আমরা দেখেছি ধ্যান একটি ত্রি-গুণ প্রক্রিয়ার অংশ যা শিক্ষার শ্রবণ, তার সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা এবং তার উপর ধ্যান করাকে অনিবার্য করে তোলে। ধ্যান অর্থাৎ এই তৃতীয় পদক্ষেপটি হ’ল- আসলে শিক্ষা গুলিকে আমরা কীভাবে আমাদের জীবনে একীভূত করে তুলি যা পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে ঘটে। আমরা মূলতঃ মনের ইতিবাচক অবস্থা গড়ে তুলি যেটা আমরা পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে অর্জন করতে চাই, যাতে এটি একটি অভ্যাসে পরিণত হয়।
আমরা শিক্ষা গুলি শ্রবণ করি এবং সেগুলি থেকে প্রভেদমূলক সচেতনতা লাভ করি, যার দ্বারা আমরা প্রভেদ করতে পারি, “হ্যাঁ, এটি বুদ্ধের শিক্ষা” এবং এটার সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে উঠতে পারি। আমরা আরও দেখেছি যে, আমরা শিক্ষার সাথে আনুমানিক ভাবে সম্বন্ধস্থাপন করি; আমরা সমস্ত শিক্ষাগুলি নেহাৎ বুঝতে পারি না, তবে কমপক্ষে আমাদের অনুপ্রেরণা এবং আগ্রহের কারণে প্রমাণ না করা পর্যন্ত, আমরা সেগুলি সত্য বলে অনুমান করি। আমরা যদি কোন কিছু দেখি যে, সেটা সত্য নয় তাহলে আমরা তখন সেটা ভুলে যেতে পারি। তবে কোন কিছুকে কমপক্ষে সত্য অনুমান করার জন্য এটা বাস্তবে সেরকম কিনা সেটা পরীক্ষা ক’রে দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য একটা উদার চিত্তের প্রয়োজন। এর সাথে ভিটামিন-এর মতো এর লাভটাকেও অনুমান করতে হবে। “এটি সত্যিই আমাকে মেরে ফেলবে কিনা তা পরীক্ষা ক’রে দেখি”, এই ভেবে আপনি বিষ সেবন করবেন না, কিন্তু ভিটামিনের ব্যাপারে আপনি এটা করেন। সুতরাং আমরা অনুমান করি যে এটা উপকারী, কারণ অনেক লোকে বলে তাই আমরা চেষ্টা করতে পারি এবং নিজেদের জন্য দেখতে পারি।
আমরা যখন শিক্ষা গুলিকে নিয়ে ভাবি, তখন আমরা একটি প্রক্রিয়ার শেষ দিকে পৌঁছানোর জন্য তাদের পরীক্ষা করি যা প্রভেদমূলক সচেতনতা রূপে পরিচিত এবং সেটার উদয় হয় ভাবনা থেকে। এটা আমরা এইখানেই সম্পূর্ণ ভাবে নিশ্চিত হই যে, আমরা বুদ্ধের শিক্ষাকে বুঝতে পেরেছি যা বুদ্ধ শিখিয়েছিলেন তা সত্য। প্রকৃতপক্ষে এতে লাভ আছে এবং আমরা যা অর্জন করতে চাই তা আসলে অর্জন করা সম্ভব। যখন মানুষ উপরোক্ত পদক্ষেপ গুলি ত্যাগ করে, যেমন অনেকে ক’রে থাকে, কিছুক্ষণ পরে শেষ করে দেয় অন্যের কথায় “দ্বিধাহীন দোলাচল” উৎপন্ন হওয়ার ফলে। সেখানে তারা নিশ্চিত করতে পারে না যদি এগুলি সত্যিই সম্ভব হয়ও। ফলতঃ তারা হাল ছেড়ে দেয়।
মুক্তি কী?
আমরা যখন মুক্তি বা বোধি সম্পর্কে এবং তাদের লাভ করার পদ্ধতি সম্পর্কে অধ্যয়ন করি, তখন আমাদের সত্যিই সঠিকভাবে বুঝতে হবে যে, মুক্ত হওয়ার প্রকৃত অর্থ কী, এবং বোধদয়ে পরিণত হওয়া বলতে কী বোঝায়? এবং তারপরে কী ঘটে? শিক্ষাগুলিতে বলে যে, বুদ্ধ হলেন সর্বজ্ঞ যিনি একই সময়ে সবকিছুই সম্পূর্ণ এবং সঠিক জানতে পারেন। বুদ্ধের মধ্যে প্রত্যেকের জন্য সমান উদ্বেগও আছে এবং তাদের প্রত্যেকের সাথে নিখুঁত যোগাযোগ করতে সক্ষম। সুতরাং বুদ্ধ যে কোন উপায়ে প্রত্যেককে সর্বোত্তম ভাবে সহায়তা করে।
এটা কি সম্ভব, নাকি এটা কেবল একটি রূপকথার গল্প? যদি আমরা মনে করি এটা হাস্যকর, তবে আমরা কেন এটা লাভ করার চেষ্টা করছি? যদি আমরা মনে করি যে, এটি একটি রূপকথার গল্প, তাহলে আমরা নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করব না যে, এটা লাভ করা সম্ভব। আমাদের সমালোচনামূলক ভাবে দেখতে হবে বৌদ্ধধর্মে আলোচিত লক্ষ্য গুলি এবং পরীক্ষা করতে হবে আমাদের নিজস্ব অনুপ্রেরণা।
আমাদের লক্ষ্য কী?
