ধ্যানের প্রারম্ভিক অংশ

Week%203%20preliminaries%20to%20meditation%20%281%29

ধ্যানের জন্য অনুকূল পরিবেশ

প্রকৃতপক্ষে ধ্যানে যুক্ত হওয়ার জন্য আমাদের অনুকূল পরিস্থিতির প্রয়োজন হয়। ধ্যানের জন্য অনুকূল কারণগুলির অনেক তালিকা আছে। কিন্তু এগুলি সাধারণতঃ একান্ত ধ্যান-সাধনা করার প্রসঙ্গে আলোচিত বা উপস্থাপিত। অন্যদিকে আমাদের ক্ষেত্রে বেশীর ভাগ বাড়িতেই ধ্যান করা হয়।

এমনকি বাড়িতেও যেটা সবচেয়ে বেশী উপকারী হবে সেটা হল বিক্ষিপ্ত বা অমনোযোগী না হওয়া। পরিবেশটা যতটা সম্ভব শান্ত হওয়া দরকার। আমাদের মধ্যে অনেকে ট্রাফিক সহ কোলাহলপূর্ণ রাস্তার পাশে বাড়িতে বাস করেন। সুতরাং তাদের ক্ষেত্রে খুব সকালে বা গভীর রাত্রে যখন যানজট কম থাকে তখন ধ্যান করা ভালো। এছাড়া পাশের কক্ষের পরিবেশে কোনও সঙ্গীত বা টেলিভিশন না থাকা উচিত। এই ধরনের জিনিসগুলি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি শান্ত পরিবেশ পাওয়া সম্ভব না হয়, তাহলে ইয়ারপ্লাগ (কানে লাগানো তার) ব্যবহার করুন। সেটা যদিও সব কোলাহল আটকায় না, তবে এটি অব্যশই কম তীব্র করে।

আমাদের মধ্যে অনেকেরই আলাদা ধ্যান-কক্ষ ব্যবস্থা করার সুযোগ-সুবিধা নেই। তবে আপনাদের কাছে যতটুকু জায়গা রয়েছে সেটুকু ব্যবহার করতে পারেন। প্রয়োজনে আপনি আপনার বিছানায় বসে ধ্যান করুন, এতে কোনো সমস্যা নেই। ভারতে বসবাসরত বেশিরভাগ তিব্বতীরা বিছানায় বসে ধ্যান করে।

আরো একটা বিষয় যেটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ, সেটা হল– একটা পরিষ্কার এবং ঝরঝরে কক্ষ। যদি পরিবেশটা পরিষ্কার এবং ঝরঝরে হয় তাহলে সেটা মনকে পরিষ্কার এবং ঝরঝরে হতে প্রভাবিত করে। যদি কক্ষটিই স্যাঁতসেঁতে বা ভেজা, অগোছালো বা নোংরা হয় তাহলে মনটাও একই রকম হওয়ার প্রবণতা থাকে। এই কারণে ধ্যানের আগে যাকে একটা প্রারম্ভিক প্রয়োজনীয়তা হিসাবে তালিকাভুক্ত করা হয়, সেটা হল– ধ্যান-কক্ষটিকে পরিষ্কার করা আর কিছু পূজা দ্রব্য অর্পণ করা। পূজা দ্রব্যের অর্থ এমনকি এক কাপ জল হলেও চলবে। আমরা যা করছি তার প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করতে চাই। এখানে আমরা যদি বুদ্ধ এবং বোধিসত্ত্বদের উপস্থিত থাকার জন্য আমন্ত্রণের কথা ভাবি তাহলে আমরা তাদের আমন্ত্রণ করতে চাইবো একটা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ধ্যান-কক্ষে, একটা অগোছালো, নোংরা কক্ষে নয়। এমনকি একটা সাধারণ মনস্তাত্ত্বিক স্তরেও, আমরা যা করছি তার প্রতি শ্রদ্ধা থাকা উচিত। পাশাপাশি এটাকে বিশেষ কিছু হিসাবে বিবেচনা করা উচিত। “বিশেষ” শব্দটির অর্থ হলিউড সিনেমার একটা বিস্তৃত পরিবেশ তৈরি করা নয়, যেখানে ধূপ এবং মোমবাতি থাকে, বরং এটা হবে সরল, সাধারণ, ঝরঝরে, পরিষ্কার এবং সম্মানজনক ।

মুদ্রা (অঙ্গবিন্যাস)  

