বিচার-ধ্যান
সাধারণতঃ ধ্যানের দুটি স্তর আছে- বিচার-ধ্যান এবং স্থাপন-ধ্যান। বিচার ধ্যানের ক্ষেত্রে আমরা প্রগতিশীল পদক্ষেপের মাধ্যমে অথবা একটি যুক্তি সমূহের মাধ্যমে কাজ করি, যেমনকি আমরা চিন্তা-ভাবনার প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে করেছি। আমরা এটা করি একটা মনের অবস্থা নির্মাণ করার জন্য, যার সাথে আমরা পরিচিত হওয়ার চেষ্টা করি। করুণার ক্ষেত্রে আমরা নিজেদের দুঃখের কথা ভেবে শুরু করি এবং তার থেকে মুক্ত হওয়ার সংকল্প উৎপন্ন করি। তারপর এটাকে আধার বানিয়ে আমরা আমাদের চারিপাশের প্রাণীদের প্রচুর ভিড়ের কথা কল্পনা করি এবং আসক্তি, বিকর্ষণ এবং উদাসীনতা থেকে মুক্ত হয়ে আমরা আমাদের মন ও হৃদয় সকলের জন্য খুলে দিই। এরপর সকল প্রাণীদের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখে আমরা আমাদের আন্তঃ সংযোগ এবং তাদের সকলের উপর নির্ভরশীলতার কথা স্মরণে রেখে ক্রমাগত কাজ করা শুরু করি।
তারপর ঐ প্রাণীদের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করার সময় আমরা তাদের সমস্ত দুঃখের কথা স্মরণ করি, যেটা তারা ভোগ করে। প্রায় তারা অসুখী এবং হতাশ থাকে এবং যেকোন সুখ যেটা তারা ভোগ করে সেটা কখনো স্থায়ী হয় না এবং তারা কখনো সন্তুষ্টও হয় না। তারা সুখী হওয়ার চেষ্টা করে কিন্তু নিজেদের সুখী করার জন্য যা চেষ্টাই করুক না কেন, তাদের চেহারা সম্পর্কে আবিষ্টতা বা বেশি জিনিসপত্র সঞ্চয় করার আবিষ্টতার মতো সেটা কখনো কাজ করে না, বরং সেগুলি তাদের জন্য আরও বেশি সমস্যার সৃষ্টি করে। আমরা আমাদের স্মরণ করিয়ে দিই যে, আমরা সকলেই একই পরিস্থিতিতে একসাথে আছি এবং সেই জন্য আমাদের একে-অপরের সহযোগীতার প্রয়োজন হয়। এর কারণ হচ্ছে আমরা প্রত্যেকে যদি স্বার্থপর হয়ে যাই তাহলে আমরা সকলেই দুঃখ ভোগ করব।
এইভাবে আমরা করুণা বোধ পর্যন্ত নিজেদের তৈরী করি। উক্ত বোধশক্তির সাথে এবং সকলের জন্য সমান ভাবে সমস্ত দুঃখ থেকে মুক্ত হওয়ার ইচ্ছা নিয়ে আমরা বিশাল সত্ত্ব-সমূহের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করি। এছাড়াও আমরা ব্যক্তিগত ভাবে এই উদ্দেশ্যের সাথে তাদের সমস্যা গুলি দূর করতে সহযোগীতা করার জন্য কিছু করি।
বিচার-ধ্যান দ্বারা আমরা তখন ক্রমাগত ভাবে সত্ত্ব-সমূহের উপর করুণাপূর্বক দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে থাকি। কিন্তু একই সাথে আমরা আমাদের করুণার অনুভূতি জাগানোর জন্য যে সমস্ত বিবরণ এবং বিষয় গুলির মধ্য দিয়ে গিয়েছিলাম সেগুলি আমরা বিচার করি অর্থাৎ বুঝি এবং সনাক্ত করি। এর জন্য আমাদের মনের করুণাময় অবস্থা অন্তর্ভুক্ত করে স্থূল সনাক্তকরণ এবং সূক্ষ্ম বিচারের কারণ গুলি। আগেরটা দিয়ে শুধুমাত্র বিজ্ঞপ্তির অর্থে আমরা আমাদের দৃষ্টি নিবদ্ধের সবচেয়ে সাধারণ বিষয়টি সনাক্ত করি অর্থাৎ তারা যে দুঃখে পীড়িত সেই তথ্যকে। পরেরটা দিয়ে আমরা বিভিন্ন রকমের দুঃখের সমস্ত বিস্তৃত বিবরণ, যেটা তারা ভোগ করে সেটা পার্থক্য করি। দুটির সংমিশ্রণ দ্বারা আমরা উক্ত বিষয় সম্পর্কিত সমস্ত