এসইই জ্ঞানঃ আমাদের আবেগের বোধগম্যতা

সামাজিক, আবেগপ্রবণ এবং নৈতিক শিক্ষা, ইমোরি বিশ্ববিদ্যালয়, সংক্ষিপ্ত ফ্রেম ওয়ার্ক

সামাজিক, আবেগপ্রবণ এবং নৈতিক (এসইই) শিক্ষা হল একটি কর্মসূচী, যেটা ইমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপিত সেন্টার ফর কনটেমপ্লেটিভ সাইন্স অ্যান্ড কমপ্যাশন বেস্‌ড এথিক্স-এ বিকাশ করা হয়েছে। এর লক্ষ্য হল আবেগপ্রবণ ভাবে স্বাস্থ্যকর এবং নৈতিক ভাবে দায়িত্বশীল ব্যক্তি, সামাজিক গোষ্ঠী এবং বৃহত্তর সম্প্রদায়ের লালন-পালন করা। এর প্রথম অংশে, এসইই শিক্ষাঃ আমাদের আবেগের বোধগম্যতা অর্থাৎ কীভাবে আবেগকে সঠিক পদ্ধতিতে পরিচালনা করতে হয় এবং তার মোকাবিলা করতে হয় আমরা সেটা শিখি।

ভূমিকা

এসইই শিক্ষাটি (SEE Learning) আমাদের জীবনের তিনটি ক্ষেত্রে সহায়তা করার জন্য তৈরী করা হয়েছেঃ ব্যক্তিগত, সামাজিক এবং বৈশ্বিক। এই তিনটি কর্মক্ষেত্রে স্বাধীন ভাবে অথবা যেকোন ক্রমে এগিয়ে যাওয়া যেতে পারে; তবে আমরা যদি অপরের এবং বৃহত্তর সম্প্রদায়ের এমনকি সমগ্র বিশ্বের প্রয়োজনগুলিতে অংশ গ্রহণ করা শিখতে চাই, তাহলে প্রথমে আমাদের নিজস্ব প্রয়োজন এবং আন্তর্জীবনে অংশ গ্রহণ করতে হবে।

আমরা “আবেগপ্রবণ সাক্ষরতা” বিকাশের মাধ্যমে এটা করি। এটা নিজের এবং অপরের উপর আবেগ ও তাদের প্রভাবগুলি বোঝা ও সনাক্ত করার ক্ষমতা নিয়ে গঠিত। এই স্বীকৃতি আমাদের আবেগকে সঠিক পথে পরিচালনা করতে দেয়। সর্বশেষে আবেগপ্রবণ সাক্ষরতা আবেগমূলক আচরণ থেকে বিরত থাকতে দেয়, যা আমাদের নিজের এবং অপরের ক্ষতি করতে পারে, তবে এর জন্য মনে শান্তি থাকা উচিত যা আমাদের নিজের উৎকৃষ্ট দীর্ঘমেয়াদী স্বার্থের জন্য উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নিতে দেয়। সুতরাং আবেগপ্রবণ সাক্ষরতা হল একটি গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা যা আমাদের সাফল্য লাভ করতে সক্ষম করে তোলে।

সচেতনতা, করুণা এবং ব্যক্তিগত কর্মক্ষেত্রে নিযুক্তি

এসইই শিক্ষা (SEE Learning) সচেতনতা, করুণা এবং নিযুক্তি এই তিনটি দক্ষতা গড়ে তুলতে চায় যা “মাত্রা”- নামে পরিচিত। এই মাত্রাগুলি আমাদের নিজস্ব ব্যক্তিগত সমস্যার মোকাবিলা করা, আমাদের ক্রমবর্ধমান জটিল বিশ্বের মুখোমুখি হওয়া এবং দায়বদ্ধ বিশ্বব্যাপী নাগরিক হওয়ার জন্য জ্ঞান, দক্ষতা এবং অনুপ্রেরণা সরবরাহ করার উদ্দেশ্যে একত্রিত হয়। ব্যক্তিগত কর্মক্ষেত্রে তিনটি মাত্রাকে তিনটি ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখা হয়ঃ

