মার্গক্রমের (লাম-রিম) পরিদর্শন

একটা মূল্যবান মানব জীবনের সর্বোত্তম প্রয়োগ

আমরা সকলেই একটা মূল্যবান মানব শরীর সহ একটা মূল্যবান মানব জন্ম লাভ করছি যা এটাকে সর্বকালের সম্ভাব্য আধ্যাত্মিক বিকাশের জন্য অনুমতি প্রদান করে। আমরা এখন মানুষ হিসাবে জ্ঞানলাভ করার জন্য যতটা সুযোগ পেয়েছি এরকম সুযোগ আমরা অন্য কোথাও পেতাম না, এমনকি আমরা যদি দেবরাজ ইন্দ্রের মতো পুনর্জন্মও গ্রহণ করতাম। 

যেহেতু আমাদের কাছে এখন কর্ম করার আধার আছে তার চেয়ে ভাল আধার আর কিছু নেই, অতএব এটাকে সর্বোত্তম ভাবে ব্যবহার করার পদ্ধতিটা জানা আমাদের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ। আধ্যাত্মিক বিকাশের সবচেয়ে উৎকৃষ্ট উপায় হল আমাদের মধ্যে আরও বেশি করে সদয় এবং উষ্ণ হৃদয় বিকাশ করা। উষ্ণ হৃদয়ের ভিত্তিতে আমরা বোধিচিত্তের উদ্দেশ্যের উৎসর্গীকৃত হৃদয়ের বিকাশ করতে পারি, এটা হল বোধিলাভের কামনা। অন্যকথায় আমাদের সমস্ত দোষকে দূর করা এবং যথাসম্ভব সর্বোত্তম উপায়ে সকলকে উপকৃত করার জন্য আমাদের সম্পূর্ণ সম্ভাবনা লাভের ইচ্ছা। আমরা যখন অন্যদের প্রতি, পাশাপাশি জ্ঞান লাভের জন্য আমাদের হৃদয়কে উৎসর্গীকৃত করি সেটাই হয় আমাদের বহুমূল্য মানব জন্মকে সর্বোত্তম ভাবে প্রয়োগ করা। 

এই জন্মের সাফল্যের কারণ হিসাবে অতীত আচরণ থেকে ইতিবাচক সম্ভাবনা

মানুষ অনেক রকমের হয়। তাদের সকলের মধ্যে এমন মানুষের সংখ্যা খুবই দুর্লভ, যারা ভবিষ্যতের জীবনকে উপকৃত করতে আগ্রহী, বিশেষ করে বোধিলাভের ক্ষেত্রে। বেশিরভাগ মানুষ শুধু এই জীবনে নিজের জন্য সুখের খোঁজ করতে উদ্বিগ্ন থাকে। যাইহোক, তারা সকলে একটা ক্ষেত্রে সমান যে, তারা সবাই সুখী হতে চায়, কেউ দুঃখী হতে চায়না বা সমস্যার সম্মুখীন হতে চায় না। 

যারা এই জীবনে সুখী হওয়ার জন্য মনোনিবেশ করেন, তাদের জন্যে দুই প্রকারের সুখ রয়েছেঃ শারীরিক সুখ এবং মানসিক সুখ। অধিকাংশ মানুষ তাদের মনোযোগ কেবল একপ্রকারের শারীরিক সুখের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখে। শারীরিক সুখ সম্পর্কে যদি বলা হয়, যদি আমরা সকলেই এর কিছু স্তরকে আমাদের জীবনে আনার জন্য কাজ করার চেষ্টা করি কিন্তু আমাদের মধ্যে অধিকাংশই জানে না যে, এটা কীভাবে করতে হয়। উদাহরণস্বরূপ, এমন কিছু মানুষ আছেন যারা আহার, বস্ত্র, আশ্রয় এবং মর্যাদা লাভের চেষ্টা করতে গিয়ে অন্যের হত্যা করেন বা নিরীহ প্রাণীদের জবাই করেন। অন্যরা চুরি, প্রতারণা বা সিঁধ চুরির ঘটনায় জড়িত হয়। তবে তারা সকলেই সুখের খোঁজ এবং একপ্রকারের শারীরিক সুস্থতার খোঁজ করার চেষ্টা করে। কিন্তু তারা যতই চেষ্টা করুক না কেন বাস্তবে তারা কল্যাণ করার কোন সঠিক উপায় জানেই না। ফলে পর সুখের পরিবর্তে আরও নিজের জন্য সমস্যার সৃষ্টি করে। 

অন্যদিকে যে সমস্ত মানুষ ব্যাবসা-বানিজ্য, কৃষিকাজ, শিক্ষা শিল্পকলা ইত্যাদির মাধ্যমে একটা সৎ জীবন-যাপনের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করে তাদের দুটি শ্রেণীতে বিভাজন করা যায়। এদের মধ্যে তাদের সফল বলা হয় যারা ধন-সম্পত্তি অর্জন করতে সক্ষম হয়। এবং যারা অর্জন করতে সফল হয় না তাদের সম্পূর্ণ ভাবে ব্যর্থ মনে হয়। এখানে আমরা যদি জিজ্ঞাসা করি এর জন্য দায়ী কে অর্থাৎ কেন কিছু মানুষ সফল হয় এবং কেনই বা অন্যরা হয় ব্যর্থ? এরকম হওয়ার আসল কারণ হল তারা পূর্ববর্তী জন্মে যে বীজ বপন করেছিল এবং সম্ভাবনাগুলি তৈরি করেছিল তার কারণেই এরকম হয়। যারা পূর্বজন্মে ধ্বংসাত্মক ছিল তারা অত্যন্ত নেতিবাচক সম্ভাবনা তৈরি করেছে, যারফলে তারা এই জীবনে ব্যর্থ হয়েছে। এর বিপরীতে যারা পূর্বজন্মে গঠনমূলক কর্ম করেছে তারা ইতিবাচক সম্ভাবনাও তৈরি করেছে। এটাই হল তাদের জীবদ্দশায় সাফল্য এবং সুখের চাবিকাঠি।

আপনি যদি এই ব্যাখ্যাটি না মানেন যে, কিছু লোক কেন সফল হয় এবং আর কিছু মানুষই বা কেন ব্যর্থ হয় তাহলে সেটা আপনাকে বিবেচনা করতে হবে তাদের মধ্যে এরকম বৈষম্য থাকার কোন কারণ নেই। মানুষ যদি একই পরিমান প্রচেষ্টা এবং দক্ষতার সাথে কর্ম করে তাহলে তো তাদের সমান পরিমান সাফল্য অর্জন করা উচিত। কিছু মানুষ মনে করে যে এই জীবদ্দশায় তারা যে ধরণের কর্ম করে, যেমন-ব্যবসা বা বানিজ্য, তার ফলস্বরূপ তারা সাফল্য অর্জন করে। বাস্তবে এই সাফল্যের জন্য এই কর্ম সম্পূর্ণরূপে দায়ী নয়। সাফল্যের আসল কারণগুলি হল সম্ভাব্যতা যা পূর্ব জীবনে গঠনমূলক কর্মের কারণে নির্মিত হয়েছিল। আর আমরা যখন এই জীবদ্দশায় যে কর্ম এবং ক্রিয়াকলাপের সঙ্গে যুক্ত হই উক্ত সম্ভাব্যতা সেই কারণগুলিকে পরিপক্ক করার অনুমতি প্রদান করার পরিস্থিতি বা শর্ত হিসাবে কাজ করে। 

