সম্যক্‌ প্রচেষ্টা, স্মৃতি এবং একাগ্রতা (সমাধি)

পুনঃ মূল্যায়ন

আমরা ত্রি-শিক্ষার দিকে তাকিয়ে আছি যে, এরা কীভাবে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সহায়তা করতে পারে অষ্টাঙ্গিক মার্গের অনুশীলনের মাধ্যমে। ত্রি-শিক্ষাগুলি হল-

  • নৈতিক শৃঙ্খলা (শীল)
  • একাগ্রতা (সমাধি)
  • প্রভেদমূলক চেতনা (প্রজ্ঞা)

আমরা নৈতিক আত্মশাসনকে বিকশিত করার জন্য সম্যক্‌ বাক্‌, কর্মান্ত, আচরণ (প্রচেষ্টা) এবং জীবিকাকে বাস্তবায়ন করি। এবার আমরা একাগ্রতার প্রশিক্ষণের দিকে নজর দিতে পারি যা সম্যক্‌ প্রচেষ্টা, সম্যক্‌ স্মৃতি এবং সম্যক্‌ একাগ্রতাকে অন্তর্ভুক্ত করে।

সম্যক্‌ প্রচেষ্টা হল ধ্বংসাত্মক চিন্তাধারা থেকে মুক্ত হওয়া এবং মনের অবস্থাকে বিকাশ করা যা ধ্যানের সহায়ক হয়।

স্মৃতি হল কোনও কিছুকে ধরে রাখার জন্য মানসিক আঠার মতো, যাতে সেটা মন থেকে চলে না যায়। অতএব এটা আমাদের কোনও কিছুকে ভুলে যেতে বাধা দেয়ঃ

  • এটি আমাদের শরীর, অনুভুতি, মন এবং চৈত্যগুলির প্রকৃত স্বভাব ভুলে যেতে দেয় না, যাতে এগুলি আমাদের বিভ্রান্ত না করতে পারে।
  • এটি আমাদের বিভিন্ন নৈতিক নির্দেশিকা, শিক্ষা অথবা সম্বরগুলি ভঙ্গ করতে দেয় না যদি আমরা গ্রহণ করে থাকি।
  • এটি একটি ফোকাসের বিষয়কে চলে যেতে দেয় না দেওয়া বা ভুলে যেতে দেয় না।

সুতরাং আমরা যদি ধ্যান করি, আমাদের অবশ্যই স্মৃতি প্রয়োজন হয় যাতে আমরা যে বিষয়টার উপর কেন্দ্রীভূত হই সেটা যেন হারিয়ে না যায়। আমরা যদি কারো সাথে কথোপকথন করি, তাহলে সেই ব্যক্তি কী বলছেন তার দিকে মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।

একাগ্রতা হল একটা কেন্দ্রীভূত বিষয়ের উপর মানসিক নির্ধারণ। সুতরাং আমরা যখন কারো কথা শুনি, এর অর্থ হল তারা কী বলছে, তারা কীভাবে তাকাচ্ছে এবং তারা কীভাবে কাজ-কর্ম করছে, তার উপর আমাদের একাগ্রতা তৈরী হয়ে আছে। একাগ্রতা বজায় রাখতে স্মৃতি সহায়তা করে। মানসিক আঠার মতো কাজ ক’রে এটা আমাদের সেখানে ধরে রাখে, যাতে আমরা নিস্তেজ না হয়ে যাই বা বিক্ষিপ্ত না হয়ে যাই।

প্রচেষ্টা

অষ্টাঙ্গিক মার্গের মধ্যে এটি হল প্রথম উপাদান। এটি আমরা একাগ্রতা উন্নত করতে সহায়তার জন্য ব্যবহার করি। যে সমস্ত বিভ্রান্তিমূলক চিন্তা-ভাবনা এবং আবেগপূর্ণ অবস্থা আমাদের একাগ্রতার অনুকুল নয়, তার থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য এবং পাশাপাশি ভাল গুণ বিকশিত করার জন্যেও আমরা প্রচেষ্টা করি। সাধারণতঃ আমরা যদি আমাদের জীবনে কিছু সম্পাদন করতে চাই, আমাদের প্রচেষ্টা করা প্রয়োজন। এসব জিনিস একেবারে কিছু না অর্থাৎ শূন্য থেকে আসে না, আবার কেউ বলেনি যে এটা সহজ। তবে আমরা অন্যের সাথে কীভাবে আচরণ করি, কথা বলি এবং লেনদেন করি সেই সম্পর্কে আমরা যদি নৈতিক আত্ম-শাসন সহ কাজ-কর্ম করে কিছুটা শক্তি অর্জন করে থাকি, সে ক্ষেত্রে এটি আমাদের মানসিক এবং আবেগপূর্ণ অবস্থার বিষয়ে কাজ-কর্ম করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার জন্য শক্তি প্রদান করে।


ভুল প্রচেষ্টা

ভুল প্রচেষ্টা আমাদের শক্তিকে ক্ষতিকারক, ধ্বংসাত্মক চিন্তা-ধারার দিকে পরিচালিত করে যা আমাদের মনকে বিক্ষিপ্ত করে এবং একাগ্র হওয়া কঠিন করে তোলে। ধ্বংসাত্মক চিন্তা-ভাবনার তিনটি মূখ্য ভাগ আছেঃ-

  • লোভের সাথে চিন্তা-ভাবনা করা।
  • অপকারেচ্ছার সাথে চিন্তা-ভাবনা করা।
  • বিরোধীতার সাথে চিন্তা-ভাবনা করা।

লোভের সাথে চিন্তা-ভাবনা করা

লোভের সাথে চিন্তা-ভাবনা বলতে ঈর্ষামূলক চিন্তা-ভাবনাকে বোঝায়, অর্থাৎ অন্যেরা কী অর্জন করেছে বা তারা কী আনন্দ এবং ভৌতিক বস্তু উপভোগ করছে, সেই বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করা। আমরা ভাবি, “আমি কী করে ওটা আমার জন্য পেতে পারি?” এটা আসক্তি থেকে উদ্ভুত হয়। আমরা সহ্য করতে পারি না যে, আমাদের কাছে যে জিনিসগুলি নেই সেগুলি অন্যদের কাছে আছে। এটা যে কোনও জিনিস হতে পারে- হতে পারে একজন সুন্দর সহকর্মী বা জীবনসঙ্গী বা একটি সুন্দর গাড়ী। এটা যে তার কাছে সেটা তার সফলতা। আমরা ক্রমাগত এটা নিয়ে ভাবতে থাকি। আমাদের মন খুবই বিশৃঙ্খল অবস্থায় পৌঁছে যায়। এটা পুরোপুরিভাবে আমাদের একাগ্রতাকে বাধা দেয়, তাই নয় কি?

