ন্যায় এবং বৈশেষিক মতবাদের মৌলিক নীতি

অন্যান্য ভাষা সমূহ

উৎপত্তি

ভারতীয় দর্শনের বৈশেষিক (তিব্বতী. ছে-ডাগ-পা) মতবাদটি ঋষি কানাদি (তিব্বতী. ডাঙ-সোঙ- জে়গ-জে়ন) রচিত বিশেষ সূত্র (সংস্কৃত বৈশেষিক সূত্র) এর উপর ভিত্তি করে তৈরি, যেমনটি ৫ম শতাব্দীতে প্রশস্তপাদ বলেছিলেন। কিছু পরে ন্যায় (তিব্বতী. রিগ-চেন-পা) মতবাদটি গৌতমের ন্যায় সূত্র (সংস্কৃত. ন্যায় সূত্র) - যা ব্রাহ্মণ অক্ষপাদ (তিব্বতী. ঠাম-সে-কাঙ-মিগ) নামেও পরিচিত – তার মতবাদের উপর ভিত্তি করে তৈরি। খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতাব্দীতে বাৎস্যায়নের মত অনুসারে।

বৈশেষিক এবং ন্যায় মতবাদের মধ্যে অনেক মিল রয়েছে। বৈশেষিক বিদ্যমান সত্ত্বার ধরণগুলির উপর জোর দেয়; ন্যায় সেই সত্ত্বাগুলির অস্তিত্ব উপলব্ধি এবং প্রমাণ করার সাথে জড়িত সত্ত্বার ধরণগুলির উপর জোর দেয়। ঠিক যেমন সাংখ্য জ্ঞাত ঘটনার ২৫টি শ্রেণীর ঘটনা দাবি করে, বৈশেষিক ছয় ধরণের সত্ত্বা (তিব্বতী. ছি়গ-গি-দোন, সংস্কৃত. পদার্থ) দাবি করে, যার সাথে সপ্তম, নেতিবাচক প্রকৃতি পরে যুক্ত হয়। ন্যায় ষোলটি দাবি করে।

“সত্ত্বার ধরণ” শব্দটির আক্ষরিক অর্থ হল “একটি শব্দের উল্লেখযোগ্য বস্তু” এবং এই শ্রেণীবিভাগের সকল সদস্যের প্রকৃত সন্ধানযোগ্য অস্তিত্ব রয়েছে যেমনটি তাদের জন্য শব্দগুলি নির্দেশ করে। এগুলিকে তাদের জন্য শব্দ এবং ধারণাগুলি সংযুক্ত করার কারণ হিসাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। সুতরাং, এই অর্থে, তারা সকলেই একটি ফাংশন সম্পাদন করে, যদিও কয়েকটি স্থির, অপ্রভাবিত প্রকৃতি। এগুলি সকলেই স্বয়ংসম্পূর্ণভাবে অস্তিত্বশীল, এই অর্থে যে তারা সত্যিকার অর্থে বিদ্যমান স্বতন্ত্র বস্তু হওয়ার জন্য, অন্যান্য ঘটনার উপর নির্ভর করে না, যদিও তারা নিজেরাই আলাদাভাবে বিদ্যমান নাও থাকতে পারে। কিছু ধরণের সত্তা অন্যান্য সত্তা যেমন গুণাবলীর জন্য সমার্থক হিসাবে কাজ করে এবং তাদের মধ্যে অন্তর্নিহিত কিছু অপরিবর্তনীয় সম্পর্কের কারণ হিসাবে কাজ করে।

সত্ত্বার প্রকারভেদের তালিকা

বৈশেষিকের মতে, সাত ধরণের সত্ত্বা হল:

(১) মৌলিক দ্রব্য (তিব্বতী. জে়, সংস্কৃত. দ্রব্য)

(২) গুণাবলী (তিব্বতী. য়োন-তেন, সংস্কৃত. গুণ)

(৩) ক্রিয়া (তিব্বতী. লে, সংস্কৃত. ক্রিয়া)

(৪) সামান্য (তিব্বতী. চি, সংস্কৃত. সামান্য, জাতি)