তদনুসারে সাফল্য নির্ভর করে কারণ এবং প্রজন্মের উপরে যা সর্বদা একসাথে উত্থিত হয়। কারণগুলি অতীত জীবন থেকে আসে অর্থাৎ সেই জীবনের সময়ে নির্মিত সম্ভাবনাগুলিকে বলা হয় আর এই জীবদ্দশায় সময় এবং প্রচেষ্টার উপর ভিত্তি করে পরিস্থিতি তৈরি হয়। দুটোকে অবশ্যই একসাথে সংযুক্ত হতে হবে। 

ভবিষ্যতের জীবন নিয়ে উদ্বেগ

এই জীবদ্দশায় মানুষ যতই কলুষিত হয়ে উঠুক না কেন অথবা তারা যতই জাগজমক উপভোগ করুক না কেন তবুও তারা যা কিছু সঞ্চয় করেছে তাতে কেউ সন্তুষ্ট বোধ করেনা বলে মনে হয়। তাদের মধ্যে কেউ বলেনা, “এখন আমার যথেষ্ট আছে; আমার আর কিছু পাওয়ার প্রয়োজন নেই।” তাদের যা আছে তারা তাতে কখনই সন্তুষ্ট হয় না, সবসময় আরও চাই আরও চাই। তারা তাদের সম্পূর্ণ জীবনকে কর্ম করে কাটায় তবুও তাদের কর্ম কখনো শেষ হয় না। 

বাস্তবে এটা একটা চির পুনরাবৃত্তি চক্র হয়ে ওঠে। এটা ঠিক একটা কৃষকের মতো যেমনকি কৃষকরা সমস্ত ঋতুতে পরিশ্রম করে, রোপণ করে তাদের জমিতে কাজ করে এবং শেষে ফসল তোলে। পরে বসন্ত কালে তারা আবার রোপণের কাজ করে আরও একবার চক্রের মধ্য দিয়ে গমন করে, আমরা যেভাবে কর্ম করে যাই এটাই তারই একটা উদাহরণ। 

যদিও আমরা কখনোই ভাবিনা যে এই জীবদ্দশার কাজটি শেষ হয়ে যায়। তবুও সত্যিকার অর্থে এমন একটা সময় রয়েছে যখন এটা শেষ হবে এবং সেটা হল আমাদের মৃত্যুর সময়। ঐ সময় এটা শেষ হয় সুখের অবস্থার পরিবর্তে দুঃখ ও কষ্টের অবস্থা। 

সুতরাং যারা এই জীবনের জন্য কেবল আহার, বস্ত্র এবং স্বীকৃতি অর্জনের জন্য কাজ করছেন তারা সত্যিই নিজেদের প্রতারণা করছেন। কারণ যদিও এরফলে তারা শারীরিক স্বাচ্ছন্দ্য লাভ করতে সক্ষম হতে পারে কিন্তু মানসিক সুখ অর্জন করতে সক্ষম হয় না। মানসিক সুখ ছাড়া তাদের জীবন অসম্পূর্ণ থেকে যায় এবং তারা একটি অসুখী অবস্থায় মারা যায়। 

সুতরাং আরও দীর্ঘস্থায়ী মানসিক ভিত্তিক সুখের জন্য কর্ম করার চেষ্টা করা গুরুত্বপূর্ণ। এই জীবনে আমরা শারীরিক সুখ অর্জন করতে পারি কিন্তু সেটা দীর্ঘস্থায়ী হয় না। আমরা যদি সত্যিই স্থায়ী সুখ অর্জন করতে চায় তাহলে আমাদের অবশ্যই ভবিষ্যতের জীবন সম্পর্কে বিবেচনা করতে হবে কারণ আমরা যখন এর সম্পর্কে বিবেচনা করি তখন আমরা সত্যি করেই দীর্ঘস্থায়ী সুখের জন্য কাজ করতে পারি। 

আমরা যদি অনাগত জীবনের সুখ অর্জনের উদ্দেশ্যে কর্ম করি সেটা ধর্মের আধ্যাত্মিক অনুশীলনে যুক্ত আধ্যাত্মিক ব্যক্তি হওয়ার অর্থের সংজ্ঞাটি পূরণ করে। আমরা যদি এই জীবনে উদ্বেগের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকি অর্থাৎ যে বস্তুগুলি নশ্বর যোগ্য তাহলে আমরা কেবল একটা পার্থিব বস্তুগত ব্যক্তি হয়ে যায়। অন্যদিকে আমরা যদি অনাগত জীবনের উদ্বেগগুলি সমাধান করতে শুরু করি তাহলে আমরা আধ্যাত্মিক ব্যক্তি হয়ে উঠি। 

অনাগত জীবনে সুখ অর্জন করার উপায় হিসাবে ধ্বংসাত্মক আচরণ থেকে বিরত থাকা

অনাগত জীবনে সুখ নিশ্চিত করার উপায়ের মধ্যে ধর্মের কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে থাকে। এর অর্থ হল ধ্বংসাত্মক কর্ম করা থেকে নিজেকে বিরত থাকা। নির্দিষ্ট ধ্বংসাত্মক কর্ম মোট দশটি হয় যার মধ্যে তিনটি শারীরিক, চারটি বাচসিক এবং তিনটি মানসিক। যেকোন উপায়ে উক্ত ধ্বংসাত্মক কর্ম থেকে নিজেকে বিরত রেখে এবং নিরাপদে রেখে আমরা অনাগত জীবনে সুখ নিয়ে আসি। 

আমরা এখন প্রতিষ্ঠিত করেছি যে, আমরা যদি গঠনমূলক পদ্ধতিতে কর্ম করি তাহলে আমাদের মধ্যে একটা আধ্যাত্মিক অনুশীলনের সূচনা তৈরি হয় যা এই জন্ম এবং অনাগত জীবনে জিনিসগুলি ভালভাবে চালিয়ে যেতে সহযোগিতা করে। উদাহরণস্বরূপ, এই ধরণের গঠনমূলক আচরণের মধ্যে যুক্ত থাকে বেশ কয়েকটি জিনিস যেমন কোন প্রাণী বা পোকার ইচ্ছাকৃত হত্যা বা চুরির কর্ম এবং যার থেকে ফলিভূত সমস্তরকম ত্রুটি ও নেতিবাচক ফলাফল গুলি। এটার স্বীকৃতি দেওয়া এবং তারপরে হত্যা বা চুরি না করার বিষয়ে দৃঢ় সিদ্ধান্ত নেওয়া এরসাথে যুক্ত থাকে। মানুষ যখন এই ধরণের সিদ্ধান্ত নেয় তখন তারা যাতে সঠিক ভাবে এবং গঠনমূলক ভাবে কর্ম করে সেটা নিশ্চিত করার জন্য তাদের চারপাশে সেনাবাহিনী বা পুলিশবাহিনী থাকার প্রয়োজন হয় না। তাদের নিজস্ব নৈতিকতা এবং নীতিশাস্ত্র তাদের ধ্বংসাত্মক কর্ম থেকে বিরত রাখে। 