বৌদ্ধ ধর্মে “অনুপ্রেরণা” শব্দটির একটি খুব নির্দিষ্ট অর্থ রয়েছে। আমরা প্রায়ই বলি, “আপনার অনুপ্রেরণাকে পুনরায় নিশ্চিত করুন বা বিকশিত করুন” যার দুটি অংশ রয়েছে। একটি লক্ষ্য হ’ল- উদ্দেশ্য অর্থাৎ যে লক্ষ্যটি আমাদের রয়েছে, আর অন্যটি, এর পিছনে বিদ্যমান আবেগ বা অনুভূতি যা আমাদের সেই লক্ষ্য লাভের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। সাধারণতঃ ইংরেজিতে, “অনুপ্রেরণা” শব্দের সংজ্ঞা মূলতঃ দ্বিতীয় অংশটিতে রয়েছে, অর্থাৎ আবেগ যা আমাদের কোন কিছু করতে চালিত করে।
আমি মনে করি আমাদের মধ্যে অনেকে বৌদ্ধ শিক্ষা গুলি, “ধর্ম” অনুশীলন করছে। আমরা যদি আন্তরিক হই, তাহলে আমরা দেখতে পাই যে, আমাদের লক্ষ্য সত্যিই আমাদের জীবনকে শুধু কিছুটা হলেও সহজ এবং আরও আনন্দিত করে তোলে। এবং এটা ভাল- আমি এটাকে “ধর্ম লাইট” বলি “রিয়েল থিং ধর্ম”-এর পরিবর্তে। এটি হ’ল প্রথম পদক্ষেপ। আসলে বিষয়টা হ’ল- আরও ভালো পুনর্জন্মের জন্য কাজ করা। এর অর্থ হচ্ছে মূলতঃ জন্ম-জন্মান্তর পর্যন্ত নিয়মিত ভাবে মূল্যবান মানুষের পুনর্জন্ম প্রাপ্ত করা। তবে আপনি যদি পুনর্জন্মে বিশ্বাস না করেন, তাহলে আপনি কীভাবে ভালো পুনর্জন্মের জন্য আন্তরিকতার সাথে লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারবেন? পুনর্জন্মকে বোঝার জন্য, আমাদের বুঝতে হবে কিসের পুনর্জন্ম হয়, চিত্ত-সন্ততির স্বভাবটা কী, আত্মার স্বভাব কী ইত্যাদি। আসলে একটি ভালো পুনর্জন্মের লক্ষ্য বিশেষভাবে বৌদ্ধ বিচার নয়। খ্রিস্টান এবং অন্যান্য ধর্মও এর লক্ষ্য নির্ধারণ করে থাকে; খ্রিস্টান ধর্মের ক্ষেত্রে, এটি হ’ল স্বর্গে পুনর্জন্ম।
পরবর্তী লক্ষ্যটি হবে অনিয়ন্ত্রিত পুনরাবৃত্ত পুনর্জন্ম থেকে মুক্তি লাভ। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরাও এটাকেই লক্ষ্য নির্ধারণ করে। তাই আমাদের বুঝতে হবে যে, বৌদ্ধধর্মে মুক্তির বাস্তবিক অর্থ কী এবং এটি লাভ করার পদ্ধতি গুলি কী কী। তারপর, অবশ্যই চূড়ান্ত লক্ষ্যটি হ’ল বুদ্ধের জ্ঞানোদয় অবস্থা প্রাপ্ত করার লক্ষ্য- এটির বৌদ্ধধর্মের পক্ষে অনন্য।
ক্রমবদ্ধ প্রগতি
আমরা যখন বৌদ্ধ শিক্ষার উপর নজর দিই; তখন আমরা দেখতে পাই যে, সেগুলি পর্যায়ক্রমে রয়েছে। একটা বিষয়ের উপর জ্ঞান প্রাপ্ত করার পর অন্যটি আসে, এবং এটাকে সম্মান জানানো গুরুত্বপূর্ণ, কারণ আমরা যদি এর কোনও আধার ছাড়া শুধু এই বলি যে, “আমি বুদ্ধ হয়ে উঠতে চাই, যাতে আমি সমস্ত সত্ত্বের সহায়তা করতে পারি।” তবে এটি কেবল অর্থহীন কথা হবে। আমরা কি জগতের সকল পোকামাকড়কে মুক্ত করার এবং বোধি লাভ করানোর জন্য লক্ষ্যবদ্ধ হয়ে আছি? সম্ভবতঃ না। এত বড় লক্ষ্য নির্ধারণ করার এবং সেটা কার্যকর করার জন্য একটি অকল্পনীয় মনের লক্ষ্যের প্রয়োজন, এবং এটিকে ধীরে-ধীরে আমাদের নির্মাণ করতে হবে। এরকম করার জন্য আমরা প্রত্যেক শিক্ষাকে কোনও পদ্ধতি দ্বারা পরীক্ষা করতে হবে, যে পদ্ধতিকে “চার যুক্তি” হিসাবে অনুবাদ করি। এটা হ’ল কোনও কিছুকে পরীক্ষা করার জন্য চার দৃষ্টিকোণ এবং এটা আমরা ধর্মের মূল সিদ্ধান্ত দিয়ে শুরু করি।
উদাহরণ স্বরূপ, চারটি যুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে, আসুন আমরা মৃত্যু এবং অনিত্যতার বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করি এবং ধ্যান করি। আমি সম্ভবতঃ এটি কিছুটা স্বার্থপরতার কারণে বেছে নিচ্ছি, কারণ গত সপ্তাহে আমার নিকটতম বন্ধুটি মারা গিয়েছিল। যাই হোক এই চারটি যুক্তি হলঃ-
- অপেক্ষা-যুক্তি- আমরা মনের যে অবস্থা বিকশিত করতে চাই, অর্থাৎ মৃত্যুর সচেতনতা, সেটা কার উপর নির্ভর করে?