  • মনোযোগ এবং স্ব-সচেতনতা
  • স্ব-করুণা
  • স্ব-নিয়ন্ত্রণ

মনোযোগ এবং স্ব-সচেতনতা বলতে আমাদের মনোযোগকে নির্দেশ করে, যাতে আমরা আমাদের মানসিক এবং শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে ক্রমবর্ধমান ভাবে সচেতন হই। সেগুলি একটি “মনের মানচিত্র”-এর দিক নির্দেশনা সহ আমাদের আবেগ সম্পর্কে অবগত হওয়ার সাথে নিযুক্ত। তারপরে স্ব-করুণা সহ আমরা আমাদের অনুভূতি এবং আবেগকে পরীক্ষা করতে শিখি আর তাদের বৃহত্তর প্রসঙ্গে উপলব্ধি করার চেষ্টা করি। এর মধ্যে বিভিন্ন কারণ ও প্রত্যয় থেকে কীভাবে আমাদের আবেগগুলি উত্থিত হয় তা পরীক্ষার সাথে নিযুক্ত যা এর পরেও আরও বেশী স্ব-গ্রহণযোগ্যতার দিকে নিয়ে যেতে পারে। সর্বশেষে প্রথম দুটি দৃষ্টিকোণ থেকে প্রাপ্ত অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে আমরা আধ্যাত্মিক নিয়ন্ত্রণ গড়ে তোলার জন্য স্ব-নিয়ন্ত্রণে নিযুক্ত হই। এর মাধ্যমে আমরা আমাদের জীবনের নিত্যদিনের চ্যালেঞ্জ গুলির প্রতি গঠনমূলক ভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে আমাদের দক্ষতার উন্নতি করি।

সামগ্রিক ভাবে বিবেচিত, ব্যক্তিগত কর্মক্ষেত্রে এই বিষয়গুলি সবই আবেগপ্রবণমূলক সাক্ষরতার উৎপাদন হিসাবে দেখা যায়। আমাদের মন এবং আবেগের জটিল আভ্যন্তরীণ ভূ-খন্ডের আলোচনার ক্ষমতা ছাড়াই গভীরে অবস্থিত, আত্ম-ধ্বংসাত্মক বাসনাকে (অভ্যাসগত প্রতিমান) অতিক্রম করাতে প্রায় অসম্ভব হতে পারে। স্বার্থপর হওয়া থেকে উর্দ্ধে আত্ম-কর্ষণের সময় আমরা যে নির্দিষ্ট সরঞ্জামগুলি ব্যবহার করি সেগুলি ব্যবহার ক’রে আবেগমূলক অভিহরণকে এড়ানোর জন্য সহায়তা করে। এর সাথে আমাদের এমনভাবে কাজ করতে সক্ষম ক’রে তোলে যা আমাদের উন্নতি করতে এবং সফল হতেও সহায়তা করে। আসুন, আমরা উক্ত তিনটি দৃষ্টিভঙ্গিকে আরও গভীরভাবে দেখি।

মনোযোগ এবং স্ব-সচেতনতা

ব্যক্তিগত কর্মক্ষেত্রের লক্ষ্য হল শরীর এবং মন সম্পর্কে প্রদত্ত তথ্যের সাথে আমাদের শরীর এবং মনের মধ্যে যা কিছু ঘটছে তার সম্পর্কে প্রথম-ব্যক্তির সচেতনতা একত্রিত করতে সক্ষম হওয়া। উদাহরণ স্বরূপ, ক্রোধ কী, কেন এটা জাগে এবং কীভাবে এটাকে শান্ত করা যেতে পারে তার বৌদ্ধিক বোধগম্যতা করার সাথে আমরা আমাদের নিজের অনুভূতি এবং আবেগের প্রতি মনোযোগ দিয়ে ক্রোধকে সনাক্ত করতে শিখি। প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা এবং অধিগত জ্ঞানের এই সংমিশ্রণ হল আবেগপ্রবণ সাক্ষরতার প্রতি প্রথম পদক্ষেপ। মনোযোগ এবং স্ব-সচেতনতা তিনটি ক্ষমতায় অন্তর্ভুক্তঃ

  • আমাদের শরীর এবং সংবেদনগুলির প্রতি মনোযোগ দেওয়া
  • আমাদের আবেগ এবং অনুভূতির প্রতি মনোযোগ দেওয়া
  • মনের একটি মানচিত্র অনুসরণ করা

আমাদের শরীর এবং সংবেদনগুলির প্রতি মনোযোগ দেওয়া

সংবেদনের স্তরে আমাদের শরীরের ভিতরে যা কিছু ঘটে তার প্রতি মনোযোগ দিয়ে আমরা শুরু করি। শরীরটি আমাদের স্নায়ুতন্ত্রের অবস্থা সম্পর্কিত নিয়মিত তথ্যের উৎস। এর কারণ হল, সাধারণতঃ আবেগপ্রবণ অবস্থাগুলি সারা শরীর জুড়ে পরিবর্তনের সাথে ব্যপ্ত থাকেঃ হৃদস্পন্দন, পেশীগুলির নিবীড়তা অথবা শীতলতা, তাপ বা শীতলতার অনুভূতি ইত্যাদি। আমাদের শরীরে যা ঘটে সেটা লক্ষ্য করলে আমাদের অভিজ্ঞতার মানসিক দিকগুলি বোঝার চেয়ে আমাদের আবেগপ্রবণ অবস্থার বিষয়ে দ্রুত জানাতে পারে।