তবে কঠোর নৈতিকতা রক্ষা করাটা হল আমাদের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যা মনের সুখে আমাদের মৃত্যুতে বরণ করতে প্রশস্ত করে। অন্যথা আমরা মহাদুঃখ এবং উদ্বেগের অবস্থায় মারা যেতে পারি। আমরা যদি কোন নৈতিক ব্যক্তি হওয়ার প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করি তাহলে মৃত্যুর সময় আমাদের উদ্বেগ করার কিছুই থাকবে না। আমরা আশ্বস্ত হয়ে যেতে পারব যে মানব রূপে আমরা পুনরায় জন্মগ্রহণ করতে পারব। এমনকি স্বর্গের দেবতাদের মধ্যে কোন দেবতা রূপে অর্থাৎ ইন্দ্র বা অন্য দেবতা রূপে। 

সমস্ত জীবনে অনিয়ন্দ্রিত পুনরাবৃত সমস্যা

এমনকি আমরা যদি মানুষ হিসাবে বা দেবতাদের রাজা হিসাবেও জন্ম গ্রহণ করি সমস্যা আমাদের জীবনে থাকবেই। সেখানে অনিয়ন্দ্রিত পুনরাবৃত্তি জনিত সমস্যাগুলি দেখা দেবে যেখানে বা যে রূপেই আমাদের পুনর্জন্ম হোক না কেন। সুতরাং ধ্বংসাত্মক কর্ম থেকে বিরত থাকার নীতি অনুসরণ করার কোন অর্থ থাকে না যদি সেটা করে আমরা শুধু নিজের পুনর্জন্মের আরও খারাপ অবস্থার পুনরুত্থান হওয়া থেকে আরও বিরত থাকতে চাই। কারণ সেখানে অথবা যে রূপেই আমরা পুনর্জন্ম নিই না কেন সমস্যা সেখানে থাকবেই। 

এটা নির্দেশ করে যে এখানে আরও বিস্তৃত সুযোগের প্রয়োজন। উদাহরণস্বরূপ, আমরা যদি সংস্কৃত ভাষায় “শমর্থ” এবং তিব্বতী ভাষায় “শিনে” একটি স্থির ও স্থির মনের বিকাশ করি তাহলে এর পরিণামস্বরূপ আমরা অস্তিত্বের উচ্চতর ভূমিগুলির মধ্যে যেকোন একটি ভূমিতে দেবতা রূপে পুনর্জন্ম নিতে পারি। এখানে ভূমি বলতে আকাশস্থরূপী প্রাণীর ভূমি বা অরূপী প্রাণীর ভুমিকে বোঝায়, এরপরে আমরা সেই ধরণের পুনর্জন্মের অবস্থায় সমস্ত আড়ম্বর অর্জন করতে সক্ষম হব। এমনকি অস্তিত্বের উত্তর উচ্চতর ভূমিগুলির মধ্যে কোন একটি ভূমিতে একটি সত্ত্বারূপে পুনর্জন্ম হলেও সেখানে এ সম্পর্কে বিশেষ কিছু থাকে না। এটা ঠিক আকাশচুম্বীর উপরের তলায় যাওয়ার মতোই- একবার আমরা সেখানে পৌঁছে যাওয়ার পর সেখান থেকে ফিরে আসা ছাড়া আর কিছুই করা বাকি থাকে না। 

বুদ্ধবচনের উপর আস্থা অর্জন করা

অতএব পুনর্জন্ম যেখানেই হোক না কেন আমাদের প্রয়োজন সমস্যাগুলি দূর করার চেষ্টা করা এবং আরও এগিয়ে যাওয়া। এটা করার জন্য আমাদের সমস্যা ঐ দুঃখের মূলে যেতে হবে এবং সেটাকে প্রভেদমূলক সচেতনতা দিয়ে উন্মুলন করতে হবে যাতে আমরা বাস্তবতা এবং কল্পনার মধ্যে স্পষ্টভাবে পার্থক্য করতে পারি। এরকম করার ফলে অবশেষে আমরা শূন্যতা বোধ করতে পারি যার অর্থ অস্তিত্বের অসম্ভব রূপে সম্পূর্ণ অনুপস্থিতি। বাস্তবতার এই স্পষ্ট বোধগম্যতা আমাদের মিথ্যা অভিক্ষেপগুলি দূর করে দেয়। ফলে আমরা যেকোন জীবনকালে যে সমস্ত সমস্যা অনুভব করি সেগুলি চিরতরে মুছে ফেলি। এরফলে এটা এমন একটা সুখ ফলিভূত হয় যা চিরকাল স্থায়ী হয়ে থাকে এবং এটা এমন একটা কিছু যা আমরা অর্জনও করতে পারি। 

আমরা বুদ্ধ সংরক্ষণ করে এমন ধর্মগ্রন্থগুলি থেকে শূন্যতার শিক্ষা সম্পর্কে জানতে পারি। তবে আমরা কীভাবে এই ধর্মগ্রন্থগুলির বৈধতার উপর আস্থা অর্জন করব কেবল শূন্যতার বিষয়ের উপরেই না, বুদ্ধ তাদের মধ্যে যেসব কথা বলেছিলেন সে সম্পর্কেও? যুক্তি এবং বিশ্লেষণের ভিত্তিতে আমাদেরকে তাদের বৈধতার প্রতি আস্থা অর্জন করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ শূন্যতাকেই নিন। যুক্তির উপর নির্ভর করে আমরা শূন্যতার বৈধতা প্রতিষ্ঠা করতে পারি। তদতিরিক্ত, নির্দেশগুলিকে অনুশীলন করে এবং এগুলি বাস্তবে লাভ করার মাধ্যমে আমরা সমাপত্তি ধ্যান বা সমাধি বিশেষ এবং মনের একটি স্থির ও স্থিত অবস্থা কীভাবে লাভ করা যায়, কার সাথে সম্পর্কিত শিক্ষাগুলিকে বৈধ প্রমান করতে পারি। আমরা নিজের জন্য অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারি যে এই অনুশীলনের মাধ্যমে আমরা আসলে বিভিন্ন ধরণের উচ্চতর ও অতিরিক্ত সংবেদনশীল উপলব্ধি লাভ করি সেগুলির ধ্যান লাভ করার উপজাত হিসাবে বর্ণনা করা হয়। আমরা বুদ্ধ দ্বারা উপদিষ্ট এই বিভিন্ন বিষয়গুলি আমাদের নিজের অভিজ্ঞতা দ্বারা বাস্তবে বৈধ প্রমান করতে পারি। 

এর মতো বুদ্ধ যে শিক্ষাগুলি দিয়েছিলেন, সেগুলি আমরা যুক্তি এবং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা দ্বারা বৈধ প্রমান করতে পারি, সেই বিষয়গুলিকে আমরা আমাদের কঠোর পরিশ্রম ও প্রচেষ্টার ভিত্তিতে বাস্তবায়িত করতে পারি। উক্ত পরিশ্রম ও প্রচেষ্টা দ্বারা আমরা সাধারণ ভাবে বুদ্ধবচনের বৈধতার বিষয়ে আত্মবিশ্বাসের বিকাশ করি। অভিমত বিশ্বাস থেকে উদ্ভূত সুরক্ষার সাথে বুদ্ধ যে আরও অস্পষ্ট বিষয়গুলির কথা বলেছিলেন তার বৈধতার প্রতি আমরা বিশ্বাসের বিকাশ করি।  