পরিপূর্ণতা এই শিরোনামে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে- আমরা সবসময় দেখছি যে আমরা কীভাবে নিজেদের অতিক্রম করে যেতে পারি। এটি প্রায় নিজের সম্পর্কে ঈর্ষা।

অপকারেচ্ছার সাথে চিন্তা-ভাবনা করা

অপকারেচ্ছার সাথে চিন্তা-ভাবনা বলতে বোঝায় যে, কীভাবে কাউকে ক্ষতি করা যায়। যেমন, “এই ব্যক্তি যদি কিছু বলেন বা করেন, আমি পছন্দ করি না, এমনকি আমি পেয়ে যাব”। আমি ভাবতে পারি যে পরের বার যখন ঐ ব্যক্তিটির সঙ্গে আমার দেখা হবে, তখন আমরা কী করব বা বলব। আমরা অনুতাপ বা অনুশোচনা করি যে, তারা যখন আমাদের কিছু বলেছিল, তখন তার প্রত্যুত্তরে আমরা কিছু বলিনি। আমরা আমাদের মাথার ভেতরের এসবকিছু থেকে বেরিয়ে আসতে পারি না, কারণ আমরা এর সম্পর্কে অনেক কিছু ভাবি।

বিরোধিতার সাথে বিকৃতভাবে চিন্তা-ভাবনা করা

উদাহরণস্বরূপ, যদি কেউ নিজের উন্নতি করার চেষ্টা করে বা অপরের সহায়তা করে, আমরা ভাবি “তারা যা কিছু করেছে সবই অনর্থক। কাউকে সহায়তা করতে চেষ্টা করা হাস্যকর”। এই ধরণের ভাবনা হল বিকৃত এবং বিরোধী ভাবনা।

কিছু লোক খেলাধূলা পছন্দ করেন না। তারা মনে করেন, অন্যান্য লোকেরা যারা খেলাধুলা করেন এবং দূরদর্শনে ফুটবল খেলা দেখেন অথবা কোনও দলের খেলা দেখতে যান, তারা একেবারে বোকা। কিন্তু খেলাধুলা পছন্দ করাতে তো কোনও ক্ষতি নেই। এটাকে বোকা মনে করা বা সময় নষ্ট করা মনে করাটা মনের একটা ভীষণ বিরোধী অবস্থা।

অথবা অন্য কেউ ভিখারীদের টাকা দিয়ে সহায়তা করার চেষ্টা করে এবং আমরা তখন মনে করি, “ওহ! আপনি সত্যি বোকা যে, আপনি ঐ কাজটা করলেন”। আমরা যদি অবিরতভাবে ভাবি যে, অন্য লোকেরা কি বোকা এবং তারা যা কিছুই করছে তা অযৌক্তিক, তাহলে আমরা কখনও একাগ্র হতে বা মনোনিবেশ করতে সক্ষম হব না। এসব হল সেই চিন্তা-ভাবনা যেগুলি থেকে আমরা মুক্তি পেতে চাই।

সম্যক্‌ প্রচেষ্টা (সম্যক্‌ ব্যায়াম)

সম্যক্‌ প্রচেষ্টার অর্থ হল আমাদের শক্তিকে ক্ষতিকারক, ধ্বংসাত্মক চিন্তাধারা থেকে দূরে রাখা এবং উপকারী গুণাবলীর বিকাশের দিকে পরিচালনা করা। এর জন্য, আমরা সেই কথা প্রয়োগ করি যাকে পালি ভাষায় বলা হয় “চার সম্মপ্পধান”। সংস্কৃত এবং তিব্বতী সাহিত্যে, এদের বলা হয় “সম্যক্‌ নিষ্কৃতি লাভের চারটি তথ্য”। অন্য কথায় এগুলি হল আমাদের দোষগুলি থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য তথাকথিত “চার শুদ্ধ প্রহাণ”।

  1. সর্বপ্রথম, আমরা নেতিবাচক গুণাবলীর উত্থান রোধের জন্য প্রচেষ্টা করি যেগুলি এখনও বিকশিত হয়নি। উদাহরণস্বরূপ, আমাদের যদি একটি খুবই আসক্তিযুক্ত ব্যক্তিত্ব থাকে, তাহলে আমরা সরাসরি চলচিত্রের অবিরাম ডাটা প্রবাহের পরিষেবাতে যোগদান এড়াতে চাইতে পারি, যেখানে আমরা সিরিজের পর সিরিজ দেখে সারাদিন কাটাতে পারি। এটা বেশ ক্ষতিকারক এবং আমাদের একাগ্রতাকে ক্ষতি করার দিকে পরিচালিত করে।
  2. তারপর আমাদের প্রচেষ্টা করতে হবে নিজেদেরকে নেতিবাচক গুণাবলী থেকে মুক্তি পেতে। যেগুলি ইতিমধ্যে আমাদের মধ্যে উদ্ভূত হয়ে আছে। সুতরাং আমরা যদি কোনও কিছুর প্রতি আসক্ত হই তাহলে আমাদের পক্ষে এটিকে সীমাবদ্ধ করা ভাল। উদাহরণস্বরূপ, আমরা সবাই কিছু লোককে জানি যারা তাদের আইপডের প্রতি এতটাই আসক্ত যে, তারা সঙ্গীত না শুনে কোথাও যেতে পারে না। তারা প্রায় যেন চুপ করে থাকতে ভয় পায়, আর ভয় পায় অন্য কোনও জিনিসের বিষয়ে ভাবতে। অতএব তারা নিয়মিতভাবে সঙ্গীত উপভোগ করতে থাকে। অবশ্যই, দীর্ঘ ভ্রমণের জন্য গাড়ি চালানোর সময় আপনাকে জাগ্রত রাখতে উচ্চ স্বরের সঙ্গীত কার্যকর হতে পারে অথবা ব্যায়াম করার সময় গতি বজায় রাখতে, এবং কাজ করার সময় মনোরম সঙ্গীত শান্ত থাকতে সহায়ক হতে পারে, তবে সঙ্গীত অবশ্য কারও সাথে কথোপকথনের সময় মনোনিবেশ করতে আমাদের সহায়তা করে না। অবশ্যম্ভাবী রূপে এটি বিক্ষিপ্তকর।
  3. এরপর, আমাদের নতুন ইতিবাচক গুণাবলী বিকশিত করা প্রয়োজন।
  4. তারপর আমাদের প্রচেষ্টা করা প্রয়োজন উদ্ভূত ইতিবাচক গুণাবলীকে বজায় রাখতে এবং উন্নতি করতে।

