প্রাচীন ভারতীয় আদর্শের পুনর্জাগরণ সম্পর্কে আমাকে কিছু বলতে বলা হয়েছে। বিষয়টি পরম পূজ্য দালাই লামাজীর চারটি অঙ্গীকারের মধ্যে অন্যতম। শিরোনামটি অনেকগুলি বিষয়ের সঙ্গে যুক্ত।
- প্রথমতঃ প্রাচীন ভারতীয় আদর্শ সমূহ কী কী?
- দ্বিতীয়তঃ সেগুলির পুনর্জাগরণের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কী?
- তৃতীয়তঃ পুনর্জাগরণের অর্থ কী?
- চতুর্থতঃ তাদের পুনর্জাগরণের জন্য বাস্তবোচিত কার্যকর পদ্ধতি কী হতে পারে?
প্রতিটি বিষয় একে-একে আলোচনা করা যাক।
প্রাচীন ভারতীয় আদর্শসমূহ কী কী?
আমরা যখন প্রাচীন ভারতীয় আদর্শগুলির দিকে ফিরে তাকাই, তখন তার পর্যবেক্ষণ করার জন্য দুটি দিক সামনে আসে।
- একটি দিক হল অহিংসা এবং করুণা- এই দুটি প্রাচীন ভারতীয় আদর্শ পরম পূজ্য দালাই লামাজী সবসময় তুলে ধরেন। ভারতের ধর্মীয় পরম্পরায় এই দুটির শিক্ষাদান করা হয়। আধুনিক যুগে আন্তর্জাতিক ধর্মনিরপেক্ষ মূল্যবোধ এবং ইমোরি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক বিকশিত সামাজিক আবেগ সম্পর্কিত এবং মূল্যবোধ নির্ভর পাঠ্যসূচীর (SEE) এই দুটি হল ভিত্তিস্বরূপ। এই কার্যক্রমটি বর্তমানে ভারতের বহু বিদ্যালয় তো বটেই বিশ্বের অনেক দেশে কার্যকরভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে।
- অপর দিকটি হল স্বাস্থ্যকর আবেগ সম্পর্কিত। এই বিষয়টিও পরম পূজ্যজী সর্বদা উন্নতি বিধানে সচেষ্ট। মন, আবেগ জ্ঞান লাভ ও বিশ্লেষণের পদ্ধতি নিয়ে প্রাচীন ভারতীয় ধর্মীয় পরম্পরাগুলির উপদেশে সাধারণত তা পাওয়া যায়।
দ্বিতীয় শিরোনামটির পুনর্জাগরণের বিষয়ে আমি জোর দিতে চাইব। আমরা যদি ভারতীয় বিজ্ঞান, দর্শন ও ধর্ম নিয়ে কথা বলি, যেমনটি পরম পূজ্য দালাই লামাজী বৌদ্ধ ধর্মোপদেশ দেওয়ার সময় প্রায়শই উদাহরণ হিসাবে দিয়ে থাকেন, তাহলে দেখা যাবে যে ভারতের বিজ্ঞান নিয়ে আলোচনার সময় একটি বিরাট অংশ মানসিক সুস্বাস্থ্যের বিষয়ে আলোচিত হয়েছে। আত্ম, সত্য এবং বাস্তবতার মতো বিষয় নিয়ে ভারতীয় দর্শন যখন আলোচনা করে তখন তা ছাপিয়ে যায়। কীভাবে আমরা স্ব-পরকে সম্মান করি, সত্য ও বাস্তবতা বলতে কী বুঝি, এসব বিষয় আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর পরিষ্কার ভাবে প্রভাব বিস্তার করে।
প্রাচীন ভারতীয় তত্ত্বীয় পরম্পরায় চারটি বৌদ্ধ এবং আটটি অ-বৌদ্ধ তত্ত্বীয় পরম্পরা অন্তর্ভুক্ত। তাদের অনেকেরই রয়েছে বহু শাখা-প্রশাখা। প্রতিটি পরম্পরা মানসিক স্বাস্থ্যের এই বিষয়ে স্বয়ং সম্পূর্ণ। সকলেই মন ও আবেগের বিষয়ে নির্দিষ্ট চিত্র পরিবেশন করে থাকেন। মন ও আত্মার সম্পর্কের বিষয়ে স্ব-প্রমাণ উত্থাপন করেন। তাদের সকলেরই বোধ ও যৌক্তিক প্রমাণের বিষয়ে নিজস্ব মতবাদ রয়েছে। এর পরও আত্মা, সত্য এবং বাস্তবিকতার দার্শনিক বিচারের ক্ষেত্রে সকলেরই দৃষ্টিকোণ বা মতবাদ ভিন্ন।