(৫) বিশেষ (তিব্বতী. ছে-ডাগ, সংস্কৃত. বিশেষ)

(৬) সমবায়, অপরিবর্তনীয় সম্পর্ক (তিব্বতী. দু-বা, সংস্কৃত. সমবায়)

(৭) অভাব (তিব্বতী. মা-য়িন-পা, সংস্কৃত. অভাব)।

ন্যায় দর্শনের ক্ষেত্রে, ষোল প্রকার সত্ত্বা হল:

(১) প্রমাণ (তিব্বতী. ছে়-মা, সংস্কৃত. প্রমাণ)

(২) প্রমেয় (তিব্বতী. শেল-জা, সংস্কৃত. প্রমেয়) - মূল ছয় ধরণের বৈশেষিক সত্ত্বা আছে

(৩) সমস্যা (তিব্বতী. থে-ছো়ম, সংস্কৃত. সমস্যা)

(৪) প্রয়োজন (তিব্বতী. গোয়ে-পা, সংস্কৃত. প্রয়োজন)

(৫) দৃষ্টান্ত (তিব্বতী. পে, সংস্কৃত. দৃষ্টান্ত)

(৬) সিদ্ধান্ত (তিব্বতী. ডুব-থা, সংস্কৃত. সিদ্ধান্ত)

(৭) অবয়ব (তিব্বতী. য়ান-লাগ, সংস্কৃত. অবয়ব)

(৮) তর্ক (তিব্বতী. তোগ-গে, সংস্কৃত. তর্ক) - বিশ্লেষণের জন্য  অনুমান

(৯) নির্ণয় (তিব্বতী. তেন-ফাব, সংস্কৃত. নির্ণয়)

(১০) বাদ (তিব্বতী. চোয়ে-পা, সংস্কৃত. বাদ) – সত্য আবিষ্কারের জন্য

(১১) জল্প (তিব্বতী. জোয়ে-পা, সংস্কৃত. জল্প) – গঠনমূলক বা ধ্বংসাত্মক যুক্তি, যার কেবল বিজয়ের লক্ষ্যে তৈরি

(১২) বাক-বিতন্ডা (তিব্বতী. সুন-জিন, সংস্কৃত. বিতন্ডা) – বিতর্ক

(১৩) হেত্বাভাষ (তিব্বতী. তেন-ছি়গ-তার-নাঙ্‌-বা, সংস্কৃত. হেত্বাভাষ)

(১৪) ছল (তিব্বতী. ছি়গ-দোর, সংস্কৃত. ছল) যুক্তিতে ব্যবহৃত প্রতারণামূলক কৌশল

(১৫) জাতি (তিব্বতী. তাগ-ছোয়ে, সংস্কৃত. জাতি)

(১৬) নিগ্রহস্থান  (তিব্বতী. ছা়র-চোয়ে-পা-ই-নে, সংস্কৃত. নিগ্রহস্থান)

আসুন আমরা কেবল উভয় ব্যবস্থার দ্বারা গৃহীত সত্ত্বার ধরণগুলি দেখি, মূল বৈশেষিক ছয়টি এবং বৈশেষিক সাতটি।

নয় ধরণের মৌলিক পদার্থ

নয় ধরণের মৌলিক পদার্থ আছে। এই গুণাবলী এবং ক্রিয়াকলাপের ভিত্তি এবং বিভিন্ন ধরণের সম্পর্কের মাধ্যমে এই গুণাবলী এবং ক্রিয়াকলাপের সাথে সংযুক্ত, কিছুটা লাঠি দ্বারা সংযুক্ত দুটি বলের মতো:

(১) পৃথিবী (তিব্বতী. সা, সংস্কৃত. পৃথিবী)

(২) জল (তিব্বতী. ছু, সংস্কৃত. আপ)

(৩) আগুন (তিব্বতী. মে, সংস্কৃত. তেজস)

(৪) বায়ু (তিব্বতী. লুঙ, সংস্কৃত. বায়ু)। এই চারটিই হল পরমাণু, অর্থাৎ- এটা হল অবিভাজ্য, চিরন্তন ভৌতিক কণা (সংস্কৃত. পরমানু)। পৃথক বস্তু হিসাবে তাদের সময় এবং অবস্থান নেই, কেবল তাদের থেকে গঠিত স্থূল বস্তুগত বস্তুর সময় এবং অবস্থান আছে।

