মার্গক্রমের (লাম-রিম) পরিদর্শন

একটা মূল্যবান মানব জীবনের সর্বোত্তম প্রয়োগ

আমরা সকলেই একটা মূল্যবান মানব শরীর সহ একটা মূল্যবান মানব জন্ম লাভ করছি যা এটাকে সর্বকালের সম্ভাব্য আধ্যাত্মিক বিকাশের জন্য অনুমতি প্রদান করে। আমরা এখন মানুষ হিসাবে জ্ঞানলাভ করার জন্য যতটা সুযোগ পেয়েছি এরকম সুযোগ আমরা অন্য কোথাও পেতাম না, এমনকি আমরা যদি দেবরাজ ইন্দ্রের মতো পুনর্জন্মও গ্রহণ করতাম। 

যেহেতু আমাদের কাছে এখন কর্ম করার আধার আছে তার চেয়ে ভাল আধার আর কিছু নেই, অতএব এটাকে সর্বোত্তম ভাবে ব্যবহার করার পদ্ধতিটা জানা আমাদের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ। আধ্যাত্মিক বিকাশের সবচেয়ে উৎকৃষ্ট উপায় হল আমাদের মধ্যে আরও বেশি করে সদয় এবং উষ্ণ হৃদয় বিকাশ করা। উষ্ণ হৃদয়ের ভিত্তিতে আমরা বোধিচিত্তের উদ্দেশ্যের উৎসর্গীকৃত হৃদয়ের বিকাশ করতে পারি, এটা হল বোধিলাভের কামনা। অন্যকথায় আমাদের সমস্ত দোষকে দূর করা এবং যথাসম্ভব সর্বোত্তম উপায়ে সকলকে উপকৃত করার জন্য আমাদের সম্পূর্ণ সম্ভাবনা লাভের ইচ্ছা। আমরা যখন অন্যদের প্রতি, পাশাপাশি জ্ঞান লাভের জন্য আমাদের হৃদয়কে উৎসর্গীকৃত করি সেটাই হয় আমাদের বহুমূল্য মানব জন্মকে সর্বোত্তম ভাবে প্রয়োগ করা। 

এই জন্মের সাফল্যের কারণ হিসাবে অতীত আচরণ থেকে ইতিবাচক সম্ভাবনা

মানুষ অনেক রকমের হয়। তাদের সকলের মধ্যে এমন মানুষের সংখ্যা খুবই দুর্লভ, যারা ভবিষ্যতের জীবনকে উপকৃত করতে আগ্রহী, বিশেষ করে বোধিলাভের ক্ষেত্রে। বেশিরভাগ মানুষ শুধু এই জীবনে নিজের জন্য সুখের খোঁজ করতে উদ্বিগ্ন থাকে। যাইহোক, তারা সকলে একটা ক্ষেত্রে সমান যে, তারা সবাই সুখী হতে চায়, কেউ দুঃখী হতে চায়না বা সমস্যার সম্মুখীন হতে চায় না। 

যারা এই জীবনে সুখী হওয়ার জন্য মনোনিবেশ করেন, তাদের জন্যে দুই প্রকারের সুখ রয়েছেঃ শারীরিক সুখ এবং মানসিক সুখ। অধিকাংশ মানুষ তাদের মনোযোগ কেবল একপ্রকারের শারীরিক সুখের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখে। শারীরিক সুখ সম্পর্কে যদি বলা হয়, যদি আমরা সকলেই এর কিছু স্তরকে আমাদের জীবনে আনার জন্য কাজ করার চেষ্টা করি কিন্তু আমাদের মধ্যে অধিকাংশই জানে না যে, এটা কীভাবে করতে হয়। উদাহরণস্বরূপ, এমন কিছু মানুষ আছেন যারা আহার, বস্ত্র, আশ্রয় এবং মর্যাদা লাভের চেষ্টা করতে গিয়ে অন্যের হত্যা করেন বা নিরীহ প্রাণীদের জবাই করেন। অন্যরা চুরি, প্রতারণা বা সিঁধ চুরির ঘটনায় জড়িত হয়। তবে তারা সকলেই সুখের খোঁজ এবং একপ্রকারের শারীরিক সুস্থতার খোঁজ করার চেষ্টা করে। কিন্তু তারা যতই চেষ্টা করুক না কেন বাস্তবে তারা কল্যাণ করার কোন সঠিক উপায় জানেই না। ফলে পর সুখের পরিবর্তে আরও নিজের জন্য সমস্যার সৃষ্টি করে। 