উদাহরণস্বরূপ, বুদ্ধ বলেছিলেনআমরা যদি গঠনমূলক পদ্ধতিতে কর্ম করি তাহলে পরিনামস্বরুপ, আমরা পুনর্জন্মের আরও ভাল অবস্থার মধ্যে একটাতে জন্মগ্রহন করব- একজন মানুষ বা দেবতা রূপে। অন্যদিকে, আমরা যদি ধ্বংসাত্মক এবং নেতিবাচক আচরণ করি তাহলে এর ফলে কর্ম যা অনুসরণ করে সেটা হ’ল- নারকীয় প্রাণী, তথাকথিত প্রেত বা পশুরূপে পুনর্জন্ম। এগুলি আচরণগত কারণ এবং ফল সম্পর্কে বিবৃতি, যা আমাদের নিজের অভিজ্ঞতার মাধ্যমে বা সঠিক যুক্তির মাধ্যমে প্রমাণিত বা বৈধ করা কঠিন। তবে শাস্ত্রীয় কর্তৃত্বের প্রতি আত্মবিশ্বাসের ভিত্তিতে আমাদের সেগুলি গ্রহণ করার প্রয়োজন নেই। এর কারণ হ'ল যদি যুক্তি এবং অভিজ্ঞতা সমাপত্তি এবং শূন্যতার সঠিক বোধগম্যতার বিষয়ে যা শিখিয়েছিলেন তার বৈধতা প্রদর্শন করে তাহলে আচরণ ও ফল সম্পর্কে বুদ্ধ যা ব্যাখ্যা করেছেন সেটা গ্রহণ করা সম্পূর্ণ যুক্তিসঙ্গত হয়ে ওঠে। 

পরিনামস্বরূপ,শূন্যতা ও বাস্তবতা সম্পর্কে এবং অস্তিত্বের অসম্ভব উপায়গুলির সম্পূর্ণ অনুপস্থিতি সম্পর্কে বুদ্ধের যে ব্যাখ্যা রয়েছে তার সম্পর্কে আমাদের খুব মনোযোগ সহকারে চিন্তা-ভাবনা করতে হবে। এগুলি সঠিক কিনা তার স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য আমাদেরকে বুদ্ধের অন্যান্য বিবৃতিও বিবেচনা করা উচিত, যেমন- গঠনমূলক ভাবে কর্ম করার ফল হ’ল সুখ এবং ধ্বংসাত্মক ও নেতিবাচকভাবে কর্ম করার ফল হ’ল দুঃখ। তারপরে, আমরা একটা অভিমত বিশ্বাস জাগাই যে, এই বিবৃতিগুলিও সঠিক। তার ভিত্তিতে ও সেই অনুযায়ী আচরণটি সংশোধন করার দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিই। আমরা যদি সুখ চাই তাহলে আমাদের এমন পদ্ধতিতে কর্ম করতে হবে যা তদনুরূপ ফলপ্রসূ হবে, যথা- আমাদের গঠনমূলক এবং ইতিবাচকভাবে কর্ম করতে হবে। 

ত্যাগঃ সমস্ত সমস্যা থেকে মুক্ত হওয়ার সংকল্প 

আমরা আরও ভালভাবে বিবেচনা করব যে আমাদের এখন একটা খুব সুন্দর মানব জন্মের কাজের আধার আছে যা অন্যকোথাও উপলব্ধ হয় না। এটা আধ্যাত্মিক বিকাশের জন্য সমস্ত পরিচারিত সুযোগ প্রদান করে। এটা পূর্ববর্তী জীবনকালে অনেক ইতিবাচক সম্ভাবনা তৈরির ফল। আমরা অবশ্যই খুব গঠনমূলক ও ইতিবাচক কর্ম করেছিলাম যা এই পুনর্জন্মের সাথে বর্তমানে সুযোগগুলি ও লাভগুলি ফলিভূত হয়েছে। সুতরাং আমাদের অবশ্যই এই সুযোগটা অপচয় হতে দেওয়া উচিত না। আমরা যদি শুধুমাত্র এই জীবনকালের নিম্ন জিনিস যেমন- আহার এবং বস্ত্র প্রাপ্ত করা, যশ এবং খ্যাতি ইত্যাদি অর্জনে সম্পূর্ণভাবে জড়িত থাকি তাহলে এই জীবনটা ব্যর্থ নষ্ট হয়ে যায়। যদি আমাদের সম্পর্ক একমাত্র এগুলির সাথে থাকে তাহলে এই আসক্তির কারণে আমরা একাকী এই জীবনের প্রতি পূর্ণ আবেশ থেকে বিমুখ হতে পারব না।

অন্যদিকে আমরা যদি ইন্দ্রের মতো দেবতারূপে পুনর্জন্ম লাভ করি এবং তার সাথে ভবিষ্যতের জীবনে সুখ অর্জনের জন্য সমস্ত প্রচেষ্টা চালিয়ে যায় তবে এতেও সমস্যা থেকে যায়। এমন দেবতার জীবনযাত্রার ধরনটা দেখুন। এই দেবতার অনেক সুখ আছে এবং কোন অস্থায়ী অগভীর সমস্যা নেই তবে মৃত্যুর সময় এই ধরণের দেবতার গভীর অনুশোচনা এবং দুঃখ ভোগ করতে হয়, কারণ পুরো আনন্দের জীবনটা তাদের কাছে কেবল একটা স্বপ্ন বলে মনে হয় আর মৃত্যুকালে অপরিসীম দুঃখ অসুখীতা নিয়ে আসে। সুতরাং আমাদের লক্ষ্য হিসাবে এই ধরণের পুনর্জন্ম আমাদের সমস্ত সমস্যার সমাধান নয়। 

তদুপরি, আমাদের মূল্যবান মানব দেহের এই কর্মের আধারকে পুরোপুরি ব্যবহার করতে হবে কারণ এটা এমন একটা কিছু যা হারিয়ে যেতে চলেছে। এমন কেউ নেই যে জন্মের পর মৃত্যুর হাত থেকে রেহাই পেয়েছে। এটা এমন একটা বিষয় যা আমাদের সকলের কাছে আসবে। এটা শুধু সময়ের বিষয় বা অপেক্ষা। কার সময় কখন আসবে সেটা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারে না। এটা বাস্তবতা সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা আমাদের বেঁচে থাকতে এবং সুস্থ থাকাকালীন, এখন আমাদের কাছে যে সুযোগগুলি রয়েছে, তার পূর্ণ সদ্ব্যবহার করার ইচ্ছা পোষণ করে। 

সুতরাং, শুধুমাত্র এই জীবনের জন্য জিনিসপত্র অর্জনের উদ্দেশ্যে আমাদের পূর্ণ আবেশ থেকে বিমুখ হতে হবে। এই জীবনে বিভিন্ন নশ্বর বস্তুর কোনও স্থায়ী সারমর্ম যে কীভাবে নেই আমরা তার উপর অনুধাবন করেই এটা করি। এইভাবে আমরা এই জীবনে জিনিসপত্রের প্রতি আমাদের আবেশ থেকে বিমুখ হই এবং সেই ধরণের আবেশের কারণে উদ্ভূত সমস্যা থেকে মুক্ত থাকার সংকল্প বিকাশ করি। মুক্ত হওয়া এই সংকল্পকে “ত্যাগ” বলা হয়। 