এগুলিকে দেখা এবং ব্যবহারিক প্রয়োগগুলি পাওয়ার চেষ্টা করাটা খুবই আকর্ষণপূর্ণ। আমার নিজের একটি উদাহরণ হল যে, আমার ওয়েবসাইট সম্পর্কে একটি খুব বাজে অভ্যাস ছিল। সেটা হচ্ছে আমার প্রায় ১১০ জন লোক আছে যারা এতে কাজ করে। তারা সর্বক্ষণ তাদের অনুদিত এবং সম্পাদিত ফাইলগুলি ই-মেলে আমার কাছে পাঠাতে থাকত। সেই মতো আমি প্রতিদিন অনেকগুলি মেল পেতাম। আমার বদভ্যাসটি হল- আমি একটি যথাযথ ফোল্ডারে নির্দিষ্ট ফাইল বানিয়ে রাখার পরিবর্তে, সব ফাইল একটা পুরানো ফোল্ডারে ডাউনলোড করে রাখতাম। এরকম করে রাখলে আমি আর আমার সহযোগী সেগুলিকে সহজে খুঁজে পেতে পারতাম। এটি সত্যিই একটা বদভ্যাস ছিল। কারণ আমার অ-দক্ষতা আমাদের কাজের প্রতি একাগ্র হতে বাধা সৃষ্টি করেছিল। ফলে সেগুলিকে খুঁজে পেতে এবং সাজাতে প্রচুর সময় নষ্ট হয়েছে। সুতরাং এখানে ইতিবাচক গুণটি কী হতে পারে? একটি পদ্ধতি স্থাপন করা যাতে কোনও মেল আসার সাথে-সাথে যেন সেটি তৎক্ষণাৎ সঠিক ফোল্ডারে চলে যায়। এটি সর্বদা জিনিসগুলি তাদের যথাযথ স্থানে রাখার অভ্যাস গড়ে ওঠে। কোন কাজ শুরু করার জন্য অলস হওয়ার পরিবর্তে, সবকিছুকে সর্বত্র যথাযথভাবে করতে হয়।

এই উদাহরণে, আমরা একটি নেতিবাচক গুণ খুঁজে পেয়েছি যা হল এক খুবই নিষ্ফলা অভ্যাস, কিন্তু এতে একটা ইতিবাচক গুণও আছে। তাই নেতিবাচক গুণকে ত্যাগ করে ফাইল তৈরী করার একটি যথাযথ পদ্ধতি চেষ্টা করেছি, যাতে আমরা এটি চালিয়ে যাওয়া থেকে রোধ করতে পারি। এটা একটা খুবই সহজ স্তরের অনুশীলন যার বিষয়ে আমরা আলোচনা করছি।

একাগ্রতার (সমাধির) পাঁচটি বাধা অতিক্রম করা

সম্যক্‌ প্রচেষ্টা (ব্যায়াম) জড়িত থাকে একাগ্রতার পাঁচটি বাধা অতিক্রম করার কাজেও। এগুলি হলঃ-

পঞ্চ কাম-গুণের মধ্যে যে কোনও একটিকে অনুসরণ করার উদ্দেশ্য

পঞ্চ কাম-গুণ হল- সুন্দর দৃশ্য, শব্দ, গন্ধ, স্বাদ এবং শারীরিক সংবেদন। এটি হল সেই বাধা যেটাকে আমরা অতিক্রম করার চেষ্টা করি। যেমন- আমরা আমাদের কাজ আদি কোনও কিছুর উপর একাগ্র হওয়ার প্রচেষ্টা করি, কিন্তু চিন্তা-ভাবনার কারণে আমাদের একাগ্রতা বিক্ষিপ্ত হয়ে যায়। যেমন- “আমি একটি সিনেমা দেখতে চাই” অথবা “আমি ফ্রিজে যেতে চাই”। এখানে আমরা তাকিয়ে থাকি কাম-গুণ বা কাম-ইচ্ছার দিকে। যেমন- খেতে চাওয়া, সঙ্গীত শোনা ইত্যাদি। যখন এই ধরণের অনুভুতি জাগে তখন বিষয়গুলির পিছনে না দৌড়িয়ে আমাদের প্রচেষ্টা করতে হবে যাতে আমরা মনোযোগী থাকতে পারি।

বিদ্বেষপূর্ণ চিন্তা-ভাবনা

এটি হল কাউকে আঘাত করার ভাবনা। আমরা যদি সদা আক্রোশপূর্ণভাবে চিন্তা-ভাবনা করি এই ভেবে, “এই ব্যক্তিটি আমাকে আঘাত করে, আমি তাকে পছন্দ করি না, আমি কীভাবে প্রতিশোধ নেব?” তাহলে একাগ্রতার জন্য এটি একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। আমাদের জঘন্য ক্ষতিকারক চিন্তা-ভাবনাকে ত্যাগ করার জন্য চেষ্টা করা প্রয়োজন। এটা শুধু অন্যের ক্ষেত্রে নয় বরং নিজেদের ক্ষেত্রেও।

কুয়াশাচ্ছন্ন প্রবণতা এবং তন্দ্রাচ্ছন্নতা

কুয়াশাচ্ছন্নতার অর্থ হল- আমাদের মন কুয়াশায় পড়ে আছে, আমরা বাক্যহীন হয়ে গেছি এবং স্পষ্টভাবে চিন্তা-ভাবনা করতে পারছি না। তন্দ্রাচ্ছন্নতা হল- স্পষ্টত আমরা ঘুমিয়ে আছি। এদের সঙ্গে লড়াই করার জন্য আমাদের চেষ্টা করতে হবে। আপনি এটি কফির সঙ্গে করতে পারেন বা শুদ্ধ বায়ু সেবন করেই করতে পারেন, তবে আমাদের চেষ্টা চালাতে হবে যে, আমরা যেন এদের নিয়ন্ত্রণে চলে না যাই। তবে সত্যিই যদি একাগ্র হওয়া খুব কঠিন হয়ে যায়, তাহলে আমাদের একটা সীমা নির্ধারণ করতে হবে। আপনি যদি বাড়িতে কাজ করেন ২০ মিনিটের জন্য শুয়ে নিন অথবা বিরতি দিন। আপনি যদি কার্যালয়ে থাকেন, তাহলে ১০ মিনিটের জন্য একটা কফি বিরতি নিন। একটা সীমা নির্ধারণ করুন এবং তারপর কাজে ফিরে যান।

মনের উড়ন্তপনা এবং অনুশোচনা

মনের উড়ন্তপনা বলতে বোঝায়, যেখানে আমাদের মন ফেসবুক, ইউটিউব বা অন্য কিছুর দিকে উড়তে থাকতে। অনুশোচনার অনুভূতি হল- যেখানে আমাদের মন অপরাধবোধের দিকে ওড়ে। এই ভেবে “আমার খুব খারাপ লাগছে যে আমি এটা করেছি বা ওটা করেছি”। এই জিনিসগুলি খুবই বিক্ষিপ্তকর এবং সত্যিই আমাদের একাগ্রতা থেকে দূরে রাখে।

অমীমাংসিত দ্বিধা এবং সন্দেহ

আমাদের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার শেষ জিনিসটা হল অমীমাংসিত দ্বিধা এবং সন্দেহকে অভিভূত করা। “আমার কী করা উচিত? মধ্যাহ্ন ভোজনে আমার কী খাওয়া উচিত? আমার কি তাই থাকা উচিত, না কি আমার সেরকম থাকা উচিত নয়?” আমরা মনস্থির করতে অসামর্থ্য হয়ে প্রচুর পরিমাণে সময় নষ্ট করি। আমরা একাগ্র হতে পারি না এবং জিনিসগুলির সঙ্গে তালমেল রাখতে পারি না যদি আমরা সর্বদা সন্দেহ এবং অমীমাংসায় পরিপূর্ণ থাকি। অতএব আমাদের প্রয়োজন এটির সমাধান করার প্রচেষ্টা করা।

সংক্ষেপে, সম্যক্‌ প্রচেষ্টার (ব্যায়াম) অর্থ হল চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া-

