মার্গক্রম (লাম-রিম) অনুশীলনের জন্য ধ্যানের পরামর্শ

যদি বুদ্ধের শিক্ষাগুলি জীবনে অনুশীলন করতে চাই, তাহলে ধ্যান-সাধনা তারজন্য অবশ্যই একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে ধ্যান এমন কিছু নয় যেটা বিশেষ ক’রেই বৌদ্ধধর্মী। আমরা সমস্ত ভারতীয় পরম্পরার পাশাপাশি ভারতের বাইরেও অবৌদ্ধ ব্যবস্থায় ধ্যান দেখতে পাই।

সংস্কৃত ভাষায় ধ্যানের জন্য ‘ভাবনা’ শব্দ নির্ধারণ করা আছে। ভাবনা শব্দটি তৈরী হয়েছে ‘ভূ’ ধাতু থেকে যার অর্থ হল ‘হওয়া, (ভবতি)’ অথবা ‘কিছুকে অন্য কিছুতে পরিবর্তন করা’। অতএব, ভাবনা হল এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে আমরা এই শিক্ষা গ্রহণ করি যে সেইভাবে মনের একটি গঠনমূলক অবস্থা গড়ে তুলতে পারি এবং লাক্ষণিকভাবে আমরা সেই অবস্থায় পরিণত হয়ে যাই। অন্য কথায়, ধ্যান সাধনার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমরা আমাদের মনকে একটি বিশেষ লাভদায়ক অবস্থায় নিয়ে যেতে পারি।

যেহেতু ‘ভাবনা’ শব্দটি সংস্কৃত মূল ‘ভূ’ ধাতু থেকে তৈরী হয়েছে, ‘ভবতি’ রূপ থেকে, তাই ভাবনা শব্দ রূপান্তরকে বোঝায়। উদাহরণ স্বরূপ, আমরা যদি মৈত্রীর উপর ধ্যান ভাবনা করি তাহলে তখন আমরা আসলে আমাদের হৃদয়ে মৈত্রীর সাথে নিজেকে রূপান্তরিত করি। যখন এই শব্দাবলীটি সংস্কৃত ভাষা থেকে তিব্বতী ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছিল, তখন এটাকে যে শব্দ দিয়ে অনুবাদ করা হয়েছিল তার অর্থ হল ‘অভ্যাস গড়ে তোলা’। এর তিব্বতী শব্দ হল ‘গোম’। ‘গোমের’ অর্থ হল কিছু ইতিবাচকে নিজেকে অভ্যস্থ করা, নেতিবাচক বা নিরপেক্ষ বস্তুতে নয়। এইভাবে এর অর্থ বোঝায় ইতিবাচক, গঠনমূলক অভ্যাস গড়ে তোলা।

তাই এর তিব্বতী শব্দটি সংস্কৃত শব্দের অর্থ অথবা নিহিতার্থে বেশ মিল আছে। উভয় পদের অন্তর্নিহিত অর্থ হল আমাদের লক্ষ্যের মতো হয়ে উঠতে নিজেকে রূপান্তরিত করার জন্য- একটা মৈত্রীময় হৃদয় বানানোর জন্য- আমাদের একটা লাভদায়ক অভ্যাস হিসাবে মৈত্রী উৎপন্ন করতে হবে। এই লাভদায়ক অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য আমরা যে পদ্ধতি ব্যবহার করি সেটা হল ধ্যান।

Top