তেমনিভাবে, আমাদের ভবিষ্যতের জীবনকাল এবং পুনর্জন্মের বিভিন্ন ধরণের পরিস্থিতিগুলির দিকে নজর দেওয়া উচিত। মানুষ বা দেবতা রূপে ভবিষ্যতের পুনর্জন্মে আমরা যে আড়ম্বর এবং সুখ লাভ করতে পারি, সেগুলির সম্পর্কে আমরা যখন চিন্তা-ভাবনা করি, আমাদের মনে করা দরকার যে এগুলিও সমস্যা ডেকে আনে। আমরা যতই ভাল থাকি না কেন সমস্যাগুলি অনিয়ন্ত্রিতভাবে পুনরাবৃত্ত হয়। অতএব ভবিষ্যতের জীবনে এই জিনিসগুলির প্রতি আসক্ত ও অবশিষ্ট হওয়াও এমন একটা বিষয় হয়ে দাঁড়ায় যা থেকে আমাদের বিমুখ হতে হবে। আমরা এটা করি দ্বিতীয় ধরণের সংকল্প বিকাশের চেষ্টা ক’রে, যথা ভবিষ্যতের জীবনে এই আবেশগুলির সাথে উদ্ভূত সমস্যা থেকে মুক্ত থাকার সংকল্প। 

সুতরাং, মুক্ত হওয়ার সংকল্প দুই প্রকারের হয়- এই জীবনে সমস্যা থেকে মুক্ত থাকার সংকল্প এবং ভবিষ্যতের সমস্ত জীবনে সমস্যা থেকে মুক্ত থাকার সংকল্প। 

অনিত্যতা

একজন আধ্যাত্মিক অনুশীলনকারী হলেন তিনি, যিনি সতর্ক যে, জীবনের কোনও পরিস্থিতি স্থির নয়; যিনি অনিত্যতা এবং মৃত্যুর প্রতি সতর্ক; যিনি নিজের সমস্যাগুলি এবং জীবনের সমস্ত সমস্যা সম্পর্কে সতর্ক এবং সচেতন। এটা এমন একটা বিষয় যা একজন অনুশীলনকারীকে এই সমস্ত সমস্যা এড়াতে বিভিন্ন প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে অনুপ্রাণিত করে। যদি কেবল অনিত্যতা আর সমস্যাগুলি ভুলে এবং মৃত্যুর ব্যাপারে ভুলে গিয়ে আমরা যদি সেগুলিকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারতাম, তাহলে সেটি খুব চমৎকার হতো, সেটি খুব ভালো হতো। কিন্তু আসল বিষয়টা হ’ল আমরা সেটা করতে পারি না। শুধু বাস্তবতাকে উপেক্ষা করলে অর্থাৎ আমরা মৃত্যুর দিকে এগিয়ে চলেছি এবং আমাদের জীবনে সমস্যা রয়েছে, তথ্যগুলি বিলুপ্ত হয়ে যায় না। সুতরাং আরও ভাল হয় যদি আমরা আমাদের সমস্যাগুলি সম্পর্কে সচেতন হই, তাদের বাস্তবসম্মত ভাবে মোকাবিলা করি এবং সেগুলি দূর করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিই। এটাই তাই যা আধ্যাত্মিক অনুশীলনের সাথে যুক্ত। 

বুদ্ধ স্বয়ং, যখন প্রথমবার এই ব্যবস্থাগুলির/ সাধনোপায়ের সঞ্চারের বিভিন্ন পর্বের প্রবর্তন করেছিলেন তিনি এটা করেছিলেন অনিত্যতার সম্পর্কে শিক্ষার দ্বারা, কীভাবে কিছুই স্থির থাকে না। তাঁর সম্পূর্ণ আধ্যাত্মিক অনুসন্ধান শুরু হয়েছিল তাঁর অনিত্যতা সম্পর্কিত উপলব্ধি থেকে। তেমনিভাবে যখন তাঁর জীবন শেষ হয়ে গেল এবং তিনি দেহত্যাগ করলেন, সেটিও প্রত্যেককে অনিত্যতার সত্যতা প্রদর্শন করার প্রসঙ্গে করা হয়েছিল।  

চার আর্যসত্য

এছাড়া, সমস্যাগুলি নিজে থেকেই উত্থিত হয় না। এগুলি বিনা কারণে আমাদের সাথে ঘটে না। বরং আমাদের সমস্ত বাস্তবিক সমস্যা ও অসুখীতা জন্মায় সত্য কারণ থেকে- যথা, আমাদের আবেগপ্রবণ আচরণ এবং আমাদের বিরক্তিকর আবেগ ও মনোভাব- অন্য কথায়, আমাদের কর্ম এবং ক্লেশ থেকে উৎপন্ন হয়। আমরা যখন বিরক্তিকর আবেগের বশে আবেগপ্রবণভাবে আচরণ করি তখন তার থেকে আমাদের সব সমস্যার উৎপত্তি ঘটে। 

এখন, আমরা দেখতে পাই যে আমাদের সব সমস্যার দুটি কারণের মধ্যে আমাদের আবেগপ্রবণ আচরণের মূল হ’ল বিরক্তিকর আবেগ ও মনোভাব। আমরা যদি বৌদ্ধ গ্রন্থগুলিতে বর্ণিত ৮৪,০০০ বিভিন্ন অশান্তিকারী আবেগ ও মনোভাবের পরীক্ষা করি, তাহলে আমরা আবিষ্কার করব যে, এই সমস্তই একটি উৎস থেকে উৎপন্ন হয়, যথা- অবিদ্যা বা অজ্ঞান যা আমাদের সত্যতঃ প্রতিষ্ঠিত অস্তিত্ব এবং সত্যতঃ প্রতিষ্ঠিত পরিচয়ের ধারণায় আঁকড়াতে বাধ্য করে। 

কিন্তু বাস্তবে সত্যতঃ প্রতিষ্ঠিত পরিচয়ের মতো কোনও জিনিস হয় না- নিজের বা অন্য কিছুর জন্য নয়। তবুও আমরা জিনিসের প্রতি এমন আসক্ত হই যেন সেগুলি সত্যতঃ প্রতিষ্ঠিত পরিচয় বা অস্তিত্ব। সুতরাং, যদি আমরা উপলব্ধি ও প্রভেদ করতে সক্ষম হই যে, এই ধরণের বস্তু সত্যতঃ প্রতিষ্ঠিত পরিচয় হওয়া অসম্ভব, তাহলে এরকম পরিচয় প্রাপ্ত বস্তুর প্রতি আসক্তি দমন করার জন্য প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে। 