এছাড়া চার্বাক ব্যতীত সকলেই ধর্মীয় গন্ডীর মধ্যে থেকেই মূল বিষয় সমূহ নিয়ে বৈজ্ঞানিক ও দার্শনিক প্রমাণ উত্থাপন করেন। মূল বিষয়গুলি হল কর্ম, অনিয়ন্ত্রিত পুনর্জন্ম (অন্য কথায় সংসার), সাংসারিক দুঃখ, সংসারের কারণরূপে আত্মা এবং বাস্তবতা বিষয়ে এবং সংসার থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে আত্মা ও বাস্তবতার সম্যক্ জ্ঞান বা অনুধাবন। যেহেতু অজ্ঞতা আমাদের আবেগগুলিকে প্রভাবিত করে এবং তারফলে প্রতিফলন ঘটে আমাদের কর্মে। আর ওরা সংসারে নিয়ে আসে জন্ম-জন্মান্তরের দুঃখ-কষ্ট। অজ্ঞতাজনিত আবেগের অবস্থা (ক্রোধ, ঈর্ষা, লোভ ইত্যাদি) থেকে পরিত্রাণের পদ্ধতিগুলি সবই সংসারে জন্মান্তরের দুঃখ-কষ্ট থেকে মুক্তির দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। সুতরাং ভারতীয় দর্শন এবং ধর্মের মৌলিক প্রমাণগুলি থেকে মানসিক স্বাস্থ্য বিজ্ঞানকে পৃথকীকরণ মোটেই সহজ কাজ নয়।
প্রাচীন ভারতীয় বিজ্ঞান, দর্শন এবং ধর্ম বিষয়ে বিশাল ও বৈচিত্রপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গী বা মতবাদ সকলে প্রায় সমান ভাবে উপস্থাপন করেছেন। এমন অবস্থায় মানসিক আবেগগত সুস্বাস্থ্য সম্পর্কিত প্রাচীন ভারতীয় আদর্শ বা মূল্য কী? সেগুলি হল-
- সত্য ও কল্পনার পৃথকীকরণে যুক্তি ও বিশ্লেষণের ব্যবহারিক মূল্যায়ন।
- স্ব-পরের জন্য আমরা যে দুঃখের জন্ম দিই তা দূর করতে মন ও আবেগ ঠিক কীভাবে কাজ করে তার অনুধাবনের মূল্যায়ন।
প্রাচীন ভারতীয় তত্ত্বীয় পরম্পরাগুলি মানসিক সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার পদ্ধতি একইরকম ভাবে ভাগ করে নিলেও সেটা আরও কিছু সমান ভাবে ব্যক্ত করে।
- প্রথমেই হল শিক্ষার মূল্যবোধ। সমস্ত পদ্ধতিগুলি অজ্ঞতা, দুঃখ-কষ্ট দূরীকরণের জন্য তাদের উপদেশ শুনে বা গড়ে মনকে প্রশিক্ষিত করতে এবং তারপর এগুলি সত্য কি না তা সঠিক ভাবে বুঝতে চুলচেরা বিশ্লেষণের কথা বলে। পড়া এবং গভীর বিশ্লেষণাত্মক চিন্তন হল সঠিক শিক্ষার আধার বা ভিত্তি স্বরূপ।
- দ্বিতীয় মূল্যবোধ হল যা কিছু আমরা পাঠ করলাম, বুঝলাম এবং দৃঢ়বিশ্বাস অর্জন করলাম, সেটাকে জীবনের সঙ্গে যুক্ত করা। এর পদ্ধতি হিসেবে সমস্ত ভারতীয় পরম্পরা উপকারী অভ্যাসের বিকাশ করার জন্য ধ্যানের শিক্ষাদান করে।
- তৃতীয় হল নৈতিক আত্মসংযম, মনসংযোগ এবং অন্তর্দৃষ্টির (শীল সমাধি এবং প্রজ্ঞা) মূল্য। সকলেই মনের প্রশিক্ষণে শৃঙ্খলা আনতে কায়-বাকের উপর সদর্থক সংযমের শিক্ষাদান করেন। তারপর আমাদের মনকে প্রশিক্ষিত করার জন্য সকলেই মনসংযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে শমথ সাধনা ব্যবহার করেন। আর অন্তর্দৃষ্টির বিকাশ এবং অজ্ঞতা দূর করতে বিপশ্যনা সাধনা করেন। মনের বিক্ষেপতা এবং জড়তা দূর করে একটি বিষয়ের উপর একাগ্র হওয়াই হল শমথ সাধনা। সঠিক পদ্ধতিতে এর বিষয় নির্ভর করে সেটা করা হয়, যেমন ধরুন এই বিষয়টি অনিত্য, অথবা তার প্রতি করুণার মতো উপকারী মনোভাব গ্রহণ করা। অসাধারণ ভাবে প্রত্যক্ষ বা অনুভব করতে সক্ষম এমন একটি মানসিক অবস্থা হল বিপশ্যনা। এতে শমথতে থেকে বিষয়ের উপর মনোভাব এবং অনুধাবনের সবিস্তারে পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে প্রভেদ প্রত্যক্ষকরণ করা হয়।
তাহলে, সংক্ষেপে বললে, মানসিক সুস্বাস্থ্যের বিষয়ে প্রাচীন ভারতীয় মূল্যবোধ হল-
- শিক্ষা।
- যুক্তিপূর্ণ ও বিশ্লেষণাত্মক ভাবনা।
- মন এবং আবেগসমূহকে অনুধাবণ করা।
- নৈতিক আচরণ।
- মনসংযোগ (সমাধি) এবং অন্তর্দৃষ্টির (প্রজ্ঞা) বিকাশে ধ্যান সাধনা।
মানসিক সুস্বাস্থ্যের বিষয়ে প্রাচীন ভারতীয় মূল্যবোধের পুনর্জাগরণের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য কী?