পয়েন্ট গুলি বোধ করি। দুটির সংমিশ্রণ দ্বারা আমরা উক্ত বিষয় সম্পর্কিত সমস্ত পয়েন্ট গুলি বোধ করি এবং সনাক্ত করি যে, বিষয় গুলি মনের একটি অবস্থায় একসঙ্গে সংশ্লেষিত হয়ে থাকে, যা কিছুটা একটি বিস্তারিত এবং গভীর জ্ঞানময়ের মতো। কিন্তু প্রতিটি বিন্দু একের পর এক না ক’রে অথবা এগুলিকে আমরা আমাদের মনে ভাষায় প্রকাশ না ক’রে করি। এই খুঁটিনাটি বিষয়ের সনাক্তকরণ এবং বিচার বুদ্ধি যদি দুর্বল হয়ে যায় তাহলে আমরা সমস্ত পয়েন্ট গুলি আরও একবার এক-এক ক’রে বিচার করি এবং তারপর আবার করুণা উৎপন্ন করি যা স্থূল সনাক্তকরণ, সূক্ষ্ম বিচার-বুদ্ধি এবং সমাধিতে পরিপূর্ণ থাকে।
স্থাপন-ধ্যান
আমরা স্থাপন-ধ্যান দিয়ে বিচার-ধ্যান অনুসরণ করি। এবার আমরা একই করুণার সাথে বিশাল সত্ত্ব-সমূহদের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করাটা বহাল রাখি, কিন্তু এই সময় করি তাদের দুঃখের স্থূল সনাক্তকরণ বা সূক্ষ্ম বিচার-বুদ্ধি ছাড়া, তারা যে পীড়িত তার বোধ শক্তি এবং মননশীলতার সাথে। সেটাই ধ্যানের প্রক্রিয়া অর্থাৎ আপনি কোন কিছুকে কীভাবে সংহত করেন, আপনি তাতে অভ্যস্ত হয়ে যান। আমরা কোনও ধরণের ধ্যানের কথা বলছি কি না যাতে আমরা একটা বিষয়ের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করি, অথবা এক ধরণের ধ্যান যেখানে আমরা শুধু একটি মনের অবস্থায় থাকি, অথবা এমন একটা ধ্যান যেখানে উভয়কে সংযুক্ত করে। এটি সকল পদ্ধতি এবং বিবরণের ক্ষেত্রে একেবারে একই।
বিচার-ধ্যান এবং স্থাপন-ধ্যানকে একে-অপরের থেকে পার্থক্য করা
পরম পূজ্য দালাই লামা আমাদের মানসিক ক্রিয়া-কলাপের শক্তির দিক দিয়ে বিচার-ধ্যান এবং স্থাপন-ধ্যানের পার্থক্যের উপর ব্যাখ্যা করেছেন। এই দুটির মধ্যে পার্থক্য করার এটি একটি সূক্ষ্ম এবং পরিশোধিত উপায়। বিচার ধ্যানের ক্ষেত্রে আপনার মনোনিবেশের শক্তি বাইরের দিকে যায়, যার অর্থ হচ্ছে এটি কোনো বস্তুর সমস্ত বিবরণ বিচার করে। স্থাপন-ধ্যানের ক্ষেত্রে, আপনার মনোনিবেশের শক্তি ভিতরের দিকে আসে, এর অর্থ হচ্ছে আবেগ বা বোধশক্তি নিমজ্জিত হতে দেওয়াতে মনোনিবেশ করা। এটা আসল পয়েন্টের অনুস্মৃতি বা মননশীলতার উপর আধারিত যেটাকে বিচার-ধ্যান পৌঁছায়। শক্তিটি বিস্তৃতরূপে ছড়িয়ে পড়ে না, যেমনটা বিচার-ধ্যানের ক্ষেত্রে হয়, বরং এটি আরও সংকীর্ণ এবং আসল বিন্দুর উপর শান করা থাকে।
কাউকে করুণার সাথে বিচার করা অর্থাৎ সমস্ত শক্তি বাইরের দিকে চলে যায় এবং সেটাকে করুণার সাথে স্থাপিত করা অর্থাৎ যেখানে শক্তি আরও বেশী একাগ্র থাকে, এই দুটির মধ্যে পার্থক্য করাটা খুবই পরিশীলিত। এটি মনকে প্রশান্ত করা থেকে প্রাপ্ত একটি উপকারিতা। আপনি যদি আপনার মস্তিষ্কে উদ্ভূত সমস্ত কোলাহলকে (অবিরত কথা বলা, মন্তব্য করা, আইপডে সংগীত বাজানো) কিছুটা হলেও শান্ত করতে সফল হন, তাহলে আপনি নিজের শক্তির প্রতি সংবেদনশীল হতে শুরু করতে পারেন। পাশাপাশি আপনি বলতে পারবেন যে, আপনার মানসিক শক্তি কোন্ অবস্থাতে রয়েছে।
