৃষ্টিভঙ্গি আসলে বহু সমস্যার উৎস স্বরূপ। অন্যরা আপনারই মতো মানুষ, যদি এরকম ভাবতে পারেন হিংস্রতা আসতেই পারে না। একে-অপরকে হত্যা করার কোন কারণ থাকে না। কিন্তু মানবজাতির একত্ব ভুলে গিয়ে আমরা যখন গৌণ পার্থক্যগুলি, যেমন ‘আমার দেশ-ওদের দেশ’, ‘আমার ধর্ম-তাদের ধর্ম’ এরকম বিভেদ সৃষ্টি করি; এবং স্বজাতি ও স্বধর্মের কথা বেশী চিন্তা করি; তখন আমরা অপরের জীবনের অধিকারকে অসম্মান করি। এই গৌণ বিষয়সমূহকে বেশী গুরুত্ব দেওয়ার কারণে এখন আমরা বহু সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি।
এখন, কোন গণ্ডি না টেনে, নিজেকে মানুষ মনে করে যুক্তিযুক্ত ভাবনাই হল এর একমাত্র প্রতিষেধক। উদাহরণ স্বরূপ, প্রবচন দেওয়ার সময় আমি যদি নিজেকে একজন তিব্বতী বৌদ্ধ বা একটু বাড়িয়ে পরম পবিত্র দালাই লামা মনে করি, তাহলে দর্শকদের সঙ্গে আমার কিছুটা দূরত্ব তৈরি হবে। তা বোকামির নামান্তর। আমি যদি সত্যিই আপনাদের হিতাকাঙ্ক্ষী হই তাহলে আপনারা আমারই মতো মানুষ, আমার ভাইবোন, এরকম স্তরে এসে আমায় কথা বলতে হবে। প্রকৃতপক্ষে মানসিক, দৈহিক ও আবেগের স্তরে আমরা সবাই একই রকম। তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে- কোন দুঃখ-কষ্ট নয়, আমরা সবাই তো সুখী জীবন চাই। আমিও চাই। অতএব, এমনতর ভাবনাতেই কথা বলব আমরা।
ধর্ম নিরপেক্ষ মূল্যবোধ
ধর্ম নিরপেক্ষ মূল্যবোধটি জৈবিক উপাদানের সঙ্গে গভীর ভাবে যুক্ত, কিন্তু ধর্মীয় বিশ্বাস শুধুমাত্র মানুষের আছে। মানুষের মধ্যে বিশ্বাস হয়েছে পল্লবিত, কিন্তু তা কোন ভাবেই একটি জৈব উপাদান নয়। সাতশত কোটি মানব সমাজের সকলে এই ধর্মনিরপেক্ষ মূল্যবোধের আওতায় আসেন। গতকাল আমি যেমনটি উল্লেখ করেছিলাম, সাতশত কোটি মানুষের মধ্যে একশত কোটি মানুষ আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করেছেন যে তারা অবিশ্বাসী। তাহলে ধরে নিতে পারি অবশিষ্ট ছয়শত কোটি মানুষ ধর্মে বিশ্বাসী। তাদের মধ্যে বহু কলুষিত মানুষও থাকবেন। কলঙ্ক, শোষণ, নৈতিক অধঃপতন, প্রতারণা, মিথ্যাচার, বা দুর্বলের উপর নির্মম পীড়ন, সবই তো আছে। আমি বিশ্বাস করি মানবিক আদর্শকে দৃঢ় প্রত্যায়ের অভাবেই এসব ঘটে। এমনকি ধর্মকেও ভুল কাজে লাগানো হচ্ছে। গতকাল তা আমি উল্লেখ করে থাকতে পারি। সত্যি, কখনও-কখনও আমি অনুভব করি কীভাবে ভণ্ডামি করতে হবে ধর্ম তা শিখিয়ে দেয়। প্রেম ও করুণার মতো ভাল-ভাল কথা আমরা বলি কিন্তু বাস্তবে তা করি না। প্রচুর অবিচার রয়েছে সেখানে।