মূল্যবোধ শব্দটির অর্থ হল এমন একটি বস্তু যা সদর্থক লক্ষ্য অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়। পরিষ্কার, পরিচ্ছন্নতা, স্বাস্থ্যকর খাদ্য, শরীরচর্চা এবং নিরাপদ আচরণের উপর শারীরিক সুস্বাস্থ্য নির্ভর করে। এসবই গুরুত্বপুর্ণ কারণ। এগুলি রোগ প্রতিরোধ করতে সহায়ক এবং নিজের ও সমাজের মঙ্গলে অবদান রাখে। একইরকমভাবে, শিক্ষা, যুক্তিপূর্ণ ভাবনা, সঠিক বোধগম্যতা, আবেগের ভারসাম্যতা, গঠনমূলক আচরণ, মনসংযোগ এবং অন্তর্দৃষ্টির উপর মানসিক সুস্থতা নির্ভর করে। এর সবগুলিই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তারা অযৌক্তিক চিন্তা-ভাবনা, আবেগের অস্থিরতা এবং ক্ষতিকারক অবাঞ্ছিত আচরণ রোধ করে নিজের এবং সমাজের মঙ্গল সাধন করে।
মানুষকে দুঃখ-কষ্ট থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্যই প্রাচীন ভারতে মানসিক সুস্বাস্থ্যের উপর উপদেশাবলী দেওয়ার উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্য ছিল। যদিও অন্তিম লক্ষ্য ছিল সংসারের দুঃখ-কষ্টকে জয় করা অর্থাৎ অনিয়ন্ত্রিত পুনরাবৃত্ত পুনর্জন্ম। এই উপদেশগুলি দৈনন্দিন সমস্যা ও দুঃখ-কষ্টকে জয় করার ক্ষেত্রেও উপকারী ছিল। মন ও আবেগ কীভাবে কাজ করে তা বিশ্লেষণ করে মানুষকে জানিয়ে তারা কাজ করে; কীভাবে তাদের আবেগ আচরণকে প্রভাবিত করছে। মন ও আবেগের মধ্যে সমস্যা সৃষ্টিকারীদের কীভাবে চিহ্নিত করা যাবে এবং কীভাবে অধিক জ্ঞানকে কার্যে প্রয়োগ করা যায়, যুক্তি এবং তর্ক, শীল এবং ধ্যানের মাধ্যমে এইসব সমস্যা সৃষ্টিকারী আবেগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় ইত্যাদি হল এর বিষয়।
আজকের দিনে মানুষের মস্তিষ্ক কীভাবে কাজ করে এবং মনের মনস্তাত্ত্বিক মতবাদ এবং মানুষকে সাহায্য করার জন্য পদ্ধতিগুলির বিস্তারে যে বৈজ্ঞানিক জ্ঞান লাভ করা গেছে তাকে শক্তিশালী করা হল এই উপদেশাবলীর পুনর্জাগরণের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য। মানুষকে সাহায্য করার অর্থ এই নয় যে থেরাপি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সঙ্কটাপন্ন রুগীদের চিকিৎসা করা, বরং সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সমস্যা সমূহের মোকাবিলা কীভাবে আরও ভালভাবে করা যেতে পারে তাও এতে অন্তর্ভুক্ত। দুঃখ দূর করার জন্য সমস্ত সত্ত্বদের সাহায্য করা সম্ভবতঃ পরমপূজ্য দালাই লামাজীর মূল ঐকান্তিক প্রতিশ্রুতি।
আমাদের বর্তমান যুগে প্রাচীন ভারতের মানসিক সুস্বাস্থ্যের মূল্যবোধটিকে ফিরিয়ে আনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রায়শঃ আমরা শুনি যে আমাদের বর্তমান সময়টিকে “পর-সত্য যুগ” বলা হচ্ছে। অবাধে ভুল তথ্য এবং নকল সংবাদ পরিবেশিত হচ্ছে। অনেকেই বিশ্বাস করেন যে, সত্যতার নির্ধারণ হবে যেটাকে তারা আবেগগতভাবে সত্য মনে করবে, পরীক্ষা-নিরীক্ষা নির্ভর কাহিনীর উপর নির্ভর করে নয়। এগুলি আমাদের অযৌক্তিক আচরণ, সামাজিক অনৈক্য, বিশৃঙ্খলা এবং দ্বন্দ্বের দিকে নিয়ে যায়। সংক্ষেপে বললে সেটা আমাদের বহু-সমস্যা এবং দুঃখের দিকে নিয়ে যায়। এই সমস্যাগুলির নিরসনে, বিশেষ করে বাস্তবতার বিষয়ে ভুল ধারণার মোকাবিলা এবং তার দূরীকরণ, সমস্যা সৃষ্টিকারী আবেগসমূহ এবং ধংসাত্মক আচরণ যা আমাদের দুঃখ ডেকে আনে ইত্যাদির সমাধানের জন্য প্রাচীন ভারতের মানসিক সুস্বাস্থ্যের মূল্যবোধের প্রক্রিয়াটির পুনর্জাগরণ বিশেষ পথ দেখাতে পারে।