(৫) আকাশ (তিব্বতী. নাম-খা, সংস্কৃত. আকাশ)। আকাশ হল অভৌতিক, অবিভাজ্য, অনন্ত, সর্বব্যাপী, আর এটা কণা দ্বারা গঠিত নয়।

(৬) কাল (তিব্বতী. দুয়ে, সংস্কৃত. কাল)

(৭) দিক (তিব্বতী. ছোগ, সংস্কৃত. দিক)। কাল এবং দিক সর্বব্যাপী বস্তুনিষ্ঠ বাস্তবতা এবং কেবল পরিমাপ।

(৮) আত্মা (তিব্বতী. দাগ, সংস্কৃত. আত্মন) অথবা পুরুষ (তিব্বতী. কে-বু, সংস্কৃত. পুরুষ) অথবা পুদ্গল (তিব্বতী. ঘাঙ-সাগ, সংস্কৃত. পুদ্গল)। আত্মা হল অনন্ত, এবং প্রতিটি আত্মা হল সর্বব্যাপী এবং চিরন্তন। তারা নিজে নিজেই অচেতন।

(৯) মানস (তিব্বতী. য়ি, সংস্কৃত. মানস)। মানস পৃথিবী, জল, আগুন এবং বাতাসের মতো একটি পরমাণু, কিন্তু এই ক্ষেত্রে, চেতনার (তিব্বতী. সেম-পা, সংস্কৃত. চেতন) একটি পরমাণু। অন্য কথায়, চেতনা হল ভৌত কিছু। এটি ব্যক্তিদের বহির্বিশ্বের সাথে সম্পর্কিত করে এবং ধারণার মাধ্যমে তা করে। সুতরাং, স্থূল মানস পরমাণু সর্বদা ধারণাগত চেতনা।

২৪ টি গুণাবলী

২৪ টি গুণাবলী আছে, যা নির্দিষ্ট মৌলিক পদার্থের বিশেষ গুণাবলীকে নির্দেশ করে। প্রতিটি এক বা একাধিক মৌলিক জিনিসের সাথে সম্পর্কিত। এগুলির কোনওটিই স্বাধীনভাবে অস্তিত্ব রাখতে পারে না, যদিও প্রতিটিই স্বতন্ত্র।

২৪ টি বিভিন্ন ধরণের তন্মাত্র:

(১) রূপ (তিব্বতী. সু়গ, সংস্কৃত. রূপ)

(২) স্বাদ (তিব্বতী. রো, সংস্কৃত. রস)

(৩) গন্ধ (তিব্বতী. ঢি, সংস্কৃত. গন্ধ)

(৪) স্পর্শ (তিব্বতী. রেগ-পা, সংস্কৃত. স্পর্শ)

(৫) শব্দ (তিব্বতী. ঢা, সংস্কৃত. শব্দ)।

বিভিন্ন স্তর:

(৬) গুরুত্ব (তিব্বতী. চে-বা, সংস্কৃত. গুরুত্ব)

(৭) দ্রব্যত্ব (তিব্বতী. শের-বা, সংস্কৃত. দ্রব্যত্ব)

(৮) স্নেহ (তিব্বতী. নুম-পা, সংস্কৃত. স্নেহ)।

বিভিন্ন প্রকার বা উদাহরণ:

(৯) সংখ্যা (তিব্বতী. ঠাঙ, সংস্কৃত. সংখ্যা)

(১০) পরিমাণ (তিব্বতী. ছে়, সংস্কৃত. পরিমাণ)

(১১) পৃথকত্ব (তিব্বতী. সো-সোর, সংস্কৃত. পৃথকত্ব) - বস্তুর পাশে স্বতন্ত্রতা, যা কেবল একটি ফুলদানিকে অন্য একটি ফুলদানি থেকে আলাদা করে না, বরং একটি ফুলদানিকে একটি স্তম্ভ থেকে আলাদা করে।