  • বিশৃঙ্খল এবং ধ্বংসাত্মক উপায়গুলি ত্যাগ করার জন্য।
  • নিজেদেরকে বদভ্যাস এবং দোষগুলি থেকে মুক্ত রাখার জন্য, যদি আমাদের মধ্যে থেকে থাকে।
  • আমাদের মধ্যে যে গুণাবলী আগের থেকে আছে এবং যেগুলির ঘাটতি আছে তার বিকাশ করার জন্য।
  • একাগ্রতার বাধা থেকে নিজেদের মুক্ত রাখার জন্য।

স্মৃতি

অষ্টাঙ্গিক মার্গের পরবর্তী দিকটি হল সম্যক্‌ স্মৃতি যা একাগ্রতার (সমাধি) সম্পর্কে জড়িত-

  • স্মৃতি হল মূলতঃ মানসিক আঠা। আমরা যখন একাগ্র হই তখন আমাদের মন একটা বস্তুকে ধারণ করে থাকে। এই ধারণ করা স্মৃতি আমাদের অন্যত্র যেতে বাধা দেয়।
  • এটি হল সতর্কতার সঙ্গত যা আমাদের মনোযোগকে সনাক্ত করে যদি এটি বিক্ষিপ্ত হয় অথবা যদি আমাদের ঘুম পায় বা আমরা নিস্তেজ হয়ে যাই।
  • তারপরে আমরা আমাদের মনোযোগ ব্যবহার করি, যার অর্থ হল কেন্দ্রবিন্দুর বিষয় সম্পর্কে আমরা কী ভাবি বা কী বিবেচনা করি।

এখানে আমরা মনোযোগ দিই যে, আমরা আমাদের শরীর, অনুভুতি, মন এবং বিভিন্ন প্রকারের চৈত্য নিয়ে কী বিবেচনা করি? আমরা ধরে রাখাটা ত্যাগ করতে চাই এবং আমাদের শরীর আর অনুভুতিগুলির সম্পর্কে ভুল বিবেচনা করা থেকে এড়াতে চাই। কারণ আমরা যখন যেতে না দিই তখন আমরা বিক্ষিপ্ত হয়ে যাই এবং একাগ্র হতে অক্ষম হয়ে যাই। সুতরাং এখানে পর্যায়ক্রমে স্মৃতির ভুল এবং সঠিক রূপগুলিকে দেখা যাক।

আমাদের শরীর সম্পর্কে

আমরা যখন শরীরের কথা বলি, সাধারণতঃ তখন এটি আমাদের আসল শরীর এবং বিভিন্ন শারীরিক সংবেদন অথবা আমাদের শরীরের দিকগুলিকে বোঝায়। শরীর সম্পর্কে ভুল বিবেচনা হবে এইরকম ভাবলে যে, আমাদের শরীর স্বাভাবিকভাবে আনন্দদায়ক, শুদ্ধ এবং সুন্দর। আমরা আমাদের চুল এবং সাজ-সজ্জা, কীভাবে আমরা পোশাক পরি ইত্যাদিকে আমাদের মতো দেখি এবং তার কারণে বিক্ষিপ্ত বা উদ্বিগ্ন হয়ে বিপুল পরিমাণ সময় নষ্ট করি। অবশ্যই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং উপস্থাপিত রাখাটা ভাল। কিন্তু আমরা যখন চুড়ান্ত ধারণার দিকে অগ্রসর হই এই ভেবে যে, শরীরটা আনন্দের উৎসের মতো প্রতীত হচ্ছে এবং এটি সর্বদা নিখুঁত হতে হবে, যাতে আমরা অন্যদের আকর্ষণ করতে পারি, তখন এটি কিন্তু কোনও অর্থপূর্ণ জিনিসের উপর বেশি একাগ্র হতে সময় দেয় না।

শরীরটাকে বাস্তবানুগভাবে দেখতে হবে। আমরা যদি বেশিক্ষণ ধরে বসে থাকি আমরা অস্বস্তিকর অনুভব করি। তখন আমাদের নড়াচড়া করতে হয়। আমরা যদি শুয়ে থাকি, একটা অবস্থান হয়ে যায় অস্বস্তিকর; এবং পরেরটিও সেইরকম হয়। আমরা অসুস্থ হই; শরীর বৃদ্ধাবস্থায় পৌঁছতে থাকে। ব্যায়াম এবং ভাল খাওয়া-দাওয়ার মাধ্যমে শরীরের যত্ন নেওয়া এবং সুস্বাস্থ্যের মধ্যে থাকাতে নিশ্চিত হওয়া গুরুত্বপূর্ণ। তবে এর উপর অত্যধিক কেন্দ্রীভূত হওয়া এই ধারণা নিয়ে যে, শরীর হতে চলেছে একটি দীর্ঘস্থায়ী সুখের উৎস, তাহলে একটা সমস্যা তৈরী হয়ে যায়।

এটি হল ভুল স্মৃতি যার থেকে আমাদের পরিত্রাণ পেতে হবে। আমাদের ত্যাগ করতে হবে এই ধারণাটি যে, আমাদের চুল হল সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস অথবা আমাদের কাছে সদা এটি সম্পূর্ণরূপে রং-সমন্বিত হতে হবে, তাহলে এটি আমাদের সুখ প্রদান করবে। আমাদের এর উপর মনোনিবেশ করা বন্ধ করতে হবে এবং সম্যক্‌ স্মৃতি জাগাতে হবে, এই ভেবে, “আমার চুল এবং পোশাক” প্রকৃতপক্ষে সুখের উৎস নয়। এর সম্পর্কে বেশি চিন্তা-ভাবনা করলে আমার সময় নষ্ট হয় এবং আমাকে কোনও অধিক অর্থপূর্ণ জিনিসের উপর একাগ্র হতে বাধা দেয়।

আমাদের অনুভূতি সম্পর্কে

এখানে আমরা অসুখীতা এবং সুখের সম্পর্কে কথা বলছি যা সর্বশেষে দুঃখের উৎসের সাথে যুক্ত। আমরা যখন অসুখী বা দুঃখী হই, আমাদের মধ্যে একটা জিনিস থাকে যাকে “তৃষ্ণা” বলা হয়। আমরা অসুখীতার উৎসের সমাপ্তির জন্য তৃষ্ণার্ত। একইভাবে আমরা যখন কিছুটা সুখ অর্জন করি, তখন সত্যিই আমাদের মধ্যে অধিকের জন্য তৃষ্ণা জাগে। মূলতঃ এটিই হল সমস্যার উৎস।

আমরা যখন মনে করি যে অসুখীতা হল বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ জিনিস, তখন এটি আমাদের একাগ্রতায় সমস্যা তৈরী করে। কীভাবে? “আমি অস্বস্তিকর অনুভব করছি,” বা “আমি ভাল মানসিক অবস্থায় নেই,” বা “আমি অসুখী”। বেশ তাতে কী হয়েছে? আমাদের শুধু চালিয়ে যাওয়া উচিত যা কিছু আমরা করছি। আমরা যদি সত্যিই ভাবি যে আমার খারাপ মানসিক অবস্থাটি বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ জিনিস এবং এতেই যদি মনোনিবেশ করে থাকি তাহলে আমি যা কিছু করছি তার উপর একাগ্র হতে একটি গুরুতর বাধা সৃষ্টি হবে।