ধর্ম এই সুন্দর কথাগুলিকে পরম্পরার মতো করে বলে। কিন্তু আপনার হৃদয়কে স্পর্শ করতে পারার মতো পথে বলে না। নৈতিক আদর্শ ও তার মূল্যে দৃঢ় বিশ্বাস না থাকা হল এর কারণ। বিশ্বাসী বা অবিশ্বাসী বড় কথা নয়। এই মানবিক আদর্শগুলির শিক্ষা মানুষকে কীভাবে দেওয়া যেতে পারে তার জন্য আন্তরিক ভাবে চিন্তা করার প্রয়োজন আছে। তার উপর আপনারা ধর্মকে যোগ করতে পারেন। আর এই ভাবেই তা হবে প্রকৃতার্থে ধর্ম। গতকাল যা বলেছিলাম, সকল ধর্ম এই আদর্শগুলির কথাই বলে।
ব্যক্তির নিজ পরিমণ্ডলে অনাসক্তির বিকাশ
বিগত শতাব্দীগুলিতে মানুষ যখন একে অপরকে হত্যা করতো, উভয়পক্ষ ভগবানের কাছে করত প্রার্থনা। মুশকিল। এমনকি আজকের দিনেও কোন-কোন সময় আপনারা দেখবেন ধর্মের নামে লড়াই হচ্ছে, মনে হয় উভয় পক্ষ ভগবানের কাছে প্রার্থনা করে। মজা করে আমি কখনও বলে থাকি- মনে হয় ভগবানও বিভ্রান্ত। আশীর্বাদ কামনায় প্রার্থনা করছে দুপক্ষে। কীভাবে তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন? সত্যিই মুশকিল। একবার আর্জেন্টিনায় কতিপয় ধর্মগুরু ও বৈজ্ঞানিকদের সঙ্গে এক ঘরোয়া আলোচনায় মাতুরানা নামে একজন পদার্থবিদের সঙ্গে পরিচয় হলো। আলোচনাটি সর্বধর্ম সমন্বয় নিয়ে ছিল না। মাতুরানা ছিলেন আমার পূর্বপরিচিত সুইজারল্যান্ড নিবাসী প্রয়াত বারেলার শিক্ষক। তারপর তাকে দেখলাম আর্জেন্টিনায়। এরপর আর দেখা হয়নি। যাইহোক, তিনি বলেছিলেন যে একজন পদার্থবিদ হিসেবে বিজ্ঞানে তার নিজস্ব ক্ষেত্রেও আসক্ত হওয়া উচিত নয়। তা থেকে আমি একটি অপূর্ব ও জ্ঞানগর্ভ মত শিখলাম।
আমি বৌদ্ধ কিন্তু বৌদ্ধধর্মের প্রতি আমার আসক্তি জন্মানো অনুচিত। কারণ আসক্তি একটি অকুশল আবেগ। আপনার মধ্যে আসক্তি জন্মালে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি হবে পক্ষপাত-যুক্ত। যখনই আপনার পক্ষপাত দুষ্ট হবে আপনি কোন বিষয় সদর্থক ভাবে দেখতে পারবেন না।
এজন্য আমি মনে করি ধর্মের নামে যাঁরা লড়াই করছেন, তার মূলে ধর্ম নয় বরং এর মূলে আছে রাজনীতি আর অর্থনৈতিক স্বার্থ। কয়েকটি ক্ষেত্রে, যেমন ধরুন মৌলবাদীরা, ওরা তাদের স্বধর্মের প্রতি মাত্রাতিরিক্ত আসক্ত। আর এই কারণেই অন্য পরম্পরার আদর্শগুলি দেখতে পায় না।
মাতুরানার মতটি আমার কাছে একটি মহত্ত্বপূর্ণ উপদেশ। বহু মানুষের সঙ্গে মিলিত হওয়ার ফলে যা হয়েছে অপর অনেক পরম্পরাকে শ্রদ্ধা করি। দক্ষিণ ফ্রান্সে লুর্দ্ধতে গিয়েছিলাম। এ কথা আমি আগেও বলেছি। একজন তীর্থযাত্রীর মতই সেখানে গেলাম। একটু জল নিয়ে দাঁড়ালাম যীশুর মূর্তির সামনে। শুনেছি শত-শত বছর ধরে লক্ষ-লক্ষ মানুষ যাঁরা এখানে শান্তির খোঁজে, রোগের নিরাময়ের জন্য এসেছেন, তাঁরা কিছুটা বিশ্বাস ও কিছুটা আশীর্বাদে আরোগ্যলাভ করেছেন। যীশুর সামনে দাড়িয়ে তা অন্তরে অনুভব করলাম। এই বিষয়গুলি অনুভব করে খ্রীস্ট ধর্মের প্রতি একই ধরনের শ্রদ্ধা