(১২) সংযোগ অর্থাৎ সমষ্টি (তিব্বতী. জোর-বা, সংস্কৃত. সংযোগ) বা ধারণ (তিব্বতী. দেন-পা)। গুণাবলী বা ক্রিয়াকলাপের সংযোগ বা দখল এবং কণার সমষ্টি কারণ এবং অবস্থার উপর নির্ভরশীল। যেহেতু তারা সাপেক্ষ, তারা অপরিবর্তনীয় নয়; তারা ক্ষণস্থায়ী।

(১৩) বিভাগ (তিব্বতী. নাম-পার-ছে-বা, সংস্কৃত. বিভাগ) – একটি আনুষঙ্গিক সমষ্টি থেকে বা আনুষঙ্গিকভাবে কিছু ধারণ করা থেকে বিচ্ছেদ

(১৪) পরত্ব (তিব্বতী. শেন-পা-ন্যি, সংস্কৃত. পরত্ব) – স্থান বা কাল

(১৫) অপরত্ব (তিব্বতী. শেন-মা-য়িন-পা-ন্যি, সংস্কৃত. অপরত্ব) – স্থান বা কালের অভাব

বিভিন্ন ধরণের বা স্তর:

(১৬) বুদ্ধি (তিব্বতী. লো, সংস্কৃত. বুদ্ধি) বা জ্ঞান (তিব্বতী. শে-পা, সংস্কৃত. জ্ঞান), পাঁচ ধরণের ইন্দ্রিয় চেতনার কথা উল্লেখ করে।

(১৭) সুখ (তিব্বতী. দে-বা, সংস্কৃত. সুখ)

(১৮) দুঃখ (তিব্বতী. দুগ-ঙাল, সংস্কৃত. দুঃখ)

(১৯) কোনও কিছুর জন্য আকাঙ্ক্ষা (তিব্বতী. দোয়ে-পা, সংস্কৃত. ইচ্ছা)

(২০) দ্বেষ (তিব্বতী. দাঙ-বা, সংস্কৃত. দ্বেষ)

(২১) প্রচেষ্টা বা যত্ন (তিব্বতী. বে-পা, সংস্কৃত. যত্ন)

(২২) সংস্কার (তিব্বতী. দুয়ে-জে, সংস্কৃত. সংস্কার), যার মধ্যে রয়েছে (ক) কায় (তিব্বতী. শুগ), যা পৃথিবী, জল, আগুনে একটি কায়িক চিত্তের কণা দ্বারা প্রয়োগ করা প্রচেষ্টা থেকে উৎপন্ন হয়,  এবং বায়ু কণা, (খ) অভ্যাস (বাগ-ছাগ), যা চেতনার একটি মুহূর্ত দ্বারা উৎপন্ন হয় এবং ভবিষ্যতের চেতনার একটি মুহূর্ত তৈরি করতে সক্ষম, এবং (গ) প্রত্যাবর্তন (তিব্বতী. নে-পা জিগ-পা), কোনও বস্তুকে তার পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা, যেমন একটি খোলা পাতা, যা আগে ভাঁজ করা হয়েছিল, স্বয়ংক্রিয়ভাবে আবার ভাঁজ হয়ে যায়।

(২৩) ধর্ম (তিব্বতী. ছোয়ে, সংস্কৃত. ধর্ম) যা অদৃশ্য ফলাফল হিসেবে সুখ উৎপন্ন করে।

(২৪) অধর্ম (তিব্বতী. ছোয়ে মা-য়িন-পা, সংস্কৃত. অধর্ম) যা অদৃশ্য ফলাফল হিসেবে দুঃখ উৎপন্ন করে।

তিব্বতী সূত্রে, শেষ দুটি গুণকে এক হিসাবে গণনা করা হয়, যাকে “অদৃশ্য” (সংস্কৃত. অদ্রষ্ট) বলা হয় - সুখ বা অদৃশ্য ফলাফল হিসেবে কর্মিক শক্তি। এরপর এটি তালিকায় উষ্মা (তিব্বতী. ডো-বা) যোগ করে।

আত্মা এবং তাদের নয়টি আনুষঙ্গিক গুণাবলী

একটি আত্মা বা ব্যক্তির সাথে আনুষঙ্গিকভাবে সমতুল্য নয়টি গুণাবলী হল:

(১) জ্ঞানেন্দ্রিয় বোধ

(২) সুখ

(৩) দুঃখ

(৪) তৃষ্ণা

(৫) বিতৃষ্ণা

(৬) যত্ন

(৭) সংস্কার, যেমন- অভ্যাস

(৮) এখনও অদৃশ্য সুখের ধর্ম

(৯) এখনও  অদৃশ্য দুঃখ হেতু ধর্ম

আত্মা একটি মৌলিক পদার্থ, যদিও অ-ভৌতিক। এটি এই নয়টি গুণের আনুষঙ্গিক অধিকারের সম্পর্কের ভিত্তি। এটি একটি বস্তুনিষ্ঠ সত্ত্বা যা কায় (বস্তুগত কণা দিয়ে তৈরি), ইন্দ্রিয় (রূপ, শব্দ, ইত্যাদি, যা ব্যুৎপন্ন বস্তুগত কণা দিয়ে তৈরি) এবং ভৌত মানস পরমাণু (চেতনা) থেকে আলাদা। স্বভাবতই, একজন আত্মা বা ব্যক্তির এই নয়টি বৈশিষ্ট্যের কোনওটিই থাকে না এবং মুক্তি লাভ হয় এই উপলব্ধি করে যে এটি সম্পূর্ণরূপে এই গুণগুলির থেকে আলাদা।

কারণ, স্বভাবতই, একটি আত্মার ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য সচেতনতা বা উপলব্ধির গুণ নেই, সে কেবল ভৌত মনের কণার মাধ্যমে বস্তুগুলিকে চেনে, যা ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য সচেতনতার একটি সাধন। সুতরাং, আত্মা মনের কণা থেকে পৃথক সত্ত্বা, পাশাপাশি কার্যকলাপ থেকে পৃথক সত্ত্বা; যদিও প্রচলিতভাবে, আত্মা বা ব্যক্তিরা সুখ এবং দুঃখের অভিজ্ঞতাকারী এবং কার্যকলাপের বাহক।

অসংখ্য আত্মা আছে, এবং প্রতিটিই অবিভাজ্য, শাশ্বত এবং স্থির, কোনও কিছুর দ্বারা প্রভাবিত হয় না। বৈশেষিক দর্শনের মতে, প্রতিটি আত্মা সর্বব্যাপী; যদিও ন্যায় দর্শনের মতে, প্রতিটি আত্মা একটি ক্ষুদ্র কণার আকার। কুন-খেন জাময়াঙ-ঝেপা (কুন-খ্যেন জাম-য়াঙ ঝে-পা ঙাগ-ওয়াঙ চোন-ডু) এর গ্রন্থ অনুসারে, যদিও ন্যায় দর্শন দাবি করে যে, যে আত্মার সাথে একটি কায়িক চিত্তের কণার আনুপাতিক সংযোগ বা বিচ্ছেদের সম্পর্ক রয়েছে, সে একটি কণার আকার; তবুও, ন্যায় দর্শন স্বীকার করে যে, সাধারণভাবে, প্রতিটি আত্মা সর্বব্যাপী।

আধ্যাত্মিক পথের লক্ষ্য হল মুক্তি অর্জন করা, যাকে “অপবর্গ” (সংস্কৃত. অপবর্গ) বলা হয়, এই উপলব্ধি করে যে, স্বভাবতই আত্মার নয়টি বৈশিষ্ট্য নেই এবং এটি শারীরিক মনের কণা (চেতনা) বা কার্যকলাপের সাথে সর্বদা যুক্ত নয়। অপবর্গ অবস্থায়, একজন আত্মা সুখ বা দুঃখ অনুভব করে না, কারণ এটি চেতনা ছাড়াই থাকে; এবং এটি কিছুই করে না। অপবর্গ অর্জনের পথের মধ্যে কেবল নিজের আত্মার প্রকৃতি উপলব্ধি করাই নয়, বরং নিজের আধ্যাত্মিক শিক্ষকের ঘরে বসবাস করে উপবাস, প্রক্ষালন এবং ব্রহ্মচর্য (তিব্বতী. ছাঙ-চোয়ে, সংস্কৃত. ব্রহ্মচর্য) এর মতো নীতিগত অনুশীলনও অন্তর্ভুক্ত।