আমরা যখন সুখী থাকি আমাদের তখন বিক্ষিপ্ত হওয়া উচিত নয়, এই আশা করে যে, সুখের যেন বৃদ্ধি হয় এবং চিরকাল থাকে। ধ্যান করার সময় এটি ঘটতে পারে এবং আমরা সত্যিই ভাল অনুভব করতে শুরু করি। আমরা ঐ সময় বিক্ষিপ্ত হয়ে যাই এই অনুভব ক’রে যে, “এটা কী অদ্ভুত!” অথবা আমরা যদি কারো সঙ্গে থাকি যাকে আমরা পছন্দ করি বা সুস্বাদু কিছু খাই, ভুল স্মৃতিটা তার উপর মনোনিবেশ করে এই ধারণার সাথে, “এটি খুবই দুর্দান্ত”। এর ফলে আমরা বিক্ষিপ্ত হয়ে যাই। বাস্তবে যেটা যেমন আছে সেটাকে সেইভাবে উপভোগ করা উচিত। এটা নিয়ে বিশাল চুক্তি করা উচিত না।

আমাদের মন সম্পর্কে

আমরা যদি আমাদের মন সম্পর্কে বিবেচনা করি এই ভেবে যে, মনে কিছু সহজাত দোষ আছে বা এটি ত্রুটিযুক্ত, কারণ এটি নিজস্ব স্বভাবে ক্রোধ, মূর্খতা বা অজ্ঞতায় পরিপূর্ণ, তাহলে মনোনিবেশ করা কঠিন হয়ে যাবে। আমরা প্রায়শই নিজেদের পক্ষ থেকে চেষ্টা করার আগে নিজেদের সম্পর্কে ভাবতে শুরু করি যে, সবকিছু পর্যাপ্ত হচ্ছে না- “আমি এটা নই, আমি তা নই, আমি কিছু না”, অথবা “আমি বুঝতে পারি না”। আমরা যদি এই ধারণাতে নিজেকে ধরে রাখি, তাহলে এটি আমাদের মোটামুটি হতাশ করে ফেলবে। এখানে সম্যক্‌ স্মৃতি দ্বারা আমাদের মনে করতে হবে- “বেশ, অস্থায়ীভাবে হয়তো আমি নাও বুঝতে পারি, অস্থায়ীভাবে আমি বিভ্রান্ত হতে পারি, কিন্তু এর মানে এটা নয় যে এটা আমার মনের স্বভাব”। এই ভাবনাটি আমাদের কাজ করার জন্য একাগ্রতা ব্যবহার করতে আত্মবিশ্বাস জোগায়।

আমাদের চৈত্য সম্পর্কে

চতুর্থটি হল আমাদের চৈত্য বা চেতসিক, যেমন- বুদ্ধি, দয়া, ধৈর্য্য ইত্যাদি। ভুল স্মৃতির অর্থ হল ঐ ধারণাটিকে স্থির মনে করা অর্থাৎ “আমি যেভাবে আছি বাস্তবে সেটা সেইরকমই এবং প্রত্যেককে এটি মেনে নিতে হবে। এমন কিছু নেই যেটাকে আমি পরিবর্তন করতে পারি বা উৎপন্ন করতে পারি”। অন্যদিকে সম্যক্‌ স্মৃতির অর্থ হল বোধগম্য করা যে, একাগ্রতার উন্নতি করার জন্য এই বিষয়গুলিকে একটি নির্দিষ্ট স্তরে জমাট বেঁধে রাখা হয় না, বরং এটি বিকাশ করা যায় এবং উৎপন্ন করা যায়।

নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করা

এটি আশ্চর্যের বিষয়, আমরা যখন নিজেদের বিশ্লেষণ করি এটা দেখার জন্য যে, যখন আমরা সত্যিই খারাপ মানসিক অবস্থায় থাকি তখন আমরা কীভাবে সেটি মোকাবিলা করি। আমরা যখন নিজেকে দোষী বোধ করি, তখন আমরা আবিষ্কার করি যে, আমরা শুধু মানসিক অবস্থাটা ধরে রেখেছি এবং এটির সঙ্গে লেগে আছি, বা আমরা যে অপরাধের সঙ্গে ভুলটা করেছি সেখানে আটকে আছি। এই রকম পরিস্থিতিতে আমাদের ভাবতে হবে- বেশ, আমরা মানুষ এবং আমরা সবাই ভুল করি। এখানে ভুল স্মৃতি বলতে বোঝায় আমরা সেটাকে আঁকড়ে ধরে রাখি এবং যেতে দিই না। শুধু নিজেদের মারধর করি এই মনে করে যে, আমরা কি খারাপ? অন্যদিকে সম্যক্‌ স্মৃতি বলতে এই বোধগম্যকে বোঝায় যে, মানসিক অবস্থার পরিবর্তন হয়। কারণ সেগুলি হেতু এবং প্রত্যয়ের কারণে উদ্ভূত হয়, আর যেগুলি সদা-সর্বদা পরিবর্তন হচ্ছে, কিছুই চিরকাল থাকে না।

বৌদ্ধ শিক্ষাগুলিতে আমরা যে পরামর্শগুলি পাই তাদের মধ্যে একটি খুবই সহায়ক অংশ হল মূলতঃ “নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা”। এটা সকালে ঘুম থেকে ওঠার মতো। যখন আমরা বিছানায় শুয়ে থাকি এবং সত্যিই উঠে বেরোতে চাই না, কারণ এটি খুবই আরামদায়ক এবং আমাদের ঘুম পেতে থাকে। কিন্তু আমরা তখন নিজেদের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখি এবং উঠে পড়ি। তাই না? আমাদের এটি করার ক্ষমতা আছে। অন্যথা আমাদের মধ্যে অনেকে আছে যারা সকালে কখনও উঠতে পারে না। এটা একই জিনিস, আমরা যখন খারাপ মানসিক অবস্থায় থাকি বা আমরা কিছুটা কম অনুভব করি, তখন আমরা নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারি এটির বশ্যতা স্বীকার না ক’রে, অর্থাৎ প্রকৃতপক্ষে আমাদের যা প্রয়োজন সেটাই করা দরকার।

স্মৃতির অন্যান্য দিকগুলি

সাধারণতঃ স্মৃতি আসলে খুব গুরুত্বপূর্ণ। এটি আমাদের বস্তুকে ভুলে যেতে বাধা দেয়। যদি আমাদের কোনও কিছু করার প্রয়োজন হয় তাহলে সম্যক্‌ স্মৃতি এটির উপর একাগ্র হতে আমাদের সহায়তা করে। স্মৃতিকে এটা করতে স্মরণ করিয়ে দেয় যাতে আমরা মনে রাখতে পারি, আমাদের টিভির কার্যক্রমটি আজ রাতে রয়েছে। কিন্তু এটা এমন যে, কোনও বিষয়কে ধরে রাখাটা ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। এটা আমাদের অন্যান্য জিনিসকে ভুলতে বাধ্য করে যা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

