সুখের উৎস আমাদের ভিতরে নিহিত আছে। আমাদের মন যখন স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি যখন ইতিবাচক হওয়ার সাথে-সাথে বাস্তবিক হয়, আমাদের চিন্তা-ভাবনা যখন অন্যের প্রতি স্নেহময়ী হয়, তখন আমরা সুখ অনুভব করি যেটা আমাদের শক্তি এবং সাহসের সাথে সমর্থন জোগায়, তাতে আমাদের যেকোন সমস্যার মুখোমুখি হতে হোক না কেন। আমরা যদি সুখী হতে চাই তাহলে, যেমনকি বুদ্ধ বলেছেন, আমাদের মনকে দমন করতে হবে।

সাধারণ সুখঃ বিপরিণাম দুঃখতা

কিছু মানুষ বৌদ্ধধর্মকে একটি নেতিবাচক ধর্ম হিসাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন যেটা চিহ্নিত করে যে, আমরা যা কিছু ভোগ করি সবই দুঃখ এবং সুখকে একেবারেই মানে না। এটা অবশ্যই একটা ভুল তথ্য। এটা সত্য যে বৌদ্ধধর্ম ব্যাখ্যা করে যে আমাদের স্বাভাবিক, সাধারণ সুখ অসন্তুষ্টিজনকঃ এই সুখটি কখনোই স্থায়ী হয় না এবং আমরা কখনোই এটাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে অর্জন করতে পারি না। এটা বাস্তবিক সুখ নয়। উদাহরণ স্বরূপ, যদি আইসক্রিম খাওয়াটা বাস্তবিক সুখ হতো তাহলে আমরা এক জায়গায় বসে যত বেশি আইসক্রিম খেতাম আমাদের ততবেশি সুখী হওয়া উচিত। কিন্তু আমরা শীঘ্রই যখন একটা পর্যায়ে পৌঁছে যাই তখন আইসক্রিম খাওয়ার সুখটা অসুখীতা ও দুঃখে পরিণত হয়ে যায়। রৌদ্রে বসে থাকা বা ছায়ায় চলাফেরা করার ক্ষেত্রে বিষয়টা একই দাঁড়ায়। বিপরিণাম দুঃখ বলতে এটাকেই বোঝায়।

যদিও বৌদ্ধধর্ম এই বিপরিণাম-দুঃখতা নামক আমাদের সাধারণ সুখের সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতে অনেক পদ্ধতি নির্ধারণ করেছে যাতে আমরা বুদ্ধের চিরস্থায়ী আনন্দদায়ক অবস্থায় পৌঁছে যেতে পারি, তবুও আমাদের সাধারণ সুখের অনেক ত্রুটি থাকা সত্ত্বেও বৌদ্ধধর্ম এই ধরণের সুখ অর্জনের উৎস সম্পর্কেও ব্যাখ্যা করে। বৌদ্ধধর্ম এই শিক্ষার ব্যবস্থা করে, কারণ এর একটি মৌলিক স্বতঃসিদ্ধ সত্য হল জগতের প্রত্যেকটি প্রাণী সুখ চায় আর কেউ দুঃখী হতে চায় না। যেহেতু প্রত্যেকেই সুখের খোঁজ করে এবং তাই সাধারণ প্রাণী হিসাবে আমরা সাধারণ, স্বাভাবিক সুখ ছাড়া অন্য কোন ধরণের সুখ সম্পর্কে জানি না। এই কারণে বৌদ্ধধর্ম ব্যাখ্যা করে যে, এই সুখকে কীভাবে অর্জন করা যেতে পারে। সাধারণ সুখের সর্বাধিক মৌলিক স্তরে যখন এই ধরণের ইচ্ছা এবং সুখের প্রয়োজনীয়তা পূর্ণ হয়ে যায় কেবল তখনই আমরা আরও উন্নত আধ্যাত্মিক অনুশীলন গুলির সাথে গভীরতর, আরও সন্তোষজনক লক্ষ্যের দিকে অগ্রসর হই।

তবে দুর্ভাগ্যক্রমে যেমনকি মহান ভারতীয় বৌদ্ধ আচার্য শান্তিদেব “বোধিচর্যাবতারে” লিখেছেনঃ

দুঃখ ত্যাগ করার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তারা স্বয়ং দুঃখের দিকে ধাবিত হতে থাকে। যদিও তারা সুখের কামনা করে, তাসত্ত্বেও মোহ-এর কারণে নিজেদের সুখ নিজেদের শত্রুর মতো নষ্ট করে দেয়।

অন্যকথায় যদিও আমরা সুখের কামনা করি, তাসত্ত্বেও যেহেতু আমরা তার উৎস সম্পর্কে অজ্ঞ, এবং তাই নিজেদের জন্য সুখ অর্জন করার পরিবর্তে আমরা কেবল আরও বেশি অসুখীতা এবং দুঃখের জন্ম দিই।

Top