- কার্যকারণ-যুক্তি- যদি আমরা মনের এই অবস্থা অর্জন করি, তবে এটি কী করে এবং এর লাভ ও অসুবিধা গুলি কী কী?
- প্রমাণ-যুক্তি (উপপত্তি-যুক্তি)- যদি আমরা শিক্ষাটি সত্য কিনা তা নির্ধারনের জন্য পরীক্ষা করে দেখি, তবে এটি কী বুদ্ধের বাকি শিক্ষার সাথে খাপ খায়? এটা কী যৌক্তিক? আমরা যখন এটি চেষ্টা করে দেখি, এটি কী তাঁর বর্ণিত প্রভাব উৎপন্ন করে?
- ধর্মতা-যুক্তি- মৃত্যু কী বস্তু স্বভাবের উদাহরণ? প্রত্যেক জীবেরই কী মৃত্যু হয়?
আমরা নির্দিষ্ট শিক্ষা গ্রহণ করার জন্য যা করি সেটা হ’ল মৃত্যুর মতো একট নির্দিষ্ট শিক্ষা গ্রহণ করা এবং সেটাকে এই চারটি যুক্তির দৃষ্টিকোণ দ্বারা বিশ্লেষণ করা, এবং তার জন্য আমাদের যতটা প্রয়োজন সময় ব্যয় করা। এমন কোন সূত্র নেই, যে বলে দেবে এটার জন্য তোমাকে দশ মিনিট এবং ওটার জন্য কুড়ি মিনিট সময় ব্যয় করতে হবে। কিন্তু এটা খুব তাড়াতাড়ি না করাই ভাল, কারণ তখন আপনি প্রায়শই যে বিষয়টির উপর মনোনিবেশ করছেন, তার কোনও অর্থই থাকবে না। ভাল এটাই যে, এই বিষয়টিকে বুঝতে সময় দেওয়া যাক এবং বাস্তবে এটিকে বিকশিত করার প্রয়াস করা যাক।
একটি সম্পূর্ণ বোধ অর্জন করা
মূলতঃ আমরা নিশ্চিত হয়ে উঠতে চাই যে, আমরা বিষয়টি এমনভাবে জেনে যাই যে, সেখান থেকে আমরা আর পিছনে ফিরে যাই না এবং জিনিস গুলি বিষয়ে সংশয় রাখি না। এই কারণে তিব্বতীদের শাস্ত্রার্থ শিক্ষা পদ্ধতি রয়েছে, যা আমাদের বোধগম্যতার বিষয়ে প্রশ্ন করতে বাধ্য করে। প্রত্যেককে এটি করতে হয়- এটা এমন নয় যে, আপনি ক্লাসের পিছনে চুপচাপ বসে থাকবেন। একজন ব্যক্তি কিছু কথা বলবে এবং প্রতিপক্ষকে তা গ্রহণ বা প্রত্যাখ্যান করতে হবে। এই সবকিছুর মূল বিষয় হ’ল শুধু সঠিক উত্তর খুঁজে বের করা নয়, বরং একটি বিষয় সম্পর্কে বোঝার বিষয়ে আমাদের নিশ্চিত হওয়া। এটি একটি দুর্দান্ত পদ্ধতি, কারণ অন্য লোকেরা আমাদের চিন্তা-ভাবনাকে আমাদের চেয়ে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জ জানাবে। শাস্ত্রার্থ চলাকালীন, প্রায়ই প্রচুর পরিমাণে শক্তি প্রবাহ হতে থাকে, কারণ লোকেরা এটিকে খুব মজাদার মনে করে এবং যখন তারা নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে তখন প্রচুর হাসি পায়। তবে এ সবকিছু বন্ধুত্বপূর্ণ ভাবে করা হয় এবং প্রত্যেকে এটি উপভোগ করে।
এই কৌশল শেখার আর একটি লাভ হল আপনি যেই হোন না কেন, একসময় আপনি নিজের কথারই বিরোধিতা করবেন এবং বোকার মতো কিছু বলে ফেলবেন, যা অহংকার এবং গর্ব কম করার জন্য ভালো। এটিও লাজুকতা কাটিয়ে তোলে- আপনি সলজ্জ ভাবে শাস্ত্রার্থ করার জন্য শাস্ত্রার্থ সভায় উঠে দাঁড়াতে লজ্জা বোধ করবেন না।