এশিয়ার বিভিন্ন সংস্কৃতি জুড়ে, মানুষ ধ্যান-সাধনার জন্য যে মুদ্রা ব্যবহার করে তাতে ভিন্নতা আছে। ভারত/তিব্বত, চীন/জাপান এবং থাইল্যান্ডের ধ্যান-মুদ্রাগুলি আলাদা। অতএব আমরা বলতে পারি না যে একটা নির্দিষ্ট মুদ্রাই একমাত্র সঠিক। ভারতীয় এবং তিব্বতীরা বসে বজ্র-পর্যঙ্ক মুদ্রায় (আড়াআড়ি পা রেখে)। প্রায়শই জাপানি এবং অন্য কিছু চীনারা তাদের পা নিচে ভাঁজ করে রাখে। থাইরা তাদের পাশাপাশি রেখে বসে। তন্ত্র অনুশীলনের জন্য, যেখানে আমরা শরীরের শক্তির সাথে কাজ করি, সেখানে পূর্ণ পদ্মাসনের প্রয়োজন হয়। কিন্তু আমাদের মধ্যে বেশীর ভাগ অনুশীলনের সেই পর্যায়ে পৌঁছায়নি। আপনি যদি ওই ধরণের অনুশীলন করার জন্য সক্ষম হতে আকূল ভাবে কামনা করেন তাহলে সেটার ক্ষেত্রে দৃঢ় ভাবে পরামর্শ দেওয়া হয় যে, আপনারা পূর্ণ পদ্মাসনে বসার জন্য খুব অল্প বয়স থেকেই শুরু করুন। এর কারণ হচ্ছে, জীবনের পরবর্তীকালে এই আসনের বসা শুরু করাটা খুব কঠিন হয়ে যায়। পাশ্চাত্য লোকেদের ক্ষেত্রে, যদি আপনারা যে কোনও একটা পারম্পারিক এশিয়ার মুদ্রা বা আসনে বসতে পারেন, তাহলে চেয়ারে বসলেও হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হল- পিঠটা সোজা রাখা।

দৃষ্টি লক্ষ্য করা

চোখের বিষয়ে যদি বলা হয়, কিছু ধ্যান অনুশীলন করা হয় চোখ বন্ধ ক’রে, কিছু চোখ খোলা রেখে, কিছু করা হয় চোখকে নিচে দৃষ্টিপাত ক’রে, কিছু করা হয় চোখকে উপরের দিকে দৃষ্টিপাত ক’রে। এসব ধ্যানের উপর নির্ভর করে। সাধারণতঃ তিব্বতীরা চোখ বন্ধ ক’রে ধ্যান করার পদ্ধতিকে নিরুৎসাহিত করে। এর পাশাপাশি যখন আপনার চোখ দুটি বন্ধ থাকে তখন অতি সহজেই ঘুম পেয়ে যায়। এছাড়া এটাই একটা মানসিক বাধা তৈরী হওয়ার প্রবণতা দেখা যায় যেখানে আপনি অনুভব করেন যে, ধ্যান করার জন্য চোখ বন্ধ করা প্রয়োজন। আপনি যদি এরকম অনুভব করেন, তাহলে আপনি ধ্যানে যা উন্নতি করেন, সেটাকে বাস্তব জীবনে সংহত করা আরও কঠিন হয়ে পড়ে। উদাহরণ স্বরূপ, আমি যদি কারোর সাথে কথা বলি, তখন মৈত্রীর অনুভব জাগানোর জন্য যদি আমাকে চোখ বন্ধ করতে হয় সেটা অদ্ভুত হবে। সুতরাং তিব্বতী পরম্পরার অধিকাংশ ধ্যানে আপনাকে আপনার চোখ অর্ধ-খোলা রাখতে হবে, আলগাভাবে দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে হবে এবং নীচে মেঝের দিকে দিকে দৃষ্টিপাত করতে হবে। 

উপাধান

আপনি যদি পা আড়াআড়ি করে বসেন তাহলে বসার জন্য উপযুক্ত উপাধান বেছে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। কিছু লোক মেঝেতে স্বাচ্ছন্দ্যে বসে থাকতে পারে। তাদের পায়ে ঝিম ধরে না। উদাহরণ স্বরূপ, পরম পূজ্য দালাই লামা যখন নিজের উপদেশ-সিংহাসনে বসে উপদেশ দেন, তখন তিনি ঐ ভাবেই বসেন। কিন্তু আমাদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষ যদি উপাধান ছাড়া বসি তাহলে আমাদের পায়ে খুব তাড়াতাড়ি ঝিম ধরে যায়। অতএব আপনার যদি ওই ধরণের সমস্যা থাকে তাহলে আপনার পিছনে নিচে একটা উপাধান রেখে বসার চেষ্টা করুন, যাতে আপনার পাছা আপনার হাঁটু থেকে উঁচু হয়। আপনি এমন একটা উপাধান বেছে নিন যা আপনার জন্য সবচেয়ে ভালো কাজ করে- পুরু বা পাতলা, শক্ত বা নরম ইত্যাদি যে কোনও একটা হলেই হবে। প্রতিটি ব্যক্তি আলাদা হয়। সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হ’ল আপনি আরাম বোধ করেন এবং আপনার উপাধান আপনার পা গুলিকে ঝিম ধরতে বাধা দেয়, কারণ সেটা খুবই অপ্রীতিকর হতে পারে। অনেক বৌদ্ধ কেন্দ্রে পুরু, বৃত্তাকার বা বর্গাকার জাফাস (বিশেষ কুশন) আছে, তবে জেন জাফাস গুলি জাপানি মুদ্রায় বসার জন্য ব্যবহার করা হয়। এই মুদ্রা অনুযায়ী পা নিচে রেখে বসা হয়। কিছু লোক হয়তো পা আড়াআড়ি রেখে স্বাচ্ছন্দ্যে বসতে পারেন। তবে বেশিরভাগ মানুষের পক্ষে সেগুলি বেশি উঁচু এবং শক্ত হয়ে যায়। যদি আপনার কেন্দ্র শুধু পুরু জাফাসের ব্যবস্থা করে এবং আপনি পা আড়াআড়ি করে বসেন, তাহলে সে ক্ষেত্রে আপনি নিজের উপাধান নিজে নিয়ে আসতে পারেন।