অনুভুত হল। চোখে জল এসে যাচ্ছিল। আরেকবার পর্তুগালের ফতিমাতে একটি আশ্চর্য ঘটনা ঘটেছিল। আমরা মেরির প্রতিমার সামনে ক্যাথলিক খ্রীস্টান পরিবৃত হয়ে আমরা নীরবতার সাধনা করছিলাম। বেরিয়ে যাওয়ার সময় মেরির প্রতিমার দিকে ঘুরে দেখলাম, প্রতিমারুপী মেরি আমার দিকে তাকিয়ে হাসছেন। অনুভব করলাম আমার অসাম্প্রদায়িক মনোভাবটি মেরি বুঝতে পেরেছেন। মেরির সঙ্গে যদি দার্শনিক আলোচনা করতে পারতাম তবে হয়তো জটিলতা দেখা দিতে পারত।
যাই হোক, আপনার নিজের বিশ্বাসের উপর আসক্তি থাকাও ভালো নয়। কোন-কোন সময় ধর্ম বিভেদ ও লড়াই সৃষ্টি করে। এটি খুবই স্পর্শকাতর বিষয়। ক্রোধ আর ঘৃণার প্রতিষেধক হিসেবে ধর্ম তো করুণা ও ক্ষমার উপায়। সুতরাং ধর্ম যদি নিজেই অপর ধর্ম বিশ্বাসের প্রতি ঘৃণা ছড়ায় তাহলে তো মুশকিল। বিষয়টি অনেকটা রোগ নিরাময় করবে এমন ওষুধের মতো। কিন্তু তা না করে যদি রোগই বাড়িয়ে দেয়, তাহলে কি করণীয় থাকে? মানবিক আদর্শগুলির প্রতি অনাস্থায়ই এসব দুঃখজনক পরিস্থিতির কারণ। অতএব, আমি বিশ্বাস করি ধর্মনিরপেক্ষ মূল্যবোধ বিকাশের জন্য প্রকৃত সাধনা ও প্রয়াস অতি আবশ্যক।
অপরের প্রতি শ্রদ্ধা ও ধর্মনিরপেক্ষতা
এখন ধর্মনিরপেক্ষ মূল্যবোধের পালা। ভারতে প্রাক্তন উপপ্রধানমন্ত্রী আদবানিকে আমি খুব ভালো করে চিনি। একবার তিনি বলেছিলেন যে কানাডার দূরদর্শনের প্রতিনিধিরা তাঁকে প্রশ্ন করেছিলেন যে ভারতে গণতন্ত্রের সফল প্রয়োজনের আধারটি কী? তিনি বলেছিলেন- বিতর্ক ও মতপার্থক্য থাকলেও হাজার-হাজার বছর ধরে এদেশের ঐতিহ্য সর্বদা একে অন্যকে শ্রদ্ধা করছে। তিনি আমায় বলেছিলেন- তিন হাজার বছর আগে ভারতে চার্বাক বা নিরীশ্বরবাদী দর্শনের উদ্ভব হয়েছিল। অপর ভারতীয় মতবাদীগণ তাদের সমালোচনা ও নিন্দা করেছে। তথাপি চার্বাকপন্থীদের বলা হয়েছে ‘ঋষি’ অর্থাৎ সন্ত। এতেই বোঝা যায় তীব্র মতানৈক্য থাকলেও একটি শ্রদ্ধার জায়গাও ছিল। এর অর্থ হল অবিশ্বাসীদেরও আমাদের শ্রদ্ধা করতেই হবে।
গতকাল বলেছিলাম, আমার কিছু মুসলমান ও খ্রীস্টান বন্ধু ‘ধর্মনিপেক্ষ’ শব্দটি নিয়ে কিছুটা রক্ষণশীল। আমার মনে হয় ফরাসী বিপ্লব বা বলশেভিক বিপ্লবের সময় ধর্ম বিরোধী একটি প্রবণতা দেখা দিয়েছিল, তার জন্য এরকম হয়েছে। কিন্তু ধর্ম ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পার্থক্য আমি পরিষ্কার করে দিতে চাই। এই দুটি ভিন্ন বিষয়। কোন বিচক্ষা মানুষ ধর্ম বিরোধী হতেই পারেন না। প্রেম ও করুণা হল ধর্ম। এই দুটি বিষয়কে কেউ সমালোচনা করতে পারে না। অবশ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলি আলাদা। ফরাসী ও বলশেভিক বিপ্লবের সময় শাসক-গোষ্ঠী জনগণকে অবশ্যই শোষণ করেছে। এমনকি শাসকরা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলির পূর্ণ সমর্থন পেয়েছে। আর শাসকবিরোধী আন্দোলনে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানেরও বিরোধিতা যুক্ত হয়েছিল। অতএব, ভগবান বা ধর্মবিরোধী কিছু প্রবণতা ছিল সে সময়।