আমাদেরও এটা বলে শাস্ত্রার্থকে উড়িয়ে দেওয়া উচিত নয় যে, “ওহ, এটা তো বুদ্ধিজীবীদের কাজ, আমি তো স্বতঃস্ফুর্ত প্রাণী হতে চাই এবং তার আধারে ধ্যান-সাধনা করতে চাই”। শাস্ত্রার্থ আপনাকে ধ্যান করতে সাহায্য করে, যা এর সম্পূর্ণ উদ্দেশ্য। শাস্ত্রার্থ করার পরে, আপনার আর সন্দেহ থাকে না এবং আপনি আপনার বোঝার বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে ওঠেন এবং তারপরে এই অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন আত্মবিশ্বাসের সাথে একাগ্র হয়ে ধ্যান করতে পারেন। অন্যথা আপনার ধ্যানটি দৃঢ় হয় না। অবশ্যই আপনি এখানে একে-অপরের সাথে আনুষ্ঠানিক ভাবে শাস্ত্রার্থ নাও করতে পারেন, তবে শিক্ষাগুলি নিয়ে অহংকার বা উদ্ধত না হয়ে এবং রক্ষণাত্মক না হয়ে, আর এটা ভেবে যে, অন্য ব্যক্তিটি আমাকে ব্যক্তিগত ভাবে আক্রমণ করছেন, শিক্ষার ব্যাপারে চর্চা করা খুবই ভাল।
আরও দুটি প্রযুক্তিগত বৌদ্ধ অভিব্যক্তি হ’ল, “একটি তথ্যকে সত্য বলে বিশ্বাস করা” এবং “দৃঢ় বিশ্বাস”। আমরা কিছু অসত্যকে সত্য বলে বিশ্বাস করতে পারি, তাই আমাদের শিক্ষাকে পরীক্ষা করার সময় সতর্ক থাকতে হবে, যাতে আমরা সঠিক বোধ অর্জন না করেই এই সিদ্ধান্তে পৌঁছে যাই যে, আমরা সঠিক বোধ অর্জন করে ফেলেছি। দৃঢ় বিশ্বাস তখনই হয় যখন আমরা নিশ্চিত হয়ে যাই যে, একেবারে কোন কিছুই আমাদের বিশ্বাসকে বিভ্রান্ত করতে পারবে না, যা আমাদের সত্যই বিকাশ করা দরকার।
চালু রাখা
এই সমস্ত কিছু হঠকারিতা এবং মোহ-এর মধ্যে বিকৃত হয়ে উঠতে পারে। আমাদের একটি ভুল বোধগম্য আছে এবং আমরা এমন একগুঁয়ে হয়ে যাই যে, কেউ আমাদের সংশোধন করতে পারে না- এটি কখনো কখনো “মিথ্যা দৃষ্টি” হিসেবে অনুবাদ করা হয়। আমরা ভুল কিছু ধরে রাখি এবং এটি সম্পর্ক এতটা একগুঁয়ে হয়ে যাই যে, কেউ আলাদা কিছু বলার চেষ্টা করলে আমরা বিরূপ ভাবে তাকে আক্রমণ করব।
বুদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আরও বেশী ক’রে চেষ্টা করতে হবে এবং জিনিস গুলিকে আরও গভীর ভাবে বুঝতে হবে। সুতরাং আমাদের সর্বদা বলা হয়, “আপনার বোধগম্য, আপনার লব্ধি বা কৃতিত্বের স্তর নিয়ে কখনো সন্তুষ্ট হবেন না, কারণ যতক্ষণ আপনি বুদ্ধ না হচ্ছেন, ততক্ষণ আপনি বিষয় গুলিকে আরও গভীরভাবে জানতে পারবেন এবং সর্বদা আরও উচ্চতর স্তর লাভ করতে পারবেন।” সুতরাং যদিও আমাদের মধ্যে সঠিক বোধগম্যতা থাকে, তবুও এটি গভীরতম বোধগম্যতা নাও হতে পারে। পরম পূজ্য দালাই লামার অন্যতম শিক্ষক ঠিজং রিনপোচে বলতেন, “আমি চোংখাপা দ্বারা রচিত লম-রিম-ছেন-মো একশো বার পড়েছি (মহামার্গক্রম নামক এক আধারভূত বৃহৎ গ্রন্থ) এবং যতবার আমি এটি পড়েছি, আমি একটা আলাদা এবং গভীর বোধগম্যতা অর্জন করেছি।” এটি একটি খুব ভাল উদাহরণ, যা দেখায় যে, কীভাবে শুরুতেই সঠিক জ্ঞান অর্জন করার পরেও আমাদের এই বিষয়টিকে আরও অধিক গভীর ভাবে বুঝতে প্রয়াস করতে হবে।
মৃত্যু-ধ্যান (মৃত্যু সম্বন্ধীয় ধ্যান-সাধনা)