আমরা যদি কোনও রকমের প্রশিক্ষণ অনুসরণ করি, তাহলে সেটাকে বজায় রাখার জন্য সম্যক্‌ স্মৃতি আছে। আমরা যদি ব্যায়াম করি তাহলে সেটাকে বজায় রাখার জন্য আমাদের প্রতিদিন ব্যায়াম করতে হবে। আমরা যদি খাদ্য সংযম অভ্যাসে থাকি, তাহলে আমাদের এই সম্পর্কে সচেতন থাকা উচিত। যখন কেউ আমাদের এক টুকরো কেক দেবে আমরা তখন সেটাকে আঁকড়ে ধরব না। স্মৃতি হল- আমরা কী করছি এবং প্রান্তস্থ আর গুরুত্বহীন জিনিসের কারণে বিক্ষিপ্ত হচ্ছি না, সেগুলিতে লেগে থাকা।

আমাদের পরিবারের সাথে স্মৃতি কখন বজায় রাখা হবে

অনেকে নীতিশাস্ত্র সম্পর্কে সচেতন হতে বেশি কঠিন বলে মনে করে, যখন তারা তাদের বন্ধু বা অপরিচিতদের অপেক্ষা তাদের পরিবারের সাথে থাকে। যদি এই বিষয়টা আমাদের সঙ্গে ঘটে থাকে, এর জন্য সাধারণ পরামর্শ হল- শুরুতে একটা দৃঢ় উদ্দেশ্য স্থাপন করতে হবে। আমরা যদি আপনার আত্মীয়দের সাথে দেখা করি তাহলে আমরা এই উদ্দেশ্যটা তৈরী করতে পারি, “আমি আমার মেজাজটাকে রক্ষা করার চেষ্টা করব। আমি মনে রাখার চেষ্টা করব যে তারা আমার প্রতি অত্যন্ত সদয়। তারা আমার কাছের লোক। সেইজন্য আমি যদি তাদের সাথে এইভাবে আচরণ করি, তাহলে সেটা তাদের অনুভূতিকে প্রভাবিত করবে”। শুরুতে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

আমাদের নিজেদেরকেও মনে করিয়ে দিতে হবে যে, তারা মানুষ। আমাদের এটা উচিত নয় যে, আমরা শুধু তাদের শনাক্ত করব মা-বাবা, ভাই-বোন হিসাবে অথবা তাদের সাথে আমাদের যে সম্পর্ক রয়েছে, সেই ভূমিকায় তাদের চিনব। আমরা যদি তাদের কোনও নির্দিষ্ট ভূমিকাতে ধরে রাখি, তাহলে আমরা প্রতিক্রিয়া করার প্রবণতা দেখাবো যে মা অথবা বাবা কী জিনিস; আমাদের সমস্ত ইতিহাস এবং প্রত্যাশা আর হতাশা যে তাদের সঙ্গে জুড়ে আছে, এর অভিক্ষেপের সাথে তারা কী করে? একজন মানুষ হয়ে একে-অপরের সাথে সম্বন্ধ থাকা ভাল। তারা যদি এটিকে মনে না রাখে এবং এখনও আমাদের সাথে শিশুদের মতো আচরণ করে, তাহলে আমরা একজনের অভিনয়ের দৃষ্টান্তে জড়িয়ে যাব না? আমরা মনে করি যে, তারা মানুষ এবং খেলাটা যেন না খেলে। সর্বোপরি একটি ট্যাংগো নৃত্য করতে দুজন বা দুটি লাগে।

সম্প্রতি আমার বড় বোন এক সপ্তাহের জন্য আমাকে দেখতে এসেছিল। তিনি রাত্রে মোটামুটি তাড়াতাড়ি ঘুমোতে যেতেন। ইতিমধ্যে তিনি আমাকে আমার মায়ের মতো করে বলতেন, “এখন ঘুমোতে যাও”। ঐসময় আমি যদি একটা ছোট্ট বাচ্চার মতো প্রতিক্রিয়া জানাতাম আর বলতাম, “না, এটা খুব তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে। আমি এখন ঘুমোতে চাই না, আমি জেগে থাকতে চাই, তুমি আমাকে ঘুমোতে যেতে বলছ কেন?” এটি তাহলে একই খেলা হয়ে যাবে। এর ফলে আমরা দুজনেই মন খারাপ করে ফেলব। সুতরাং ঐ সময় আমাকে নিজেকে মনে করিয়ে দিতে হয়েছিল যে, তিনি আমাকে ঐ পরামর্শটা দিচ্ছিলেন, কারণ তিনি আমার যত্ন করেন। এর কারণ হল তিনি চান না যে, আমি যেন রাগ করি। তিনি শুধু মনে করেন তাড়াতাড়ি ঘুমোতে যাওয়াটা আমার পক্ষে ভাল। অতএব আমাদের চেষ্টা করতে হবে এবং যা ঘটছে সেই সম্পর্কে শুধু আমাদের ধারণা প্রক্ষিপ্ত করার পরিবর্তে আরও বেশি বাস্তবসম্মত দৃষ্টিভঙ্গি জাগাতে হবে।

সুতরাং, পরিবারের সদস্যদের সাথে দেখা করার আগে আমাদের অনুপ্রেরণা সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে, যার অর্থ হল-

  • আমাদের লক্ষ্য- লক্ষ্যটি হল আমাদের পরিবারের সাথে একটি সুন্দর পরস্পর ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া থাকতে হবে, যেমন- আমি কার যত্ন নিই, এবং কে আমার যত্ন নেয়।
  • সহগামী সংবেদন- মানুষ হিসাবে আমাদের পরিবারের প্রতি যত্নশীল হতে হবে।

এটাকে দেখার আরও একটি উপায় হল, এটিকে একটি ভয়াবহ অগ্নিপরীক্ষা রূপে ভাবার পরিবর্তে বিকশিত হওয়ার চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগ হিসাবে দেখতে হবে। যেমন- “আমি কি আমার মেজাজ না হারিয়ে আমার পরিবারের সাথে রাতের খাবারটা খেতে পারি?”

আমার পরিবার যখন আমার ঠাট্টা করা শুরু করে, যেমনটা কি আমাদের মা-বাবা প্রায়শই করেন এইসব কথা বলে, “তুমি বিবাহ করবে না কেন? তুমি এর থেকে একটা ভাল কাজ পাওনা কেন? তোমার বাচ্চা-কাচ্চা নেই কেন?” (প্রথম বিষয়টি হল যে আমার বোন যখন আমাকে দেখেছিল তখন সে বলেছিল, “তোমার চুল কাটতে হবে”।) তারপর আমি সনাক্ত করে দেখি যে, সে আমাকে এই সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করছে কারণ সে আমার সম্পর্কে উদ্বিগ্ন। এর উত্তরে আমি কেবল বলতে পারি, “উদ্বিগ্ন হওয়ার জন্য ধন্যবাদ!”