এমনকি আজও, তিব্বতী বৌদ্ধসহ যে কোন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে যদি কোনরকম শোষণ বা স্বার্থান্বেষী ঘটনা ঘটে তার বিরোধিতা করতে হবে আমাদের। আমি নিজেও একটি কাজ করেছি। তিব্বতের চারশত বছরের ঐতিহ্যে দালাই লামা চিহ্নিত হওয়া মাত্র তিব্বতের সর্বোচ্চ শাসক তথা ধর্মগুরু হয়ে যাবার পরম্পরাটিকে দু’বছর আগে সমাপ্ত করেছি। স্বেচ্ছায়, সানন্দে ও সগর্বে তার ইতি ঘটালাম। ওরকম বিষয় ধর্মের প্রকৃত উদ্দেশ্যের পরিপন্থী। সুতরাং, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, প্রকৃত ধর্মাচরণ ও উপদেশের মধ্যে পার্থক্যটি বুঝতে হবে।
ধর্মনিরপেক্ষতাকে ভারতীয় মানস যেভাবে দেখেছে তাতে ধর্মের প্রতি নেতিবাচকটার কোন স্থান নেই। বরং সেখানে সর্ব ধর্ম এমনকি অবিশ্বাসীদের প্রতিও রয়েছে শ্রদ্ধা। আমি মনে করি তা বিচক্ষণতার পরিচয়। একে কীভাবে বর্ধিত করতে পারি? প্রবচন দিয়ে? না। তাহলে অবশ্যই প্রার্থনা করলে হবে? তাও নয়। হ্যাঁ, তা হতে পারে শিক্ষায়। আমরা শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য শিক্ষা গ্রহণ করি। তাহলে মানসিক স্বাস্থ ও ভাবাবেগের বিষয়ে শিক্ষার ব্যবস্থা করবো না কেন? অন্ততঃ কী করে মনকে সুস্থ রাখা যায় তাতো জানা উচিত। ভগবান, পূর্ব জন্ম, বুদ্ধ বা নির্বাণ নিয়ে আলোচনার কোন প্রয়োজন নেই। কিন্তু একটি সুন্দর মনের সুখী মানব কী ভাবে হওয়া যায় তার প্রয়োজন বেশী। সুখী মানুষ তার পরিবারকে সুখে রাখে। তা সমাজকেও রাখে সুখী। সুতরাং, আমার মনে হয় আবেগ সংক্রান্ত স্বাস্থ্যবিধি-এর বিষয়ে আমাদের সামান্য পাঠ নেওয়া প্রয়োজন।
আবেগ সংক্রান্ত স্বাস্থ্যবিধি
আবেগ সংক্রান্ত স্বাস্থবিধি কী? আমাদের প্রশান্ত মনকে যে উপাদানগুলি নাশ করে তার মোকাবিলা করা হল এর অর্থ। এই উপাদানগুলি অনেকটা মানসিক অসুস্থতার মতো। কারণ এই নেতিবাচক আবেগগুলি শুধু আপনাদের সুস্থ ও শান্ত মনকে নাশ করে না, ওরা আপনার যথার্থতা বোধের মানসিক ক্ষমতাকেও করে ধ্বংস। এ অত্যন্ত ক্ষতিকারক। কারণ ক্রোধান্বিত অবস্থায় আপনি বাস্তব দেখতে পাবেন না এবং আপনার মন হবে পক্ষপাত দুষ্ট। আসক্তিতেও তাই হয়। সঠিকভাবে আপনি সত্য উপলব্ধি করতে পারবেন না। এটি মনের বিকার। সচেতনতাই আমাদের মনের প্রকৃত চরিত্র। এই জন্য যে কোন উপাদান যা আমাদের সচেতনতার প্রতিবন্ধক হয়, তা হল নেতিবাচক বিষয়।