এখন আমরা চারটি বিষয়কে মৃত্যু সম্বন্ধীয় ধ্যান-সাধনার দৃষ্টিতে দেখব, যাতে আমরা জানতে পারি যে, এর আশয় কী এবং একে কীভাবে প্রয়োগ করা হয়। অবশ্যই আমরা এটা মৃত্যু এবং মৃত্যু সম্বন্ধীয় ধ্যান-সাধনার বিষয়ে শিক্ষা গ্রহণ করার পরেই করতে পারব। যখন আমরা মৃত্যুর বিষয়ে বিচার করি, তখন আমরা তিনটি মূল বিষয়ের উপর মনোনিবেশ করি।
- মৃত্যু হ’ল অবশ্যম্ভাবী।
- মৃত্যুর সময় হ’ল অনিশ্চিত।
- মৃত্যুর সময় ধর্ম ছাড়া আর কিছুই সহায়ক হবে না।
আমাদের সকলেরই মৃত্যু নিশ্চিত। সেটা অবশ্যম্ভাবী- আমার, আপনার, আমাদের সকল ব্যক্তিগত ভাবে পরিচিত জনের, এবং অন্য সকল মানুষের মৃত্যু হবেই। আমাদের কোনো ধারণাও নেই যে, মৃত্যু কখন আমাদের আঘাত করবে এবং যখন আমাদের মৃত্যু হবে, তখন আমরা যে ইতিবাচক অভ্যাস গুলি তৈরি করেছি এবং আমাদের চিত্ত-সন্ততির একটি অংশ তৈরি করে নিয়েছি সেগুলি ছাড়া আর কোন কিছুই আমাদের সাহায্য করবে না।
মৃত্যু হ’ল অবশ্যম্ভাবী, তবে সেটি কিসের উপর নির্ভর করে (অপেক্ষা-যুক্তি)? এটা আমরা বিভিন্ন স্তরে বিশ্লেষণ করতে পারি। প্রথমতঃ মৃত্যু জীবনের উপর নির্ভর করে। বেঁচে না থাকলে, আপনি মরতে পারেন না। দিন-প্রতিদিন আমরা বয়স্ক হয়ে চলেছি এবং আমাদের শরীর, যেগুলি শুরুতে খুবই শক্তিশালী ছিল, দুর্বল হতে চলেছে। এরকম ভাবেই মৃত্যু শরীরের উপর নির্ভর করে যা রোগগ্রস্থ হতে পারে, গাড়ি ধাক্কা মারতে পারে এবং আরো অনেক কিছু হতে পারে।
মৃত্যুর বিষয়ে চিন্তা করা কেন আবশ্যক?
মৃত্যু সম্বন্ধীয় ধ্যান-সাধনা করার পূর্বে অপেক্ষা-যুক্তির দৃষ্টিতে গভীর স্তরে আমাদের আশ্চর্যজনক, বহুমূল্য মানব জীবনকে বোঝা আবশ্যক। মৃত্যুর সচেতনতা আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করে মূল্যবান মানব জীবনের সুবিধা গ্রহণের জন্য। আমরা যদি জীবন এবং নিজের উপর কাজ করার সুযোগের প্রশংসা না করি, তাহলে আমরা আমাদের জীবনকে হারানোর বিষয়ে সত্যিই এতটা চিন্তা করবো না। কারণ বেশিরভাগ মানুষ এই কথাটির গুরুত্ব বোঝে না যে, “আমি জীবিত আছি এবং আমি নিজের শরীর আর মনের প্রয়োগ কিছু ইতিবাচক উদ্দেশ্য লাভ করার জন্য করতে পারি।” এই কারণে তারা তাদের জীবন অপচয় করে ফেলে। সুতরাং মৃত্যুর সচেতনতা আসলে জীবনের সচেতনতার উপর নির্ভর করে।
আমরা এটা বুঝতে পারি যে, আমরা এই বহুমূল্য মানব জীবন পেয়েছি এবং আমরা সেই খারাপ পরিস্থিতি গুলি থেকে মুক্ত যা আমাদেরকে জীবিত থাকার সুবিধা গ্রহণ করতে সক্ষম হওয়ার থেকে সত্যিই বাধা দেয়। আমরা একটি আরশোলা হয়ে জন্মায়নি যাকে যে কেউ দেখলেই পা দিয়ে পিষে দিতে চায়। আমরা ছোট মাছ হিসাবে জন্মায়নি যা বড় মাছ দ্বারা জীবিত খেয়ে নেওয়া হয়। আমরা মাছি হিসাবেও জন্মায়নি। এই বিষয়ে চিন্তা করে দেখুন, আমরা যদি মাছি হয়ে জন্মাতাম তাহলে আমরা কী করতে পারতাম বা কী অর্জন করতে পারতাম? খুব বেশি নয়, আমরা মল এবং আবর্জনার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে আমাদের পুরো জীবনটা কাটিয়ে দিতাম!