পৃথক জীবন্ত আত্মা (সংস্কৃত. জীবাত্মা) এবং একক, সর্বোচ্চ, সর্বব্যাপী, অবিভাজ্য, শাশ্বত, স্থির আত্মা (সংস্কৃত. পরমাত্মা) উভয়ই রয়েছে, যা স্রষ্টা ঈশ্বর (শিব)।  যদিও কণাদ এবং গৌতমের দুটি সম্প্রদায়ের প্রাচীনতম গ্রন্থে ঈশ্বরের উল্লেখ নেই, তবুও প্রশস্তপদ এবং বাৎস্যায়ন তাদের ভাষ্যগুলিতে তাঁর কথা আলোচনা করেছেন। ঈশ্বরের যোগ সূত্রের বিপরীতে, ন্যায় এবং বৈশেষিকের মতে, মহাবিশ্বে যা কিছু ঘটে তা ঈশ্বরের ইচ্ছা থেকে উদ্ভূত।

পাঁচ ধরণের কার্যকলাপ

পাঁচ ধরণের কার্যকলাপ হল:

(১) উপরে তোলা (তিব্বতী. দেগ-পা)

(২) নিচে রাখা (তিব্বতী. জোগ-পা)

(৩) সংকোচন (তিব্বতী. ক্যাঙ-পা)

(৪) সম্প্রসারণ (তিব্বতী. কুম-পা)

(৫) যাওয়া (তিব্বতী. ডো-বা)।

জাতিগত বৈশিষ্ট্য

জাতিগত বৈশিষ্ট্য হল সেই বৈশিষ্ট্য যার মাধ্যমে কেউ সনাক্ত করতে পারে যে, একটি বিশিষ্ট বস্তু একটি সাধারণ বিভাগের অন্তর্গত। এগুলি কেবল ধারণাগতভাবে জানা যেতে পারে এবং তা হল এই বিভাগগুলির অন্তর্গত এবং প্রতিটি বিশিষ্ট বস্তুতে একই রকমের বিশিষ্ট বস্তুগুলিকে জানার মাধ্যমে। বিশিষ্ট বস্তু হল জাতিগত বৈশিষ্ট্যগুলির সূচক বা প্রকাশক (সংস্কৃত. ব্যঞ্জক)।

জাতিগত বৈশিষ্ট্য দুই প্রকার:

(১) সর্বব্যাপী জাতিগত বৈশিষ্ট্য (তিব্বতী. খ্যাব-পা’ই চি, সংস্কৃত. সর্বসর্বগত)। এটি জাতিগত বৈশিষ্ট্য বস্তুনিষ্ঠ অস্তিত্ব (য়ো-পা-ন্যি) কে বোঝায়। সাত ধরণের সত্ত্বার মধ্যে এটি কেবল মৌলিক বস্তু, গুণাবলী এবং কার্যকলাপের সাথে সম্পর্কিত। এটি জাতিগত বৈশিষ্ট্য, স্বতন্ত্র চরিত্র, সহজাত সম্পর্ক বা অস্তিত্বের ধরণের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। সাত ধরণের সত্ত্বার এই দ্বিগুণ বিভাজন বৌদ্ধ সৌত্রান্তিক বস্তুনিষ্ঠ সত্ত্বা (তিব্বতী. রাঙ-ছে়ন) এবং অধিবিদ্যাগত সত্ত্বা (তিব্বতী. চি ছে়ন) এর বিভাজনের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। ন্যায়-বৈশেশিক এবং সৌত্রান্তিক উভয় ক্ষেত্রেই, উভয় গোষ্ঠীর ধর্মের অস্তিত্ব সত্যিকার অর্থে প্রতিষ্ঠিত, যদিও কেবল প্রথম গোষ্ঠীটি বস্তুনিষ্ঠভাবে “বাস্তব”।