যখন এটা আমাদের মধ্যে জ্ঞানের উদয় হয় যে, যথার্থ রূপে সত্যতঃ প্রতিষ্ঠিত অস্তিত্বের মতো কোনও বস্তু হয় না এবং যে কোনও বস্তুর সত্যতঃ প্রতিষ্ঠিত পরিচয় নেই, এই জ্ঞানকে “চিত্তের সত্য মার্গ”, “সত্য মার্গ” বলা হয়- যেটি চার আর্যসত্যের মধ্যে একটি। এটি চিত্তের এমন একটি মার্গ যা উচ্চ সিদ্ধি প্রাপ্ত ব্যক্তি, অর্থাৎ আর্যপুরুষরা সত্য বা সঠিক মনে করেন এবং মানেন যে এর দ্বারা মোক্ষ ও বোধি লাভ হয়। 

যখন আমাদের চিত্তের সত্য মার্গ প্রাপ্ত হয়, যথা- একটি প্রভেদমূলক সচেতনতা হয় যে, সত্যতঃ প্রতিষ্ঠিত পরিচয় বলে কোনও কিছু নেই, তখন আমাদের আর কোনও অশান্তিকারী আবেগ ও মনোভাব থাকবে না, কারণ এই ধরণের ক্লেশ অসম্ভবরূপে অস্তিত্বের কল্পনা ও বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে। যখন আমাদের মধ্যে অশান্তিকারী আবেগ ও মনোভাব থাকবে না, তখন আমরা আর আবেগপ্রবণ ভাবে প্ররোচিতভাবে কর্ম করি না। আর যখন আমরা আবেগপ্রবণভাবে কর্ম না করি, আমরা আর নিজেদের জন্য সমস্যা তৈরি করি না। এই অবস্থাতে যেখানে আমাদের অভিজ্ঞতায় আর কোনও সমস্যা উত্থিত হবে না সেই অবস্থাকে সত্য নিবারণ, নিরোধ সত্য বলা হয়। 

এটি ওই চার তথ্যের উপস্থাপন যা উচ্চ সিদ্ধি প্রাপ্ত ব্যক্তিরা যাদের আর্যপুরুষ বলা হয় সত্য রূপে দর্শন করেন। এগুলিই হল চার আর্য সত্য। প্রথম দুটি সত্য অশান্তিকারী, যথা সত্য সমস্যা এবং তাদের আসল কারণ অর্থাৎ আবেগপ্রবণ  আচরণ এবং অশান্তিকারী আবেগ ও মনোভাবের সাথে সম্পর্কিত। আমরা যখন শেষ দুটি সত্যের দিকে মনোনিবেশ করি, যা সমাধা করে যে, মুক্তি কী করে সম্ভব, তখন আমরা কামনা করি চিরতরের জন্য সমস্যার কারণগুলি সমাপ্ত করে সমস্যার যথার্থ নিরোধ লাভ হোক। এইভাবে করার উপায় হ’ল চিত্তের সত্য মার্গের বিকাশ করা। এই প্রকার আমরা এই ভাবে তথ্যর উপলব্ধি আর বোধগম্য করি যা উচ্চ সিদ্ধি প্রাপ্ত ব্যক্তিরা সত্য রূপে দর্শন করেন। 

আমাদের মূল্যবান মানবজন্মের জন্য যে অসাধারণ কার্যকরী আধার রয়েছে তার আধারে এখন আমাদের এই চার আর্য সত্য উপলব্ধি করার প্রচেষ্টা করতে হবে। আমরা যখন এটা করতে পারব তখন আমরা এই পুনর্জন্মে আমাদের যে সুযোগ রয়েছে তা যথাযথভাবে ব্যবহার করব। আমরা যখন চিত্তের এক উপযোগী অভ্যাসের রূপে একটি ধারাবাহিক এবং স্থির সচেতনতা গড়ে তুলি তখন যে সত্যতঃ প্রতিষ্ঠিত অস্তিত্বের মতো কিছুই থাকে না, তখন আমরা নিজেদের সব সমস্যাগুলি চিরতরের জন্য দূর করতে পারি। 

করুণার বিকাশ করা

এখন আমাদের সমস্ত সমস্যা থেকে পরিত্রাণ হয়ে যাওয়া খুব ভাল- কিন্তু এটাই যথেষ্ট নয়। এর কারণ হ’ল আমরা কেবল ব্যক্তি বিশেষ, যেখানে অন্যরা অগণিত। আমরা কখনো গণনা করতে পারি না যে, এ জগতে আরও কত অন্য প্রাণী রয়েছে, এবং তাদের প্রত্যেকের সমস্যা রয়েছে, তারা সবাই একরকম বা অন্য রকম ভাবে দুঃখ ভোগ করে। এই কারণে, কেবলমাত্র আমাদের নিজেদের জন্য কাজ করা উচিত নয়; আমাদের প্রত্যেকের জন্য সমাধান খুঁজতে হবে।

এই অনুধাবনের ভিত্তিতে এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, সীমিত মনের অধিকারী অন্য সমস্ত প্রাণী আমাদের জন্য অত্যন্ত সদয় হয়েছিল, বাস্তবে এইসব প্রাণীদের চেয়ে সদয় আর কিছু নেই। আমরা যখন বুদ্ধের দয়া এবং সীমিত প্রাণীদের দয়া বিবেচনা করি, তখন আমরা বুঝতে পারি যে, তারা সবাই সমান। উদাহরণস্বরূপ, আমরা যদি মধু পছন্দ করি, তবে আমাদের ভাবতে হবে এই মধু কোথা থেকে আসে। এটা আসে অসংখ্য মৌমাছিদের নিকট হতে এবং এটা তৈরি করতে মৌমাছিদের অনেক পরিশ্রম করতে হয় অর্থাৎ তাদের অসংখ্য ফুলের কাছে উড়ে যেতে হয়, পরাগ সংগ্রহ করতে হয় এবং এটি মৌমাছিরা তাদের মধুচক্রে মধু হিসেবে সঞ্জয় করে জমা রাখে।আমরা যদি চিরকাল মধু উপভোগ করে ক্ষমতাবান হওয়ার আশা করি, তাহলে আমাদের এই ছোট-ছোট কার্যকলাপ ও দয়ার উপর নির্ভর করতে হবে। তেমনিভাবে, আমরা যখন মাংসের কথা বিচার করি যা আমাদের মধ্যে কেউ হয়তো খায়, উদাহরণস্বরূপ,যখন আমরা রোগ-গ্রস্থ এবং দুর্বল হয়ে পড়ি, তখন আমাদের এমন কিছু পদার্থের প্রয়োজন হয়, যা আমাদের দেহের শক্তি জোগায়, তখন এটি কোথা থেকে আসে? এটি এমন প্রাণীদের কাছ থেকে আসে, আমাদের দেহের শক্তি এবং পুষ্টির জন্য তারা তাদের নিজেদের জীবন দিয়ে আমাদের মাংস প্রদান করে।

সুতরাং, আমাদের সমস্ত সমস্যা থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য আমাদের দৃঢ় সংকল্প বিকাশ করতে হবে, এবংযখন এটার বিকাশ হয়ে যাবে এটাকে অন্য প্রাণীদের মধ্যে স্থানান্তর করতে হবে। যেমন আমাদের সমস্ত সমস্যা থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য দৃঢ় সংকল্প আছে, তেমনিভাবে অন্য সকলের জন্য ইচ্ছা বা কল্পনার বিকাশ করতে হবে যাতে তারাও যেন তাদের সমস্যা থেকে মুক্ত হয়ে যায়। এই ধরনের মনোভাবকে করুণা বলা হয়।