ধ্যান করার জন্য সময় বেছে নেওয়া

অধিকাংশ মানুষের জন্য ধ্যান-সাধনা করার সর্বোত্তম সময়টি হল- সকালের প্রথম অধিবেশন বা রাতের শেষ অধিবেশন। কারণ ঐ সময় দৈনন্দিন ক্রিয়া-কলাপের জন্য কম বিচলন ঘটে। কিছু লোক সকালের দিকে বেশী জাগ্রত থাকে এবং অন্যরা বেশী জাগ্রত থাকে রাতের দিকে, যাদের বলা হয় তথাকথিত “সকালের মানুষ” এবং “রাতের পেঁচা”। আপনি নিজেকে এবং নিজের জীবনশৈলী সম্পর্কে অন্যের থেকে বেশি ভালো জানেন। অতএব আপনি নিজেই নির্ধারণ করতে পারবেন যে, দিনের কোন সময়টি আপনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভাল। যেটা কখনও পরামর্শ দেওয়া হয় না, সেটা হল- নিদ্রাবস্থায় ধ্যান করা। আপনার যদি রাতে ঘুম পায়, তাসত্ত্বেও যদি আপনি শোওয়ার আগে ধ্যান করার চেষ্টা করেন, তাহলে ধ্যান-সাধনার মাঝখানে আপনার ঘুম পাওয়া শুরু করবে। এটা ধ্যানের জন্য মোটেই সহায়ক নয়। তেমনি ভাবে খুব সকালে আপনি যখন অর্ধ ঘুমন্ত থাকেন, তখন ধ্যান করলেও আপনার খুব একটা কার্যকর হবে না। সুতরাং নিজেই বিচার করুন যে, কোনটা সবচেয়ে বেশি কাজ করে। খুব সকালে ধ্যান-সাধনা করার আগে কফি বা চা পান করলেও কোন সমস্যা নেই, যদিও অধিকাংশ তিব্বতীদের এই অভ্যাসটা নেই।

আমার শিক্ষক চেনশব সেরকোঙ্‌ রিনপোছে পরম পূজ্য দালাই লামার একজন শিক্ষক ছিলেন। তিনি বর্ণনা করতেন যে, তিব্বতে তান্ত্রিক মঠগুলিতে, যেখানে তিনি প্রশিক্ষিত হয়েছিলেন, সেখানে তিনি কীভাবে ধ্যান-সাধনা করেছিলেন। সমস্ত ভিক্ষুকরা ধ্যান-কক্ষে বসে পড়তেন এবং তারা তাদের জায়গায় বসে, তাদের প্রতিবেশীর কোলে মাথা হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়তেন। শারীরিক স্পর্শে তিব্বতীদের কোনও সমস্যা নেই। খুব সকালে ঘুম থেকে ওঠার জন্য ঘণ্টা বাজত। ঘন্টার আওয়াজ শুনে তারা ঘুম থেকে উঠে ধ্যান-সাধনা, পাঠ ইত্যাদি করবে বলে আশা করা হতো। তবে আপনি যদি একজন ডাক্তার না হয়ে অভ্যস্ত না হন, তাহলে আপনার মধ্য রাত্রে জেগে তক্ষুনি সার্জারি বা এরকম অন্য কিছু করাটা কটিন হয়ে যাবে। ঠিক তেমনই আপনি যদি ধ্যান-সাধনায় অভ্যস্ত না হন তাহলে ঘুম থেকে উঠেই তক্ষুনি ধ্যান-সাধনা করা আপনার পক্ষে কঠিন হয়ে যাবে।