আমাদের শরীরের সংবেদনগুলির সচেতনতার মাধ্যমে আমাদের স্নায়ুতন্ত্রের প্রতি মনোযোগ দিয়ে আমরা ধীরে-ধীরে চাপ এবং সুস্থতার লক্ষণগুলি সনাক্ত করতে শিখি। আমরা অত্যধিক উত্তেজনার (উদ্বেগ, অতিরিক্ত ক্রোধ, আন্দোলন) অথবা স্বল্প উত্তেজনা (অলসতা, হতাশার অনুভূতি) অবস্থায় থাকি কি না সেটা আমরা আরও দ্রুত লক্ষ্য করা শুরু করি। এই সচেতনতা হ’ল শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখতে এবং শারীর বৃত্তীয় সু-স্থির অবস্থাতে ফিরে আসতে শেখার প্রথম প্রদক্ষেপ, যা হল আমাদের নিজস্ব এবং অন্যের উৎকৃষ্ট স্বার্থে কাজ করার পূর্ব শর্ত।

আমাদের আবেগ এবং অনুভূতির প্রতি মনোযোগ দেওয়া

শরীরের প্রতি মনোযোগ দেওয়া এবং নিয়ন্ত্রণ করতে শেখাটা আবেগ এবং অনুভূতির প্রতি মনোযোগ দেওয়ার ভিত্তির ব্যবস্থা করে। শরীর যত শান্ত এবং স্থিরীকৃত হয় মনের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করা তত সহজ হয়। যদিও আবেগগুলি খুব দ্রুত গতিতে বিকাশ লাভ করতে পারে তবুও সেগুলি সাধারণতঃ বনের জ্বলন্ত আগুনে পরিণত হওয়ার আগে স্ফুলিঙ্গ আকারে শুরু হওয়ার মতো হয়। আমরা যদি কেবলমাত্র একটা স্ফুলিঙ্গ তৈরী হওয়ার প্রাথমিক পর্যায়ে আমাদের নেতিবাচক আবেগগুলি ধরতে পারি তাহলে আমরা তাদের সাথে খুব সহজেই মোকাবিলা করতে পারি। তবে এটা করার জন্য বর্তমান মুহুর্তে উত্থাপিত হওয়ার সাথে-সাথে আমাদের আবেগ এবং অনুভূতিগুলিকে অনুধাবন করার ক্ষমতা বাড়াতে হবে। এই ক্ষমতাটি স্মৃতি বা মননশীলতার মতো সময়ের সাথে-সাথে অভ্যাসের মাধ্যমে শেখা ও উন্নত করা যায়।

মনের মানচিত্র অনুসরণ করা

আমাদের আবেগ এবং অনুভূতি লক্ষ্য করার ক্ষেত্রে মনের মানচিত্রের পক্ষ থেকে প্রচুর পরিমাণে সহায়তা প্রাপ্ত করে। এটা এমন একটা উৎস যা আমাদের আবেগপ্রবণ চিত্রকে সঠিক পথে পরিচালনা করতে সহায়তা করে। মনের একটা মানচিত্র এমন তথ্য জোগায় যা আমাদেরকে আবেগের বিভিন্ন পরিবার, তাদের সাধারণ বৈশিষ্ট এবং যা কিছু এই আবেগগুলির উত্থান করে আর প্রচার করে সেটা সনাক্ত করতে সক্ষম করে তোলে। আমরা শিখি যে সমস্ত আবেগ সহজাত ভাবে ধ্বংসাত্মক নয়, তবে প্রসঙ্গ ও পরিস্থিতির ক্ষেত্রে অনুপযুক্ত হলে সেগুলি ধ্বংসাত্মক হয়ে ওঠে। উদাহরণ স্বরূপ, ভয় গঠনমূলক হতে পারে যখন এটা আমাদেরকে কোন বিষাক্ত সাপের কাছে না যাওয়ার জন্য সতর্ক করে কিন্তু এটা যখন অবিচ্ছিন্ন উদ্বেগের পর্যায়ে পৌঁছে যায় তখন এটা তার বিপরীত হয়ে উঠতে পারে।

মনের মানচিত্রের দিক-নির্দেশনা দ্বারা আবেগপ্রবণ সচেতনতা গড়ে তোলার মাধ্যমে আমরা দেখতে পাই যে জ্বালাতন বা বিরক্তি হল একটি হালকা আবেগময় অবস্থা যা ক্রোধের দিকে পরিচালিত করতে পারে। আর এই অনিয়ন্ত্রিত ক্রোধের ফলে পূর্ণ বিকশিত রোষ উদ্ভূত হয়। আবেগপ্রবণ মানসিক অবস্থায় পরিণত হওয়ার আগে আবেগের সূক্ষ্মতর রূপগুলি বুঝতে সক্ষম হওয়াটা হল ভারসাম্যপূর্ণ মানসিক স্বাস্থ্যের পক্ষে একটি গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা।