যদি আমরা আমাদের সমস্যাগুলি নিয়ে গম্ভীরভাবে না ভাবি এবং তার পাশাপাশি আমরা কীভাবে সেগুলি চাই না আর যদি সেগুলি থেকে মুক্ত থাকার দৃঢ় সংকল্প গড়ে না তুলি, তাহলে অন্যের সমস্যাগুলিকে গম্ভীরভাবে নেওয়াটা খুব কঠিন হয়ে উঠবে। অন্যরা তাদের ঝামেলা থেকে মুক্ত হয়ে যাওয়ার কামনা করার জন্য আন্তরিক করুণার বিকাশ করতে সক্ষম হবে না। উদাহরণস্বরূপ, যদি এমন কোন আধিকারিক থাকেন যিনি তার কর্মজীবনে অনেক কষ্ট ভোগ করেছেন এবং তারপরে উচ্চপদে পৌঁছেছেন, তাহলে সেই ব্যক্তির মধ্যে অন্যের সমস্যার প্রতি সহানুভূতি এবং করুণা জাগবে। ঐ ধরণের ব্যক্তি অন্য একজন ব্যক্তির তুলনায়, যিনি সারা জীবন স্বাচ্ছন্দ্যে কাটিয়ে একজন আধিকারিক হয়েছেন, কখনও কষ্ট ভোগ করাটা কী সেটা জানতেন না অপরের সহায়তা করার পক্ষে ভাল অবস্থায় থাকবেন। 

বোধিচিত্ত

আমরা অন্যদের দুঃখ থেকে মুক্ত হওয়ার যে মনোভাবটির কামনা করি সেটা “করুণা” রূপে পরিচিত। আমরা যে মনোভাবের মাধ্যমে প্রত্যককে সুখী হওয়ার কামনা করি সেটা হ’ল “মৈত্রী”-এর সংজ্ঞা। যদি আমরা সকলের সুখী থাকা এবং সমস্যা মুক্ত থাকার কামনাকে বিচার করি এবং যদি আমরা সিদ্ধান্ত নিই যে যেহেতু প্রত্যেকে আমাদের প্রতি সদয় ছিলেন, সেহেতু আমাদের অবশ্যই এর বিষয়ে কিছু করতে হবে এবং সেটা কেবল মাত্র একটা অগভীর স্তরে নয়, বরং তাদের সমস্ত সমস্যা থেকে মুক্ত করতে সহায়তা করতে হবে। এই দায়িত্ব গ্রহণ হ’ল একটা “ব্যতিক্রম সংকল্প” হিসাবে পরিচিত।

আমরা যদি কেবল স্বার্থপর ধর্মের (বিষয়) সাথে জড়িত হই তাহলে আমাদের কাছে কোনও উপলব্ধি অর্জন করা বা বুদ্ধের ভাল গুণাবলী বিকাশের উপায় থাকবে না। পরিবর্তে আমরা যদি স্বার্থপরতা থেকে বিমুখ হয়ে যাই এবং অপরের দুর্দশায় উদ্বিগ্ন হই তাহলে এটা আমাদের জন্য জ্ঞানদীপ্ত বুদ্ধ হয়ে ওঠার ভিত্তি তৈরি হয়। স্বার্থপর ধর্মের বাইরে অর্থাৎ আমরা নিজেরাই সম্পদ সঞ্চয় করার জন্য হত্যা, চুরি ইত্যাদির মতো বিষয়ের সাথে যুক্ত হয়েছি। এই ধরণের অদক্ষতাপূর্ণ পদ্ধতিগুলি আরও বেশী সমস্যা সৃষ্টি করে আর এগুলির মূলে রয়েছে স্বার্থপরতা। 

বুদ্ধ শাক্যমুনি চিত্তকে সম্পূর্ণরূপে নির্মল করতে এবং সম্পূর্ণরূপে বিকশিত হওয়ার জন্য বোধি অবস্থা লাভ করেছিলেন আর তিনি এটা করতে সক্ষম হয়েছিলেন কেবল মাত্র অপরের কল্যাণে উদ্বিগ্ন হওয়ার ফলে। আসলে, সর্বকালের সমস্ত বুদ্ধ অপরের জন্য তাদের উদ্বেগের ভিত্তিতে পূর্ণ সম্ভাবনা উপলব্ধি করার এই অবস্থা লাভ করেছেন। তবে আমরা যদি বাস্তববাদী হই তাহলে আমরা দেখতে পাব যে, যদিও আমাদের মধ্যে এই ব্যতিক্রমী সংকল্প থাকতে পারে যে, সকলের জন্য সুখ প্রদান করা এবং তাদের সমস্ত সমস্যা থেকে মুক্ত করব, কিন্তু আমাদের মধ্যে সেই ক্ষমতা নেই। এর জন্য আমরা যতই ইচ্ছুক হই না কেন! প্রত্যেককে তাদের সমস্যাগুলি কাটিয়ে উঠতে এবং সুখ অর্জন করতে সহায়তা করার মতো ক্ষমতা কেবল একজন বুদ্ধেরই আছে।

সুতরাং অপরের কল্যাণ করার জন্য এবং যতটা সম্ভব যথাসাধ্য চেষ্টা করার উদ্দেশ্যে বুদ্ধের জ্ঞানদীপ্ত অবস্থা অর্জনের জন্য আমাদের সম্পূর্ণরূপে উৎসর্গ করা প্রয়োজন। এটাই একটা ‘বোধিচিত্ত-লক্ষ্য’ রূপে পরিচিত।

বোধিচিত্তের লক্ষ্যে যুক্ত হয়ে একটা উৎসর্গীকৃত হৃদয়ের সাথে, যেমন ধরুন, একটা ফুলের মতো অতিসাধারণ নৈবেদ্য অর্পণ করা হ’ল। যদি এই ধরণের নৈবেদ্যর উদ্দেশ্য সকলের কল্যানার্থে হয় এবং বোধিলাভ করার জন্য নির্ধারণ করা হয় এবং সেটা যথাসাধ্য করা হয়, তাহলে উক্ত অতিসাধারণ কর্ম থেকে নির্মিত ইতিবাচক সম্ভাবনা বিশাল হয়। প্রকৃতপক্ষে, যখন আমাদের লক্ষ্যটি সকলের কল্যাণ করতে সক্ষম হওয়ার জন্য হয়, তখন লাভটাও সেই লক্ষ্যের সম-আনুপাতিক হয়। এটা প্রাণীর সংখ্যা অনুযায়ী বিশাল হয়। আমাদের হৃদয়কে বিশুদ্ধ ও আন্তরিক সহকারে এইভাবে উৎসর্গ করার লাভগুলি বুদ্ধকে স্বর্ণ ও রত্ন দ্বারা পরিপূর্ণ একটা সম্পূর্ণ বিশ্বের নৈবেদ্য অর্পণ করার ফলে অর্জিত লাভের অনেক বেশী হয়। এমনকি আমরা যদি জগতে সমস্ত প্রাণীদের আহার দান করি তাহলেও বোধিচিত্ত-উদ্দেশ্যের সাথে যুক্ত এমন একটা হৃদয় এমনকি এক মুহূর্তের জন্য উৎসর্গ করার লাভ আরও বেশী হবে। 