অন্যদিকে যে সমস্ত মানুষ ব্যাবসা-বানিজ্য, কৃষিকাজ, শিক্ষা শিল্পকলা ইত্যাদির মাধ্যমে একটা সৎ জীবন-যাপনের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করে তাদের দুটি শ্রেণীতে বিভাজন করা যায়। এদের মধ্যে তাদের সফল বলা হয় যারা ধন-সম্পত্তি অর্জন করতে সক্ষম হয়। এবং যারা অর্জন করতে সফল হয় না তাদের সম্পূর্ণ ভাবে ব্যর্থ মনে হয়। এখানে আমরা যদি জিজ্ঞাসা করি এর জন্য দায়ী কে অর্থাৎ কেন কিছু মানুষ সফল হয় এবং কেনই বা অন্যরা হয় ব্যর্থ? এরকম হওয়ার আসল কারণ হল তারা পূর্ববর্তী জন্মে যে বীজ বপন করেছিল এবং সম্ভাবনাগুলি তৈরি করেছিল তার কারণেই এরকম হয়। যারা পূর্বজন্মে ধ্বংসাত্মক ছিল তারা অত্যন্ত নেতিবাচক সম্ভাবনা তৈরি করেছে, যারফলে তারা এই জীবনে ব্যর্থ হয়েছে। এর বিপরীতে যারা পূর্বজন্মে গঠনমূলক কর্ম করেছে তারা ইতিবাচক সম্ভাবনাও তৈরি করেছে। এটাই হল তাদের জীবদ্দশায় সাফল্য এবং সুখের চাবিকাঠি।

আপনি যদি এই ব্যাখ্যাটি না মানেন যে, কিছু লোক কেন সফল হয় এবং আর কিছু মানুষই বা কেন ব্যর্থ হয় তাহলে সেটা আপনাকে বিবেচনা করতে হবে তাদের মধ্যে এরকম বৈষম্য থাকার কোন কারণ নেই। মানুষ যদি একই পরিমান প্রচেষ্টা এবং দক্ষতার সাথে কর্ম করে তাহলে তো তাদের সমান পরিমান সাফল্য অর্জন করা উচিত। কিছু মানুষ মনে করে যে এই জীবদ্দশায় তারা যে ধরণের কর্ম করে, যেমন-ব্যবসা বা বানিজ্য, তার ফলস্বরূপ তারা সাফল্য অর্জন করে। বাস্তবে এই সাফল্যের জন্য এই কর্ম সম্পূর্ণরূপে দায়ী নয়। সাফল্যের আসল কারণগুলি হল সম্ভাব্যতা যা পূর্ব জীবনে গঠনমূলক কর্মের কারণে নির্মিত হয়েছিল। আর আমরা যখন এই জীবদ্দশায় যে কর্ম এবং ক্রিয়াকলাপের সঙ্গে যুক্ত হই উক্ত সম্ভাব্যতা সেই কারণগুলিকে পরিপক্ক করার অনুমতি প্রদান করার পরিস্থিতি বা শর্ত হিসাবে কাজ করে। 

তদনুসারে সাফল্য নির্ভর করে কারণ এবং প্রজন্মের উপরে যা সর্বদা একসাথে উত্থিত হয়। কারণগুলি অতীত জীবন থেকে আসে অর্থাৎ সেই জীবনের সময়ে নির্মিত সম্ভাবনাগুলিকে বলা হয় আর এই জীবদ্দশায় সময় এবং প্রচেষ্টার উপর ভিত্তি করে পরিস্থিতি তৈরি হয়। দুটোকে অবশ্যই একসাথে সংযুক্ত হতে হবে। 

Top