স্ব-করুণা

স্ব-করুণা জিনিসটি স্ব-কৃপা, ইচ্ছাপূরক আত্মতৃপ্তি বা শুধু উচ্চ আত্মমর্যাদা বোধ নয়। স্ব-করুণা হল প্রকৃত স্ব-যত্ন বিশেষ করে আমাদের আত্ম-জীবনের ক্ষেত্রে। আমাদের আবেগ কীভাবে আমাদের প্রয়োজনগুলির সাথে সম্পর্কিত সেটা বোঝা দরকার। আবেগপ্রবণ সাক্ষরতার এই স্তরটি বৃহত্তর স্ব-গ্রহণ যোগ্যতার জন্য অনুমতি প্রদান করে। এর কারণ হল আমরা যখন বুঝতে পারি যে কেন এবং কীভাবে আমাদের মধ্যে আবেগ জাগে, তখন আমরা সেগুলির সাথে আত্ম-বিচারের মাধ্যমে সম্পর্ক কম করতে পারি। তারপরে যখন আমরা দেখি যে আবেগগুলি ক্ষণস্থায়ী ও প্রাসঙ্গিকভাবে উদ্ভূত হয় এবং আমাদের মনের অপরিবর্তনশীল অংশ নয়, তখন এটা আমাদের আত্ম-বিশ্বাস এবং নিজের উপর কাজ চালিয়ে যাওয়ার প্রেরণা জোগায়।

এই দুটি বৈশিষ্ট্য অর্থাৎ স্ব-গ্রহণযোগ্যতা এবং আত্ম-বিশ্বাস, সমালোচনা গ্রহণ করা এবং বাধা-বিঘ্নগুলিকে গঠনমূলক ও স্থিতিস্থাপকতার সাথে মোকাবিলা করার আধার তৈরী করে। এটা হতাশাকে অতিরিক্ত আত্ম-সমালোচনা বা আত্মমূল্য হ্রাস করতে বাধা সৃষ্টি করে। আত্ম-করুণার দুটি দিক রয়েছেঃ

  • প্রাসঙ্গিক আবেগের বোধগম্যতা
  • স্ব-গ্রহণযোগ্যতা

স্ব-করুণা আমাদের ক্ষমতাগুলির একটা বাস্তবিক মূল্যায়নের উপর আধারিত। আমরা যদি নিজের প্রতি সদয় না হই তাহলে আমরা অনুভব করব যে যখন আমরা না পারি তখন আমাদের আরও বেশী কিছু করতে সক্ষম হওয়া উচিত। এটা আমাদেরকে হতাশা এবং ক্ষমতায়নের দিকে পরিচালিত করে। পার্থিব সাফল্য অনুযায়ী নিজের মূল্যায়নের পরিবর্তে আমাদেরকে আমাদের নিজেদের ত্রুটিগুলি সততা, বোধগম্যতা এবং ধৈর্যের সাথে স্বীকার করা উচিত।

প্রসঙ্গের মধ্যে আবেগের বোধগম্যতা

প্রসঙ্গের মধ্যে আমাদের আবেগের বোধগম্যতা বলতে বোঝায় যে তারা কীভাবে আমাদের মূল্য, চাহিদা এবং প্রত্যাশাগুলির সাথে সম্পর্কিত তার সমালোচনা মূলক চিন্তা-ভাবনা প্রয়োজন। পূর্বে আমাদের অন্তর্বিশ্বের প্রতি মনোযোগ দেওয়া শিখে এখানে আমরা অনুসন্ধান করি যে কোন পরিস্থিতির প্রতি আমাদের আবেগপ্রবণ প্রতিক্রিয়া কীভাবে কেবল একটা বাহ্যিক ট্রিগার দ্বারা নয়, বরং আমাদের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি এবং মনোভাব দ্বারাও উৎসাহিত করা হয়। এই দৃষ্টিভঙ্গি এবং মনোভাব আমাদের নিজস্ব প্রয়োজনের বিষয় সম্পর্কিত ধারণার মধ্যে নিহিত। উদাহরণস্বরূপ, উদ্বেগ জিনিসটা কোনও একটি পরিস্থিতি সম্পর্কে আরও বেশি নিশ্চিত হওয়ার ইচ্ছার ফলস্বরূপ হতে পারে, যেখানে আসলে এটা সম্ভব নাও হতে পারে। অন্যদিকে ক্রোধ জাগতে পারে সম্মানিত হওয়া থেকে। আর হতাশা উদ্ভূত হয় কোন একটি পরিস্থিতির তাৎক্ষণিক পরিবর্তনের আকাঙ্খার ফলস্বরূপ যার জন্য প্রকৃত পক্ষে সময় এবং ধৈর্যের প্রয়োজন। ঐ সমস্ত ক্ষেত্রে আবেগগুলি মূলত আমাদের নিজস্ব মনোভাব এবং প্রত্যাশার ফলে উদ্দীপ্ত হয়।