একটি উদাহরণ দেওয়া যাক। পরম পূজ্যজী প্রায়ই বৌদ্ধ চিত্তমাত্র মতবাদের সঙ্গে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের সাদৃশ্যের কথা বলেন। দুটি মতবাদই এই সিদ্ধান্তে পৌঁছয় যে বস্তুগত বিষয়ই বাস্তবে নেই। দর্শকের চিত্ত যে বিষয়বস্তুকে দেখে সেটাই তার অবস্থাকে প্রভাবিত করে। এইভাবে বিভিন্ন দৃষ্টিতে ভিন্ন-ভিন্ন সত্য উঠে আসে। উদাহরণ স্বরূপ, ফোটন একটি কণা বা শক্তির তরঙ্গ যা হল স্রষ্টা এবং কাল্পনিক কাঠামো যার দ্বারা সেটা পরিমাপ করা হয় তার উপর নির্ভর করে। এই বিষয়ে বৌদ্ধ পরম্পরার একতি বিখ্যাত উদাহরণ হল যে মানুষ যাকে জল বলে অনুভব করে দেবতারা তাকেই অনুভব করে অমৃত রূপে আর একই বস্তু প্রেত বা ভূতগণের অভিজ্ঞতায় হল পুঁজ।
যেভাবে ফোটন কণাও একটি শক্তি তরঙ্গ হিসেবে আপেক্ষিক সত্য তেমনই এই সকল সত্ত্বগণ যা অনুভব করে তাও আপেক্ষিক রূপে সত্য এবং কারণ ও ফল হিসেবে কাজ করে। জল মানুষের তৃষ্ণা মেটায়, অমৃত দেবতাদের আনন্দ দান করে আর পুঁজ প্রেতদের ভয়ঙ্কর কষ্ট দেয়।
যাই হোক, এই দৃষ্টিভঙ্গি বা মতবাদের আপেক্ষিকতা শুধুমাত্র একটি সাংবৃতিক সত্য, তা গভীরতম সত্য নয়। কিন্তু, এমনকি আপেক্ষিক এবং চলতি সত্যের মধ্যেও বৈধ চলতি সত্য এবং অবৈধ চলতি সত্যের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। বিষয়টি এমন নয় যে, কোন ব্যক্তি যা কিছু ভাবল তাই সত্য। প্রকৃতপক্ষে যেহেতু ওরা বিশ্বাস করে এটি সত্য, তাই এটা সত্য। যদি কেউ ভাবেন যে আগুনে তেল ঢাললে সেটা নিভে যাবে, সেটা বাস্তবে হয় না। আগুন আরও বেড়ে যাওয়ার কারণ হবে। যুক্তি নির্ভর বিশ্লেষণাত্মক প্রাচীন ভারতীয় মূল্যবোধের পুনর্জাগরণের অন্যতম একটি কারণ হল যে এই পর-সত্য যুগ- এর সমস্যা ও গোলমাল থেকে মানুষকে বেরিয়ে যেতে সাহায্য করা।
মানসিক সুস্বাস্থ্যের প্রাচীন ভারতীয় মূল্যবোধের পুনর্জাগরণের অর্থ কী?
এই বৈচিত্রপূর্ণ বৌদ্ধ এবং অ-বৌদ্ধ মতবাদগুলি একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বিকশিত হয়নি। তাদের মধ্যে নালন্দার মতো বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে শাস্ত্রার্থ করার দীর্ঘ ইতিহাস ছিল। জ্ঞান এবং সকল পরম্পরার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে সর্বধর্ম সমন্বয় হল পরম পূজ্য দালাই লামাজীর আর একটি গৃহীত প্রতিশ্রুতি। নালন্দা পরম্পরাকে পরম পূজ্য দালাই লামাজী অত্যন্ত শ্রদ্ধা করেন। তাঁর প্রতিশ্রুতির এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখলে প্রাচীন ভারতীয় মূল্যবোধের পুনর্জাগরণ বলতে বোঝাবে বৌদ্ধ-অবৌদ্ধ সকল মতবাদের মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক উপদেশের পুনর্জাগরণ।
