আমাদের সকলের কাছে বোধিচিত্ত বিকাশের জন্য মৌলিক কর্মের উপকরণ আছে।
“বোধিচিত্ত” একটা সংস্কৃত শব্দ। এটাকে অনুবাদ করা খুব একটা সহজ নয়। “চিত্ত”, এর দ্বিতীয় শব্দটির অর্থ হল “মন”। কিন্তু আমরা যখন বৌদ্ধধর্মে মনের কথা বলি, তখন আমরা মন এবং হৃদয় উভয়ের বিষয়ে আলোচনা করি। বৌদ্ধধর্মে আমরা এই দুটির মধ্যে পার্থক্য করি না, কারণ আমরা পাশ্চাত্য চিন্তা-ধারায় ঐ পার্থক্যটি করার প্রবণতা দেখাই। তাই এখানে আমরা শুধু আমাদের বুদ্ধির বিকাশ করার লক্ষ্য স্থাপন করি না- আমাদের মনের যৌক্তিক দিক অর্থাৎ একাগ্রতা, বোধগম্যতা ইত্যাদির মাধ্যমে, কিন্তু উপরন্তু, আমাদের হৃদয়কে বিকাশ করি, যার অর্থ আমাদের পুরো আবেগগত দিকটিও, যাতে আমরা সকলেই বোধিচিত্তের প্রথম শব্দটিতে “বোধি” পৌঁছতে পারি।
আর “বোধি” হল একটা শব্দ যা সর্বোচ্চ বৃদ্ধি এবং পরিশুদ্ধির অবস্থাকে বোঝায়। সুতরাং শুদ্ধিকরণের অর্থ হল আমাদের যে সমস্ত বাধা-বিঘ্ন এবং অবরোধ আছে অর্থাৎ মানসিক অবরোধ এবং আবেগগত অবরোধ, সেগুলি থেকে মুক্তি পাওয়া, আর এর অর্থ হ’ল বিভ্রান্তি এবং বোধগম্যতা ও একাগ্রতার অভাব থেকে মুক্তি পাওয়া। এর অর্থ হ’ল আবেগগত দিক থেকে বিশুদ্ধতা, আমাদের অশান্তকারী আবেগ থেকেও মুক্ত হওয়া। অশান্তকারী আবেগের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকে ক্রোধ, লোভ, আসক্তি, স্বার্থপরতা, অহংকার, ঈর্ষা, নির্বোধতা ইত্যাদি। এর একটি বিশাল, দীর্ঘ তালিকা আছে; আমরা এতে আরও, আরও অনেককিছু অন্তর্ভুক্ত করতে পারি। এগুলিই আমাদের জীবনের আসল সমস্যা সৃষ্টিকারী। সুতরাং, আমাদের মন এবং হৃদয় দিয়ে আমরা যে লক্ষ্য স্থাপন করি, সেটা হল এই সমস্ত সমস্যা সৃষ্টিকারীদের থেকে মুক্ত অবস্থা লাভ করা।
“বোধি” শব্দের অন্য দিকটির অর্থ হল “বৃদ্ধি”। আর এর অর্থ, আমাদের কাছে মৌলিক কাজের উপকরণ রয়েছে- আমাদের সকলের কাছে- আমাদের মধ্যে; আমাদের সকলের কাছে একটা শরীর আছে। আমাদের কাছে আছে যোগাযোগ করার ক্ষমতা। আমাদের মধ্যে আমাদের শরীর দিয়ে কর্ম করার কিছু করার ক্ষমতা আছে। আর আমাদের সকলের কাছে আছে মন (বিষয়কে বোঝার ক্ষমতা), হৃদয় (অনুভূতি, অন্যের প্রতি উষ্ণতা ভাব জাগানোর ক্ষমতা) এবং বুদ্ধি (কী লাভদায়ক, কী ক্ষতিকারক তার মধ্যে পার্থক্য করার ক্ষমতা)।
সুতরাং, আমাদের মধ্যে আছে এই সমস্ত উপাদানগুলি, এই সমস্ত গুণাবলী, এবং সেগুলি দিয়ে আমরা কী করব বা না করব সেটা আমাদের উপর নির্ভর করে। আমরা কাজ করা, কথা বলা এবং চিন্তা-ভাবনা করার মাধ্যমে সেগুলিকে ব্যবহার করতে পারি; আমরা সেগুলিকে ব্যবহার করতে পারি নিজেদের উপকার করা এবং আরও বেশি সুখ অর্জনের জন্য। আমরা যেভাবে কাজ করি এবং যোগাযোগ করি আর চিন্তা-ভাবনা করি সেগুলি যদি বিভ্রান্তি এবং অশান্তকারী আবেগের প্রভাবে হয়, তাহলে এটা অবশ্যই সমস্যা তৈরী করে। আমরা যখন ক্রোধের প্রভাবে কাজ করি, তখন আমরা প্রায়শই এমন কিছু করি যার কারণে আমরা পরে অনুশোচনা করি, তাই না? আমরা যখন স্বার্থপরতার সাথে আচরণ করি প্রায়শই সেটা বড় সমস্যা তৈরী করে। স্বার্থপর কাউকেই কেউ পছন্দ করে না।
এটা একটা দিক। অন্য দিকটা হ’ল, আমরা যদি ইতিবাচক গুণাবলীর উপর ভিত্তি ক’রে, যেমন- মৈত্রী, করুণা এবং অন্যের জন্য চিন্তা-ভাবনা, কাজ করি, যোগাযোগ করি এবং চিন্তা করি, তাহলে আমরা দেখতে পাব যে এটা আমাদের জীবনে আরও সুখ, জীবনে আরও তৃপ্তি প্রদান করেঃ আমাদের মতো অন্যদের; এটা অন্যদের আরও বেশি কল্যাণ করে। আমরা আমাদের বন্ধুদের সাথে আমাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে এটা খুব স্পষ্টভাবে দেখতে পারি। যেমন, আমরা যদি সবসময় তাদের সমালোচনা করি এবং তাদের উপর ক্রোধিত হই, তাহলে সত্যিই কেউ আমাদের সাথে থাকতে পছন্দ করবে না। কিন্তু আমরা যদি তাদের প্রতি সদয় হই এবং তাদের সাথে ভাল আচরণ করি, অবশ্যই তারা আমাদের সঙ্গ উপভোগ করবে, এমনকি আমরা আমাদের পোষা বিড়াল এবং কুকুরের সাথে যেভাবে আচরণ করি সেখানেও আমরা এটা দেখতে পারিঃ এমনকি তারাও সবসময় চিৎকার করা এবং বকা-ঝকা করা পছন্দ করে না; পরিবর্তে তারা ভাল আচরণ করা পছন্দ করে। সুতরাং এইগুলি হল মৌলিক কাজের উপকরণ যেগুলি আমরা বিকাশ করতে পারি। আর আমরা সেগুলি ইতিবাচক উপায়ে আরও বেশি ক’রে বিকশিত করতে পারি।
সুতরাং, বোধিচিত্ত হল আমাদের মনের এবং হৃদয়ের একটি অবস্থা- একটি পরিস্থিতি, একটি দশা যা বোধির এই অবস্থার জন্য লক্ষ্য স্থাপিত করে। এই অবস্থার জন্য লক্ষ্য স্থাপন করা হয় যেখানে আমাদের মধ্যে নিহিত এই সমস্ত ত্রুটি, এই সমস্ত সমস্যা সৃষ্টিকারী সম্পূর্ণরূপে উন্মূলিত হয়ে যায় এবং আমাদের সমস্ত ইতিবাচক গুণাবলী পূর্ণ সম্ভাব্য অবস্থার জন্য বিকশিত হয়। এটা একটা অসাধারণ লাভ করণীয় জিনিস- মন এবং হৃদয়ের একটি অবস্থা।