সুতরাং, এই ধরণের আবেগগুলির হ্রাস এবং সুস্থ মনের শান্ত ও স্বচ্ছতা বজায় রাখার মতো মানসিক ক্ষমতার রক্ষণাবেক্ষণই হল আবেগ সম্পর্কিত স্বাস্থ্যবিধি, সেরকম করার জন্য প্রথমেই আমাদের মনে আগ্রহ জাগিয়ে তার উন্নতি সাধন করতে হবে। নিজে অনাগ্রহী হয়ে অপরকে তা করার জন্য জোর করতে পারবেন না। ব্যক্তিগত উৎসাহেই তা আসতে হবে। অনুশীলনের সময় এর মূল্য যখন আপনি বুঝবেন একমাত্র তখনই তা আসবে। এই মূল্য বা আদর্শগুলো আমরা শেখাতে পারি।
মন ও আবেগের উপর বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার
এখন আমরা বিজ্ঞানের দিকে নজর দিচ্ছি। আগেকার দিনে আধুনিক বিজ্ঞান ছিল বস্তু নির্ভর। সেখানে আপনি পরিমাপ নিতে পারেন। আমার মনে হয় বিংশ শতাব্দীর অন্তিম পর্বও বর্তমান একবিংশ শতাব্দীর প্রথমেই মন ও তার আবেগ নিয়ে বহু বিজ্ঞানী অনুসন্ধিৎসু হচ্ছেন। মন ও তার আবেগগুলির মধ্যে সম্পর্কটি নিবিড়, এর কারণ স্বাস্থ্য সম্পর্কিত। কতিপয় বিজ্ঞানী আজ বলছেন ‘সুস্থ মন, সুস্থ দেহ’। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরাও বলছেন- ক্রমাগত ভয়, ক্রোধ ও ঘৃণা আমাদের রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতাটিকে কুঁড়ে-কুঁড়ে খায়। অন্যদিকে একটি করুণাময় চিত্ত তা বাঁচিয়ে রাখে ও সুস্থ দেহকে করে আরও শক্তিশালী। আমরা জানি যাঁরা মানসিক ভাবে সুখী তাদের দেহে এর সদর্থক প্রভাব অত্যন্ত প্রবল, এটি নিশ্চিত।
প্রতিকুল অবস্থাতেও সদর্থক তাৎপর্যের চিহ্নিত করন
আমার জীবনেই ষোল বছর বয়সে আমি গুরু দায়িত্ব নিয়েছিলাম। পরিস্থিতি ঘোরালো হয়ে উঠেছিল। স্বদেশ হারালাম চব্বিশ বছরে। এখন শরণার্থী হয়ে জীবনের অধিকাংশ সময় কাটল। ইতিমধ্যে তিব্বতের অভ্যন্তরে দেখা গেছে ব্যাপক সমস্যা ও দুঃখ-কষ্ট। মানুষ আমার উপর অগাধ আস্থা ও বিশ্বাস রেখেছে। কিন্তু আমি অসহায়। যাইহোক, আমার শান্ত মন এসবকে আরও বেশী করে বাস্তবানুগ হয়ে দেখতে সাহায্য করেছে। শান্তিদেব যেমনটি বলেছিলেন- সমস্যার সমাধান যদি করা যায় তবে উদ্বেগের কোন কারণ নেই। আবার যদি কঠিন পরিস্থিতির কোন সমাধান না থাকে, তাহলে বেশী চিন্তা করে কোন লাভ নেই। অত্যন্ত বাস্তবানুগ, তাই আমি এর অনুশীলন করি।
সব কিছুকে আরও বেশীবার বাস্তবানুগ হয়ে দেখা খুবই মহত্ত্বপূর্ণ এবং সকল বস্তু আপেক্ষিক, এই ভাবেও দেখা উচিত। যাই ঘটুক না কেন, তারও কিছু সদর্থক ফলাফল থাকবে। আমাকেই দেখুন, আমি শরণার্থীতে পরিণত হয়েছি। কিন্তু এর ফলে আমি বহু মানুষের সঙ্গে মেলামেশার সুযোগ যেমন পেলাম, তেমনই নানারকম মতবাদ করেছি অধ্যয়ন। ধর্মবিরোধী থেকে ভিখারি, নেতৃবর্গ, বিভিন্ন আঙ্গিকের বিদ্বানদের সঙ্গে মিলিত হয়েছি আমি। এতে খুবই উপকৃত হলাম। নইলে আমি যদি তিব্বতে রয়ে যেতাম তাহলে এখন আমার জেটুকু জ্ঞানগম্মি আছে সেক্ষেত্রে হতো তার অর্ধেক। সুতরাং, একদিক দিয়ে তা এক মহাবিপর্যয়। অন্যদিকে দেখলে তা নিয়ে এসেছে এক বিরাট সুযোগ। যদি বিভিন্ন কোণ থেকে দেখি তাহলে আমাদের তা ঠিকই মনে হবে। খারাপ কিছু ঘটতে পারে, কিন্তু তাতেও ভালো কিছু থাকবে।