আপনার শক্তির প্রতি সংবেদনশীল হয়ে উঠতে শুরু করার সর্বোত্তম উপায় হ’ল যে, দৃষ্টি নিবদ্ধ করা আপনার শক্তি বিশৃঙ্খল না শান্ত। উদাহরণ স্বরূপ, আপনি ক্রোধ, ভয়, উদ্বেগ, লোভ বা অহংকারের মতো বিশৃঙ্খল আবেগের প্রভাবে আছেন কি না সেটা সনাক্ত করার উপায়টি হ’ল- আপনার শক্তি শান্তিপূর্ণ নয়।
আপনি যখন কারও সাথে কথা বলেন, আপনি তখন যদি অনুভব করতে পারেন যে, আপনার পেটে টান ধরছে, তাহলে সেটা বোঝায় যে আপনার শক্তি একটু অস্থির হয়ে উঠেছে। সেটা একটা ভাল সূত্র যে, কোনও ধরণের বিশৃঙ্খল আবেগ জড়িয়ে আছে। আপনি ঐ ব্যক্তিকে মুগ্ধ করার চেষ্টা করছেন, অথবা তাকে কিছু বোঝানোর চেষ্টা করছেন বা সেখানে কিছু আগ্রাসন রয়েছে। এগুলির মধ্যে যে কোনও একটা নির্দেশ করতে পারে যে, আপনার মনে কোনো বিশৃঙ্খলা চলছে। একবার যদি আপনি বুঝতে পারেন যে কিছু একটা সমস্যা আছে, আপনি তখন এক অর্থে আপনার মনকে উদ্গীরণ করতে চিন্তা-ভাবনার প্রক্রিয়াটি পুনরায় চালু করার সুযোগ পেয়ে যান। তারপর আপনার মিথস্ক্রিয়ার পিছনে যে আবেগ রয়েছে সেটাকে পরিবর্তন করতে পারবেন এবং আরও বেশী কুশল কর্ম প্রতিস্থাপন করতে পারবেন। বিশেষ করে কারও সাথে বিনিময় করার সময় আপনাকে অবশ্যই বিশৃঙ্খল আবেগ গুলি সনাক্ত করতে সক্ষম হতে হবে।
সময়ের সাথে-সাথে এবং অনুশীলনের সাথে আপনি শেষ পর্যন্ত যথেষ্ট সংবেদনশীল হয়ে ওঠেন। এর দ্বারা আপনি বিচার-ধ্যানের বাহ্যিক বিস্তৃত শক্তি এবং স্থাপন-ধ্যানের অভ্যন্তরীণ সংকীর্ণ শক্তির মধ্যে পার্থক্য করতে সক্ষম হয়ে উঠবেন।
একাগ্রতা (সমাধি) লাভের জন্য প্রয়োজনীয় বিষয়গুলি
একাগ্রতা লাভের জন্য প্রয়োজনীয় বিষয় গুলি বিচার-ধ্যান এবং স্থাপন-ধ্যান উভয় ক্ষেত্রেই সাধারণ। শান্তিদেব বোধিচর্যাবতার নামক গ্রন্থে এদের বিষয়ে নৈতিক শৃঙ্খলা বিকাশের প্রসঙ্গে আলোচনা করেছেন। সুতরাং সর্বপ্রথম এই প্রক্রিয়া গুলি আমাদের স্থূল আচরণের ক্ষেত্রে বিকাশ করতে হবে অর্থাৎ আমরা কেমন করে আচরণ করব এবং কথা বলব, এবং তারপর কীভাবে সেগুলিকে আমাদের মনে প্রয়োগ করব।
উভয় ক্ষেত্রে আমাদের যে চৈত্য বা চেতসিক প্রয়োজন এবং প্রয়োগ করা হয় সেটা হ’ল অনুস্মৃতি বা মননশীলতা। এটা মানসিক আঠার মতো যা মনের অবস্থা বা আচরণ প্রক্রিয়ায় ধারণ করে। এটা “স্মরণ করা”-এর মতো একই শব্দ, কিন্তু আমরা স্মরণ করার কথা এই অর্থে বলছি না যে, আমাদের স্মৃতির ফাইল থেকে কিছু নিয়ে নিলাম এবং সেটাকে স্মরণ করলাম। এটা সেরকম নয়। এটার অর্থ হচ্ছে- কোনোকিছুকে ধরে রাখা এবং স্মরণ করা। আমরা যে বিষয়টির দিকে মনোনিবেশ করি এবং মনটা যেভাবে এর সাথে সম্পর্কিত সেটার জন্য আমাদের মানসিক আঠা প্রয়োজন। অনুস্মৃতির সাথে ধ্যান করার সময় আমরা আমাদের মানসিক নিয়ন্ত্রণ লক্ষ্য রাখি।