আর অত্যন্ত ইতিবাচক আবেগের কারণে সেটা উদ্ভূত হয়। এই আবেগগুলি কী? মূলতঃ, আমরা এই অবস্থাটির জন্য লক্ষ্য স্থাপন করি না, যেহেতু এটাই সর্বোচ্চ এবং আমি সর্বোচ্চ হতে চাই। এটা শুধু তাই নয় যে আমি সবচেয়ে সুখী হতে চাই এবং এটাই সবচেয়ে সুখী অবস্থা যা আমি লাভ করতে পারি। পরিবর্তে, আমরা অন্য সকলের কথা ভাবি, জগতের সমস্ত অগণিত সত্ত্ব অর্থাৎ মানুষ, পশু, যাই হোক না কেন। আমরা বুঝতে পারি, এক অর্থে আমরা সবাই সমান যে প্রত্যেকে সুখী হতে চায়, কেউ দুঃখী হতে চায় না। এটা পশুর ক্ষেত্রেও সত্য, তাই না? আর প্রত্যেকে নিজের এবং তাদের প্রিয়জনের জন্য সুখ বিকাশ করতে তাদের নিজস্ব উপায়ে চেষ্টা করে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতঃ, আমরা বেশিরভাগই সত্যিই জানি না কী সুখকে জন্ম দেয়। আমরা এর জন্য বিভিন্নভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাই কিন্তু প্রায়ই সেটা সুখের চেয়ে সমস্যার সৃষ্টি করে বেশি। আমরা অন্য কারও জন্য একটা সুন্দর জিনিস কিনি- একটা উপহার- কিন্তু সে সেটা পছন্দ করে না। সুতরাং, খুবই সহজ। সকলকে সন্তুষ্ট করা কঠিন, তাই না? তবে, যে কোনও ক্ষেত্রে আমাদের চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া দরকার।
অন্যদের জন্য সর্বোচ্চ উপকার লাভের উদ্দেশ্য নিয়ে বোধি লাভ করার লক্ষ্য
অবশ্যই, যেটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেটা হল আমাদের উদ্দেশ্য; আমরা অন্যের সহযোগিতা করতে চাইঃ কী চমৎকারই না হবে যদি প্রত্যেকে তাদের সমস্যা এবং ঐ সমস্যাগুলির কারণ থেকে মুক্ত হয়ে যায়। করুণা বলতে এটাকেই বোঝায়। করুণা হল অন্যরা তাদের দুঃখ এবং দুঃখের কারণ থেকে মুক্ত হওয়ার কামনা।
আর কী চমৎকারই না হবে যদি প্রত্যেকে সুখ এবং সুখের কারণে যুক্ত হয়ে যায়। বৌদ্ধধর্মে এটাই মৈত্রীর সংজ্ঞা। মৈত্রী কিছু ফেরত পাওয়ার উপর ভিত্তি করে না, যেমন, তাদের জন্য- “তুমি যদি আমাকে ভালবাসো তাহলে আমিও তোমাকে ভালবাসবো।” এটা ওরকম নয়। অন্য ব্যক্তি কেমন আচরণ করে এটা তার উপর ভিত্তি করে না- “তুমি যদি একটা ভাল ছেলে বা ভাল মেয়ে হও, তাহলে আমি তোমাকে ভালবাসবো। যদি তুমি দুষ্ট হও, তাহলে আমি তোমাকে ভালবাসবো না।” অন্যরা কেমন আচরণ করে বা না করে সেটা বিবেচ্য নয়; এটাই আসল কথা নয়। মূল কথাটি হল যদি সকলেই সুখী হতে পারে, তাহলে সেটাই হবে চমৎকার। অতএব এটাই হল মৈত্রী।
আর কত ভালোই না হবে যদি আমি প্রত্যেকের জন্য সুখ উৎপন্ন করতে এবং তাদের দুঃখ ও সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সহযোগিতা করার জন্য উল্লেখযোগ্য কিছু করতে পারি। তবে এখন আমি খুবই সীমিতঃ আমার মধ্যে বিভ্রান্তি আছে, আমার মধ্যে আছে অশান্তকারী আবেগ, আমি প্রায়শই অলস হয়ে থাকি এবং একটা চাকরীর খোঁজ করতে, একজন সঙ্গী খুঁজে পেতে আমার সমস্যা হয় ......... সব ধরণের অসুবিধা যেটার আমরা সবাই জীবনে মুখোমুখি হই। তবে আমি যদি ঐ অবস্থাটি প্রাপ্ত করতে পারি যেখানে এই সমস্ত ত্রুটি, এই সমস্ত অসুবিধাগুলি চিরতরে আমার মধ্য থেকে নির্মূল হয়ে যাবে আর আমি যদি আমার পূর্ণ সম্ভাবনায় পৌঁছে যেতে পারি, তাহলে আমি সকলের জন্য সর্বোচ্চ অবস্থানে আসীন হয়ে থাকব।
সুতরাং, এখানে বোধিচিত্ত সম্পর্কিত উদ্দেশ্যটি হল, আমরা আমাদের ভবিষ্যতের অবস্থার জন্য লক্ষ্য স্থাপন করি যাকে আমরা “বোধি” বলি আর সেই অবস্থায় পৌঁছনোর জন্য আমাদের সর্বোচ্চ লক্ষ্যের সাথে প্রচেষ্টা চালিয়ে যায়। সর্বোচ্চ লাভের উদ্দেশ্য নিয়ে আমরা ঐ উদ্দীপ্ত অবস্থার পথে অগ্রসর হই যাতে যতটা সম্ভব অন্যরা উপকৃত হয় এবং যতটা সম্ভব আমরা ঐ পূর্ণ অবস্থা লাভ করতে পারি।
বর্তমানে আমরা কেউই সর্বশক্তিমান ঈশ্বর হতে পারিনিঃ সেটা সম্ভবও নয়। যদি সেটা সম্ভব হতো তাহলে কেউ আর দুঃখ পেত না। তবে আমরা যেটা করতে পারি সেটা হল যথাসাধ্য চেষ্টা করা। বাস্তবে অন্যদের সহযোগিতা করার জন্য গ্রহণযোগ্য হতে হবে এবং উন্মুক্ত থাকতে হবে। আর যদিও আমরা অন্যদের কাছে বিষয়গুলি, স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করতে পারি তা সত্ত্বেও অন্যদেরকেও এটা তাদেরই বুঝতে হবে; আমরা তাদের জন্য এটা বোঝাতে পারব না, পারি কি? আমরা ভাল পরামর্শ দিতে পারি কিন্তু সেটা নিতে হবে তাদেরকে।