আবেগগত সুস্বাস্থ্যের প্রাচীন ভারতীয় মূল্যবোধের পুনর্জাগরণ মানে শুধু গ্রন্থাবলীর সংস্কৃত থেকে আধুনিক ভাষায় অনুবাদ নয়, যদিও সেটা গুরুত্বপূর্ণ কাজের অংশ। মূল গ্রন্থাবলী এবং তাদের ভারতীয় ব্যাখ্যা, তার সঙ্গে বৌদ্ধ গ্রন্থের তিব্বতী ব্যাখ্যা বোঝা সহজ নয়। সেগুলি অনেক উন্নত এবং এগিয়ে আছে। একে সঠিক ভাবে বুঝতে গেলে প্রাথমিক পাঠতো বটেই, সাথে গভীর জ্ঞান থাকতে হবে। এই সব গ্রন্থাবলীতে যে জ্ঞান রয়েছে তাকে ফিরিয়ে আনতে হলে বিষয় বস্তুর ক্রমিক ব্যাখ্যা করতে হবে। শুরু করতে হবে একেবারে প্রাথমিক স্তর থেকে। যারা ভারতীয় পরম্পরাগত চিন্তা-ভাবনা সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল নন একমাত্র এই ক্রমিক স্তরের পাঠ বিষয় তাদের সেটা বুঝতে সাহায্য করবে।
উপদেশগুলি উত্তরোত্তর নির্ভুল এবং বৈধ হতে পারে, এই ভেবে সেগুলিকে ক্রমিক স্তরের পদ্ধতিতে সাজিয়ে পরিবেশন করলেই সেটা ক্রমানুসারে অধ্যয়ন করাকে বোঝায় না। সেটা করতে গেলে ধরে নিতে হবে একটি পদ্ধতি অন্যদের থেকে উত্তম এবং সেই পাঠকে ‘নীচু পদ্ধতি’ বলে বিবেচিত করা হয়েছে। তার মানে হল একেবারে প্রথম সিঁড়ি থেকে সর্বোচ্চ এবং সর্বোত্তম অধ্যয়নের রূপরেখা তৈরী করছে। বহু বিদ্বান যদিও বৌদ্ধ মতবাদ পাঠের জন্য এইরকম ক্রমিক স্তরের ব্যবস্থা করেছেন তবুও পরম পূজ্যজী যে সর্বধর্ম সমন্বয়ের জন্য মূল্যবোধের যে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন সেটা এর সম্পূর্ণ বিপরীত। ক্রমিকস্তরে বৌদ্ধ এবং অ-বৌদ্ধ উপদেশাবলীর পরিবেশনের মানে হল যে একক ভাবে প্রতিটি মতবাদের জটিলতার ক্রমিক উপস্থাপন।
পরম পূজ্যজী প্রায়ই বলেন যে বৌদ্ধবিজ্ঞান এবং দর্শনের উপদেশাবলী শিক্ষার পাঠক্রম হিসেবে অধ্যয়ন করা যেতে পারে। ভারতীয় বিজ্ঞান এবং দর্শনের ক্ষেত্রেও সেটা একইরকমভাবে কার্যকর। প্রাচীন ভারতীয় জ্ঞানের ভান্ডারটির পুনর্জাগরণ মানে তাকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জাদুঘরের সীমিত পরিসরে অধ্যয়নের বিষয় মনে করে সেটাকে শুধু সংরক্ষণ করা উচিত হবে না। বিশ্বজুড়ে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে দক্ষিণ এশীয় পাঠ্যসুচীর সঙ্গে প্রাচীন ভারতীয় দর্শনের বিভাগও খুলেছে। ভারতে নব নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের মত প্রতিষ্ঠান স্থাপন করে শুধুমাত্র এই বিষয় সমূহের বিশেষীকরণের ব্যবস্থা করা একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলেও সেটা যথেষ্ট নয়।
পরম পূজ্যজী যেমনটি জোর দিয়ে বলেন যে মানসিক সুস্বাস্থ্যের গুরুত্ব এবং মূল্যবোধ শিশুদেরও শেখাতে হবে। বিদ্যালয়ের সমস্ত স্তরে ও পাঠক্রমের সঙ্গে তাকে ওতপ্রোত করা দরকার এবং সেটা হবে শিশুবিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত। পরম পূজ্য দালাই লামাজী দৃঢ়তার সঙ্গে বিশ্বাস করেন যে সমাজে সদর্থক পরিবর্তনের পথ সুগম করতে হলে সেটা শিশুদের শিক্ষা থেকে শুরু করতে হবে। এইভাবে, পরম পূজ্যজী বলেন যে, প্রাচীন ভারতীয় মুল্যবোধ বলতে শুধুমাত্র অহিংসা ও করুণা নয়, বরং এর সঙ্গে মানসিক সুস্বাস্থ্যকেও বর্তমানের জড়বাদী সমাজের শিশুদের শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত করতে হবে।
ধর্মনিরপেক্ষ সাধারণ শিক্ষার সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে প্রাচীন ভারতীয় মূল্যবোধের মিশেল হচ্ছে সমাজে সদর্থক প্রভাব বিস্তারের পক্ষে সর্বশ্রেষ্ঠ উপায়। যেহেতু মূল্যবোধের এই উপদেশগুলি ভারত থেকেই উদ্ভূত এবং সকল ভারতীয় মতবাদের সঙ্গে সেটা একইরকম অংশীদার তাই পরম পূজ্যজী বলেন এই মূল্যবোধের পুনরুজ্জীবন প্রথমে ভারতেই শুরু হওয়া উচিত। এই কার্যক্রমগুলির ফল দেখে বিশ্বের অন্যত্র যারা এর আওতায় নেই তাদের মধ্যে পৌঁছনোর জন্য পরিকল্পনা নেওয়া যেতে পারে।
