অনুবাদকরা প্রায়ই ভুল করেন। যা কিছু বলা হয়, লেখা হয় সেগুলিকে অথবা রেকর্ড গুলির উপর আপনাদের অন্ধভাবে নির্ভর হওয়া উচিত নয়। সেটা বোকামি হবে। একইভাবে আমি যখন শিক্ষাদান করি তখন আমি অনিচ্ছাকৃতভাবে ভুল ক’রে ফেলতে পারি। অথবা কখনও-কখনও এমন কিছু বলে ফেলতে পারি যেটা সঠিক নয়। ওই সময় আপনারা আপনাদের রেকর্ডারে পরে যা শুনবেন সেটা কেবল অন্ধবিশ্বাসের ভিত্তিতে গ্রহণ করবেন না। যেমন- বুদ্ধ তাঁর শিক্ষার পরিপ্রেক্ষিতে বলেছিলেন যে, আমি বলেছি বলে আপনাদের এমন কিছুই গ্রহণ করা উচিত নয়, বরং কারও দ্বারা সোনা পরীক্ষা করার মতো আপনাদের বিশ্লেষণ করা উচিত। বিশ্বাসের উপর নির্ভর করবেন না অথবা রেকর্ডার-এ থাকা সমস্ত কিছু আক্ষরিক অর্থে গ্রহণ করবেন না।
যতক্ষণ না আপনারা নবম বোধিসত্ত্ব ভূমি লাভ করবেন আপনারা ততক্ষণ ভুল করবেন। আপনারা মনের ওই নবম স্তর লাভ করার পরেই যখন কোন কিছুর ব্যাখ্যা করবেন আপনারা ভুল করা বন্ধ করবেন। একবার আপনারা ওই বাস্তবতা অর্জন করে ফেললে, আপনারা আর কোন ভুল করবেন না।
উদাহরণস্বরূপ, বোধিচর্যাবতার নামক গ্রন্থের উপর শিক্ষা দানের শুরুতে, যদিও আমি জানি না এটি কীভাবে অনুবাদ করা হয়েছিল, কিন্তু আমি যা বলেছিলাম সেটা হল যখন খুনু লামা রিনপোছে বুদ্ধগয়ায় ‘বুদ্ধপালিত’-এর সংস্কৃত পান্ডুলিপি পড়তে-পড়তে দু-বছর কাটিয়েছিলেন, ওই গ্রন্থটি তখন তিব্বতী ভাষায় অনুবাদ করা হয়নি। সেটা ছিল একটি অনিচ্ছাকৃত ভুল। আমি যা বোঝাতে চেয়েছিলাম সেটা হল সেই বিশেষ পান্ডুলিপি, সেই বিশেষ সংস্করণটি তিব্বতী ভাষায় অনুবাদ করা হয়নি। বুদ্ধপালিত গ্রন্থটি তিব্বতী ভাষায় অনুবাদ করা হয়নি এই ধরণের সাধারণ বক্তব্য সঠিক নয়। আপনাদের মনে থাকতে পারে যে, আমি বলেছিলাম আচার্য চোংখাপা ওই গ্রন্থটি অধ্যয়ন করেছিলেন এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে উপলব্ধি অর্জন করেছিলেন। আপনাদের আমার বক্তব্যটি পরীক্ষা করা উচিত ছিল এবং আমাকে প্রশ্ন করা উচিত ছিল, কারণ এইভাবেই পদ্ধতিগুলি পূর্ণ করা হয়। কখনো-কখনো এই ধরণের ভুল হয়ে থাকে।
উদাহরণস্বরূপ, অন্যদিন প্রথমবার আমি যখন প্রাসঙ্গিক এবং চিত্তমাত্র পরম্পরা সম্পর্কে শিক্ষাদান করছিলাম তখন আমি সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করেছিলাম যে, সৌত্রান্তিক পরম্পরায় পারমার্থিক সত্য ধর্মের জন্য তিনটি সমার্থক শব্দের একটি সেট আছে: সংস্কৃত ধর্ম, বস্তুনিষ্ঠ সত্তা এবং অনিত্য (অস্থিতিশীল) ধর্ম। আমি আরও বলেছিলাম যে সাংবৃতিক সত্য ধর্মেরও সমার্থক শব্দের একটি সেট আছে: সংস্কৃত ধর্ম, অধিবিদ্যা মূলক স্বভাব এবং নিত্য (স্থিতিশীল) ধর্ম। এরসাথে আমি ব্যাখ্যা ক’রে চলেছিলাম যে চিত্তমাত্র পরম্পরায় ‘পরিকল্পিত, পরতন্ত্র এবং পরিনিষ্পন্ন’-ধর্মের ব্যবস্থা আছে। এই ব্যবস্থা অনুযায়ী পরিকল্পিত ধর্ম বলতে সত্যত: অপ্রতিষ্ঠিত অর্থাৎ অনারোপিত সত্তাকে বোঝায়। গতকাল আমি যখন উপাদানটির পর্যালোচনা করেছিলাম, যদিও বিষয়টি সেভাবে অনুবাদ করা হয়েছিল না, তবে অনুবাদক নিজে এটি সংশোধন করেছিলেন। আর আমিও নিজেকে সংশোধন করেছিলাম কারণ আমি সৌত্রান্ত্রিক পরম্পরা অনুযায়ী দ্বয় সত্য ধর্মের জন্য নির্ধারিত সমার্থক সেট গুলিকে উল্টে দিয়েছিলাম। এইভাবে অনিচ্ছাকৃতভাবে ভুল হওয়া খুবই সহজে হয়ে থাকে।
আপনারা যা কিছু দেখেন, শোনেন, অধ্যয়ন করেন এবং কাজকর্ম করেন সেগুলিকে সবসময় অবশ্যই পরীক্ষা করা উচিত। এমনকি যিনি শিক্ষাদান করেন, যেমন- আমি উপদেশ দেওয়ার পর ফিরে যাই এবং যা কিছু বলে থাকি তার পর্যালোচনা করি আর পরীক্ষা ক’রে দেখি যে আমি কোন ভুল করেছি কিনা। তদনুরূপ, ধর্ম-শ্রোতাদের ক্ষেত্রেও একই রকম হওয়া উচিত।