থেরবাদে, মহাযানে এবং তন্ত্রে বুদ্ধঃ একই?

বুদ্ধের জীবনের বিভিন্ন সংস্করণ বা উপস্থাপনাগুলি যথাযথ ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে নিছক তথ্যের নিরিখে বিবেচনা করা হবে না, আবার বিরোধী হিসাবেও বিবেচিত হবে না। এর পরিবর্তে আমাদের বুঝতে হবে যে, প্রতিটি উপস্থাপনা লেখা হয়েছে এবং এগুলিকে একটি নির্দিষ্ট প্রসঙ্গে পড়তে হবে, আর প্রতিটি উপস্থাপনাই সঠিক এবং বৈধ। আমরা যদি বুদ্ধের উপদেশগুলির সাথে প্রদত্ত এই পৃথক প্রসঙ্গগুলি পর্যালোচনা করি, তাহলে আমরা সাধারণ ভাবে বুদ্ধের উপদেশগুলির শুধু গভীর প্রশংসাই করব না, বরং আমাদের জীবনে এই সমস্ত বিভিন্ন উপস্থাপনা থেকে কীভাবে উপদেশগুলি প্রয়োগ করতে হবে তাও শিখব। আমরা যদি এইভাবে শিক্ষাগুলি প্রয়োগ ক’রে বুদ্ধের জীবনের পর্যায়গুলি অনুসরণ করি, তাহলে আমরা সত্যকে উপলব্ধি করতে সক্ষম হব। যেমন- তিনি নিজে করেছিলেন এবং অন্যদের করুণা সহকারে করার উদ্দেশ্যে সম্পাদন করেছিলেন।

ভূমিকা

আমরা যখন বৌদ্ধ ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা শাক্যমুনি বুদ্ধকে খুঁজে বের করতে চাই তখন আমরা দেখতে পাই যে, বুদ্ধের জীবন কাহিনীর অনেকগুলি আলাদা সংস্করণ রয়েছে। তখন ব্যাপারটা এই এসে দাঁড়ায় যে, আমরা জিজ্ঞাসা করতে পারি- তারা সবাই কি একই ব্যক্তির কথা বলছেন? এটি উত্তর দেওয়ার জন্য একটা সাধারণ প্রশ্ন নয়।

মহাযান দ্বারা বিস্তৃতভাবে উপস্থাপিত বুদ্ধের পরিচয় বুদ্ধের জীবনের অন্য একটি সংস্করণ। এটি থেরবাদের সংস্করণ থেকে একটু আলাদা। থেরবাদ সংস্করণে বুদ্ধকে একজন ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব রূপে দেখানো হয়েছে, যা সাধারণতঃ খ্রিষ্ট পূর্ব ৫৬৬ থেকে ৪৮৫ পর্যন্ত জীবিত ছিলেন এবং তিনি তাঁর জীবদ্দশায় আলোকিত হয়েছিলেন বা বোধিলাভ করেছিলেন, আর মৃত্যুর পরে তাঁর ধারাবাহিকতার অবসান ঘটিয়েছিলেন। পালি ক্যাননে উপস্থাপিত কাহিনীর উপরে মহাযান সংস্করণটি আরও বিশদে ফুটিয়ে তুলেছে এবং বর্ণনা করেছে যে, কীভাবে বুদ্ধ অসংখ্য জীবনকাল আগে বোধি লাভ করেছিলেন এবং শাক্যমুনি রূপে পৃথিবীতে অবতরণ করেছিলেন। কীভাবে বোধি লাভ করা যায় সেটা অন্যদের দেখানোর জন্য যে, এই পৃথিবীতে তিনি আলোকিত হওয়ার বারোটি উদাহরণ প্রস্তুত করেছিলেন। পাশাপাশি মৃত্যুর সময় তাঁর ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে যাতে তিনি আরও বহু জগতে অবতরিত হতে পারেন, সকল সত্ত্বদের উপদেশ দিতে পারেন এবং কল্যাণ করতে পারেন।

বুদ্ধের জীবনের আর একটি সংস্করণ হ’ল যেটা আমরা তন্ত্র গ্রন্থগুলিতে দেখতে পাই। এই সংস্করণে বুদ্ধ একসাথে বিভিন্ন রূপে আবির্ভূত হন। এই রূপগুলি, যা “ধ্যান দেবতা” হিসাবে পরিচিত, যাদের বিভিন্ন বর্ণ, অসংখ্য বাহু, মুখ এবং পা রয়েছে, যা সমস্ত বুদ্ধের উপলব্ধির বিভিন্ন দিককে উপস্থাপন করে। বুদ্ধ এই বিভিন্ন রূপে আবির্ভূত হয়েও তিনি একই সাথে একটি মানব রূপে উপদেশ দেন, উদাহরণ স্বরূপ, ভারতে অবস্থিত গৃধ্রকূট পর্বত যেখানে তিনি সূত্রগুলির উপরেও উপদেশ দিয়েছিলেন।

Top