এই উপদেশ এবং মূল্যবোধগুলিকে সত্যিকারের পুনর্জীবিত করতে হলে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সমস্যাগুলির দূরীকরণের জন্য এগুলির ব্যবহার কীভাবে হতে পারে তার যুক্তিযুক্ত ব্যাখ্যা ও ব্যবহারিক নির্দেশিকা সহ প্রয়োগ করতে হবে। তারজন্য প্রয়োজন এমন একটি ধর্মনিরপেক্ষ পদ্ধতি যা ভারতের জন্যও প্রযোজ্য হবে এবং তাতে ওই মূল্যবোধগুলির মূল ধর্মীয় বিষয়, যেমন কর্ম, পুনর্জন্ম এবং মুক্তির মতবাদগুলি বর্জিত থাকবে। এটি এই কারণে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ যে বৌদ্ধ এবং অ-বৌদ্ধ নানা মতবাদ এই বিষয়গুলি নিয়ে বিবাদপূর্ণ মতবাদ উত্থাপন করেছে। যাইহোক, একটি সার্বজনীন পথ পাওয়া আরও কঠিন। কারণ হল এই যে আত্ম, সত্য এবং বাস্তবতার বিষয়ে বৌদ্ধ এবং অ-বৌদ্ধ পরম্পরার মতবাদগুলিতে অনেক সময় পারম্পরিক মতানৈক্য দেখা যায়। ধর্ম ও দর্শনের পরিসরে এই বিভেদমূলক মতবাদ মানসিক সুস্বাস্থ্যের বিভিন্ন দিক নিয়ে মতবাদের পদ্ধতিকেই প্রভাবিত করে।
উদাহরণস্বরূপ, সমস্ত ভারতীয় মতবাদের পরম্পরাগুলি স্বীকার করে যে, বাস্তবতা সম্পর্কে অজ্ঞতাই সকল দুঃখের মূল। ওঁরা একথাও সমস্বরে বলে যে, এই অজ্ঞতাই সকল আবেগের ভিত্তিস্বরূপ। সেটা ধ্বংসাত্মক বা গঠনমূলকও হতে পারে। আবার সকল দুঃখ-সুখের অনুভবের পিছনেও তাই রয়েছে। ওঁরা সকলে একমত যে-
- কীভাবে মন বস্তুকে জানে তার অনুধাবন দ্বারা
- অবৈধ উপায়ের পরিবর্তে বৈধ উপায়ে বোধগম্যতা-এর পৃথকীকরণ দ্বারা
- যুক্তি এবং কারণের প্রয়োগ দ্বারা
আমরা অজ্ঞতা দূর করে আমাদের দুঃখের অবসান ঘটাতে পারি।
এখানেই সাদৃশ্যের সমাপ্তি। অ-বৌদ্ধ পরম্পরাগুলির মতবাদ বলে যে, আত্মা একটি অপরিবর্তনশীল সত্ত্বা, দুঃখ এবং পুনর্জন্ম থেকে মুক্ত হলেও দেহ ও মন নিয়ে স্বাধীন অস্তিত্ব নিয়ে চলতে থাকে। এই মতবাদের সমর্থনে তারা বলে যে অজ্ঞতা থেকে আমাদের মুক্তির অর্থ হল সমস্ত আবেগ এবং অনুভূতি থেকে মুক্ত হয়ে যাওয়া। তার মানে সমস্ত ধ্বংসাত্মক বা গঠনমূলক আবেগ এবং সমস্ত সুখ-দুঃখের অনুভব থেকেও মুক্তি। আত্মা তখন মন, আবেগ অথবা অনুভূতি রহিত হয়ে বিদেহী রূপে অবস্থান করতে থাকে।
এর বিপরীতে বৌদ্ধ পরম্পরা বলে যে আত্মা দেহ ও মনের উপর নির্ভর ক’রে অবস্থান করে, এমনকি মুক্তির পরেও। অজ্ঞতা যখন দূর হয়ে যায় তখনও আমাদের মধ্যে গঠনমূলক আবেগ থেকে যায়, রয়ে যায় সুখানুভূতি, তবে উভয়ই অজ্ঞতা জনিত ত্রুটি মুক্ত থাকে। তখন মুক্ত সত্ত্বটি নির্মল আবেগ এবং অনুভূতি যা আবার শুদ্ধ দেহ এবং মনের অনুভব নির্ভর তার অস্তিত্ব চলতে থাকে। এইভাবে বৌদ্ধ এবং অ-বৌদ্ধ মতবাদগুলি স্বীকার করে যে, বাস্তবতার বিষয়ে অজ্ঞতা থেকে মুক্ত হওয়ার উপর আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য নির্ভর করে। তবে ফলের অবস্থায় কিন্তু যথেষ্ট পার্থক্য দেখা যায়। অ-বৌদ্ধ দৃষ্টিকোণে একটি আদর্শ মানসিক স্বাস্থ্য হল যে এমন একটি মানসিক অবস্থা যার মধ্যে নির্মল গঠনমূলক আবেগ, যেমন প্রীতি ও করুণা এবং বিশুদ্ধ সুখানুভূতি থাকবে। এইভাবে বিভিন্ন প্রাচীন ভারতীয় মতবাদ দার্শনিক ও ধর্মীয় দৃষ্টিকোণে আদর্শ আবেগপ্রবণ সুস্বাস্থ্যের বিষয়ে জোরালো ভাবে তাদের মত প্রতিষ্ঠা করে এবং সেটা যথেষ্ট প্রভাবশালী।