এই অন্তর্দৃষ্টিগুলি অর্জন করার সাথে-সাথে আমরা আমাদের নিজের মূল্যকে বুঝতে এবং প্রশংসা করতে ভাল অবস্থায় পৌঁছে যাই। এরফলে আমরা স্ব-মূল্যবান এবং আভ্যন্তরীণ আত্মবিশ্বাসের একটি চিরস্থায়ী অনুভূতি গড়ে তুলতে পারি। এর সাথে অবাস্তব প্রত্যাশাগুলি সনাক্ত করতে শিখতে পারি যা অস্বাস্থ্যকর আত্মবিচারের দিকে আমাদের পরিচালিত করে। আবেগপ্রবণ প্রতিক্রিয়াগুলি কীভাবে প্রায়শই প্রয়োজন থেকে উদ্ভূত হয় সেটা বোঝার মাধ্যমে আমরা সেই প্রয়োজনগুলি সমালোচনা মূলকভাবে মূল্যায়ন করাও শুরু করতে পারি। যার মধ্যে সবগুলি সমান হয় না। এটা আমাদের নিজস্ব মূল্যের গভীর প্রশংসা এবং যা আমাদেরকে সেই মূল্যগুলি প্রদর্শন ক’রে এমন একটি জীবন-যাপনে নেতৃত্ব দেবে সেটা দিয়ে প্রয়োজন থেকে চাহিদার মধ্যে পার্থক্য করার কাজ করতে পারে। এটা স্বল্পমেয়াদী চাহিদার সাথে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ যা দীর্ঘমেয়াদী মঙ্গল নাও হতে পারে।

স্ব-গ্রহণযোগ্যতা

স্ব-গ্রহণযোগ্যতাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর কারণ হল আমাদের সমাজে ক্রোধ ক্রমবর্ধমান ভাবে অন্তর্মুখে অভিমুখ হচ্ছে। অতিরিক্ত স্ব-সমালোচনা, স্ব-বিদ্বেষ এবং স্ব-ঘৃণা ব্যক্তির স্বাস্থ্য এবং সুখকে প্রচন্ড ক্ষতি করছে। এটা পরবর্তীকালে অপরেরও চরম ক্ষতি করতে পারে। আত্মসম্মানকে শক্তিশালী করাটা সর্বোত্তম সমাধান নয়। এর কারণ হল আত্মসম্মান বোধ অপরের সাথে তুলনা করার উপর আধারিত এবং যখন কোনও ব্যক্তির উচ্চ আত্ম-সম্মানকে ভয় দেখানো হয় তখন অগ্রাসন প্রায়শই প্রকট হয়। আরও ভাল পদ্ধতি হচ্ছে আমাদের আবেগপ্রবণ জীবন ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আরও বেশী অবগত হওয়ার জন্য বীরত্বপূর্ণ সহিষ্ণুতা, স্থিতিস্থাপকতা, নম্রতা এবং সাহস গড়ে তোলা। এটা করার ফলে আমাদের পরিপূর্ণতাবাদী আদর্শিকরণটি শিথিল করতে এবং নিজের ও অন্যের বাস্তব প্রত্যাশাগুলির দিকে যেতে সহায়তা করে।

আধুনিক সংস্কৃতি সামাজিক মাধ্যম (সোশ্যাল মিডিয়া), দূরদর্শন, চলচিত্রের মাধ্যমে আমাদেরকে বিপুল অবাস্তব ধারণা শেখাতে অবিশ্বাস্য ভাবে কার্যকর। সবসময় প্রায়শই আমরা নিজেকে আদর্শিকৃত সেলিব্রিটিদের (যশস্বী ব্যক্তি) সাথে তুলনা করি বা বিশ্বাস করি যে আমাদের “সুপার ম্যান” বা “ওয়ান্ডার উইম্যান”- এর মতো অভিনয় করা উচিত যেটা অসম্পূর্ণতা বা সীমাবদ্ধতা থেকে মুক্ত। এই অসম্ভব পৌঁছনোর মানগুলি অপ্রয়োজনীয় মানসিক যন্ত্রণার দিকে পরিচালিত করে। ফলস্বরূপ, হতাশার ফলে অবসন্নতা এবং স্ব-দোষ হিসাবে প্রকট হতে পারে, এমনকি শারীরিক স্ব-ক্ষতি বা শত্রুতা ও স্ব-হিংস্রতা বাহ্যিক দিক থেকেও নির্দেশিত হতে পারে।

আমাদের মধ্যে যখন আমাদের আবেগপ্রবণ জীবন সম্পর্কে সীমিত ধারণা থাকে তখন আমাদের চ্যালেঞ্জ, অসুবিধা এবং বিপর্যয় সহ্য করাটা আরও বেশী কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। এরফলে পরিবর্তন এবং গঠনমূলক কর্মের সুযোগের সন্ধান এবং প্রাপ্ত করার সম্ভাবনা কম থাকে। আমাদের নিজস্ব সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে একটি বাস্তব সম্মত দৃষ্টিভঙ্গী এই বিষাক্ত চক্রটিকে আটকানোর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের অসুবিধা, সেগুলির স্বভাব এবং উৎস সম্পর্কে ধৈর্য এবং বোধগম্যতার বিকাশের মাধ্যমে আমরা এই ক্ষতিকারক মানসিক অবস্থা এবং আচরণ থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিতে অনুপ্রাণিত হই। একই সময়ে আমরা শিখি যে আমাদের নিজস্ব কর্মক্ষমতা সম্পর্কে আমাদের স্বাধীন আত্মমূল্য আছে। আত্মমূল্যের এই বোধগম্যতা বাহ্যিক পরিস্থিতির উপর নির্ভরশীল নয়, বরং স্থিতিস্থাপকতার জন্য একটা শক্তিশালী সমর্থন হিসাবে কাজ করে।