সুতরাং মৃত্যুর বিষয়ে সচেতন হওয়ার উদ্দেশ্য (কার্যকারণ-যুক্তি) কেবল হতাশ হওয়া নয়, “ওহ, কত ভয়াবহ! আমি অবশ্যই মরতে চলেছি!” এটাই আলোচ্য বিষয় নয়। কাজটি হ’ল- আমাদের এখন যে মূল্যবান সময় রয়েছে তার সুবিধা গ্রহণ করতে আমাদের তৈরি হতে হবে, কারণ আমরা সত্যিই জানি না যে, কখন সময় শেষ হয়ে যাবে। যেমন গত সপ্তাহে আমার বন্ধুর সাথে ঘটেছিল, যে পুরোপুরি সুস্থ ছিল এবং তার বয়সও বেশী ছিল না। সে ধূমপান করত না বা মদ্যপানও করত না, তার উচ্চ রক্তচাপের সমস্যাও ছিল না, সে প্রচুর ব্যায়াম করত, সে ছিল গভীর ধ্যান-সাধনাকারী এবং অনুশীলনকারী। এবং গত সপ্তাহের এক সকালে, সে শাওয়ার-এ স্নান করছিল, সেখানেই হার্ট অ্যাটাক হয় এবং পড়ে গিয়ে তাঁর মৃত্যু হয়ে যায়। এরকমই হয়।
আমরা কখন এই মূল্যবান জীবন হারাবো তার কোন নিশ্চয়তা নেই এবং মৃত্যু সাধারণতঃ বেশ অপ্রত্যাশিত ভাবেই উপস্থিত হয়। মৃত্যুর জন্য আপনার বৃদ্ধ হওয়ার দরকার নেই এবং অসুস্থ হওয়ারও দরকার নেই। সুতরাং মৃত্যু সম্পর্কে সচেতন হওয়ার মূল উদ্দেশ্য হ’ল অলসতা এবং গড়িমসিকে কাটিয়ে ওঠা এবং কাল করার জন্য ফেলে রাখার প্রবৃত্তি থেকে মুক্ত হওয়া। আমার বন্ধু অ্যালান, যে মারা গিয়েছিল, একটি ভাল উদাহরণ। তার মা হলেন খুব বৃদ্ধা এবং শরীরও ভালো থাকত না, এবং সে সত্যিই তাকে শারীরিক ও আর্থিক ভাবে সাহায্য করতে চেয়েছিলেন। তাই তিনি সপ্তাহের শেষে তার সেবা-যত্ন করার জন্য যেতেন আর তার জন্য কেনাকাটা এবং আরো অনেক কিছু করতেন। তিনি সবসময় বলতেন যে, তার মা মারা যাওয়ার সাথে-সাথে তিনি কাজ থেকে অবসর নেবেন এবং শুদ্ধির জন্য প্রথমে এক বছর বজ্রসত্ত্ব সাধনা করবেন এবং তারপর আরও কিছুটা সময় একান্ত সাধনা করবেন। এটাই ছিল তাঁর উদ্দেশ্য।
আমি যেমন বলেছি, তিনি অত্যন্ত গভীর অনুশীলনকারী ছিলেন, কিন্তু তিনি কখনোই একান্তবাসে ধ্যান করেননি, কারণ তিনি তার মায়ের সাহায্য ও সরবরাহের জন্য উপলব্ধ থাকতে চেয়েছিলেন, তাই তাকে কাজ করতে হয়েছিল। তাহলে কি মাকে সাহায্য করার জন্য তার কাজ চালিয়ে যাওয়া উচিত ছিল নাকি সুযোগ পেলেই একান্তবাসের জন্য যাওয়া উচিত ছিল, এবং অন্য লোককে তার মায়ের দেখাশোনা করার ভার দেওয়া উচিত ছিল? এই পরিস্থিতিতে ধর্ম আমাদের কী করতে নির্দেশ দেবে? মৃত্যু বিষয়ে শিক্ষা আমাদের কী করার তাগিদ দেবে? এটা চিন্তা করা ভালো, যদি আমরা এই পরিস্থিতিতে থাকতাম, তাহলে কী করতাম?