চোংখাপা ব্যাখ্যা করেছেন- আমরা এখানে স্থূল সনাক্তকরণের চৈত্যকে নিযুক্ত করি এটা দেখার জন্য যে, আমাদের মনের অবস্থা বিশৃঙ্খল আবেগের প্রভাবে, মানসিক বিক্ষেপতা বা নিস্তেজতার প্রভাবে আসছে কিনা। এটা তাৎপর্যপূর্ণ যে, তিনি সূক্ষ্ম বিচার বুদ্ধির চেয়ে স্থূল সনাক্তকরণকে নির্দিষ্ট করেছেন। সূক্ষ্ম বিচার বুদ্ধি সূক্ষ্ম বিবরণ পরীক্ষায় জড়িত হয়, যাতে আমাদের মনোযোগ প্রাথমিক ভাবে আপনার মনোনিবেশের বিষয়ের উপর হবে না। ধ্যানে একটা বড় বিপদ আছে যে, ধ্যান করার সময় আমরা খুব ভৌতিক হয়ে যেতে পারি অর্থাৎ বিষয়কে হারিয়ে ফেলতে পারি এবং আমরা বিক্ষিপ্ত হওয়া শুরু করতে পারি। ফলে আমরা শক্ত এবং সোজা হয়ে যাই। এটি একটি বড় সমস্যা তৈরী করে। অন্যদিকে আপনি খুব শিথিল এবং পঙ্কিলও হতে চান না। এটি কিছুতেই উপকার করে না।
এরপর আমাদের প্রয়োজন সতর্কতা যা একটা বিপদাশঙ্কার সিস্টেমের মতো। আমরা যখন সনাক্ত করি যে, আমরা ধ্যানের উদ্দেশ্যটি হারাচ্ছি, সতর্কতা তখন বিপদ সংকেত দেওয়া শুরু করে দেয় যে, আমাদের কিছু একটা সংশোধন করতে হবে। তারপরেই আমরা মনোযোগ দ্বারা মনোনিবেশটি ফিরিয়ে আনি।
যে ত্রুটিগুলি সংশোধন করা প্রয়োজন
দুটি ত্রুটি আছে যার থেকে আমরা মুক্তি পেতে চাই। এরা দুটি প্রধান শ্রেণীর আওতায় পড়ে- “মনের চঞ্চলতা” এবং “মানসিক নিস্তেজতা”। মনের চঞ্চলতা বলতে বোঝায়- যেখানে আমাদের মন আসক্তি অথবা আকাঙ্খার কারণে বিক্ষিপ্ত হয়ে থাকে। এটা মৌখিক চিন্তা-ভাবনা বা মানসিক চলচিত্রের রূপ ধারণ করতে পারে। বেশীর ভাগ পারম্পারিক গ্রন্থগুলি যৌন আসক্তিকে যুক্ত ক’রে এই চঞ্চলতা সম্পর্কে আলোচনা করে। এর কারণ হচ্ছে, সম্ভবতঃ সেই সময় প্রধান শ্রোতা ছিল ব্রহ্মচারী ভিক্ষু এবং ভিক্ষুণী যাদের ক্ষেত্রে যৌন আসক্তি ত্যাগ করাটা প্রমুখ বিষয় ছিল। তবে আসক্তি কিন্তু খাবার বা সংগীতের প্রতিও হতে পারে। এর বিপরীতে, মানসিক বিচরণ জন্ম নেয় কোনো বিশৃঙ্খল আবেগ, বিচার এমনকি কোলাহল বা অন্য কোনো সংবেদনশীল অনুপ্রবেশের কারণে। আরও সাধারণ শব্দে, মানসিক বিচরণকে “বিক্ষেপ”-ও বলা যেতে পারে।
মনের চঞ্চলতার কয়েকটি ধাপ আছে যা বিষয় বা অনুভূতি সম্পর্কে আমাদের মনোযোগের স্থান নির্ণয়ের সাথে মোকাবিলা করে।
- স্থূল চঞ্চলতা- আপনি বিষয়ের উপর পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন এবং সব রকমের জিনিস সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করতে শুরু করেন। ফলে অনুস্মৃতি অর্থাৎ মানসিক আঠা এত দুর্বল হয়ে যায় যে, আপনি বিষয়কে পুরোপুরি ভুলে যান।
- সূক্ষ্ম চঞ্চলতা- আপনি বিষয়টিকে সম্পূর্ণরূপে ছেড়ে দেন না। কিন্তু একই সময়ে বিষয়টিকে ধরে রেখে আপনার মধ্যে অন্যকিছুর সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনার একটা অন্তঃপ্রবাহ থাকে।
- সূক্ষ্মতম চঞ্চলতা- আপনার মধ্যে এমনকি উক্ত অন্তঃপ্রবাহও থাকে না। তবে সেখানে থাকে বিষয়টিকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য এক ধরণের নিশপিশ (চুলকানি) এবং অন্যকিছুর সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা। এটা আসলে ঘটতে পারে যখন মানসিক নিয়ন্ত্রণ খুব তীব্র হয়।
মানসিক নিস্তেজতা বস্তুর নির্মলতার সাথে সম্পর্কিত। এটা উপস্থিতি বা আকার হতে পারে যদি এটা একটা দৃশ্যায়ন হয়, অথবা হতে পারে অনুভূতি যদি কিনা এটা করুণার মতো মনের একটা অবস্থা হয়।