অতএব, যার জন্য আমরা লক্ষ্য স্থাপন করি সেটা হল অন্যদের সহযোগিতা করতে সর্বোচ্চ অবস্থানে আসীন থাকা, তবে সেটা করতে হবে বাস্তবসম্মত ধারণার সাথে অর্থাৎ এই বোধগম্যতার সাথে যে তারা প্রকৃতপক্ষে সহযোগিতা লাভ করতে পারে কি, না পারে সেটা তাদের প্রচেষ্টার উপর নির্ভর করে। তবে আমরা যদি ঐ অবস্থায় পৌঁছে যাই যেখানে আমাদের বিভ্রান্তি নির্মূল হয়ে থাকে, তাহলে অন্যদের সহযোগিতা করার সবচেয়ে কার্যকর উপায় কী হবে সেটা বোঝার সর্বোত্তম সম্ভাবনা আমাদের মধ্যে থাকবে; আমরা বুঝতে পারব ঐ সমস্ত বিষয়গুলি কী যার সাথে এখন কেউ যুক্ত হয়ে আছে।
আমরা সকলেই অনেক কিছুর কারণে প্রভাবিত হই- আমাদের পরিবার, আমাদের বন্ধু-বান্ধব, আমরা যে সমাজে বাস করি তার কারণে এবং আমরা যে সময়ে বাস করি তার কারণে; কখনো-কখনো যুদ্ধ হয়, কখনো অর্থনৈতিক সমস্যা থাকে আবার কখনো সমৃদ্ধিময় হয়। এই সবই আমাদের প্রভাবিত করে। বৌদ্ধধর্ম পূর্বজন্ম ও ভবিষ্যৎ জীবন সম্পর্কে আলোচনা করে। সেই দৃষ্টিকোণ অনুযায়ী আমরা সবাই আমাদের পূর্ব জীবনের কারণেও প্রভাবিত। সুতরাং, আমরা যদি প্রকৃতপক্ষে কাউকে সহযোগিতা করতে চাই, আমরা যদি প্রকৃতপক্ষে তাদের ভালো পরামর্শ দিতে চাই, তাহলে আমাদেরকে আগে তাদের জানতে হবে, আমাদেরকে তাদের বুঝতে হবে- তাদের আচরণকে প্রভাবিত করে এমন সবকিছু বুঝতে হবে, তাদের আচরণ করার পদ্ধতি, তাদের অনুভূতির পদ্ধতি- যার অর্থ হল সত্যিই তাদের প্রতি আগ্রহ দেখানো এবং মনোযোগ দেওয়া আর তারা যেভাবে আছে তার প্রতি সংবেদনশীল হওয়া।
আমার মনে হয় আপনারা একে অপরের সাথে কেবল আপনাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে এটাকে খুব সহজে বুঝতে পারেন। আপনি যদি কোন বন্ধু-বান্ধবের সাথে থাকেন আর তার প্রতি আগ্রহ না দেখান, পরিবর্তে আপনি কেবল নিজের সম্পর্কে কথা বলতে থাকেন তাহলে আপনি তাদের সম্পর্কে খুব কমই জানবেন। আর আপনি যদি আপনার বন্ধুর দিকে মনোযোগ না দেন- উদাহরণ স্বরূপ, আপনি যখন অন্য কারও সাথে থাকেন তখন আপনি আপনার সেলফোনের মাধ্যমে অন্য কারও কাছে টেক্সট ম্যাসেজ পাঠাতে থাকেন, এর অর্থ হবে আপনি আপনার বন্ধুর দিকে মনোযোগ দিচ্ছেন না- আপনি লক্ষ্য করেন না যে তারা হয়তো একটু অধৈর্য হয়ে ওঠে এবং আপনার প্রতি একটু অসন্তুষ্ট হয়, কারণ আপনি তাদের প্রতি মনোযোগ দেন না। সুতরাং, আমরা যদি প্রকৃতপক্ষে কাউকে সহযোগিতা করতে চাই, তাহলে আমাদেরকে তার প্রতি মনোযোগ দিতে হবে, আমাদেরকে তার প্রতি আগ্রহ দেখাতে হবে, সেখানে কী ঘটছে না ঘটছে তার প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে এবং সেই অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া জানাতে হবে, যেমন- আমরা চাই অন্যরা আমাদের গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করুক এবং আমাদের দিকে মনোযোগ দিক।
নিজেদের এবং অন্যদের সমতাকে বোঝা
দেখুন, এই সবকিছুই আমাদের নিজেদের এবং অন্যদের সমতাকে বোঝার উপর ভিত্তি করে। প্রত্যেকের মধ্যে অনুভূতি আছে, যেমনকি আছে আমার মধ্যে। প্রত্যেকেই চায় যে তাকে গুরুত্ব সহকারে বিচার করা হোক, যেমনকি আমি চাই যে আমাকে যেন গুরুত্ব সহকারে বিচার করা হয়। আমি যদি অন্যদের উপেক্ষা করি অথবা তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করি, তাহলে তারা খারাপ ভাববে, যেমন- যখন অন্য লোকজন আমাকে উপেক্ষা করে অথবা আমাকে নিয়ে ভাবে না, তখন আমি খারাপ ভাবি। প্রত্যেকেই প্রিয় হতে চায়, যেমনকি আমি চাই প্রিয় হতে। কেউ প্রত্যাখ্যাত এবং উপেক্ষিত হতে চায় না, ঠিক যেমন আমি চাই না। আমরা সকলেই পরস্পর সংযুক্ত; আমরা সকলেই এখানে একসাথে আছি।
কখনো-কখনো এটাকে বোঝানোর জন্য একটা ছোট্ট, মজার উদাহরণ পেশ করা হয়; কল্পনা করুন, আপনি প্রায় দশজন লোকজনদের সাথে একটা লিফটে আছেন এবং লিফটটি হঠাৎ আটকে গেল। আপনি সেখানে ঐ লোকজনদের সাথে সারাদিন আটকে আছেন, ফেঁসে আছেন। আপনি কীভাবে ঐ লোকজনদের সাথে সেখানে একসাথে থাকবেন? আপনি যদি কেবল নিজে আমার, আমার সম্পর্কে ভাবতে থাকেন আর ঐ ছোট্ট জায়গায় অন্য যারা রয়েছেন তাদের সম্পর্কে না ভাবেন তাহলে তো সেখানে অনেক দ্বন্দ্ব ও তর্ক-বিতর্ক শুরু হয়ে যাবে, আর তারফলে সেখানে অত্যন্ত অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরী হবে। কিন্তু আপনি যদি কোনভাবে বুঝতে পারেনঃ “আমরা সকলেই একই পরিস্থিতিতে একসাথে আটকে আছি এবং এই পরিস্থিতিতে আমাদের একে-অপরের প্রতি যত্নশীল হতে হবে আর চিন্তা-ভাবনা করতে হবে আমরা কীভাবে একে-অপরের সহযোগিতা করতে পারি, যাতে আমরা এই দুর্দশা থেকে বেরিয়ে আসতে পারি”, তাহলে, যদিও লিফটে আটকে থাকাটা সুখকর নয় তবুও আমরা ঐ পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারি। এই