একটি ধারণা হ’ল সংক্ষিপ্ত একান্তবাসের জন্য যাওয়া এবং একই সাথে মাকে সাহায্য করা। একান্তবাসটি পুরো সময়ে করার দরকার নেই-আমরা একটি সকালের অধিবেশন করতে পারি এবং একটি সন্ধ্যা অধিবেশন করতে পারি এবং দিনের বাকী সময় আমাদের যা প্রয়োজনীয় কাজ সেটা করতে পারি। একান্তবাস করা ভালো, তবে শিক্ষাগুলি সর্বদা বলে যে, সমস্ত প্রাণীর বিশেষতঃ আমাদের মা, যিনি আমাদের জীবন দিয়েছেন তার ঋণ পরিশোধ করা গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যখন আপনার বাবা মাকে যত্ন করবেন, কোনরকম বিরক্তি ছাড়াই, “আমি আশা করি তারা ইতিমধ্যে মারা যাবেন কারণ আমি আমার কাজকে ঘৃণা করি এবং আমি অবসর নিতে চাই,” তাহলে আপনি বিপুল পরিমাণে ইতিবাচক সম্ভাবনা তৈরি করেন। যদি আমাদের বাবা মাকে দেখাশোনা করার চিন্তা দরকার না হয়, তবে অবশ্যই আমাদের জীবনের অবসর সময়ের যতটা সম্ভব সুবিধা নেওয়ার দরকার ততটা নেব।
প্রায়শই তিব্বতী লামারা পাশ্চাত্য ধর্ম-শিক্ষার্থীদের খুব গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করে না, কারণ আমাদের মধ্যে অনেকেরই ধর্মের প্রতি উৎসর্গ এবং প্রতিবদ্ধতা আর তার সাথে তার বাস্তবিক মান প্রশংসা থাকে না যেমনটি অনেক তিব্বতীদের মধ্যে থাকে। পাশ্চাত্য মানুষেরা তাদের মনোভাবের প্রতি বেশী স্বচ্ছন্দ্য হয় এবং তারা ভাবে যে, “আমি আজ ক্লান্ত হয়ে পড়েছি, আমি পরের বার এই ধর্ম-উপদেশে যাব।” তবে আমরা যদি সত্যিই গম্ভীর হই এবং যদি আমাদের মৃত্যু এবং আমাদের এই বহুমূল্য মানব জীবনের মহত্ব সম্বন্ধে সচেতনতা থাকত, তাহলে আমাদের যাই অনুভব হোক না কেন, যখনই তারা উপলব্ধ থাকবে, প্রতিদিন আমরা সেই উপদেশ গুলি গ্রহণ করার জন্য অবশ্যই যাব।
মৃত্যু আসছে- স্বস্তিতে থাকুন!
আমাদের বহুমূল্য জীবন শেষ হতে চলেছে। আমরা জানি না সেটা কখন হবে। আমাদের মৃত্যু শাওয়ারে স্নান করার সময় হার্ট অ্যাটাকের কারণে হতে পারে; আমরা বাসের ধাক্কাও খেতে পারি। অতএব আমরা আর আমাদের জীবন অপচয় করতে চাই না। মৃত্যুর বোধ অলসতা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে এবং আমাদের যে সমস্ত সুযোগ রয়েছে তার পুরোপুরি সুবিধা কাজে লাগাতে সহায়তা করে। তবে, এটা করার সময় চাপ না নেওয়া এবং অশান্ত না হওয়া গুরুত্বপূর্ণ। প্রায়শই আমরা গুরুত্বহীন এবং তুচ্ছ বিষয় গুলি নিয়ে এতোটা চাপ নিয়ে ফেলি এবং অশান্ত হয়ে যাই যে, আমাদের ধর্ম অনুশীলনে সমস্যা দেখা দেয়। আমাদের নিজের অনুশীলন সম্বন্ধে আন্তরিক হওয়া প্রয়োজন, তবে একটি স্বাচ্ছন্দ্যময় পদ্ধতিতে- কিন্তু এটার অর্থ অলসতাকে বোঝায় না। ফলে আপনি যখন ইতিবাচক অভ্যাস বিকশিত করেন তখন মৃত্যুর সময় কোন অসুবিধা হবে না, কারণ আপনি জানেন এই অভ্যাস গুলি আপনাকে সাহায্য করবে।
মৃত্যু হ’ল জীবনের যৌক্তিক সমাপ্তি
এরপর আমরা যুক্তি দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করি যে, যে শিক্ষাগুলি বুদ্ধ আমাদের শিখিয়েছে তার সাথে এই শিক্ষাগুলি সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না (প্রমাণ-যুক্তি)। এটি করার জন্য সাধারণতঃ আমাদের বেশ কয়েকটি শিক্ষা গ্রহণ করতে বা জানার জন্য প্রচুর বৌদ্ধ গ্রন্থ পড়তে হবে। অনেকে বৌদ্ধ শিক্ষা অনিত্যতা সম্পর্কে চর্চা করে, তাই এটি বুদ্ধ যা শিক্ষা দিয়েছিলেন তার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