অতীতে তিব্বতীরা কিছুটা বিচ্ছিন্ন ছিল। এখন তাদের চিন্তা-ভাবনা হয়েছে অনেক প্রসারিত। শত-শত বছর ধরে তিব্বতীরা ছিল অর্ধ নিদ্রিত অবস্থায়। এখন ওরা জেগে উঠেছে। তা অতি উত্তম। সুতরাং, আপনারা দেখতে পাচ্ছেন, বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে আপনি কিছু সদর্থক বিষয়ও পাবেন। মানসিক শান্তি বজায় রাখতে তা অত্যন্ত সহায়ক হয়। আজকাল আমার পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হলে ওরা বলে আমার মুখমণ্ডল এখনও অনেক স্বল্পবয়সি দেখায়। কয়েকজন এর রহস্য কী তাও জিজ্ঞাসা করে। আমি তাদের বলি মানসিক শান্তির জন্য আট-নয় ঘণ্টা নিদ্রা প্রয়োজন। অবশ্যই এটি একটি কারণ। কিন্তু আমাদের মন ও মানসিক অবস্থা অপেক্ষাকৃত শান্ত থাকলেই প্রকৃত উপকার হয়।
অস্ত্রোপচারের পর আরোগ্যলাভের সময়ও প্রশান্তমন সহায়ক হয়। আমার পিত্তথলিতে যখন অস্ত্রোপচার হল, তা বেশ গুরুতর ছিল। শল্যচিকিৎসকরা পরে আমায় বলেছিল যে এইধরনের অস্ত্রোপচারে সাধারণত ১৫-২০ মিনিট সময় লাগে। কিন্তু আমার বেলায় লাগাল প্রায় তিন ঘণ্টা। পিত্তথলির ভিতরে পূঁজ জমে ওর আকার হয়ে গেছিল প্রায় দ্বিগুণ। আমি কিন্তু পাঁচ দিনেই সুস্থ হয়ে উঠলাম, এই এমনি। অতএব, প্রশান্ত মনও ইতিবাচক মনোভাব দেহ সুস্থ রাখতে সত্যিই সাহায্য করে। এমনকি খারাপ কিছু ঘটতে চললেও আপনি তাড়াতাড়ি সেরে উঠেন। সুস্বাস্থের জন্য শান্ত মন একটি খুবই মহত্বপূর্ণ বিষয়।
অন্তরের সৌন্দর্য বনাম বাহ্যিক সৌন্দর্য
আমি এখানে আধা মজা আর আধা খোঁচা দিয়ে বলব যে কিছু যুবতি প্রসাধনের জন্য বেশ খরচ করতে পছন্দ করেন। কেউ-কেউ মুখে নীল, সবুজ ইত্যাদি নানা রকমের রং মাখেন। তাতে খুব একটা সুন্দর দেখায় না। কিন্তু ওরা ভাবেন খুবই সুন্দর দেখাচ্ছে। মানুষ বাহ্যিক সৌন্দর্যের প্রতি বেশী মনোযোগী। একবার এক সভায় দেখলাম একজন ভদ্রমহিলার চুলের রং নীল। এরকম তো দেখা যায় না। আর আমিও তাকে সকৌতুকে বললাম চুল নীল হলেই তা সুন্দর দেখায় না। বাহ্যিক রুপ অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু অন্তরের সৌন্দর্য আরও বেশী মহত্বপূর্ণ। যে সকল ভদ্রমহিলাগণ বাহ্যিক রুপের জন্য বহু ব্যয় করেন, আপনারা অনুগ্রহ করে অন্তরের সৌন্দর্যের দিকে একটু নজর দিন। তা হলে আরও বেশী ভালো হবে।