- স্থূল নিস্তেজতা- আপনার “উপস্থিতি-নির্মাণ”-এর মনের ক্রিয়াকলাপ এত দুর্বল যে, এটি কোন দৃশ্যায়ন বা অনুভূতিকে মোটেই জন্ম দিতে পারে না। এর সাথে আরও দুটি কারণ সহগমন করে। সেই দুটি “কুয়াশাচ্ছন্ন মানসিকতা” নামে পরিচিত। এটি শরীর এবং মনের একটি ভারী অনুভূতি অথবা নিদ্রালুতা বা এমনকি নিদ্রা।
- সূক্ষ্ম নিস্তেজতা- এর ক্ষেত্রে সেখানে একটি উপস্থিতি থাকে কিন্তু এর উপর নিয়ন্ত্রণ যথেষ্ট শক্ত থাকে না। তাই এতে তীক্ষ্ণতার অভাব থাকে। আমরা এখানে শুধু একটি দৃশ্যায়নের খুঁটিনাটির উপর তীক্ষ্ণ মনোনিবেশ সম্পর্কে কথা বলছি না। এটি শুধু একটি খুবই অস্পষ্ট অনুভূতি হতে পারে, “মৈত্রী, শান্তি, আমি সকলকে ভালবাসি।” আপনি একটি অনুভূতির জন্ম দিচ্ছেন, কিন্তু এতে একটা নির্দিষ্ট মনোনিবেশের অভাব রয়েছে অর্থাৎ সকলের জন্য প্রার্থনা যে, তারা দুঃখ এবং দুঃখের কারণ থেকে মুক্ত হোক। আমাদের মনে রাখতে হবে, আমরা যে প্রতিটি বিবরণ, মনের অবস্থার প্রতিটি দৃষ্টিভঙ্গি উৎপন্ন করতে চাই সেটা খুবই নির্দিষ্ট। এটাকে অস্পষ্ট হওয়া উচিত নয়।
- তীক্ষ্ণতম নিস্তেজতা- আপনার মন যখন বিষয়ের জন্ম দেয় তখন আপনার মনোনিবেশ তীক্ষ্ণ থাকে। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণ খুব শক্ত হয় না। তাই এটা তরতাজা, প্রগাঢ় এবং জীবন্ত হয় না। এটাকে প্রতি মূহুর্তে তরতাজা থাকতে হবে, একটা বাসি রুটির মতো নয় যেটা খুব পুরনো এবং শক্ত হয়ে গেছে, আর যেটা খুব ভাল না।
আমরা যখন “বাক্যহীন” হওয়ার কথা বলি, তখন উপরের যে কোনও একটি দোষকে নির্দেশ করতে পারে। ফলে এদের মধ্যে যদি কোনও একটার উদয় হয় তাহলে আমাদের সেটাকে সনাক্ত করতে সক্ষম হতে হবে। প্রথমে বিষয় বা মনের অবস্থার উপর আপনি আপনার মানসিক নিয়ন্ত্রণ স্থাপন করুন। তারপর মানসিক আঠা রূপী অনুস্মৃতির সাহায্যে সেটাকে যেতে দেবেন না।
সফল ধ্যানের জন্য এটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ধরে রাখুন, কিন্তু শক্ত করে নয় এবং খুবই শিথিল ভাবেও নয়। উদাহরণ স্বরূপ, আপনি খাদ্যসংযম অভ্যাসে (ডায়েট) যুক্ত আছেন, আপনি রুটির কারখানার পাস দিয়ে হাঁটছেন, কারখানার জানালার উপর সুন্দর কেক সাজানো দেখতে পেলেন। ঐ সময় আপনার ডায়েট নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, নিয়ন্ত্রণ করুন এবং ঐ নিয়ন্ত্রণ হারাবেন না। অর্থাৎ আপনি দোকানে যাবেন না এবং একটা চকলেট কেকও কিনবেন না। অথবা কেউ টেবিলের উপর প্রত্যেককে আইসক্রিম পরিবেশন করছে। ঐ পরিস্থিতিতে আপনাকে নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে। আপনি আপনার ডায়েটকে হারাবেন না। বলুন, “না ধন্যবাদ! আমি এখন খাদ্য সংযম অভ্যাসে আছি।”
অতএব আমাদের প্রয়োজন সনাক্তকরণ করা যে, আমরা বিপথে চলছি কিনা, “মানসিক স্থান নির্ণয়ে এবং বিষয় নিয়ন্ত্রণে আমার কোনও দোষ আছে কিনা। বিষয়ের বা অনুভূতির উত্থানে আমার মনের কোনও ভুল আছে কিনা।” এই দেখার জন্য। আমরা যদি কোনও ত্রুটি সনাক্ত করি তাহলে সতর্কতা অভ্যন্তরীণ বিপদ সংকেত দিয়ে দেয় আর মনোযোগ আমাদের মনোনিবেশ ফিরিয়ে আনে। একই সময়, আমাদের অবশ্যই এই বিষয়ে একটা ভৌতিক পুলিশ হওয়া উচিত নয় যেখানে “আমি” অর্থাৎ পুলিশ এবং “আমি” অর্থাৎ ধ্যানমগ্ন-এর মধ্যে উক্ত দ্বৈতবাদ থাকে। এই ধরণের দ্বৈতবাদী ধ্যানকে ত্যাগ করার জন্য আমাদের মধ্যে আত্ম-শূন্যতা বিষয়ে কিছু জ্ঞান থাকা দরকার। এর অর্থ হ’ল- আমরা সম্পূর্ণরূপে এই অসম্ভব দ্বৈতবাদী রূপে বিদ্যমান হওয়া থেকে বর্জিত।