আবেগপ্রবণ সুস্বাস্থ্যের উপর প্রাচীন ভারতীয় উপদেশাবলীর পূনর্জাগরণে একে সহজেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাগত বিষয় হিসাবে অন্তর্ভূক্ত করা যেতে পারে। তার সঙ্গে বিভিন্ন পরম্পরার দার্শনিক এবং ধর্মীয় বিষয়ের মধ্যে যে বিশুদ্ধ বিজ্ঞান রয়েছে, এবং মনের আবেগগুলির মানচিত্র, বোধের তত্ত্ব, জানার পদ্ধতি এবং যুক্তি গঠনের পথ ইত্যাদি ও অধ্যাপনা করা যেতে পারে। এই পার্থক্যগুলি বুঝতে হলে ছাত্রকেও হতে হবে পরিণত বুদ্ধিমত্তার অধিকারী। এই বিপরীতধর্মী ধর্মীয় এবং দার্শনিক প্রভেদগুলি বিদ্যালয়ের ছাত্রদের পক্ষে যথেষ্ট জটিল ও বিভ্রান্তকারী মনে হতে পারে। তাহলে সাধারণভাবে শিক্ষার জন্য প্রাচীন ভারতীয় মানসিক স্বাস্থ্যের কোন মূল্যবোধগুলি অধ্যাপনা করা যেতে পারে? এগুলি হল-
- আমাদের মন কীভাবে কাজ করে সেটা জানার মূল্য এবং গুরুত্ব
- আবেগ বিশ্লেষণের মূল্যবোধ এবং গুরুত্ব কীভাবে আমাদের মনোভাব এবং চিন্তাকে প্রভাবিত করে তা জানার মূল্য।
- আমাদের আচরণ ও হিত কীভাবে আবেগ ও মনোভাব দ্বারা প্রভাবিত হয় সেটাকে জানার মূল্য ও গুরুত্বকে উপলব্ধি করা।
- যুক্তি নির্ভর করে বাস্তবোচিত এবং বিশ্লেষণাত্মক চিন্তা-ভাবনার গুরুত্ব এবং তার মূল্য।
আমরা একেও অন্তর্ভুক্ত করতে পারি-
- মনের একাগ্রতা এবং অন্তর্দৃষ্টির বিকাশে নৈতিক শৃঙ্খলা এবং ধ্যানের মূল্য।
বিদ্যালয়ের শিশুদের কাছে এই দার্শনিক এবং ধর্মীয় পার্থক্যগুলি যা এই বিষয়গুলি সৃষ্টি করে তার গুরুত্ব অনেকটা গৌন।
এই প্রাচীন ভারতীয় মূল্যবোধগুলির পুনর্জাগরণের জন্য কার্যকর ও উপযুক্ত পদ্ধতি কী হতে পারে?
মানসিক স্বাস্থ্যের উপর বৌদ্ধ উপদেশাবলীর পুনর্জাগরণের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ পরম পূজ্য দালাই লামাজী ইতিমধ্যেই নিয়ে নিয়েছেন। তেংগ্যুর থেকে বৌদ্ধ বিজ্ঞান ও দর্শনের উপাদানগুলি সংগ্রহ করার জন্য তিনি তিব্বতী পন্ডিতদের নিযুক্ত করেছেন। তেংগ্যুর হল বুদ্ধবচনের উপর ভারতীয় আচার্যদের কৃত ব্যাখ্যার তিব্বতী অনুবাদের সংকলন। এই ঐতিহাসিক কাজটি সম্পন্ন হয়েছে এবং সেটা প্রকাশিত হয়েছে তিব্বতী ভাষায় এর আংশিক ইংরাজিতে Science and Philosophy in the Indian Buddhist Classics শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছে। অন্যান্য আধুনিক ভাষাতেও অনুবাদের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এর দ্বিতীয় খন্ড Mind নামে ইংরেজীতে পাওয়া যাচ্ছে এবং এতে রয়েছে মানসিক সুস্বাস্থ্যের বিষয়াদি। প্রাচীন ভারতীয় মূল্যবোধগুলির পুনর্জাগরণের বিষয়ে যে উপাদান পাওয়া যায় তার অনুবাদ ও সংকলনের জন্য একইরকম উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