এই ধরণের হতাশা এবং দুর্দশা অবশ্যম্ভাবী এই বিষয়টির উপর অনুধাবন করে আমরা এই ধরণের স্ব-গ্রহণযোগ্যতা গড়ে তুলি। সমস্ত বিষয়ে সেরা হওয়া, সর্বকালে বিজয়ী হওয়া, সবকিছু জানা বা কখনো ভুল-ত্রুটি না করা, এটা অসম্ভব। এটা শুধুমাত্র তাই নয় যার মুখোমুখি আমাদের হতে হবে। এগুলি প্রত্যেকের জীবনের সত্য ঘটনা।

আত্ম-নিয়ন্ত্রণ

পূর্ববর্তী বিভাগে অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলি এবং অনুশীলনগুলি আত্ম-নিয়ন্ত্রণের আধার স্থাপন করে। আত্ম-নিয়ন্ত্রণ বলতে অনুশীলন এবং আচরণগুলিকে বোঝায় যা শরীর, মন এবং আবেগের সাথে অর্জিত অন্তর্দৃষ্টি এবং সচেতনতাকে শক্তিশালী করে। এখানে লক্ষ্যটি হল আমরা আমাদের আবেগকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারি, যেগুলি নিজেদের জন্য বা অপরের জন্য অযৌক্তিক সমস্যার সৃষ্টি করে না। এরফলে আমাদের আবেগ আমাদের বাধা-বিঘ্নের পরিবর্তে মিত্র হয়ে ওঠে। আত্ম-নিয়ন্ত্রণকরণটি তিনটি উপাদান নিয়ে গঠিতঃ

  • শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখা
  • জ্ঞানগত এবং প্ররোচিত নিয়ন্ত্রণ
  • সঠিক পথে পরিচালিত আবেগ

শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখা

সাবলীল ভাবে আমাদের আবেগকে সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞানগত এবং প্ররোচিত নিয়ন্ত্রণ গড়ে তোলা সহজ নয়, যদি আমরা চাপে থাকি বা অত্যন্ত অথবা স্বল্প উত্তেজনাকর অবস্থায় থাকি। মনের স্থিরতা এবং স্বচ্ছতার বিকাশীকরণটা শরীরের কিছু শারীরিক নিয়ন্ত্রণ ছাড়া প্রায় অসম্ভব। সুতরাং যে অনুশীলনগুলি শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে সেটা আমাদের অনেক উপকার করে। শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখাটা বিশেষ করে একটা গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। যদি আমরা মানসিক আঘাত বা প্রতিকূল শৈশবকালীন অভিজ্ঞতায় ভুগে থাকি অথবা আমরা যদি কম পছন্দসই পরিস্থিতিতে বাস করি।

আমাদেরকে আমাদের শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখা এবং শুধু শরীরকে শিথিল করা বা নিদ্রালুতা প্ররোচনার মধ্যে পার্থক্য করা উচিত। এখানে লক্ষ্যটি হল শারীরিক ও মানসিক নিয়ন্ত্রণের একটি অবস্থা বিকাশ করা যেটা মনোযোগ এবং শেখার পক্ষে উপযুক্ত। এটি একটি সক্রিয়, স্থিতিস্থাপক এবং ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থা, অলস নিদ্রালু এবং জড়তার অবস্থা নয়।

শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখার প্রথম পদক্ষেপটি হল একটা নিরাপদ স্থান তৈরী করা। আস্থা এবং নিরাপত্তার অনুভূতি ছাড়াই আমরা সতর্কতার সাথে বেশী তীব্রতর অবস্থায় থাকি। আমরা যখন নিরাপদ বোধ করি তখন আমরা কৌতুহল সহ আমাদের চিন্তা-ভাবনা এবং অনুভূতিগুলি অন্বেষণ করতে মুক্ত হই। সুরক্ষা পূর্বাভাসের মাধ্যমে তৈরী হয় আর পূর্বাভাস সৃষ্টি হয় আচরণের কারণে। এখানে ধারাবাহিকতা বলতে নিজের সাথে অনড়তার বিষয়ে নয়, বরং বোধগম্যতা এবং করুণা পূর্বক নিজের সাথে আচরণ করার ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতাকে বোঝায়।

শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখা এবং নিরাপদ বোধ বিকাশ করাকে নিম্নলিখিত বিষয় দ্বারা সহায়তা করা যেতে পারেঃ