২। ব্যক্তি সর্বগত (তিব্বতী. ন্যে-ছে বা-ই-চি, সংস্কৃত. ব্যক্তিসর্বগত)। এগুলি শুধুমাত্র কিছু আইটেমের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, যেমন “টেবিল” এর ব্যক্তি সর্বগত যা শুধুমাত্র সমস্ত টেবিলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য

ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্যগুলি হল ধারণাগত জ্ঞান দ্বারা উপলব্ধি করা যা দুটি স্বতন্ত্র বা স্বতন্ত্র বস্তুকে উপলব্ধি করার সময় বোঝা যায় যা অন্যথায় একই রকম হতে পারে, হয় বস্তুনিষ্ঠভাবে অস্তিত্বশীল হওয়ার সর্বব্যাপী জাতিগত বৈশিষ্ট্যের পরিপ্রেক্ষিতে (যেমন একটি ফুলদানি এবং একটি স্তম্ভ সহ) অথবা একটি ব্যক্তি সর্বগতের পরিপ্রেক্ষিতে, উদাহরণস্বরূপ, একটি টেবিল (যেমন দুটি টেবিল সহ)।

পাঁচ ধরণের অন্তর্নিহিত, অপরিবর্তনীয় সম্পর্ক

পাঁচ ধরণের অন্তর্নিহিত, অপরিবর্তনীয় সম্পর্ক রয়েছে: এর মধ্যে সম্পর্ক:

(১) মৌলিক পদার্থ (আত্মা ব্যতীত) এবং তাদের গুণাবলী: আত্মা ব্যতীত অন্যান্য মৌলিক পদার্থ হল তাদের গুণাবলীর জন্য স্তর (সংস্কৃত. আশ্রয়)

(২) মৌলিক পদার্থ (আত্মা ব্যতীত) এবং তাদের কার্যকলাপ: আত্মা ব্যতীত অন্যান্য মৌলিক পদার্থ হল তাদের কার্যকলাপগুলির জন্য স্তর সমর্থন

(৩) বিশেষ বস্তু এবং শ্রেণী বিভাগ

(৪) পরম পদার্থ (অর্থাৎ পৃথিবী, জল, আগুন, বায়ু এবং কায়িক চিত্তের অবিভাজ্য কণা) এবং তাদের আনুষঙ্গিক সমষ্টি দ্বারা তৈরি বিশেষ জিনিস

(৫) একটি সম্পূর্ণ এবং এর অংশগুলি, যেমন একটি কায় এবং তার অঙ্গ, অথবা অন্তর্নিহিতভাবে স্থায়ী বস্তুগত কারণ এবং তাদের পণ্য, যেমন কাদামাটি এবং এটি দিয়ে তৈরি একটি মাটির পাত্র।

এই পাঁচটি জোড়া সর্বদা একত্রিত হয়।

চার প্রকারের অভাব

চার প্রকারের অভাব রয়েছে:

(১) প্রজ্ঞাভাব (সংস্কৃত. প্রজ্ঞাভাব) - উদাহরণস্বরূপ একটি ফুলদানি তৈরির আগে তার অস্তিত্বহীনতা

(২) প্রধ্বাংসভাব অনস্তিত্ব (সংস্কৃত. প্রধ্বাংসভাব) - উদাহরণস্বরূপ একটি ফুলদানি ধ্বংস হওয়ার পরে তার অস্তিত্বহীনতা

(৩) অন্যোন্যাভাব (সংস্কৃত. অন্যোন্যাভাব) - পারস্পরিক বর্জন, যেমন একটি ফুলদানি একটি স্তম্ভ এবং একটি স্তম্ভ একটি ফুলদানি হওয়ার অস্তিত্বহীনতা।

(৪) অত্যন্তাভাব (সংস্কৃত. অত্যন্তাভাব) - এমন কিছুর পরম অনস্তিত্ব যা কখনও ছিল না, কখনও হবে না এবং কখনও বর্তমানে বিদ্যমান থাকতে পারে না। কিছু ব্যাখ্যা অনুসারে, এই ধরণের অনস্তিত্ব বলতে কোনও বস্তুর বর্তমান অবস্থান ব্যতীত অন্য কোনও স্থানে সম্পূর্ণ অনুপস্থিতি বোঝায়।

Top