এর সম্পর্কে আমরা এটাও ভাবতে পারি যে, তারা কেমন পটভূমি থেকে এসেছে? যা তাদের অনেক বন্ধুরা জিজ্ঞাসা করে, “আচ্ছা, আপনার পুত্র কী করছে? আপনার কন্যা কী করছে?” তাদেরকে সামাজিকভাবে তাদের বন্ধুদের সঙ্গে পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া করতে হবে। তারা জিজ্ঞাসা করছে না যে, খারাপ আচরণের কারণে আমি কেন এখনও বিয়ে করিনি, কারণ তারা আমার সুখের জন্য উদ্বিগ্ন। প্রথম পদক্ষেপটি হল- এটা স্বীকার করা এবং তাদের উদ্বেগের প্রশংসা করা। আমরা যদি চাই তাহলে শান্তভাবে ব্যাখ্যা করতে পারি যে, আমি কেন বিবাহ করিনি।

অনুপযুক্ত স্মৃতির সাথে আমরা প্রায়শই এমন জিনিসগুলোকে ধরে রাখি যা একেবারেই উৎপাদনশীল নয়। এটি প্রাচীন ইতিহাস হতে পারে, যেমন, “আপনি দশ বছর আগে এটি কেন করেছিলেন?” অথবা “আপনি ত্রিশ বছর আগে ওটা বলেছিলেন”। আমরা এটাকে ধরে রাখি এবং কাউকে একটা সুযোগ দিই না, যা আমাদের মনোনিবেশ করতে বাধা দেয় যে, তারা এখন কেমন আছে। আমরা এই পূর্ব ধারণাগুলি ধরে রাখি, “এটি ভয়াবহ হতে চলেছে। আমার মা-বাবা আসছেন”। কিন্তু আমরা ইতিমধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি যে, এটি ভয়াবহ হতে চলেছে। এটি আমাদের রাতের খাবারের আগে খুব উত্তেজনা বাড়ায়। সুতরাং আমরা এটিকে সঠিক স্মৃতির সাথে ঘুরিয়ে দিই এই ভেবে যে, এটি হল সেগুলিকে দেখার সুযোগ অর্থাৎ সেগুলি বাস্তবে কেমন এবং পূর্ব ধারণাগুলি ছাড়াই পরিস্থিতি যেমন প্রকাশিত হয় তাতে সাড়া দেওয়ার সুযোগ।

স্মৃতি বজায় রাখার জন্য ব্যবহারিক পরামর্শ

আমরা কঠিন পরিস্থিতিতে কীভাবে আমাদের স্মৃতি বজায় রাখতে পারি? আমাদের উৎপন্ন করতে হবে-

  • উদ্দেশ্য- চেষ্টা করার দৃঢ় উদ্দেশ্য যাতে ভুলে না যাই।  
  • পরিচিতি- একই প্রক্রিয়াকে বার-বার অনুসরণ করা যাতে এটাকে আমরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে মনে রাখতে পারি।
  • সতর্কতা- এলার্ম সিস্টেম (বিপদাশঙ্কা পদ্ধতি) যা সনাক্ত করে যখন আমরা স্মৃতি হারিয়ে ফেলি।

এই সমস্ত একটি যত্নশীল মনোভাবের উপর ভিত্তি করে আমরা অন্যের এবং নিজের সাথে আচরণ করি এবং তার ফলের বিষয়ে যত্নশীল থাকি। আমরা কেমন আচরণ করি সে বিষয়ে যদি সত্যিই চিন্তা না করি তাহলে সেটা স্মৃতি বজায় রাখবে না, কারণ সেখানে কোনও অনুশাসন থাকে না। আমরা কেন যত্ন নেব? কারণ আমরা একটা মানুষ। আমাদের বাবা আর মাও মানুষ। আর আমরা সকলেই সুখী হতে চাই। কেউ অসুখী হতে চায় না। আমরা যেভাবে অপরের সাথে আচরণ করি এবং কথা বলি সেটা তাদের অনুভূতির উপর প্রভাব ফেলে। অতএব আমরা কীভাবে আচরণ করব সে সম্পর্কে আমাদের যত্নশীল হতে হবে।

আমাদের পরীক্ষা করতে হবে নিজেকে এবং অনুপ্রেরণাগুলিকে। আমরা যদি শুধু ভাল হতে চাই তাহলে অন্যরাও আমাদের মতো ইচ্ছুক হবে। এটা কিছুটা শিশুসুলভ। এটা কিছুটা নির্বোধ। মননশীল হওয়া এবং স্মৃতিকে বজায় রাখার শ্রেষ্ঠ কারণ হল, যত্নশীল মনোভাবের উপর ভিত্তি ক’রে আমরা অপরের জন্য যত্নশীল হই।

একাগ্রতা (সমাধি)

অষ্টাঙ্গিক মার্গের মধ্যে তৃতীয় দিকটি যা আমরা একাগ্র হওয়ার জন্য প্রয়োগ করি, তাকে বলা হয় সঠিক একাগ্রতা (সম্যক্‌ সমাধি)। হ্যাঁ, একাগ্রতা হল কোনও একটি বস্তুর উপর প্রকৃত মানসিক স্থাননির্ণয়। আমরা যার উপর একাগ্র হতে চাই, একবার যদি সেটাকে ধরে ফেলতে পারি, স্মৃতি এটাকে ধরে রাখবে যাতে আমরা সেটা না হারাই। কিন্তু প্রথমে যে বিষয়টিকে ধরে রাখার ভূমিকাটি পালন করে সেটা হল একাগ্রতা।

কোনও কিছুর উপর একাগ্রতা আনার জন্য আমরা ব্যবহার করি মনোযোগ। অতীতের তুলনায় আজকাল যা কিছু বেশি ঘটছে, সেটা হল আমরা মনোযোগকে ভাগ করে ফেলেছি। সুতরাং আমরা কখনই পুরোপুরি একাগ্র হই না। আমরা যখন টিভির পর্দায় খবর দেখি, আমরা দেখি যে পর্দার মাঝখানে একজন ব্যক্তি আছেন যিনি সেই দিনের খবরটি রিলে করছেন। তার নীচে আছে অন্যান্য খবরের স্ক্রলিং লিপি এবং তার কোণে থাকে অন্যান্য জিনিস। আমরা কোনোটার উপর মনোযোগ দিতে পারি না বা কোনোটার উপর পুরোপুরি একাগ্র হতে পারি না। আমরা যদি মনে করি যে আমরা একসাথে একাধিক কার্য করতে পারি, আর অন্য কেউ সক্ষম হয় না, তাহলে আমি বলব যতক্ষণ পর্যন্ত কেউ বুদ্ধ না হচ্ছেন, তার পক্ষে সব জিনিসের উপর ১০০% একাগ্রতা স্থাপন করা সম্ভব না।