  • সংস্থান হল যেখানে আমরা “সংস্থান গুলি” উপলব্ধি করার অনুশীলন করি যেটা বাহ্যিক বা আভ্যন্তরীণ হতে পারে। বাহ্যিক সংস্থানগুলি হল একটা বন্ধু, একটা প্রিয় জায়গা, একটি প্রিয় মনোরম স্মৃতি, একটা প্রিয় পোষা প্রাণী এবং আরও অনেক কিছু হতে পারে। আভ্যন্তরীণ সংস্থানগুলি এক ধরণের দক্ষতা বা আমাদের নিজস্ব কিছু ইতিবাচক দিক, যেমন- আমাদের রসবোধ বা আমাদের  শরীরের এমন একটা অংশ হতে পারে যা দৃঢ় এবং সক্ষম বোধ করে। আমাদের সংস্থানকে মনে রেখে আমাদের স্থিতিস্থাপকতা, নিরাপত্তা এবং আরামের জায়গায় নিয়ে যেতে সহায়তা করতে পারে। একবার বিকশিত হয়ে গেলে আমরা তখন আমাদের সংস্থান সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করার সময় আমাদের সংবেদনগুলি খুঁজতে পারি আর আমরা যখন চাপে থাকি বা উদ্বেগিত হই তখন আমাদের শরীর যা অনুভব করে এটা তার বিপরীত হয়।
  • পটভূমি হল সেখানে আমরা একটা বস্তুকে স্পর্শ করি বা ধরে রাখি যা আমাদের স্থাপন করে অথবা যেখানে শরীর সমর্থনযোগ্য মনে করে। বস্তুটি বা সমর্থনটি কেমন অনুভব করে আমরা তার প্রতি মনোযোগ দিই। পাশাপাশি অঙ্গবিন্যাস পরিবর্তন ক’রে আমাদের অনুভূতিগুলি কীভাবে পরিবর্তিত হয় সেটা লক্ষ্য করার চেষ্টা করি।
  • যোগ-ব্যায়াম, তাই-চি, সঙ্গীত শোনা, অঙ্কন এবং জার্নালিং-এর মতো ক্রিয়া-কলাপগুলি আমাদের শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য আনুষ্ঠানিক পদ্ধতিতে রূপান্তরিত করার পক্ষে আরও ভালো উপায়। আমরা সম্ভবত সবচেয়ে প্রাচীন এবং সহজ পদ্ধতিটিও ব্যবহার করতে পারি যেখানে আমরা আমাদের শ্বাসকে গণনা করি অথবা গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসে নিযুক্ত হই।

জ্ঞানগত এবং আবেগ নিয়ন্ত্রণ

জীবনে সফলতা লাভ করার জন্য আমাদের প্রতিনিয়ত বিক্ষিপ্ত না হয়ে কাজকর্মে মনোনিবেশ করতে সক্ষম হওয়া প্রয়োজন। এটা শুধু গুরুত্বপুর্ণ আলোচনা চক্রের সময় মনোযোগ দিতে সক্ষম হওয়া সম্পর্কে নয়, বরং আমাদের বিপরীত চিন্তা-ভাবনা এবং আচরণগুলির প্রতিও লক্ষ্য করার ক্ষমতা থাকা দরকার। আমাদের আবেগগুলি নিয়ন্ত্রণ করতে এবং সেগুলি কার্যকর হতে না দেওয়াটা আমাদের মনোযোগ গড়ে তোলার উপরে নির্ভর করে। আমরা যে পরিমাণে এটাকে বজায় রাখতে পারি সেই পরিমাণে বিক্ষিপ্ততায় জড়িয়ে যাই না। তবে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হল এখানে মনোযোগ বলতে আমাদের আভ্যন্তরীণ দিকে মনোনিবেশ করা ও আমাদের শরীর এবং মনে যেভাবে পরিবর্তন ঘটে সেগুলিকে সনাক্ত করার ক্ষমতাকেও বোঝায়। আমাদের মনোযোগ প্রশিক্ষণ আমাদেরকে উদ্দীপনা এবং প্রতিক্রিয়ার মধ্যে একটা স্থান তৈরী করতে শেখায়। উক্ত স্থানটি হল যেখানে আরও বেশী বিবেচিত প্রতিক্রিয়া গঠন করা যায়।

যদি আমাদের দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য নিয়ে যত্নশীল হতে হয় এবং আমাদের চ্যালেঞ্জগুলি সফলভাবে পরিচালনা করতে হয়, তাহলে এই ক্ষমতাটি তার জন্য প্রয়োজন। যখন আমাদের মনোযোগের উপর আমাদের নিয়ন্ত্রণ থাকে তখন শুধুমাত্র আমাদের শিক্ষক বা মনিবদের (বস) প্রতি মনোযোগ দেওয়ার চেয়ে আমরা আমাদের জ্ঞান ভিত্তিক প্রক্রিয়া এবং আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। আর তার সাথে আমাদের কর্মকে আরও ভালোভাবে প্রকাশ করতে পারি। এইভাবে আমরা আমাদের জীবনে উপভোগ করতে পারি এবং জীবনের এক প্রান্ত অর্জন করতে পারি।