কত সময় ধরে ধ্যান-সাধনা করতে হয়

আপনি যখন সবে ধ্যান-সাধনা শুরু করবেন তখন আপনার ধ্যান-সাধনার অধিবেশনটি সংক্ষিপ্ত হওয়া গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু করতে হবে বার-বার। একজন প্রারম্ভিক ধ্যান সাধক হিসাবে, একেবারে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে ধ্যান করা একটা অগ্নিপরীক্ষা হয়ে যায়। কোনো-কোনো জায়গায় তারা এই ধরণের নিয়ম অনুসরণ করে। কিন্তু সাধারণতঃ তিব্বতীরা এই নিয়মকে নিরুৎসাহিত করে। এর কারণ হচ্ছে, ধ্যান যদি একটি অগ্নিপরীক্ষা হয়ে দাঁড়ায় তাহলে আপনি সেটা অনুশীলন  করতে চাইবেন না। আপনি অধীর আগ্রহে অধিবেশনটি শেষ হওয়ার অপেক্ষায় থাকবেন। সুতরাং শুরুতে মাত্র পাঁচ মিনিট বা সেরকম কিছু সময়ের জন্য ধ্যান করুন- সেটুকুই যথেষ্ট। থেরবাদ বিহারে বসে ধ্যান করার বিকল্প হিসাবে হেঁটে ধ্যান করায় পরিবর্তন করে। তারা একই রকমের ধ্যান-সাধনা দীর্ঘ সময় ধরে অনুশীলন করে না। তিব্বতীরা যে উপমাটা ব্যবহার করে সেটা হ’ল যদি কোনও বন্ধু বেড়াতে আসে এবং সে দীর্ঘদিন ধরে থাকে, আপনি তখন সেই ব্যক্তির চলে যাওয়ার জন্য অধৈর্য্য হয়ে ওঠেন। আপনার বন্ধু চলে যাওয়ার পরে, আপনি তাকে পুনরায় দেখার জন্য উদ্বিগ্ন হন না।  কিন্তু যদি সেই বন্ধুটা চলে যায় যার সাথে আপনি ক্রমাগত আরও বেশি সময় ব্যয় করতে চান তাহলে আপনি সেই বন্ধুটাকে শীঘ্রই আবার দেখতে পেয়ে খুব খুশী হবেন। তেমনই ভাবে, আমাদের ধ্যানের মুদ্রা, ধ্যানের আসন এবং ধ্যানের অধিবেশন সবকিছুই আরামদায়ক হওয়া উচিত যাতে আমরা আমাদের অনুশীলন নিয়ে আরও উৎসাহী হই।

উদ্দেশ্য নির্ধারণ করা

ধ্যান-সাধনা করার আগে আপনার উদ্দেশ্যটি নির্ধারণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আসলে আপনার উদ্দেশ্যটি নির্ধারণ করাটা এমন হবে যে, সকালে চোখ খোলা মাত্রই আপনার প্রথম জিনিসটা হবে সেটাই। আপনি যখনই জাগবেন, বিছানায় থাকাকালীন আপনি আপনার ঐ দিনের উদ্দেশ্যটি নির্ধারণ করতে পারেন। আপনি ভাবতে পারেন, “আজ আমি রাগ না করার চেষ্টা করবো। আমি বেশী সহনশীল হওয়ার চেষ্টা করবো। আমি অপরের প্রতি আরও ইতিবাচক অনুভূতি বিকাশের চেষ্টা করব। আমি এই দিনটাকে সার্থক বানানোর চেষ্টা করবো এবং এটাকে নষ্ট করব না।”

একটা দুর্দান্ত জেন কোন আছে। ওটা আমার প্রিয়- “মৃত্যু যে কোনও সময় আসতে পারে। আরাম করুন!” আপনি যদি এটার সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করতে পারেন, তাহলে সেটা একটা গম্ভীর ভাবনা হবে। আপনি যদি প্রচণ্ড ক্রুদ্ধ হন, আপনি যদি বিচলিত এবং মর্মাহত হন এই ভেবে যে, মৃত্যু যে কোনও মুহুর্তে আসতে পারে, তাহলে আপনি কোন কিছুই অর্জন করতে সক্ষম হবেন না। আপনার মধ্যে এরকম চিন্তা-ভাবনা থাকতে পারে, “আমি যথেষ্ট করছি না; আমি যথেষ্ট ভাল না।” তাসত্ত্বেও আপনি যদি জানেন যে, মৃত্যু যে কোনও মুহুর্তে ঘটতে পারে এবং আপনি সে বিষয়ে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, তাহলে আপনি উদ্বিগ্ন, বিচলিত বা ক্রুদ্ধ না হয়ে অর্থবহ এবং বাস্তব পদ্ধতিতে কিছু করতে পারেন যেটা আপনার পক্ষে সম্ভব। অতএব, মনে করার চেষ্টা করুন যে, মৃত্যু যে কোন মুহুর্তে আসতে পারে এবং তাই শিথিল করুন। 

ধ্যান-সাধনা করার আগে, আমরা উদ্দেশ্য নির্ধারণ করি যে, “আমি এত মিনিটের জন্য ধ্যান করব। আমি একাগ্র হওয়ার চেষ্টা করব। আমি যদি নিজেকে ঘুমিয়ে পড়া শুরু করার মতো পাই তাহলে নিজেকে জাগিয়ে তুলব। যদি আমার মনোযোগ বিক্ষিপ্ত হয়, আমি সেটাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করবো।” এটাকে গম্ভীর ভাবে নিন। কেবল শব্দগুলি পাঠ করবেন না। মনে মনে ভাবুন- “আপনার উদ্দেশ্যটা সত্যিই মাথায় রাখার চেষ্টা করব এবং অনুসরণ করব।” আপনার উদ্দেশ্যটা সত্য রাখা খুব কঠিন হতে পারে। আপনি যদি আপনার ধ্যান অধিবেশনকে অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা ক’রে খারাপ অভ্যাসে ব্যবহার করেন, এমনকি সেগুলি যদি অন্য ধর্মের ধারণা সম্পর্কিতও হয়, তাহলে সেটা এমন একটা অভ্যাস তৈরী হবে যেটাকে ভাঙ্গা বড় কঠিন হবে। আমি আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলছিঃ এটা এমন একটা অভ্যাস যেটা ভাঙ্গা  সত্যিই খুব কঠিন। অতএব ধ্যানের অধিবেশনের আগে একটা সঠিক উদ্দেশ্য নির্ধারণ করুন এবং সেটা অনুসরণ করুন। 