ধ্যানে প্রশিক্ষিত দক্ষতার ব্যবহারিক প্রয়োগ
অনুস্মৃতি এবং একাগ্রতার সাথে কোনও বস্তুর উপর মনোনিবেশ করতে সক্ষম হওয়া হল এমন কিছু যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজন হয়। আমরা ধ্যান অনুশীলন করি, কারণ আমরা যে সমস্ত উপকারী অভ্যাস গুলি বিকাশ করি সেগুলি আমাদের জীবনে প্রয়োগ করতে সক্ষম হওয়ার জন্য। উদাহরণ স্বরূপ, আমরা যখন কারও সাথে কথা বলি অথবা তাদের কথা শুনি, তখন আমাদের মনোযোগ দেওয়া দরকার। আমাদের দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখতে হবে। ঐ সময় মধ্যাহ্ন ভোজন সম্পর্কে ভাবা অথবা মানসিক ভাবে ভাষায় প্রকাশ করা উচিত না। “চুপচাপ থাকো এবং চলে যাও।” সুতরাং একাগ্রতা অনুশীলনের জন্য ব্যক্তিগত মিথস্ক্রিয়া, আমাদের কাজ-কর্ম, আমাদের অধ্যয়ন এবং এই জাতীয় ক্রিয়াকলাপ একদম নিখুঁত ক্ষেত্র।
চারটি আশ্রয়
আমাদের ধ্যান অনুশীলনে একাগ্রতা অর্জন করার জন্য কাজ করার সময় দুটি জিনিসের প্রয়োজন হয়। ঐ দুটি হ’ল- বীর্য (প্রায়শই “অধ্যাবসায়” বলা হয়) এবং ধৈর্য্য (ক্ষান্তি)। বীর্য হয় শক্তিশালী, বীরত্বপূর্ণ সাহস এবং ইতিবাচক কিছু সাধন করার চেষ্টা; অন্যদিকে ধৈর্য্য হল নিরুৎসাহিত বা রাগ না ক’রে সমস্ত কষ্ট এবং অসুবিধাকে সহ্য করার ক্ষমতা। আচার্য শান্তিদেব তাঁর গ্রন্থ বোধিচর্যাবতারে ব্যাখ্যা করেছেন যে, বীর্যকে বিকাশ করতে ছয়টি কারণ সহায়তা করতে পারে। উক্ত কারণ গুলি চারটি আশ্রয় এবং দুটি বল হিসাবে পরিচিত। এগুলি জানা এবং সঙ্গে কাজ করা উপকারী।
প্রথমটিকে দৃঢ় বিশ্বাস বা দৃঢ় অধিমুক্তি বলা হয়। অধিমুক্তি একটা শক্তিশালী শব্দ যা ইচ্ছাকে বোঝায়। এটাকে লক্ষ্য অর্জনের লাভের বিষয়ে এবং অর্জন না করার ত্রুটি গুলি দৃঢ়ভাবে নিশ্চিত হওয়া হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়, যাতে এটাকে অর্জন করার অধিমুক্তিটি আন্দোলিত না হয় বা প্রত্যাবর্তন না হয়ে যায়। আমরা যখন মনের বিভিন্ন অবস্থা সম্পর্কে অধ্যয়ন করি তখন বৌদ্ধ অনুশীলন দিয়ে সেটা প্রাপ্ত করতে চাই। উপস্থাপনাটি প্রায় সবসময় এটাকে প্রাপ্ত করার লাভ এবং না করার ত্রুটিগুলি প্রস্তুত করে। এগুলি অধ্যয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। শান্তিদেব তাঁর গ্রন্থে এই পদ্ধতিটি অনুসরণ করেছেন। উক্ত গ্রন্থটির প্রথম অধ্যায় হ’ল- বোধিচিত্ত-অনুশংসা। মনের এই অবস্থা থাকার লাভ সম্পর্কে আমরা নিশ্চিত হই। এটা আমাদের শক্তি জোগায় এবং এটার জন্য কাজ করতে আমরা আনন্দিত হই। আমরা যখনই নিরুৎসাহিত হই তখনই আমরা যে লক্ষ্য প্রাপ্ত করতে চাই তার অনুশংসা সম্পর্কে নিজেদের স্মরণ করিয়ে দেওয়া ভাল।