উদাহরণটিকে প্রসারিত করা যাকঃ একটা বড় লিফটে আটকে থাকার মতো আমরা সকলেই যদি এই গ্রহে আটকে থাকি এবং তখন আমরা যদি একে-অপরের সহযোগিতা না করি, তাহলে সময়টা তো দুঃখজনক হবেই, কারণ প্রত্যেকেই একই পরিস্থিতিতে আটকে থাকে। যেভাবে আমরা একে-অপরের সাথে আচরণ করি সেটাকে লিফটে থাকা মাত্র দশজন মানুষ হোক বা এই গ্রহের প্রত্যেক প্রাণী, তবুও এটা সবাইকে প্রভাবিত করে। এই কারণে প্রত্যেককে সহযোগিতা করতে চেষ্টা করা অর্থপূর্ণ। আর এই অর্থে শুধু চিন্তা-ভাবনা করার পরিবর্তে, “লিফটে আটকে থাকার এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি থেকে আমরা কীভাবে বেরিয়ে আসতে পারি?”, আমরা এর পরিপ্রেক্ষিতে চিন্তা-ভাবনা করতে পারি, “আমরা সকলেই কীভাবে এই ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারি?” শুধু লিফটে নয়, বরং এটা আমাদের জীবনের ক্ষেত্রেও একই চিন্তা-ভাবনা করা প্রযোজ্য। আমার নিজের সমস্যাগুলির মোকাবিলার ক্ষেত্রে আমি কেমন চিন্তা-ভাবনা করতে পারি (কারণ সেখানে প্রকৃতপক্ষে আমি বলতে সেখানে বিশেষ কিছু নেই; লিফটে আটকে থাকা লোকজনদের মধ্যে কেবল আমি হলাম একজন)? আসলে সমস্যাটি শুধু আমার ব্যক্তিগত সমস্যা নয়; সমস্যাটি প্রত্যেকের সমস্যা। মনে রাখবেন আমাদের ক্রোধ, স্বার্থপরতা, লোভ, অবিদ্যা ইত্যাদি আমরা এই ধরণের সমস্যার কথা নিয়ে আলোচনা করছি। এগুলি প্রত্যেকের সমস্যা, ব্যক্তিগতভাবে এগুলি কারও আধিপত্যে নেই।
সমস্ত সত্ত্ব, সমস্ত জীবকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আমাদের মন এবং হৃদয়কে প্রসারিত করা
এই কারণেই আমরা যখন বোধিচিত্তকে নিয়ে আলোচনা করি তখন আমরা আলোচনা করি এক ধরণের সার্বজনীন মন এবং হৃদয় নিয়ে। কোন পছন্দ ছাড়াই আমরা সকলের কথা ভাবি এবং এমন কোন প্রাণী থাকে না যাকে আমরা বাদ দিই। সুতরাং, এটা একটা বিশাল, বিশাল মনোভাব, মনের বিশাল অবস্থা। আমরা যখন আমাদের মনের প্রসারণ করা নিয়ে আলোচনা করি তখন এটা সবচেয়ে বড় মনকে বোঝায়, যেখানে আমরা মনকে প্রসারণ করতে পারি। আমরা প্রত্যেকের জন্য ভাবি, কেবলমাত্র এই গ্রহের মানুষের কথা নয়, যেমন- গ্রহের সমস্ত জীব, জগতের সমস্ত জীব। উদাহরণ স্বরূপ, আমরা যদি পরিবেশের অবনতি সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করি যা কেবল এই পরিবেশে বসবাসকারী মানুষকেই প্রভাবিত করে না, বরং এটা নিঃসন্দেহে সমস্ত প্রাণীর জীবনকেও প্রভাবিত করে, তাই না?
সুতরাং, আমাদের কাছে এই ব্যাপক সুযোগটি আছে যার সম্পর্কে আমরা উদ্বিগ্ন। আমাদের কাছে ঐ দীর্ঘ ও দীর্ঘমেয়াদী সমাধান নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করার ক্ষেত্রে একটা ব্যাপক সুযোগ থাকে, কেবল একটা দ্রুত সমাধান নয় যা শুধু অল্প সময়ের জন্য সহায়তা করে। আর আমরা যখন নিজের সম্ভাবনার পরিপ্রেক্ষিতে চিন্তা-ভাবনা করি, তখন আমরা আমাদের সম্ভাব্যতার উপলব্ধির সবচেয়ে বড় সুযোগের কথা চিন্তা-ভাবনা করি; এটা কেবল অল্প নয়, বরং প্রকৃতপক্ষে যতটা বেশি সম্ভব।
আর যেমনটি আমি বলেছি, এটা আমাদের প্রতি সম্মানের উপর ভিত্তি করে। আমরা বুঝতে পারি যে আমাদের সকলের কাছেই প্রকৃতপক্ষে এই অবস্থাটি লাভ করতে সক্ষম হওয়ার জন্য কাজের উপকরণ আছে এবং অন্য সকলের ক্ষেত্রেও তাই। সুতরাং আমরা নিজেদেরকে গুরুত্ব সহকারে নিই, আমরা অন্যদেরও গুরুত্ব সহকারে নিই এবং আমরা নিজেদের ও অন্যদের সম্মান করি- আমরা সকলেই মানুষ, আমরা সকলেই সুখী হতে চাই, কেউ দুঃখী হতে চাই না। আর আমরা যেটা করি, আমরা কীভাবে জীবনযাপন করি তার পরিপ্রেক্ষিতে এতে সবকিছু নিহিত আছে।
ধ্যানের মাধ্যমে মন এবং অভ্যাসের উপকারী অবস্থার বিকাশ
মনের এই অবস্থাগুলি বিকাশ করতে বৌদ্ধধর্ম বিভিন্ন পদ্ধতি প্রদান করতে অত্যন্ত সমৃদ্ধ। এই ধর্মটি শুধু বলে না, “সকলকে ভালবাসো”, এছাড়া আর কিছু নয়। সেটা খুবই সুন্দর, শুধু এইটুকু যে আমাদের সকলকে ভালবাসতে হবে, কিন্তু আমরা প্রকৃতপক্ষে এটা কীভাবে করব? এর জন্য আমাদের কাছে আছে ধ্যান। আর ধ্যানের অর্থ হল একটা উপকারী অভ্যাস গড়ে তোলা। যেমন- আমরা যদি কোন খেলা-ধূলা করতে চাই অথবা যদি একটা বাদ্যযন্ত্র বাজাতে চাই, তারজন্য আমাদের অনুশীলন করতে হয়। আমরা এটা বারবার করি যতক্ষণ না আমরা এতে দক্ষ হয়ে উঠি। আর অনুশীলনের সাথে আমরা সেটা শিখতে থাকি, যাতে কিছুক্ষণ পরে আমাদের সেটার সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করতে না হয়; আমরা খুব সহজেই সেই খেলা-ধূলাটা খেলতে পারি বা খুব সহজেই বাদ্য বাজাতে পারি।