অনুপ্রেরণা

এরপরে হ’ল অনুপ্রেরণা। তিব্বতী বৌদ্ধ প্রসঙ্গে, অনুপ্রেরণা দুটি অংশ নিয়ে গঠিত। প্রথমটি হ’ল- লক্ষ্য অর্থাৎ আমরা কী লক্ষ্য অর্জন করার চেষ্টা করি। “মার্গক্রমে (লম-রিম)” আদর্শ লক্ষ্য গুলি বর্ণনা করা আছে। মার্গক্রমে বর্ণিত লক্ষ্য গুলি হ’ল- (ক) পরজন্ম উন্নত করা, (খ) পুনর্জন্ম থেকে পূর্ণ মুক্তি এবং (গ) বোধিলাভ করা যাতে আপনি অন্য সকলকে পুনর্জন্ম থেকে মুক্তি লাভ করতে সহায়তা করতে পারেন। দ্বিতীয় অংশটি হ’ল- আবেগ যা আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছতে পরিচালনা করে। 

আমাদের অনুপ্রেরণার কথা ভেবে, নিজের সাথে সৎ হওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ। আমি কি সত্যিই পুনর্জন্মে বিশ্বাস করি? আমাদের মধ্যে অধিকাংশ করে না। হ্যাঁ বলতে পারে, “আমি এটা করছি, পরবর্তী জন্মে আরও একটা মূল্যবান মানব জীবন নিশ্চিত করার জন্য।” অথবা “পুনর্জন্ম থেকে সম্পূর্ণ ভাবে মুক্তি লাভ করার জন্য আমি এটা করছি।” অথবা “আমি বোধি লাভ করার জন্য এটা করেছি যাতে আমি অন্য সবাইকে মোক্ষ লাভ করার জন্য সহায়তা করতে পারি।” তবে আপনি যদি পুনর্জন্মে বিশ্বাসই না করেন তাহলে সেগুলি শুধু শব্দ মাত্র হবে। 

সুতরাং আমি যাকে “ধর্ম-লাইট” বলি, আপনি যদি ধ্যান-সাধনার অনুশীলন করেন তার একটা অংশ হিসাবে, সেটা হবে পুনর্জন্ম ছাড়া বৌদ্ধধর্ম। এটা একেবারে সঠিক। আপনাকে অন্য কাউকে বলতে হবে না। তবে আপনি আপনার নিজের অনুপ্রেরণা সম্পর্কে সৎ হনঃ “আমি এইজন্মে আমার পরিস্থিতি উন্নত করার জন্য এটা করছি।” যতক্ষণ আমরা এই বিষয়ে সৎ থাকব সেটা একটা বৈধ অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। অন্যদিকে, যেটা খাঁটি দীর্ঘ-মেয়াদী লক্ষ্য তার প্রতি আদর সম্মান থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ। এই লক্ষ্যকে আমি বলি “আসল জিনিস ধর্ম।” পাশাপাশি বৌদ্ধধর্মের অনুশীলন শুধু এই জন্মের পরিস্থিতি গুলির উন্নতি করা নয় বরং মনে করাটাও গুরুত্বপূর্ণ।

আমাদের অনুপ্রেরণার দ্বিতীয় অংশ হিসাবে, যে আবেগ আমাদের লক্ষ্যের দিকে পৌঁছনোর জন্য অর্থাৎ প্রথম আসল বস্তু-স্তরের অনুপ্রেরণার জন্য পরিচালনা করে সেটা হল- “আমি অপর জন্মে মূল্যবান মানব জন্মের লক্ষ্য নির্ধারণ করছি (লক্ষ্য), কারণ আমি ভয়ভীত যে, মাছি, আরশোলা বা অন্য নিম্ন পুনর্জন্ম (আবেগ) নিলে কতটা ভয়াবহ হবে! আমি সত্যিই এই ধরণের  ভবিষ্যৎ পরিহার করতে চাই এবং আমি পূর্ণতঃ বিশ্বাসী যে, একে পরিহার করার উপায় আছে।” এর ধর্ম-লাইট সংস্করণটি হল, “জীবনের পরবর্তীতে ভালভাবে চালিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করছি, এমনকি আরও ভাল লক্ষ্য নির্ধারণ করার জন্য। এর কারণ হ’ল আমি ভয়ভীত যে, যদি পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে যায় তাহলে কী ভয়াবহ হবে এবং আমি জানি যে এটাকে এড়ানোর জন্য গঠনমূলক কিছু আছে যা আমি করতে পারি।” উভয় ক্ষেত্রেই, এটা পঙ্গু হয়ে যাওয়ার মতো কোন ভয় নয়, যেমন- “পরিস্থিতিটা হতাশাজনক। আমি অভিশপ্ত।” এর পরিবর্তে, এটা একটা স্বাস্থ্যকর অনুভূতি, “আমি সত্যিই সেটা চাই না এবং আমি দেখতে পাচ্ছি যে, এটাকে ত্যাগ করে দেওয়ার উপায় আছে।” একইভাবে, এটা গাড়ি চালানোর সময় আমার কোনও দুর্ঘটনা হওয়ার ভয়ের মতো। আমি সতর্ক থাকব, কিন্তু আমি এর ভয়ে এতটা পঙ্গু হয়ে পড়ব না যে, ভয়ে মোটেই গাড়ি চালাব না।

