স্ব-পর সমতা এবং স্ব-পর পরিবর্তন

চেনশব সেরকোঙ্‌ রিনপোছে তাঁর মৃত্যুর দু-মাস আগে এই উপদেশটি ডঃ বরজিনের কাছে শুনিয়েছিলেন, তাকে এটা অক্ষরে অক্ষরে লিখতে বলেছিলেন এবং এটাকে তাঁর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ হিসাবে সংরক্ষণ করতে বলেছিলেন। এটি অসুখীতা ও সমস্যাগুলির সবচেয়ে বড় উৎস- আমাদের স্ব-লালন মনোভাব- একে কাটিয়ে ওঠার জন্য আর তার পরিবর্তে আন্তরিক ভাবে পর-লালন মনোভাব, যা হল সমস্ত সুখের উৎস, একে বিকাশ করার ধ্যানকে বিশদভাবে ব্যাখ্যা করে।

সম্পূর্ণরূপে অন্যের প্রতি উৎসর্গীকৃত হৃদয় এবং যথাসম্ভব অপরের কল্যাণের উদ্দেশ্যে বোধিলাভের জন্য কীভাবে বোধিচিত্তকে বিকাশ করা যায় তারজন্য রয়েছে দুটি পরম্পরা- সপ্তাংশ কারণ ও ফলের পরম্পরা এবং স্ব-পর সমতা ও স্ব-পর পরিবর্তন মনোভাবের পরম্পরা। প্রাথমিক অংশ হিসাবে প্রত্যেকেরই আগে থেকে সমতা বিকাশে একটা আলাদা এবং স্বতন্ত্র পদ্ধতি আছে। যদিও প্রত্যেকের একই নাম আছে “সমতা” তবুও যে ধরণের সমতার বিকাশ করা হয় সেটা হল আলাদা।

  1. সপ্তাংশ কারণ এবং ফল সম্পর্কিত ধ্যানের ক্ষেত্রে প্রত্যেক সত্ত্বকে আমাদের মা হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার আগে যে সমতাটি বিকশিত হয় তার মধ্যে বন্ধু-বান্ধব, শত্রু এবং অপরিচিত ব্যক্তির মনোনিবেশ অন্তর্ভুক্ত থাকে। আর এই সমতা যার মধ্যে আছে তার মধ্যে আসক্তি এবং বিদ্বেষের অনুভূতি জাগা বন্ধ হয়ে যায়। প্রকৃতপক্ষে, এর একটা নাম হল “সমতা-মাত্র যার কারণে আমরা বন্ধু-বান্ধব, শত্রু এবং অপরিচিত লোকজনদের প্রতি আসক্তি এবং ঘৃণা ত্যাগ করি।” এখানে “মাত্র” শব্দটি এই বোঝায় যে এর একটি দ্বিতীয় পদ্ধতিও আছে যার মধ্যে আরও কিছু অন্তর্ভুক্ত হয়ে রয়েছে।

    এই প্রথম ধরণের সমতার আর একটি নাম হল “সমতা-মাত্র অর্থাৎ শ্রাবক এবং প্রত্যেকবুদ্ধদের সাথে একযোগে সমতা বিকশিত হওয়ার উপায়।” শ্রাবক (শ্রোতাগণ) প্রত্যেকবুদ্ধ (স্ব-বিবর্তক) হলেন বুদ্ধের শিক্ষার হীনযানে অন্তর্ভুক্ত দুই-প্রকারের অনুশীলনকারী বা সাধক। এখানে “মাত্র” শব্দটির অর্থ হল যে এই ধরণের সমতা থাকলে আমরা না বোধিচিত্তের উৎসর্গীকৃত হৃদয় বিকাশ করতে পারি, না তার সাথে যুক্ত হতে পারি।
  1. আমাদের স্ব-পর সমতা এবং স্ব-পর পরিবর্তন মনোভাবের প্রাথমিক অংশ হিসাবে আমরা যে সমতার বিকাশ করি সেটা উপরে বর্ণিত সমতামাত্রকে বোঝায় না। এটা হল এমন এক ধরণের সমতা যেখানে সমস্ত সীমাবদ্ধ প্রাণীদের কল্যাণ করা এবং সহায়তা করা, আর তাদের সমস্যা দূর করার সাথে যুক্ত চিন্তা-ভাবনা বা ক্রিয়া-কলাপে আমাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বা দূরত্বের অনুভূতি থাকে না। এটা হল বিশেষভাবে বিশিষ্ট, অসাধারণ মহাযান উপায়ে সমতা বিকাশের পদ্ধতি।
Top