একইভাবে আমরা আমাদের মনোভাবকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার ক্ষেত্রেও একই রকম কাজ করি। এটাই আমরা করি ধ্যানের মাধ্যমে। আমরা এর উপর কেন্দ্রিভূত হয়ে একটি নির্দিষ্ট অনুভূতি, মনের একটি নির্দিষ্ট অবস্থা তৈরী করি, যেমন- আপনি যখন একটা খেলা-ধূলার প্রশিক্ষণ দেন, সর্বপ্রথম আপনাকে কিছু ওয়ার্ম-আপ ব্যায়াম করতে হয় এবং তারপর আপনি আসলে খেলা-ধূলার অনুশীলন করতে পারেন। অতএব, আমরা আমাদের মনের অবস্থার ক্ষেত্রে প্রথমে কিছু ওয়ার্ম-আপ ব্যায়াম করি।
মনের একটি ইতিবাচক অবস্থা তৈরী করতে সক্ষম হওয়ার জন্য প্রথমে আমাদের শান্ত হতে হয় এবং যদি আমাদের চিন্তা-ভাবনা সব জায়গায় বিক্ষিপ্ত হয়ে থাকে অথবা আমাদের অনুভূতিগুলি সব জায়গায় মিশ্রিত হয়ে থাকে তখন আমাদের মন ও আবেগকে স্থির হওয়ার প্রয়োজন হয়। আমরা সাধারণতঃ আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের উপর মনোনিবেশ ক’রে এটা করি। আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাস সবসময় সেখানে থাকে। অথবা যদি এর উপর মনোনিবেশ করি তাহলে এটা আমাদেরকে আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের স্থির ছন্দে শান্ত থাকতে সহায়তা করে। আর আমাদের চিন্তা-ভাবনা “মেঘের মধ্যে” থাকলে এটা আমাদের শরীরের সাথে তার সংযোগ করে। এটাই হল মৌলিক ওয়ার্ম-আপ ব্যায়াম।
আর এখানে আমরা চিন্তা-ভাবনা করি আমাদের অনুপ্রেরণার পরিপ্রেক্ষিতে। আমি কেন ধ্যান-ভাবনা করতে চাই? সেটাও ওয়ার্ম-আপ ব্যায়ামের অংশ। ঠিক তেমনই যেমন আমরা যখন কোন খেলা-ধূলার অনুশীলন করি বা বাদ্য বাজানো শিখি তখন আমাদের জন্য এই বিষয়টা বোঝা এবং পুনরায় পরীক্ষা করা সত্যিই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণঃ “আমি কেন এটা করছি?” এমনকি আমরা যদি এটা উপভোগ করি এবং এটা মজা করার জন্য করি তাহলেও আমাদের নিজেদেরকে এর সম্পর্কে স্মরণ করিয়ে দিতে হবে কারণ নিঃসন্দেহে প্রশিক্ষণ একটা কঠিন পরিশ্রমের কাজ। সুতরাং, আমরা পুনরায় নিশ্চিত হই যে আমরা কেন ধ্যানের মাধ্যমে একটা ইতিবাচক অভ্যাস গড়ে তুলতে চাই। এর কারণটি হল ঐ প্রশিক্ষণটি আমাদের জীবনের সমস্যাগুলিকে আরও ভালভাবে মোকাবিলা করতে সহায়তা করে, তবে, আমরা যদি খুব সহজে ক্রোধিত না হই। আর আমরা যদি সর্বক্ষণ ক্রোধিত হয়ে থাকি তাহলে আমরা সম্ভবতঃ অন্য কারও সহযোগিতা করতে পারি না। আমরা যদি মানসিকভাবে বিচলিত হয়ে থাকি তাহলেও আমরা কারও সহযোগিতা করি না।
অতএব, আমরা এই সমস্ত ওয়ার্ম-আপ ব্যায়াম করি। আর তারপর শুরু হয় প্রকৃত ধ্যানঃ মনের কাঙ্খিত অবস্থা গড়ে তোলার জন্য একধরণের চিন্তা-ভাবনার লাইন ব্যবহার করি। আমরা যখন এটাকে আমাদের ব্যক্তিগত জীবনের সাথে সংযুক্ত করার জন্য ব্যবহার করি তখন এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। আমরা শুধু বিমূর্ত তত্ত্ব বিষয়ে ভাবি নাঃ আমরা এমন পদক্ষেপ সম্পর্কে চিন্তা করি যেখানে আমরা আমাদের নিজেদের জীবনে নিজেকে সহায়তা করতে পারি।
একটা উদাহরণ
ধরুন, আমাদের এক বন্ধু আমাদের সাথে অত্যন্ত অপ্রীতিকর আচরণ করেছে- সে কিছু নিষ্ঠুর কথা বলেছে, সে আমাকে ফোন করে না অথবা সে আমাদের উপেক্ষা করে বা লোকজন আমাদের নিয়ে ব্যঙ্গ করে। এগুলি একটা ভয়াবহ বিষয় যেটা প্রত্যেকের সাথে ঘটে আর আমরা সত্যিই ভয়াবহ অনুভব করি এবং তার প্রতি অত্যন্ত বিরক্ত হয়ে প্রতিক্রিয়া জানাই, বিশেষ ক’রে আমরা যদি মনে করি সে আমাদের বন্ধু।
আমরা ধ্যান সাধনায় সেটাকে পরীক্ষা করি। আর এটা করি আমাদের মন যখন শ্বাস-প্রশ্বাসের উপর মনোনিবেশ করার পর কিছুটা শান্ত হয়। তারপর, আমরা পুনরায় নিশ্চিত করি যে আমাদের বন্ধু, আমাদের সহপাঠীগণ- তারাও আমার মতো মানুষঃ তারা সুখী হতে চায়, দুঃখী হতে চায় না। এমন কিছু অবশ্যই তাকে বিরক্ত করেছিল যার কারণে সে আমাদের সাথে অপ্রীতিকর আচরণ করেছিল অথবা সে আমার সম্পর্কে বিভ্রান্ত হয়েছিল- সে সত্যিই আমার ভাল গুণাবলীর বোধগম্যতা করতে পারেনি। তাই সে আমাকে নিয়ে ব্যঙ্গ করেছিল। সুতরাং, তার উপর ক্রোধিত হওয়া বা হতাশ হওয়া, এটা কোনভাবেই কোন কাজে লাগে না। এর পরিবর্তে আমি কামনা করি, সে যে কারণেই বিরক্ত হোক না কেন সে যেন তার থেকে মুক্ত হয়ে যায়, যাতে সে আমার সাথে সুন্দরভাবে আচরণ করে, কারণ তখন আমরা সকলেই খুশী হব- আমি এবং তারাও।
তাই তার প্রতি ক্রোধিত হওয়ার পরিবর্তে আমরা মৈত্রী এবং করুণা বিকাশ করি, সে যদি তার বিরক্তিভাব থেকে মুক্ত থাকে তাহলে এটা দুর্দান্ত হবে। “সে সুখী হোক! সে যদি সুখী হয় তাহলে সে এইরকম অপ্রীতিকর আচরণ করবে না।” এইভাবে আমরা ক্রোধের পরিবর্তে তার প্রতি মৈত্রী ভাব বিকাশ করার জন্য নিজেদের গড়ে তুলি। এই ভাবনাটি আমাদেরকে তাদের পরিস্থিতির প্রতি আরও ধৈর্যশীল হতে সহযোগিতা করে। আর আমরা যদি আরও শান্ত, মৈত্রীময় এবং ক্ষমাশীল পদ্ধতিতে আচরণ করি, সেটা তাদেরও শান্ত হতে সহযোগিতা করে। ফলে পরিস্থিতি সামলানো অনেক সহজ হয়ে ওঠে।