শৈক্ষিক বিষয় হিসেবে মন ও আবেগ
আমরা বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের কথা বলছি। মনের প্রকৃত শান্তি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রেম ও করুণা সঞ্জাত আত্মবিশ্বাস ও অন্তরের শক্তিই মানসিক শান্তির মূলাধার। তার সঙ্গে যুক্ত অপরের হিতাকাঙ্খা ও শ্রদ্ধা। এই হল ধর্ম নিরপেক্ষ মূল্যবোধ।
মন ও আবেগের যত্ন কীভাবে নেওয়া যেতে পারে তার জন্য কিন্ডার-গার্টেন থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত আমরা শিক্ষার ব্যবস্থা করতে পারি। মন ও আবেগ এবং তাদের পারম্পরিক সম্পর্ক নিয়ে প্রচুর ব্যাখ্যা রয়েছে, বিষয়টি বিশাল। মনের এক অংশে যদি কিছু ঘটে থাকে তাহলে অন্য কোথাও আবার কোন ঘটনা ঘটে, এর মধ্যে আমরা কার্য-কারণ সম্পর্ক দেখতে পাচ্ছি। মন ও মস্তিষ্ক কীভাবে নিবিড় ভাবে যুক্ত তা নিয়ে কাজ করার সময় খুব সতর্কভাবে চিন্তা-ভাবনা করতে হবে।
শিক্ষাগত দিক দিয়ে এই বিশাল বিষয়টি সত্যই মূল্যবান। আমেরিকায় বিগত কয়েক বছর ধরে এই তথ্যগুলি নিয়ে বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা-নিরিক্ষা করছেন। তাতে অকট্য কিছু তথ্য উঠে এসেছে। এর ফলে সেখানে এখন ধর্মনিরপেক্ষ মূল্যবোধ নিয়ে শিক্ষামূলক কার্যক্রম চালু হয়েছে। ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষা-ব্যবস্থায় উপযোগী ধর্মনিরপেক্ষ নৈতিকতা শিক্ষাসুচীর খসড়া প্রস্তুতে আমরা নিয়োজিত।
দর্শকমণ্ডলী, বিশেষ করে যদি কোন শিক্ষাবিদ ও ধীমান এখানে উপস্থিত থাকেন আপনাদের এই বিষয়টি ভাবা উচিত। সুযোগ পেলে এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করলে ভালো হয়। এই সময়ে, মনে হয় শিক্ষাজগতে মানবিক মূল্যবোধ বিষয়ে পাঠের অভাব আছে। তাই এর জন্য অধিকাংশ মানুষ ধর্মীয় উপদেশের উপর নির্ভরশীল। অবশ্যই তা উত্তম। ধর্মে অনাগ্রহী এমন মানুষ অনেক আছেন এবং ধর্মীয় ধ্যান-ধারণা তাদের পক্ষে মানা শক্ত। এটি তা কঠিন করে তোলে।অতএব, ধর্মনিরপেক্ষ একটি পথ আমাদের খুঁজতে হবে। তাই হবে জগতে সর্বজন গ্রাহ্য।
শেষ করলাম, এবার প্রশ্নের পালা।
প্রশ্ন
প্রঃ পরম পবিত্র জী, আপনার সর্বশেষ মন্তব্যটি আমার প্রশ্নের অবতারণা করল। আপনি যদি কিছু মনে না করেন পূর্ণ উত্তর পাবার জন্য আপনাকে আবার প্রশ্ন করব। বিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ধর্মনিরপেক্ষ নৈতিকতা’ বিষয়ে শিক্ষাদান প্রসঙ্গে উপযুক্ত শিক্ষা কর্মসূচি প্রস্তুত করতে আপনি কি কারও সঙ্গে কাজ করছেন? যদি তাই হয় তবে আপনাদের সাহায্য করার মতো কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা অর্থনৈতিক সংস্থা কি পেয়েছেন?