এর যুক্তি প্রতিষ্ঠিত হতে পারে যদি আমরা বিবেচনা করি যে, জগতের প্রত্যেকের জন্য একটা খাবার মানুষের ক্ষুধা কেবল একবার মেটায়। তারা শীঘ্রই আবার ক্ষুদার্ত হবে এমন তাদের ক্ষুধার সমস্যা চলতে থাকবে। তবে আমরা যদি বোধিচিত্ত-উদ্দেশ্য নিয়ে সকলের জন্য সবকালের সমস্যা লাঘবের ইচ্ছা পোষণ করি এবং যথাসম্ভব যথাসাধ্য চেষ্টা করার জন্য বোধিলাভ করার জন্য নিজেকে উৎসর্গ করি তাহলে এটা না কেবল সকলের ক্ষুধা প্রশমিত করবে, বরং তার সাথে তাদের সমস্যাগুলি সম্পূর্ণরূপে উন্মূলন করার ক্ষমতা প্রদান করবে। 

শেষ মন্তব্য

সুতরাং বোধিলাভের লক্ষ্য বিকাশের দিকে এক পদক্ষেপ হিসাবে আমাদের দৃঢ়ভাবে সংকল্প নেওয়া দরকার যে, আমরা কোনও প্রাণীর ক্ষতি করব না। আমরা যখন অপরকে কষ্ট দেওয়ার অসুবিধা এবং ত্রুটিগুলি দেখি তারা যারাই হোক না কেন এবং না করার সংকল্প করুক না কেন, এর কারণে অনেক লাভ হয়। ফলস্বরূপ, এটা হ’ল ঐ ধরণের আচরণ যা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। একটা দৃঢ় সংকল্প যে, আমরা কাউকে আঘাত করতে বা ক্ষতি করতে যাচ্ছি না, এটা হ’ল একটা আধ্যাত্মিক পরিমাপ যা আমরা সকলেই এখন নিতে পারি। আমাদের আধ্যাত্মিক অনুশীলনকে খুবই উঁচু এবং দূরবর্তী কিছু হিসাবে ভাবার প্রয়োজন নেই। 

সংক্ষেপে, একজন আধ্যাত্মিক অনুশীলনকারী হওয়ার জন্য কোন প্রকারের বিদেশী জীবন-যাপনে জড়িত হতে হয় না। গৃহস্থদের ইতিহাসে এরকম অনেক বৃত্তান্ত রয়েছে যারা মহান অনুশীলনকারী বা সাধক ছিলেন। আমরা যখন প্রাচীন ভারতের চুরাশী জন অত্যন্ত দক্ষ সিদ্ধ পুরুষদের জীবনীগুলি দেখি, তখন আমরা দেখতে পাই যে, তাদের মধ্যে অনেকেই গৃহস্থ ছিলেন।

আমরা বৃদ্ধ হয়ে গেলেও আমাদের হতাশ হওয়ার প্রয়োজন নেই অথবা বৃদ্ধ ব্যক্তিরা আধ্যাত্মিক অনুশীলনকারী হতে পারে না বলে ভাবার প্রয়োজন নেই। আমরা যদি অতীতের বৃত্তান্তগুলি পর্যালোচনা করি তাহলে আমরা দেখতে পাই যে সেখানে শ্রীজতি/শ্রীজাত নামক গৃহস্থের উদাহরণ রয়েছে। তার বয়স যখন ৮০ বছর হয়েছিল তখন তিনি আধ্যাত্মিক অনুশীলনকারী হয়েছিলেন। তিনি তার জীবনকালেই একজন মুক্ত সত্তার অবস্থা বা অর্হত্ব অবস্থা লাভ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। অতএব আমরা এখন খুব বেশী বৃদ্ধ হয়ে যাইনি। 

অন্যদিকে, আমরা যদি অল্পবয়সী হই তাহলে আমাদের অবুঝ হওয়া উচিত না। পরিবর্তে, আমাদের আধ্যাত্মিক অনুশীলনে সিদ্ধান্ত গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য আমাদের যে শক্তি রয়েছে সেটাকে সদ্ব্যবহার করা উচিত। আমাদের কখনই ভাবা উচিত না যে, আমরা বৃদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত আমরা এই প্রতিরোধমূলক আধ্যাত্মিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারব না কারণ মৃত্যু কখন ঘটবে সেটা জানার কোনও উপায় নেই। তাছাড়া বার্ধক্য এমন একটা জিনিস যা আমাদের সকলের ক্ষেত্রে হঠাৎ উপস্থিত হয়। আর এটা যখন ঘটে তখন মনে হয় হঠাৎ করেই আমাদের জীবন পিছলে পড়েছে। 

এরকম অনেক সাধারণ ইতিবাচক জিনিস আছে যা আমরা করতে পারি। আমি অন্যান্য দেশের কিছু লোককে জানি যারা পাখিদের খাবার খাওয়ানোর জন্য প্রচুর পরিশ্রম করে এবং অর্থ ব্যয় করে। তাদের বাড়ির বাইরে মাইপোষ (ফিডার) থাকে এবং প্রতিদিন হাজার-হাজার পাখিদের খাওয়ানোর জন্য হাজার-হাজার অর্থ ব্যয় করে। তারা তাদের অবকাশগুলি ত্যাগ ক’রে দেয় কারণ তারা পাখিদের তাদের আহার-পানীয় থেকে বঞ্চিত করতে চায় না। এটা একটা অসাধারণ অনুশীলন; এটা দেখে আমার আনন্দ হয় কারণ এটা সত্যিই বোধিসত্ত্বের অনুশীলনের ধরণ। তিব্বতীদের মধ্যে এরকম অনেক উদাহরণ আছে যারা তীর্থযাত্রী হয়ে ভারতে এসেছিলেন এবং তারা পায়রাদের জন্য রুটি এবং বিভিন্ন ধরণের পাখিদের জন্য চাল রাখতেন। দীর্ঘায়ু লাভ করার জন্য এটা একটা অসাধারণ ধরণের অনুশীলন। 

সারাংশ

আমরা যদি আমাদের আলোচনার সারসংক্ষেপ করতে চাই তাহলে মূল বিষয়গুলি হবেঃ

  • প্রত্যেকে লাভার্থে নিয়মিতভাবে কাজ করার জন্য একটা সদয় এবং উষ্ণ হৃদয় বিকাশ করুন।
  • কখনও কাউকে বা কোনকিছুকে কষ্ট দেবেন না, কখনও ক্ষতি করবেন না বা সমস্যার সৃষ্টি করবেন না। 

এগুলি হ’ল অসাধারণ আধ্যাত্মিক অনুশীলনের মূল বিষয়। বোধিচিত্ত-উদ্দেশ্য সহ অপরের জন্য এবং জ্ঞান লাভের জন্য বিশুদ্ধভাবে আমাদের হৃদয়কে উৎসর্গ ক’রে আমাদের এই মানবের পূর্ণজন্মের যে কার্যকারী আধার রয়েছে তার পুরো সুযোগ গ্রহণ করা দরকার। এইভাবে আমরা বাস্তবে একটা সুস্পষ্ট এবং সম্পূর্ণ বিকশিত মনের অবস্থা অর্থাৎ সম্বুদ্ধত্ব লাভ করতে সক্ষম হব। 

Top