অন্যরা আমাদের দিকে যে আবর্জনা অভিক্ষিপ্ত করে সেটাকে ব্যক্তিগত ভাবে বিবেচনা না করা
একবার বুদ্ধ তাঁর একজন শিষ্যকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, “কেউ যদি আপনাকে কিছু দেওয়ার চেষ্টা করে এবং আপনি সেটা গ্রহণ না করেন, তাহলে সেটা কার হবে?” স্পষ্টতই, সেটা সেই ব্যক্তির হবে যিনি আপনাকে সেটা দেওয়ার চেষ্টা করছেন এবং আপনি সেটা গ্রহণ করছেন না। সুতরাং, কেউ যদি আপনাকে খারাপ স্পন্দন, খারাপ অনুভূতি ইত্যাদি আর সমালোচনা করার চেষ্টা করে, তাহলে এটাকে মেনে না নেওয়া এবং সেটাকে ব্যক্তিগত ভাবে গ্রহণ না করা গুরুত্বপূর্ণ। অন্য কথায়, তার পরিবর্তে সেটাকে এমনকিছু হিসাবে দেখতে হবে যে, সেটা প্রকৃতপক্ষে অন্য ব্যক্তিকে দুঃখিত ক’রে তোলে। অবশ্যই, কেউ যদি আমাদের সমালোচনা করে তাহলে সেটা আমাদের নিজেদের পরীক্ষা করার ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে, কারণ হয়তো তারা এমনকিছু ইঙ্গিত করে যেটা আমাদের সংশোধন করার দরকার হয়ে ওঠে। অতএব, আমাদের সেটা উপেক্ষা করা উচিত না, তবে বল খেলায় বল-ধারকের (ক্যাচার) মতো চারিদিকে ঘোরাঘুরি না করাটা গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে আমরা সবসময় প্রস্তুত থাকি আবর্জনা এবং ন্যাক্কারজনক চিন্তা-ভাবনার বল ধরার জন্য, যা আমাদের দিকে কেউ প্রক্ষিপ্ত করে।
কখনো-কখনো আমরা এইরকম আচরণ করি, তাই না? মানুষ আমাদের দিকে যে সমস্ত আবর্জনা প্রক্ষিপ্ত করে, যেমন- ন্যাক্কারজনক শব্দ, নোংরা চেহারা, যাইহোক না কেন, আমরা সেগুলি ধরতে উদ্বিগ্ন হই। যদিও সেটা করা সহজ নয়, তবুও ‘আমি’-এর প্রত্যাখ্যান হিসাবে আমাদের সাথে ঘটিত এই সমস্ত ঘটনাগুলি মেনে না নেওয়ার চেষ্টা করি। পরিবর্তে সেটাকে অন্য ব্যক্তির সমস্যা হিসাবে দেখি। অন্য কথায়, যে মনোভাবের সাথে আমরা ঐ অন্য ব্যক্তিকে ভয়ঙ্কর হিসাবে দেখি তার পরিবর্তে আমরা তাদের এইভাবে দেখতে পারিঃ “ওহ, কিছু তাদের বিরক্ত করছে। তাদের মধ্যে নিশ্চয়ই কোন সমস্যা আছে।”
এটা এমনই যে, আমরা যদি দুই বা তিন বছর বয়সের একটা শিশুকে যত্ন নিই, শিশুটি খুব বেশী ক্লান্ত এবং ঘুমোতে চায় না তখন আমরা বলি, “বেশ, এবার ঘুমোনোর সময় হয়ে গেছে।” আর শিশুটি উত্তর দেয়, “আমি তোমাকে ঘৃণা করি।” আমরা কি সত্যিই সেটাকে ব্যক্তিগত ভাবে নেব? যেহেতু শিশুটি খুব বেশী ক্লান্ত এবং সেইজন্য আমরা ঐ ন্যাক্কারজনক কথাগুলি মেনে নিই না, যা শিশুটি ব্যক্তিগত ভাবে আমাদের উপর প্রক্ষিপ্ত করে। পরিবর্তে, আমরা সেই শিশুটির প্রতি আরও বেশি ধৈর্য ও ভালোবাসা জাগাই আর শিশুটিকে শান্ত করার চেষ্টা করি।
অন্য ব্যক্তি যিনি আমাদের বিরুদ্ধে গঠনমূলক ভাবে সমস্যার সৃষ্টি করেন ঐ রকম পরিস্থিতিতে আমরা ধ্যান ভাবনায় তাকে দেখার চেষ্টা করি আর তার প্রতি আরও বেশি ধৈর্য, বেশি মৈত্রী এবং আরও বেশি ইতিবাচক মনোভাব অনুশীলন করি, যাতে আমরা যখন বাস্তব জীবনে ঐ ধরণের পরিস্থিতির সম্মুখীন হই তখন আমরা সেটাকে ভালোভাবে মোকাবিলা করতে সক্ষম হই। সংক্ষেপে, বোধিচিত্তের এই অবিশ্বাস্য মনের অবস্থা হল এমন কিছু যেটা অর্জন করার জন্য, লাভ করার জন্য আমাদের পরিশ্রম করতে হবে। এর উপর ভিত্তি ক’রে ধ্যান এবং অন্যান্য পদ্ধতির মাধ্যমে যতটা সম্ভব অন্যদের সহায়তা করার দায়িত্ব ভার নিই। আর যতটা সম্ভব আমাদের সমস্ত ত্রুটি থেকে মুক্ত হই এবং নিজেদের সমস্ত সম্ভাবনাকে উপলব্ধি করি। তবে আমরা যদি শুধু আমাদের নিজেদের সুখের জন্য কাজ করি আর সেটা করি অন্যদের উপেক্ষা ক’রে অথবা সেটা করি অন্যের ব্যয়ে, তাহলে আমরা সকলেই ভুগব।
যেহেতু আপনারা এখন তরুণ, আপনারা শিক্ষার্থী, তাই আপনাদের সম্ভাব্যতা, আপনাদের ক্ষমতাকে সম্মান করতে শেখার এবং এটাকে উপলব্ধি করার এটা একটা উপযুক্ত সময়। এখন আপনাদের কাছে সমস্ত কাজের উপকরণ রয়েছে যার মাধ্যমে আপনারা বিকাশ করতে পারেন আর সেটা নেতিবাচক দিকের পরিবর্তে অথবা দিক শূণ্যের পরিবর্তে ইতিবাচক দিকে। আমরা পৃথিবীতে একা নই; তথ্য, সোশ্যাল মিডিয়া ইত্যাদির এই যুগে আমরা সকলেই সংযুক্ত। আর তাই আমরা আরও বেশি ইতিবাচকভাবে বিকাশ করতে পারি যা প্রত্যেককে গঠনমূলকভাবে প্রভাবিত করবে।
বোধিচিত্ত সম্পর্কে এইটুকু মাত্র। এখন আমাদের কাছে প্রশ্ন করার সময় আছে।
বৌদ্ধ দৃষ্টিকোণ অনুযায়ী মৈত্রী কী?