উঃ আমি আগে যেমনটি উল্লেখ করেছি; ভারতে দিল্লির কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহায়তায় আমরা ইতিমধ্যে পাঠ্যক্রমের একটি খসড়া তৈরি করেছি। তাছাড়া আছে Mind and Life Institute, আমেরিকাতেও Wisconsin University, Emory University, Stanford University-এর মতো প্রতিষ্ঠানের বিশিষ্ট সদস্যগণ ধর্মনিরপেক্ষ নৈতিকতা নিয়ে শিক্ষাদান আগেই শুরু করেছেন। সম্প্রতি আমরা ইউরোপে এইরকম প্রতিষ্ঠান চালু করেছি। শীঘ্রই দিল্লীর নিকটবর্তী কোন স্থানে একটি প্রতিষ্ঠান স্থাপন করতে চাই। এখন পর্যন্ত এ নিয়ে কিছুটা কাজ করেছি আমরা। পাঠ্যক্রম প্রস্তুত হলে কিছু শিক্ষককে প্রশিক্ষা দিতে পারবো। কিছু একটা হবে। সময়োপযোগী হবে হয়তো, আমরা দেখব।
প্রঃ পরম পবিত্র জী, পৃথিবী এবং তার সকল উপাদান মাটি, গাছপালা, পশু, আমরা আশ্চর্য মানবজাতি, সবাইকে আমি ভালোবাসি। কিন্তু এই মানুষরা সবসময় পৃথিবীকে করছে ধ্বংস। হয়তো প্লাস্টিকের বোতল কেনার মতো নগণ্য কিছু বা অরণ্য ধ্বংসের মতো বড় আঙ্গিক করছে। জানি আমাকে ধৈর্য ধরতে হবে। কিন্তু যখন দেখি দুঃখ-কষ্ট, ঘটছে মৃত্যু তখন অন্তঃস্থল থেকে বেরিয়ে আসে ভয়ানক ক্রোধ এবং আমি লড়তে চাই। আমার প্রশ্ন হল কোন সুস্থ ক্রোধ আছে কি? সপ্রেম লড়াই কি আমি লড়তে পারি?
উঃ আমি আগেই বলেছি, ক্রোধ মনের গভীর ইচ্ছার সঙ্গে জড়িত। তাই কোন কিছুর উপর চিন্তিত হয়ে বা অপরের জন্য ক্রোধ হল এক জিনিস। আর বিদ্বেষ প্রসূত ক্রোধ একেবারেই অন্য রকম।
প্রঃ পরম পবিত্র জী, আপনি বলছিলেন পৃথিবীর ছয়শত কোটি বিশ্বাসী ও একশত কোটি অবিশ্বাসীর কথা। আমার বিশ্বাস তৃতীয় আর একটি গোষ্ঠী আছে যারা চিরচরিত ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছন্দ অনুভব করে না, কিন্তু ওরা অবিশ্বাসী নয়। তারা প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের বাইরে কিছু খুঁজছে। তাদের প্রতি আপনার কী উপদেশ?
উঃ অনেকদিন আগে স্টকহোমে একবার ছোট্ট একটি গোষ্ঠীর সঙ্গে দেখা হয়েছিল। বর্তমান পরম্পরা ও ধর্মের প্রতি তাদের আস্থা ছিল না। তবু কিছু একটি অধ্যাত্মের খোঁজে ছিলেন। হ্যাঁ, সেরকম কিছু মানুষ আছেন। আমার সঙ্গে সাক্ষাৎও হয়েছে। যাই হোক, আপনারা যাকে বলেন ‘নবযুগ’; এখান থেকে একটু ওখান কিছু নিয়ে বিরাট এক খিচুড়ি বানাচ্ছে। এতে খুব একটা কাজ হয় না।
আমি মনে করি কোন ব্যক্তির বস্তুগত চাহিদা পুরণ ভালো। কিন্তু গভীরতর আদর্শগুলির খোঁজার প্রয়াস এবং তা পাওয়া আরও ভালো। আমাদের জীবনকে বিশ্লেষণ করে দেখলে দেখা যায় যে কোন সংবেদন-তৃপ্তি থেকে সুখ আসে না, এই বিষয়টি খুবই মূল্যবান। যেমন গান-বাজনা, আপনি তৃপ্ত হলেন, বন্ধ করে দিলে আর তৃপ্তি রইল না। মানসিক স্তরে একটি তীব্র বিশ্বাস ও করুণার অনুভূতি থাকলে তা থেকে যে সন্তোষ আসে তা দীর্ঘস্থায়ী হয়।
প্রঃ আপনার কাছে মানুষের জীবনের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ জিনিস কী?
উঃ আমি সব সময় বলি- একটি সুখী জীবন লাভই আমাদের জীবনের মূল উদ্দেশ্য। কিন্তু এই সুখ বা আনন্দ লাভের জন্য সংবেদন উপাদান এবং অনুভবের উপর নির্ভর করা অনুচিত, বরং নির্ভর করা উচিত আমাদের মানসিক অবস্থার উপর। অতএব, আমি সবসময় যা বলি- আমাদের অন্তরের আদর্শগুলির উপর মনোযোগ দেওয়া অনেক জরুরি।আপনাদের ধন্যবাদ।