পরেরটা হল স্থিরতা বা আত্মবিশ্বাস। “স্থিরতা”-এর অর্থ হচ্ছে অনুশীলনের প্রতি অটল এবং অধ্যাবসায় থাকা। এটার উৎপত্তি হয় পরীক্ষা করা থেকে যে, আমরা যে লক্ষ্যটি অর্জন করতে চাই আমরা কি সেটা অর্জন করতে সক্ষম এবং নিশ্চিত হওয়া যে, আমরা সক্ষম। তারপরে, আত্মবিশ্বাসের সাথে আমরা স্থিরভাবে নিজেদের প্রয়োগ করি, এমনকি উন্নতিতে যদি উত্থান এবং পতনও ঘটে। এটাই হল বাস্তবতা যা ঘটে থাকে। কিছুদিন খুব ভাল যাবে এবং অন্যান্য দিন গুলি হবে ভায়াবহ। কয়েকটা দিন আমরা যাওয়ার জন্য দৌড়াবো এবং কিছুদিন আমরা একেবারেই অনুশীলন করতে চাইব না। তবে আমরা যদি লাভ সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে যাই, তাহলে আমাদের কাছে যদি কবচের স্যুট হিসাবে বর্ণিত অধ্যাবসায় থাকে তাহলে আমরা ভাববো “এতে কিছু যায় আসে না। এর উত্থান হোক বা পতন, আমি পাত্তা দিই না। আমি শুধু প্রতিদিন স্থির ভাবে চালিয়ে যাচ্ছি। আমি জানি যে শেষ পর্যন্ত আমার লক্ষ্য প্রাপ্ত করা সম্ভব।” আমরা যখন দীর্ঘ সময় ধরে উন্নতি করি তখন আমরা ক্রমাগত আরও একাগ্র হওয়ার প্রবণতা দেখতে পাই। ফলে আমরা পরের আশ্রয়টি বিকাশ করি। পরের আশ্রয়টি হল “মুদিতা”। আমরা অল্পমাত্র উন্নতিতে সন্তুষ্ট হই না। অতএব আমরা আত্ম-তুষ্টির ধারণার সাথে আরও উন্নত করতে মহানন্দ অনুভব করি। স্পষ্টতই এর ফলটা এরকম হবে যে, আমরা আরও সুখী হব, কারণ পুরো বিষয়টি হবে দুঃখকে নিবারণ করা। যখন আমাদের মন কম বিক্ষিপ্ত হবে, কম দুঃখী হবে এবং কম বিশৃঙ্খল হবে, অবশ্যই আমরা আরও বেশী সুখী হব। এটা দেখে আমরা এগিয়ে যাওয়ার বিষয়ে এবং আরও বেশী উন্নতি করতে আগ্রহী হয়ে উঠি।
চতুর্থ আশ্রয়টি হ’ল বিশ্রাম। এর অর্থ হচ্ছে আমরা যখন ক্লান্ত হয়ে যাই আমরা একটা বিরতি নিই। এটা আমাদের অলসতার কারণে নয়, বরং নিজেদের সতেজ করার জন্য। আমাদের প্রচেষ্টাকে নষ্ট করার জন্য নিজের উপর খুব বেশী চাপ দেওয়া, নিজেদের জ্বলতে বাধ্য করার চেয়ে খারাপ কিছু হতে পারে না। সত্যিই বেশী চাপ দিলে সেটা শরীরের শক্তিকে বিপর্যস্ত করে তোলে- এটা একটা বেলুনকে না ফেটে যাওয়া পর্যন্ত চেপে ধরে রাখার মতো। আমাদের নিজেদেরকে বিচার করতে সক্ষম হতে হবে এবং নির্ধারণ করতে হবে যে, আমাদের কখন বিশ্রাম প্রয়োজন। এর জন্য দোষী বোধ করলে হবে না। এমন কিছু চয়ন করা ভাল যা আমাদের শিথিল করতে সহায়তা করে কিন্তু নিজেদের বিশৃঙ্খল আবেগের বৃদ্ধি করলে হবে না। অবশ্যই এটা প্রতিটি ব্যক্তির ক্ষেত্রে আলাদা হবে। এই গুলি হ’ল চারটি আশ্রয়।
দুটি বল
এবার এল দুটি বল। প্রথমটি হল- স্বাভাবিক ভাবে গ্রহণ। এর অর্থ হচ্ছে আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছোনোর জন্য আমাদের কী অনুশীলন করতে হবে এবং আমাদের কী থেকে মুক্তি পেতে হবে সেটাকে স্বাভাবিক ভাবে গ্রহণ করা বা মেনে নেওয়া। আমরা আমাদের পরিস্থিতির বাস্তবতাকে দেখি এবং নিজেদের মুক্ত করার জন্য যে কষ্ট গুলি জড়িত সেগুলিকে আমরা মেনে নিই। উদাহরণ স্বরূপ, বিশৃঙ্খল আবেগ গুলি। শুরুতে আমাদের বাস্তব সম্মত হতে হবে যাতে পরবর্তীতে আশ্চর্যচকিত না হতে হয় এই দেখে যে, এটা কত কঠিন হতে পারে!