আপনি কি বৌদ্ধ দৃষ্টিকোণ অনুযায়ী মৈত্রী সম্পর্কে আরও কিছু বলবেন, বিশেষ করে পুরুষ এবং স্ত্রীর সম্পর্কের ক্ষেত্রে?
আমরা যখন বৌদ্ধ দৃষ্টিকোণ অনুযায়ী মৈত্রী সম্পর্কে কথা বলি, তখন মৈত্রী হল, যেমনটি আমরা আমাদের আলোচনায় উল্লেখ করেছি, কারও জন্য সুখী হওয়া এবং সুখের কারণে যুক্ত হওয়ার কামনা। এর অর্থ হ’ল, অন্য ব্যক্তিদের সম্পূর্ণভাবে গ্রহণ করা, তাদের শক্তিশালী এবং দুর্বল উভয় দিক। আর তাদের সুখী হওয়ার জন্য আমার কামনাটি তারা আমাকে কেমন দেখে এবং আমার সাথে কেমন আচরণ করে তার উপর নির্ভর করে না। যাই হোক না কেন, আমি চাই তারা সুখী হোক, এমনকি এর অর্থ তাদের কিছু জায়গা দেওয়া।
প্রায়শই মৈত্রী আসক্তির অর্থের সাথে মিশে থাকে (আসক্তি বলতে যখন আমাদের কাছে কিছু থাকে না আমরা সেটাকে অর্জন করার ইচ্ছা জাগাই), এটা আসক্তির অর্থের সাথেও মিশে থাকে (যা আমাদের কাছে থাকা সত্ত্বেও আমরা সেটাকে হারাতে চাই না) এবং লোভ (এমনকি কেউ যদি আমাদের বন্ধু হিসাবে থাকে, এমন কাউকে যাকে আমরা ভালোবাসি আমরা তাদের আরও বেশি পেতে চাই)। এই সবকিছু তাদের ভাল গুণাবলীর দিকে তাকিয়ে এবং সেগুলিকে অতিরঞ্জিত করার ভিত্তিতে, সেগুলিকে বড় ক’রে দেখে আর তাদের মধ্যে নিহিত ভূল-ত্রুটিগুলিকে উপেক্ষা করার উপর ভিত্তি করে। তাদের মধ্যে যে ভাল গুণাবলী আছে সেগুলি এমন হতে পারে যে তারা আমাকে পছন্দ করে, আমি যখন তাদের সঙ্গে থাকি আমি স্বস্তিবোধ করি, তারা দেখতে সুন্দর, তারা কামুক যাইহোক না কেন। এইভাবে আমরা কেবল ঐ ব্যক্তিগুলির ছোট্ট অংশকে দেখি আর সেটাকে আমরা অন্য কিছুর চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করি। সুতরাং, এটা একটা খুব বাস্তববাদী মনোভাব নয়। তারা আমার সাথে কেমন আচরণ করে তার উপর নির্ভরশীলঃ তারা যদি আমার সাথে ভাল আচরণ করে তবেই আমি তাদের ভালোবাসি; আর তারা যদি আমার সাথে ভাল ব্যবহার না করে তাহলে আমি তাদের আর ভালোবাসি না। এটা একটা স্থিতিশীল ধরণের ভালোবাসা নয়।
যেমনটি আমি বলেছি, স্থিতিশীল ধরণের মৈত্রী- যা আমরা বৌদ্ধধর্মে আলোচনা করি- এটি এমন একটি মৈত্রী যেখানে আমরা কারও ভাল এবং নেতিবাচক উভয় দিকই মেনে নিই, কারণ প্রত্যেকের মধ্যে শক্তিশালী এবং দুর্বল দিক থাকে; কেউ আদর্শ বা নিখুঁত হয় না। দেখুন, সমস্যাটি হ’ল আমাদের মধ্যে অনেকেই এখনও রূপকথায় বিশ্বাস করে। রূপকথার মধ্যে, সাদা ঘোড়ার উপর বসে আছে প্রিন্স চার্মিং বা প্রিন্সেস চার্মিং যে সম্পূর্ণরূপে নিখুঁত। আমরা সবসময় ঐ প্রিন্স বা প্রিন্সেসের সন্ধান করি। আমরা বিভিন্ন লোকজনদের প্রিন্স বা প্রিন্সেসরূপে কল্পনা করি এবং তাদের প্রেমে পড়ে যায়। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতঃ সেটা একটা রূপকথার গল্প মাত্র এবং ফাদার ক্রিসমাসের মতো বাস্তব কিছুকে বোঝায় না।
এটাকে উপলব্ধি করা খুব একটা প্রীতিকর বিষয় নয়; এটাকে মেনে নেওয়া খুব কঠিন। আর আমরা কখনো হাল ছেড়ে দিই নাঃ “যদিও এটা প্রিন্স বা প্রিন্সেসরূপে আবির্ভূত হয়নি, তবে সম্ভবতঃ পরবর্তীটি হবে।” যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা সাদা ঘোড়ায় আরোহিত প্রিন্স অথবা প্রিন্সেসরূপে কল্পনা করতে থাকি এবং তার খোঁজ করতে থাকি, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের সম্পর্ক অন্যের সাথে আমাদের প্রেমের সম্পর্কে সমস্যা থেকে যাবে কারণ আমাদের জন্য কেউই সেই আদর্শ সম্পন্ন নিখুঁত সঙ্গীর সাথে জীবন কাটাতে পারে না। তারা যখন প্রিন্স অথবা প্রিন্সেসের মতো আচরণ না করে আমরা ক্রোধিত হয়ে উঠি। বেশ, এর অর্থ হল আমরা ঐ বাস্তবতাকে মেনে নিই না যে আমার মতো তারাও মানুষ এবং তাদের মধ্যে আছে শক্তিশালী এবং দুর্বল দিক। সুতরাং, প্রকৃত ভালোবাসা, স্থিতিশীল ভালোবাসা ভিত্তি করে অন্য ব্যক্তির বাস্তবতাকে মেনে নেওয়ার উপর।