কখনও-কখনও আমরা যখন কারও সাথে থাকি এবং তারা আমাদের সঙ্গে কথা বলে, আমাদের মানসিক নির্ণয়টা থাকে আমাদের সেলফোনের উপর। এটা ভুল মানসিক নির্ণয়। কারণ, তারা আমাদের সঙ্গে কথা বলে কিন্তু আমরা মনোযোগ দিই না। কোনও জিনিসের উপর মানসিক নির্ণয় থাকলেও, এটাকে বজায় রাখা খুবই কঠিন। আমরা এখন জিনিসগুলির সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছি, যা খুবই দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে; একটার পর একটা দেখছি, যার কারণে আমরা অতি সহজেই বিরক্ত হয়ে পড়ি। এই ধরণের একাগ্রতা অর্জন ক’রে মাত্র কয়েক মুহুর্ত-এর উপর, কয়েকটি মুহুর্ত তার উপর একাগ্র হওয়ার মানে হল- একটি বাধা। এটি একটি ভুল একাগ্রতা। সঠিকভাবে একাগ্র হওয়ার অর্থ হল, যতক্ষণ পর্যন্ত প্রয়োজন ততক্ষণ পর্যন্ত বিরক্ত না হয়ে একাগ্র হতে সক্ষম হওয়া এবং এগিয়ে যাওয়া, আর মনে না করা যে আমরা আর আগ্রহী নই।

একাগ্রতার একটি অন্যতম বাধা হল যে, আমরা বিনোদন অর্জন করতে চাই। এটি ভুল স্মৃতির দিকে ফিরে যায় এই ভেবে যে, এটি অধিক তৃষ্ণার জন্ম দেওয়ার পরিবর্তে অস্থায়ী আনন্দ প্রদান ক’রে আমাদের সন্তুষ্ট করবে। সমাজ বিজ্ঞানীরা খুঁজে পেয়েছেন যে, আমরা কী করতে পারি এবং নজর দিতে পারি। সে বিষয়ে আরও সম্ভাবনা রয়েছে, আর ইন্টারনেট এর সম্পর্কে অসীম সম্ভাবনা সরবরাহ করে। এর কারণে আসলে আমরা হয়ে উঠি বেশি বিরক্ত, উত্তেজিত এবং চাপযুক্ত। আমরা যখন কোনও কিছুর দিকে তাকাই আমরা ভাবি যে, সেখানে আরও বেশি কিছু বিনোদনমূলক জিনিস থাকতে পারে। এর কারণে আমরা ভয় পাই যে আমরা এটি মিস করব। এইভাবে, আমরা চালিয়ে যাই, আরও চালিয়ে যাই অর্থাৎ তৃষ্ণার বৃদ্ধি করতে থাকি। এর কারণে আমরা কোনও কিছুর উপর ধ্যানকেন্দ্রিত হতে পারি না। যদিও এটা কঠিন, তাসত্ত্বেও চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া এবং নিজের জীবনটাকে সরল করার জন্য এটি সত্যিই একটি ভাল ধারণা। ফলে আমরা বুঝতে পারব যে, অনেকগুলি জিনিস একই সাথে ঘটছে না। আমাদের একাগ্রতার বিকাশ হওয়ার সাথে-সাথে আমরা আমাদের সুযোগ বাড়িয়ে তুলতে সক্ষম হব যে, আমরা কার সাথে মোকাবিলা করতে পারব।

আমাদের যদি ভাল একাগ্রতা থাকে তাহলে আমরা এটার উপর একাগ্র হতে পারব, এবং তারপরে ওটার উপর। তবে একই সময়ে অন্যমনস্ক না হয়ে কেবল একটার উপরই পারব। এটা একজন চিকিৎসকের মতো যিনি একেবারে একটা রোগীর সাথে মেলামেশা করতে চান এবং এরজন্য তাকে পূর্ববর্তী বা পরবর্তী রোগীর সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা না ক’রে তার উপর পূর্ণতঃ একাগ্র হতে হয়। যদিও একজন চিকিৎসক দিনে অনেকগুলি রোগী দেখতে পারেন, তবে তিনি এক সময়ে একজন রোগীর উপর পূর্ণতঃ একাগ্রতা বা মনোনিবেশ করে থাকেন। এটি একাগ্রতার জন্য বেশ ভাল।

তবে এটা খুব চ্যালেঞ্জিং। আমার বিষয়ে যদি বলি, আমি ওয়েব সাইটের সঙ্গে যুক্ত বিশাল পরিমাণের বিভিন্ন কাজ বিভিন্ন ভাষায় করাতে পরিচালনা করি। এখানে আমার জন্য একটা জিনিসের উপর মনোনিবেশ করাটা সত্যিই কঠিন। অনেক কিছু একই সাথে চলে আসে যে ব্যক্তি জটিল ব্যবসায় কাজ-কর্ম করেন তারও এই সমস্যাটা আছে। তবে একাগ্রতাকে পর্যায়ক্রমে বিকাশ করা যেতে পারে।

সারাংশ

আমাদের নিজেকে একাগ্রতার বাধা থেকে মুক্ত রাখাটা বেশ সুদূরপ্রসারী। কিন্তু এর জন্য একটা সরল উপায় হল, আমরা যখন কাজ করি তখন আমাদের সেলফোনটাকে বন্ধ করে দিতে হবে, অথবা দিনে একবার না হলে দুবার মেল চেক করার জন্য একটা নির্দিষ্ট সময় বেছে নিতে হবে, যাতে আমাদের যা কিছু করার প্রয়োজন সেটার জন্য পুরোপুরি একাগ্র হতে পারি। এটি হল একজন চিকিৎসক বা প্রফেসরের কার্যালয়ের সময়ের মতো; আমরা যখন  খুশি সেখানে যেতে-আসতে পারি না। আমাদের জন্য নির্দিষ্ট সময় আছে যে আমাদের কখন উপলব্ধ হতে হবে। আমরা পারি এবং আমাদের নিজেকে অবশ্যই করতে হবে। কারণ আমাদের একাগ্রতার বিকাশের জন্য এটি সহায়ক হয়।

সামাজিক বিকাশের দিকে তাকানো একটা মজাদার ব্যাপার। পূর্ববর্তী সময়ে আমাদের মানসিক অবস্থাই ছিল একাগ্রতার বাধা। মানসিক অবস্থা বলতে মানসিক বিচরণ, দিবাস্বপ্ন এবং আরও অনেক কিছু। এখন সেগুলি ছাড়া আরও বেশি কিছু আছে। এঁদের মধ্যে বেশিরভাগই আসে সেলফোন, ফেসবুক এবং ইমেলের মতো বাহ্যিক উৎস থেকে। এগুলির দ্বারা বশীভূত না হওয়ার জন্য প্রয়োজন প্রচেষ্টার। এটা করতে সক্ষম হওয়ার জন্য আমাদের এই মিডিয়াগুলির ক্ষতিকারক বৈশিষ্ট্যগুলিকে চেনা প্রয়োজন। সবচেয়ে সুস্পষ্ট ব্যাপারটা হল অনেকে এটি সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে যে, মনোযোগের সময়-পরিমাণটা কম হতে চলেছে। টুইটারের জন্য অক্ষরের সংখ্যার একটি সীমা আছে এবং ফেসবুক ফিড নিয়মিতভাবে আপডেট করা হয়। এগুলি এত দ্রুত যে, এটি একটা ভয়ানক অভ্যাস তৈরী করে যা একাগ্রতার জন্য ক্ষতিকারক। এর কারণ হল, আমরা কোনও কিছুর উপর মনোযোগ বজায় রাখতে পারি না; সবকিছু নিয়মিতভাবে পরিবর্তন করতে হয়। এটা এমনই একটা জিনিস যার দিকে নজর রাখতে হয়।

Top