পরম পূজ্য দালাই লামা প্রায় বলেন, “যে কোনও বৌদ্ধ শিক্ষক বা ব্যক্তি যিনি দাবি করেন যে, বৌদ্ধ ধর্ম সহজ এবং দ্রুত, ঐ ব্যক্তি এবং তার অনুপ্রেরণার প্রতি সন্দেহ করুন। কারণ এটা মোটেও সহজ বা দ্রুত নয়। আমরা বিশৃঙ্খল আবেগ গুলিতে এতটাই অভ্যস্ত যে, শুধু একটা ঔষধের বড়ি সেবন করার মতো তার থেকে মুক্তি পাওয়ার কোনও সহজ উপায় নেই।” আমার অন্য একজন শিক্ষক মহাশয়, গেশে নওয়াং দরগে সবসময় বলতেন, “যে কেউ বৌদ্ধধর্মের সহজ এবং দ্রুতগতির পথের প্রতি আকৃষ্ট হয়, এটি হয় মূলতঃ অলসতার কারণে। সেই ব্যক্তি আসলে পরিশ্রম করতে চায় না, যেটা বাস্তবে প্রয়োজন।
দ্বিতীয় বলটি হচ্ছে “দখল করা”। এর অর্থ হল- দখল করা এবং আমরা যা প্রাপ্ত করতে ইচ্ছুক তাতে নিজেদের প্রয়োগ করা। আলস্যতা বা অন্যান্য বিশৃঙ্খল আবেগের দখলে যাওয়ার পরিবর্তে আমরা যেটা প্রাপ্ত করতে চাই সেটাকে দখল করা উচিত। আমরা নিজেরাই বলি, “একটা শিশুর মতো আচরণ করা বন্ধ কর! একত্রিত কর এবং এটা কর।”
ক্লান্ত না অলস?
কেউ হয়তো ভাবতে পারে যে, আমরা কীভাবে ক্লান্তি এবং অলসতার মধ্যে পার্থক্য করতে পারি। প্রথমতঃ অলসতা বিভিন্ন প্রকারের হয়, যেমন আমরা তুচ্ছ ব্যাপারের কারণে বিক্ষিপ্ত হয়ে যাই। আমরা ধ্যান-সাধনা, অধ্যয়ন বা এরকম কিছু করতে খুব অলস হয়ে পড়ি, কিন্তু তার পরিবর্তে দূরদর্শনের কার্যক্রম অথবা ইন্টারনেটের ভোগান্তির কারণে বিক্ষিপ্ত হয়ে যাই। তারপর কোনও কাজকে কোনও সময় অবধি বন্ধ করে রাখার অলসতা থাকে, কারণ আপনি মনে করেন যে আপনি সেটাকে স্থগিত করতে পারেন। এছাড়া আরও এক ধরণের অলসতা আছে যেখানে আপনি অজুহাত দেখান, “আমি কেবল এটা করতে পারি না।”
আমরা যখন ক্লান্ত হয়ে পড়ি, আমাদের কিন্তু তখনও এটা করতে সক্ষম হওয়ার ইচ্ছা থাকে- “আমি সত্যিই এটা করতে চাই, কিন্তু আমার এখন খুব ঘুম পাচ্ছে। সুতরাং আমি এখন স্বল্প বিশ্রাম নেব। তারপরে আমি ওটার দিকে ফিরে যাওয়ার জন্য পুরোপুরি মনস্থ করব।” এটা কোনও অজুহাত নয় বা অযত্নশীল নয়। অলসতার মধ্যে কাজটা সত্যিই চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা থাকে না।
সারাংশ
ধ্যান সহজ নয়। যারা দাবি করে যে এতে অবিশ্বাস্য উপলব্ধি লাভ করার দ্রুত উপায় আছে, আমাদের তাদের থেকে সাবধান থাকতে হবে। কারণ সাধারণ ভাবে বলতে গেলে এটা কখনও হয় না।
আমাদের ধ্যানকে একটি সক্রিয় প্রক্রিয়া হওয়া দরকার, নিস্তেজ বা বিরক্তিকর কিছু নয়। এর ফলে আমরা যে উপদেশ শ্রবণ করেছি এবং তার উপর চিন্তন করেছি, সেটাকে গভীরভাবে বুঝতে পারি। যদি আমরা দিনের পর দিন, বছরের পর বছর ধরে এটা করতে পারি, তাহলে কোনও সন্দেহ নেই যে, উক্ত উপদেশ গুলি আমাদের মধ্যে বদ্ধমূল হয়ে যাবে। এছাড়াও আমাদের মধ্যে যখন সমস্যা বা নেতিবাচক আবেগ জাগবে শেষ পর্যন্ত আমরা সেগুলি অনায়াসে মোকাবিলা করতে সক্ষম হব।