দ্বিতীয় আসল বস্তু-স্তরটি হল-“পুনর্জন্মের সাথে জড়িত সমস্ত দুঃখের কারণে আমি সম্পূর্ণ রূপে বিরক্ত, বিষন্ন এবং হয়রান (আবেগ) এবং আমি সেগুলি বের করতে চাই (লক্ষ্য)।” ত্যাগের পিছনে বিদ্যমান আবেগের সারমর্মটি হল- “আবার একটা শিশু হওয়া, আবার সবকিছু শেখা, আবার শিক্ষা অর্জন করা এবং কীভাবে জীবিকা-নির্বাহ করতে হবে তার সন্ধান করাটা অবিশ্বাস্য বিরক্তিকর। বার-বার অসুস্থ হওয়া এবং বৃদ্ধ হওয়ার সাথে মোকাবিলা করাটা ক্লান্তিকর। এটা একটা খারাপ সিনেমাকে বার-বার দেখার মতো।” মানে, কতটা বিরক্তিকর! আমি যথেষ্ট মোকাবিলা করেছি! 

বোধি লাভ করার জন্য (লক্ষ্য) বোধিচিত্ত উৎপন্ন করতে লক্ষ্য নির্ধারণ করা এবং করুণার কারণে অনুভূত হওয়াটা হল সবচেয়ে উন্নত অনুপ্রেরণা (আবেগ)- “আমি ঠিক এটা নিতে পারছি না যে, প্রত্যেকে দুঃখ ভোগ করছে। আমি এমন একটি পরিস্থিতিতে পৌঁছতে সক্ষম হয়েছি যেখানে আমি প্রত্যেককে দুঃখ কাটিয়ে উঠতে সহযোগিতা করতে পারি।

একবার আমাদের লক্ষ্য অর্জন হয়ে গেলে আমরা কী কী করতে পারব অনুপ্রেরণা সেটাকে অন্তর্ভুক্ত করে। আমরা যখন মহাযান পরম্পরা অনুযায়ী অনুশীলন করি তখন আমাদের অনুপ্রেরণার প্রত্যেকটা স্তর চূড়ান্ত ভাবে বোধি লাভের জন্য কাজ করার প্রসঙ্গে থাকে। তারপরে বোধি লাভ রঙ্গীন করে তোলে যে, একবার আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছনোর পর কী কী করবো?

ধর্ম-লাইট স্তরে, আমরা যতদূর সম্ভব এই জন্মে বোধির দিকে অগ্রসর হতে চাইব। আর এটা করব এত নির্বোধ না হয়ে যে, আমরা ভাবব এটা সহজ হবে এবং হতাশ ও নিরাশ হয়ে যাব যখন বোধি লাভ না করে আমরা মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাব।

  • অনুপ্রেরণার তিনটি আসল বস্তুর স্তরের মধ্যে প্রথমটি হল- “বোধি পথটাকে বহাল রাখার জন্য আমি আরও একটা মূল্যবান মানবজন্ম অর্জন করতে চাই। কারণ আমাদের লক্ষ্যটি অর্জন করতে অনেক জন্ম লেগে যাবে।”
  • দ্বিতীয়টি হচ্ছে, “আমি কর্ম এবং বিশৃঙ্খল আবেগ থেকে মুক্তি লাভ করতে চাই, কারণ আমি অপরের সহায়তা করতে পারব না যদি আমি তাদের উপর রেগে যাই, যদি আমি তাদের উপর আসক্ত হয়ে পড়ি অথবা যদি আমার মধ্যে আমোঘ আচরণ থাকে। আমি সত্যিই অন্যের সহায়তা করতে পারব না যদি আমি এই বিষয়ে অহংকার বোধ করি এবং দাম্ভিক হয়ে উঠি। সুতরাং আমাকে আমার নিজের মোক্ষ লাভ করতে হবে।
  • সর্বোত্তম অনুপ্রেরণা হল, “আমি বোধি লাভ করে চাই যাতে প্রতিটি ব্যক্তিকে স্বতন্ত্র ভাবে সহায়তা করার সর্বোত্তম উপায় সম্পর্কে পূর্ণজ্ঞান সম্পন্ন হই।”