আমাদের মনোযোগ বাড়াতে সহায়তা করার জন্য নির্দিষ্ট কৌশল আছে। আমরা নির্দিষ্ট মনোযোগের বিষয়গুলিতে মনোনিবেশ ক’রে আমাদের শরীর এবং মনের মধ্যে যা যা ঘটে তার সম্পর্কে সচেতনতা বিকাশ ক’রে এবং আমাদের চিন্তা-ভাবনা ও আবেগের সাক্ষী হওয়ার জন্য যুক্ত হয়ে “সম্পূর্ণ উপস্থিত” হতে শিখতে পারি।

আবেগের সঠিক পরিচালনা

আমরা আমাদের আবেগকে সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখা এবং জ্ঞান ভিত্তিক নিয়ন্ত্রণ গড়ে তোলা থেকে অর্জিত দক্ষতা ব্যবহার করি। এই শেষ পদক্ষেপটি জ্ঞানকে বাস্তব অনুশীলনের কার্যে পরিণত করে এবং আবেগপ্রবণ সাক্ষরতার চূড়ান্ত পদক্ষেপ গঠন করে। এখানে আমরা আবেগপ্রবণ বিচক্ষণতা বিকাশ করি। এটাই হল সেই চিহ্নিতকরণ করার ক্ষমতা যে আবেগগুলি কখন নিজের এবং অন্যের জন্য উৎপাদনশীল এবং সহায়ক হয় আর কখন সেগুলি আমাদের ও অন্যের জন্য বিষাক্ত বা ক্ষতিকারক হয়ে ওঠে। আমরা আমাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাকে অনুধাবন ক’রে এবং আমরা আমাদের মনের মানচিত্রকে ব্যবহার করে এটা করতে পারি। অতীতে আবেগগুলি কীভাবে কার্যকর হয়েছে এবং সেগুলি যে ফলাফল উৎপাদন করেছে সেটা অনুসরণ করতে চেষ্টা করার সময় আমরা স্বাভাবিক ভাবেই গঠনমূলক এবং ধ্বংসাত্মক আবেগগুলিকে বোঝার বোধগম্যতা বিকাশ করি। এটা আমাদের সাথে-সাথে অন্যদের ক্ষতি করতে পারে, এই ধরণের মানসিক অবস্থার বিষয়ে আমাদের সতর্ক করে। আমরা নিজের মধ্যে কেমন মনোভাবকে উৎসাহিত করতে চাই এবং কোনটি রূপান্তরিত করতে চাই সেটাও আমরা স্থির করতে পারি। আমরা যখন আবেগগুলি চিহ্নিত করতে এবং নিয়ন্ত্রণ করতে দক্ষতা অর্জন করি তখন আমাদেরকে উৎসাহ, সাহস এবং আত্ম-বিশ্বাসের উন্নতি সাধন বোধ করতে শুরু করা উচিত।

সারাংশ

আবেগপ্রবণ সাক্ষরতার বিকাশ অর্থাৎ আমাদের মন, আবেগ এবং অনুভূতির বোধগম্যতা হল একটা আত্ম-পরিচয় আর আমাদের আবেগের সম্পূর্ণ ক্রমবিন্যাস নিয়ে কাজ করার দক্ষতার একতা সুস্থ বোধের পথে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। আমরা যখন বুঝতে পারি যে আমাদের আবেগগুলি আমাদের সহজাত অংশ নয় তখন আমরা তাদের সাথে সফলভাবে মোকাবিলা করতে পারি এবং স্ব-গ্রহণযোগ্যতায় আসতে পারি। ফলে আমরা দেখতে পাই যে ক্রোধিত হওয়ার জন্য দোষী মনে করার কোন কারণ নেই বা হতাশাগ্রস্থ হওয়ার জন্য মন খারাপ করার কোন কারণ নেই। আমরা যখন একবার আমাদের মনের মানচিত্রটি পেয়ে যাই এবং বিভিন্ন আবেগের কারণ আর ফলাফল গুলো বুঝতে পারি তখন আমরা নিজের জন্য আবিষ্কার করতে পারি যে কী আমাদের মনের শান্তি নিয়ে আসে এবং আমাদের মনের কষ্টের কারণ কী। এই নেতিবাচক আবেগগুলির জন্য তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার আগে আমাদেরকে এগুলি ধরা এবং প্রতিকারগুলি প্রয়োগ করার দক্ষতা অর্জন করতে হবে। এই প্রশিক্ষণ আমাদের আত্মবিশ্বাস জোগায় এবং আমাদের সম্ভাব্যতা দেখতে এবং অর্জন করতে সহায়তা করে।


আপনি যদি আরও গভীরে যেতে চান তাহলে এসইই লারনিং ফ্রেম ওয়ার্কের (SEE Learning Framework) সম্পূর্ণ সংস্করণটি পড়ুন এবং সেন্টার ফর কনটেমপ্লেটিভ সাইন্স অ্যান্ড কমপ্যাশন বেস্‌ড নৈতিকতার অন্যান্য কার্যক্রম সম্পর্কে অধ্যয়ন করুন।

Top