এটি কি যৌক্তিক? হ্যাঁ, আমরা প্রতিদিন মৃত্যুর কাছাকাছি এগিয়ে চলেছি। কোনও এক সময় আসবে যখন দৃশ্য শেষ হয়ে যাবে। মৃত্যু নিশ্চিত ভাবে আসবে, কারণ এমন কোনো পরিস্থিতি নেই মৃত্যুর সময় এসে গেলে তাকে ফেরানো যায়। আমাদের আয়ু বাড়ানো যায় না, এটা দিন-দিন, মিনিটে-মিনিটে, ক্ষণে-ক্ষণে হ্রাস পেতেই আছে। এর জন্য আবেগগত ভাবে গ্রহণ করাও সত্যিই যথেষ্ট গভীর। এটাকে গম্ভীর ভাবে নেওয়ার জন্য আমরা এমন ভাবে করতে পারি যেখানে আমরা ঘাবড়ে না গিয়ে শান্তভাবে স্বীকার করে নেব। যদি আমরা জীবিত থাকাকালীন ধর্ম-চর্চা করার জন্য সময় নাও বের করতে পেরে থাকি তাহলেও কিন্তু আমাদের মৃত্যু নিশ্চিত। প্রত্যেকে, যেই জন্ম নিয়েছে তার মৃত্যু অবশ্যই হয়েছে।
উপকারী ফলাফল
এর ফলাফল কেমন হবে? বেশ, যদি আমরা সত্যিই নিশ্চিত হয়ে যাই যে, মৃত্যু আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে এবং আমাদের কাছে বহুমূল্য মানব জীবন রয়েছে, তাহলে ফলাফলটি এমন হবে যে, এটি আমাদের অলসতার হ্রাস করবে আর আমাদের যে সকল সুযোগ-সুবিধা রয়েছে তার সৎব্যবহার করতে প্রেরিত করবে। আমরা আমাদের অনুভবের দ্বারা জানতে পারি যে, এটা করা আমাদের জন্য লাভদায়ক।
চতুর্থ যুক্তি বস্তুর স্বভাব সম্পর্কিত, হ্যাঁ, যা কিছু জীবন্ত আছে তার স্বভাব হল যে, তার মৃত্যু হবে। জিনিস গুলো এমনই, এটাই বাস্তবিকতা এবং আমরা এই সত্যটিকে গ্রহণ করা ছাড়া কিছুই করতে পারি না।
এই উদাহরণের মাধ্যমে আমরা এটা জানতে পারি যে, আমরা শিক্ষাগুলির বিশ্লেষণ করার জন্য নিজেদের অনুভবের সঙ্গে যুক্ত ক’রে চারটি যুক্তি ব্যবহার করতে পারি। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া, কারণ এটার সম্বন্ধে ১০০ শতাংশ নিশ্চিত হয়ে উঠতে এবং এটাকে আমাদের জীবনে একীভূত করতে প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়। বৌদ্ধিক স্তরে নিশ্চিত হওয়াটা সহজ, তবে ভাবাত্মক স্তরে এর প্রতি নিশ্চিত হওয়া খুব কঠিন। মন এবং শরীরের মধ্যে পার্থক্য থাকে- উদাহরণ স্বরূপ, আমার বন্ধুর মৃত্যুর ক্ষেত্রে, মানসিক ভাবে এবং আবেগগত ভাবে, আমি যথেষ্ট শান্ত এবং স্থির বোধ করি, তবে আমার শারীরিক স্তরে মনে হয় যে, শরীরের সমস্ত শক্তি টেনে বের করে নেওয়া হয়েছে।
সুতরাং শারীরিক স্তরে দুঃখ আছে, কারণ “প্রত্যেকের মৃত্যু হয়” এই অনুভূতিটি শারীরিক স্তরে অনুভব করা খুব শক্ত এবং মানসিক স্তরে সময়-সময় দুঃখ জাগতে থাকবে, কারণ এটা স্বাভাবিক। আমরা বুদ্ধ নই; আমরা মুক্ত সত্ত্ব নই। আমরা এখনও সমস্ত প্রকারের বিশৃঙ্খল আবেগ বা দুঃখ থেকে মুক্ত নই। তবে এই মুক্তি প্রাপ্ত করাই আমাদের লক্ষ্য।
সারাংশ
একবার যখন আমাদের বাস্তবিক ভাবে বোধগম্য হয়ে যায় যে, মুক্তি এবং বোধিলাভ কী, তখন আমরা আমাদের লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারি। যখন আমরা ভেবে নিই যে, আমাদের লক্ষ্য কী, তখন আমরা সেখানে পৌঁছনোর জন্য পদক্ষেপ নির্ধারণ করতে পারি। আমরা যা করছি তার ব্যাপারে নিশ্চয়তা অর্জন করার জন্য এই চারটি যুক্তি খুবই উপযোগী।
আমরা যখন মৃত্যুর উপর ধ্যান করি এবং সত্যিই বুঝতে পারি যে, আমরা মরতে চলেছি, কিন্তু আমরা এটা জানতে পারি না যে, আমাদের মৃত্যু কখন হবে, তখন আমরা এরকম বিষয়ের উপর মনোযোগ দিতে পারি যা সত্যিই খুব গুরুত্বপুর্ণ। মৃত্যুর সচেতনতা আমাদের মধ্যে একটি অবিশ্বাস্য পরিবর্তন নিয়ে আসে, যা নিজেদের অলসতা বা হতাশায় ডুবে থাকা অসম্ভব করে তোলে।