অনুপ্রেরণা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চোঙ্‌খাপা জোর দিয়ে বলেছেন যে, অনুপ্রেরণা এমনই একটা জিনিস যা আমাদের সারাদিন প্রয়োজন হয়, শুধু ধ্যান-সাধনার শুরুতে নয়। আর অনুপ্রেরণা শুধু সুন্দর শব্দ হওয়া উচিত নয়; আমাদেরকে বাস্তবে এটাকে বোঝা উচিত। “বোঝা উচিত”- এর অর্থ কী? এর অর্থ হল- ধ্যান-অনুশীলনের মাধ্যমে আমরা অনুপ্রেরণাকে ব্যাপকভাবে অভ্যন্তরীণ করে তুলি, যার ফলে এটা একটা প্রামাণিক অনুপ্রেরণা হয়ে যায়, একটা স্বাভাবিক আবেগ হয়ে যায় এবং আমরা কীভাবে আমাদের দৈনন্দিন জীবন-যাপন করি তার একটা অভিন্ন অঙ্গ হয়ে যায়।

ধ্যান-সাধনা করার আগে চুপ করে থাকা

একবার যখন আমরা সঠিক শারীরিক পরিবেশ তৈরি করে ফেলি এবং আমাদের উদ্দেশ্য ও অনুপ্রেরণা নির্ধারণ করে ফেলি তখন আমাদের চুপ হয়ে যাওয়ার প্রয়োজন হয়। প্রায়শই এটা কিছু ধরণের শ্বাস-প্রশ্বাসের ধ্যানের মাধ্যমে, যেমন- শ্বাস-প্রশ্বাস গণনা করার মাধ্যমে করা হয়। শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে আমরা আরও বিস্তৃত অনুশীলন করতে পারি, তবে শুধু নাক দিয়ে স্বাভাবিক ভাবে শ্বাস নেওয়া এবং এগারো বার শ্বাস নেওয়া এবং বের করার মতো কয়েক রাউন্ড করলে সাধারণতঃ যথেষ্ট হবে। এইভাবে মনকে শান্ত করে তুললে আমরা এখন অবধি যা করছিলাম এবং পরবর্তীতে যে ধ্যানটা করব তার মধ্যে একটা শান্ত জায়গা তৈরি হবে। এই ধরণের একটা স্থান নির্মাণ আমাদের ব্যস্ত জীবন এবং ধ্যানের মাঝে একটা মধ্যবর্তী স্থান তৈরি করতে সহায়তা করে।


সপ্তাঙ্গ অনুশীলন

এটা প্রায়শই সুপারিশ করা হয় যে, অধিবেশনের শুরুতে আমরা ইতিবাচক শক্তি উৎপন্ন করি এবং তার জন্য আমরা যেটা ব্যবহার করি সেটা হ’ল- “সপ্তাঙ্গ প্রার্থনা” অথবা “সপ্তাঙ্গ অনুশীলন” হিসাবে পরিচিত। এই প্রসঙ্গে, “অঙ্গ”-এর অর্থ হল- “পদক্ষেপ” বা “ধাপ”।

(১) শরণ এবং বোধিচিত্তের সাথে প্রণাম (বন্দনা)

প্রথম অঙ্গটি হল- প্রণাম (বন্দনা)। এর অর্থ হছে যারা বোধি লাভ করেছে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা; আমাদের নিজের অনাগত বোধির প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা। যে বোধিকে আমরা বোধিচিত্তের মাধ্যমে লাভ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি; এবং আমাদের নিজের তথাগত গর্ভের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা যা আমাদের উক্ত লক্ষ্যে পৌঁছতে সক্ষম করে তুলবে। সুতরাং আমাদের জীবনে শরণের নিরাপদ দিক এবং বোধিচিত্তের লক্ষ্য প্রসঙ্গে প্রণাম করা হয়। আমরা যে নিরাপদ দিকে গমন করতে চাই সেটা নির্দেশিত হয় বুদ্ধ দ্বারা, তাদের ধর্ম-উপদেশ এবং প্রাপ্তি দ্বারা আর সেই সংঘ সমূহ দ্বারা যারা মোক্ষ এবং বোধি লাভের পথে গমন করতে তৎপর। বোধিচিত্তের উদ্দেশ্য নিয়ে নিজেরা বুদ্ধ হওয়ার জন্য আমরা আমাদের মন এবং হৃদয় সেট করে ফেলি।

(২) পূজনা বা অর্পণ

দ্বিতীয় ধাপটি হল অর্ঘ্য অর্পণ করা। এটাও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে।

(৩) পাপদেশনা

এরপর প্রকাশ্যে আসে আমাদের ভুল এবং পাপকে স্বীকার করা। এর মানে এটা নয় যে, আমাদের ভুলের জন্য অপরাধবোধ করব; অপরাধবোধ উপযুক্ত নয়। অপরাধবোধের অর্থ হচ্ছে- কোনকিছুকে ধরা রাখা যেটা আমরা করেছি, এবং আমরা স্বয়ং অর্থাৎ সেটাকে করার পর উভয়কে খারাপ হিসাবে চিহ্নিত করা এবং সেটা যেতে না দেওয়া। এটা একপ্রকার আবর্জনাকে বাইরে না ফেলে দিয়ে ভিতরে রেখে তার সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করার মতো “এই আবর্জনা সত্যি ভয়ঙ্কর। এটা খুবই দুর্গন্ধ।” অপরাধবোধের আবেগের পরিবর্তে, তৃতীয় অঙ্গটি হচ্ছে আমাদের ভুলের জন্য অনুতাপ করা: “আমি নিজের কর্মের জন্য অনুশোচনা করছি এবং সেটাকে পুনরাবৃত্তি না করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করব। আমার ভুল গুলিকে পরিহার করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করব।” 