আমরা যে ব্যক্তির প্রেমে পড়ি তার বাস্তবতার আর একটি দিক যেটা আমরা প্রায়শই ভুলে যাই সেটা হল তাদের জীবনে আমরাই একমাত্র বিষয় নই। প্রায়শই, আমরা এই সত্যটি ভুলে যাই যে আমাদের সাথে থাকার পাশাপাশি তাদেরও একটা নিজস্ব জীবন আছে- তাদের আছে অনেক বন্ধু-বান্ধব, তাদের আছে পরিবার, তাদের আছে অন্যান্য দায়িত্ব। অন্যান্য জিনিসগুলিও তাদের জীবনের অঙ্গ; শুধুই আমি একা নই। সুতরাং, তারা যখন অন্যান্য লোকজনদের সাথে তাদের জীবনের অন্যান্য বিষয়ের সাথে সময় কাটায় তখন আমাদের ঈর্ষান্বিত ও দুঃখী হওয়া খুবই অযৌক্তিক। আর তারা যখন খারাপ মেজাজে থাকে অথবা আমাদের সাথে থাকতে ভালো অনুভব করে না সেটা কেবল আমার কারণে হয় না। ঐ ব্যক্তিটিকে অনুভব করে এবং যা কিছু করে তার সবকিছুর কারণ আমি নই। যদি তারা খারাপ মেজাজে থাকে তাহলে এটা তাদের পরিবারে যা কিছু চলছে তার কারণেও প্রভাবিত হতে পারে; এটা প্রভাবিত হতে পারে তাদের অন্যান্য বন্ধু-বান্ধবের কারণে; অসুস্থ হওয়ার কারণেও প্রভাবিত হতে পারে, খুব ভাল না লাগার কারণেও প্রভাবিত হতে পারে; এটা অনেক কিছুর কারণে প্রভাবিত হতে পারে। তাই আমার কেন মনে করা উচিত যে ঐ ব্যক্তি যা অনুভব করে তার একমাত্র কারণ হলাম আমি।
একইভাবে যদি এই ব্যক্তির সাথে আমার দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্ক থাকে তাহলে প্রতিদিন আমাদের মিথস্ক্রিয়াতে অনেক, অনেককিছু ঘটতে থাকে। প্রায়শই, যা ঘটে সেটা হ’ল, “সে আজ আমাকে ফোন করেনি। সে আমার টেক্সট ম্যাসেজের উত্তর দেয়নি।” আর আমরা এই একটি ঘটনার গুরুত্বকে অতিরঞ্জিত করি; আমরা এটিকে সময়ের সাথে আমাদের পুরো সম্পর্কের দীর্ঘমেয়াদী প্রেক্ষাপটে দেখি না। আর এই একটি ঘটনার কারণে আমরা একটা নিষ্কর্ষে এসে যাই যে, সে আমাকে আর ভালবাসে না। তবে এটি একটি খুব, খুবই অদূরদর্শী- শুধুমাত্র একটা ছোট্ট জিনিসের নিয়ে বিচার করা এবং এর পুরো সম্পর্ক থেকে বিচ্ছিন্নভাবে গ্রহণ করা হয়।
বাস্তবতাটা হল প্রত্যেকের জীবন, মেজাজ ইত্যাদির উত্থান এবং পতন হতে থাকে। এটাই আমাদের সত্য; এটা সকলেরই সত্য। তাই এটা খুবই স্বাভাবিক যে কখনো-কখনো ঐ ব্যক্তি যাকে আমি ভালবাসি সে আমার সাথে থাকার মতো অনুভব করে; কখনো-কখনো সেটা অনুভব করে না। কখনো-কখনো সে থাকে খারাপ মেজাজে আর সে যদি খারাপ মেজাজে থাকে অথবা সে যদি আমার টেক্সট ম্যাসেজের উত্তর দিতে সক্ষম না হয় কারণ সে খুব ব্যস্ত থাকে অথবা যাইহোক না কেন, তাৎক্ষনিকভাবে এর অর্থ এই হয় না সে আমাকে আর ভালোবাসে না; এটা জীবনের একটা অঙ্গ।
আমরা যদি আমাদের প্রেমময় সম্পর্ককে স্থিতিশীল করতে চাই তাহলে এসব কিছুকে শেখা এবং বোঝা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অন্যথা অনেক মানসিক অশান্তিও ঘটতে পারে।
একজন মহান ভারতীয় বৌদ্ধ আচার্য দ্বারা প্রদত্ত একটা ভাল উদাহরণ আছে, সেটা হল অন্যদের সাথে আমাদের সম্পর্ক হল শরৎকালে গাছ থেকে ঝরে পড়া বাতাসে উড়ে আসা পাতার মতো। কখনো-কখনো পাতাগুলি একসঙ্গে উড়ে যায় আবার কখনো-কখনো সেগুলি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এটা জীবনের একটা অঙ্গ মাত্র। তাই কারও সাথে যেকোন সম্পর্ক- হতে পারে এটা আমাদের সারাজীবন অক্ষুন্ন থাকবে, আবার হতে পারে সেটা থাকবে না।
আমাদের জানালার উপর আসা একটি বন্য পাখির মতো অন্য ব্যক্তিদের দেখার চেষ্টা করা গুরুত্বপূর্ণ। একটি সুন্দর বন্য পাখি আমাদের জানালার উপর আসে। কী চমৎকার, কী সুন্দর, কী আনন্দদায়ক যে পাখিটি আমার সাথে কিছুক্ষণের জন্য থাকে। তবে নিঃসন্দেহে পাখিটি উড়ে যাবেঃ পাখিটি, স্বাধীন আর যদি পাখিটি আবার আমার জানালার উপর আসে কী চমৎকারই না হবে! আমি কত ভাগ্যবান বলে মনে করব! কিন্তু আমি যদি পাখিটিকে ধরে খাঁচায় রাখার চেষ্টা করি তাহলে পাখিটি দুঃখী হবে এবং এমনকি মরেও যেতে পারে।
সুতরাং আমাদের জীবনে যে আসে এবং যাকে আমি ভালবাসি তার সাথে একই জিনিস প্রযোজ্য। সে এই সুন্দর বন্য পাখির মতো। সে আমার জীবনে আসে এবং আনন্দ ও সৌহার্দের অনুভূতি দিয়ে ভরিয়ে দেয়। কিন্তু সে তো ঐ বন্য পাখির মতো স্বাধীন। তাই আমরা যদি তাকে ধরে রাখার চেষ্টা করি এবং আমাদের সম্পত্তি মনে ক’রে তাকে নিজেদের আয়ত্তে রাখার চেষ্টা করি তাহলে আমরা নিয়মিতভাবে বিরক্ত করব, “তুমি আমাকে কেন ফোন করনি? তুমি আমাকে দেখতে আসনি কেন? তুমি আমার সাথে বেশি সময় কাটাওনি কেন?” এটা হল ঐ বন্য পাখিকে খাঁচায় রাখার মতো। বন্য পাখিটি তো যতদূর সম্ভব পালানোর চেষ্টা করবে। এই ব্যক্তিটি অপরাধবোধ বশে আমাদের সাথে থাকার মতো যদি ঐ বন্য পাখিটি আমাদের সাথে থাকে তাহলে সে দুঃখী হবে।
এটি একটি খুব, খুবই উপকারী চিন্তাভাবনা- আমরা যার প্রেমে পড়ি; যে আমাদের জীবনে আসে তার সম্পর্কে ভাবা; তাকে ঐ সুন্দর বন্য পাখির মতো বিবেচনা করা। আমরা যত বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করব, আমাদের মধ্যে তত কম লোলুপ থাকবে আর ততবেশি বন্য পাখিটি আমাদের জানালায় আসতে পছন্দ করবে।