(৪) অনুমোদন (আনন্দিত হওয়া)

চতুর্থ ধাপ হচ্ছে আমাদের এবং অন্যের দ্বারা কৃত ইতিবাচক জিনিসগুলির প্রতি আনন্দিত হওয়া যাতে আমাদের মধ্যে নিজেদের এবং  অপরের প্রতি আরও বেশী ইতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়।

(৫) অধ্যেষণা (উপদেশের জন্য অনুরোধ)

তারপর আমরা শিক্ষক এবং বুদ্ধদের উপদেশ দেওয়ার জন্য অনুরোধ করি : “অনুগ্রহ করে সর্বদা উপদেশ দিন। আমি মুক্ত এবং গ্রহণযোগ্য।”

(৬) শাস্তাকে নির্বাণলাভ না করার জন্য প্রার্থনা

পরবর্তী অঙ্গ হচ্ছে, “চলে যাবেন না; নির্বাণ লাভ করবেন না। আমি শেখার জন্য খুবই গম্ভীর এবং আমাদের সাথে থাকার জন্য অনুরোধ করছি।”

(৭) পরিণামনা (উৎসর্গ)

সর্বশেষে আসে পরিণামনা বা উৎসর্গ। এক অর্থে উৎসর্গ হচ্ছে শক্তিকে একটা নির্দিষ্ট দিকে পরিচালিত করা। আমরা মনে করি : “যেটাই ইতিবাচক শক্তি, যা বোধিশক্তি তৈরি হয়েছে, এটা যেন আমার উদ্দেশ্য পূরণে অবদান রাখে।” আমি যে উপমাটা ব্যবহার করতে পছন্দ করি সেটা হ’ল কম্পিউটারে আমাদের কাজ সুরক্ষিত রাখার মতো। আমরা যদি কাজটাকে “মোক্ষ” বা “বোধি” নামক একটা বিশেষ ফোল্ডারে সুরক্ষিত না রাখি তাহলে কাজের সেটিংটায় ত্রুটি থেকে যাবে। ফলে আমাদের কাজ স্বয়ংক্রিয় ভাবে “উন্নত সংসার” নামক ফোল্ডারে সংরক্ষণ হবে। “উন্নত সংসার” নামক ফোল্ডারে কাজ সংরক্ষণ হওয়া ভাল, কিন্তু সেটা আমাদের লক্ষ্য নয়। আমরা যদি আমাদের কাজটা মোক্ষ বা বোধি লাভের দিকে গণনা করতে চাই তাহলে আমাদের উদেশ্যমূলক ভাবে এটাকে “মোক্ষ” বা “বোধি” নামক ফোল্ডারে সংরক্ষণ করতে হবে। সেটাই হচ্ছে উৎসর্গ। আমরা সত্যিই বোঝাতে চাই; শুধু শব্দগুলি বলতে চাই না। আমরা পিছনে কিছু আবেগ সহ করুণা সহ এবং অন্যান্য আরও কিছু সহ ইতিবাচক শক্তিকে উৎসর্গ করি।

সপ্তাঙ্গ প্রার্থনার পরে আসে আসল ধ্যান এবং ধ্যানের শেষে আমরা আরও এক বার উৎসর্গ করি।

সারাংশ

ধ্যান একটা খুবই পরিশীলিত প্রক্রিয়া এবং এটা কীভাবে অনুশীলন করতে হয় তার নির্দেশাবলী বেশ যথাযথ। এখানে একটা সাধারণ নির্দেশ উপস্থাপন করা হয়েছে; তবে প্রতিটি নির্দিষ্ট ধ্যানের জন্য তার নিজস্ব নির্দিষ্ট নির্দেশাবলী আছে। তবে সবক্ষেত্রে এটা জানা খুব দরকার যে, আমরা কী করছি, আমরা কীভাবে এটা করি এবং আমরা কেন এটা করছি।

জেন-এর মতো কয়েকটি বৌদ্ধ পরম্পরা আছে যারা শুধু বলে, “বসুন, ধ্যান করুন এবং আপনি এগিয়ে যাওয়ার সাথে চিহ্নিত করতে পারবেন।” যদিও এটা কিছু লোকের পক্ষে কার্যকর হতে পারে, কিন্তু অন্যদের পক্ষে বেশ কঠিন হতে পারে। অনেক লোক ঐ পদ্ধতিটিকে খুব কঠিন মনে করে। অতএব এখানে যেটা উপস্থাপিত করা হয়েছে সেটা হচ্ছে ভারত-তিব্বতী পরম্পরা।

Top