তেংগ্যুর থেকে উপাদান নিয়ে সেটা অনুবাদ করার পরও অনেক বাধা থাকে যেমন আধুনিক পড়ুয়াদের নিকট পৌঁছনোর বিষয় বাকী রয়েছে। প্রথমতঃ, ভারতীয় গ্রন্থাবলী, তাদের ব্যাখ্যা থাকলেও বোঝা সহজ নয়। এগুলির আরও ব্যাখ্যার প্রয়োজন হয়। যে বিষয়টি একে আরও জটিল করে তুলেছে সেটা হল তিব্বতী গুরুগণের নিজস্ব ভাষ্য। ওঁরা সবাই নালন্দা পরম্পরার সাথে যুক্ত হলেও ভারতীয় গ্রন্থের ভাষ্যের বিষয় এক হলেও কোন কোন সময় সেটা খুবই ভিন্নধর্মী, এমনকি বিরোধী বলেও মনে হয়। জ্ঞানতত্ত্ব এবং জানার পদ্ধতি এই দুটি বিষয়ে সেটা খুবই বেশী মাত্রায় দেখা যায়।
উদাহরণস্বরূপ, সাক্য পন্ডিতের ভাষ্য যা ঞিঙ্মা, কাগ্যু এবং সাক্যগণ অনুসরণ করে থাকেন, সেটা বলছে যে দৃষ্টির বোধ যা কল্পিত নয় তা কোন একটি রঙ-এর একমুহুর্ত মাত্র অনুধাবন করে; যেমন ধরুন একটি কমলার আকারের রঙ। দৃষ্টিগত জ্ঞান বা বোধ এই রঙিন আকারগুলিকে সাধারণ জ্ঞান হিসেবে নির্দিষ্ট করে দেয় না। কমলা যে একটি সাধারণ জ্ঞানের বিষয় যাতে রয়েছে দেখা, গন্ধ নেওয়া স্বাদ এবং দৈহিক অনুভূতি যা সময়ের সঙ্গে প্রলম্বিত হয় সেটা বুঝিয়ে দেয় বিষয়ীভূত জ্ঞান বা বোধ। একমাত্র এইরকম বিষয়ীভূত জ্ঞান বা বোধ বস্তুটি যে কমলা সেটা নির্দিষ্ট করে দেয়।
এর বিপরীতে ছাপা-এর গেলুগ অনুগামীগণের মত হল যে দর্শনগত জ্ঞান বা বোধ একটি কমলার একমুহুর্তের রঙ-এর আকার শুধু অনুধাবন করায় না, বরং তার সাথে-সাথে সেটা কমলাটিকেও সনাক্ত করে দেয় এবং সেটা যে একটি সাধারণ জ্ঞানের বস্তু সেটা নির্দিষ্ট করে দেয়। এরকম দুটি বিপরীতধর্মী মতবাদ মানসিক স্বাস্থ্যের অপর বিষয়গুলি নির্ণয় করতেও প্রভাব ফেলে; যেমন বৈধ জ্ঞান কী এবং প্রকৃতই বিদ্যমান বা সত্য কী?
ভারতীয় বৌদ্ধ উপদেশের উৎসগুলি ভাল করে বুঝতে হলে উক্ত তিব্বতী ব্যাখ্যাগুলির মত ভাষ্য সংযোজন করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তবু প্রশ্ন জাগে; এধরণের বিবিধ এবং অতিরিক্ত ব্যাখ্যা কী শুধু বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে মানসিক স্বাস্থ্য পাঠক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা হবে? নাকি প্রাক্ বিশ্ববিদ্যালয় পর্বের সার্বজনীন শিক্ষা ব্যবস্থায় একে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে প্রাচীন ভারতীয় মূল্যবোধের পুনর্জাগরণের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হল যুক্তিপূর্ণ চিন্তা ভাবনার উন্নতি বর্ধন। সুতরাং, এই প্রশ্নের সম্ভাব্য উত্তর হতে পারে যে বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রাক্ বিশ্ববিদ্যালয় স্তরের শিক্ষার্থীদের প্রাচীন ভারতীয় তর্কশাস্ত্র ও শাস্ত্রার্থের উপাদান দেওয়া হোক, ওঁরা তর্ক-বিতর্ক করে বিভিন্ন তত্ত্বগুলি বিশ্লেষণ করে নিজেরা দেখুক। বিভিন্ন ভারতীয় বৌদ্ধ এবং অ-বৌদ্ধ পরম্পরায় আদর্শ মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে যে বৈপরীত্য রয়েছে সেটা নিরসনে এই পদ্ধতির প্রয়োগ করা যেতে পারে।
কোথা থেকে শুরু?
সপ্তদশ বিখ্যাত নালন্দা পন্ডিতদের প্রার্থনায় পরম পূজ্যজী নালন্দার পন্ডিতদের বৌদ্ধ শিক্ষাগুলি অধ্যয়ন করার একটি পদ্ধতির ইঙ্গিত দিয়েছেন যা আধুনিক মানসিকতার পক্ষে বেশী উপযুক্ত। এটা শুরু হয় দুটি সত্যের বোধগম্যতার সাথে, তারপরে দুটি সত্য থেকে চারটি সত্য এবং চারটি সত্য থেকে শুরু করে ত্রি-শরণ পর্যন্ত। এই ক্রমটি একটি ধর্মনিরপেক্ষ পদ্ধতিতে আবেগপ্রবণ স্বাস্থ্যবিধির অধ্যাপনার প্রাথমিক বিষয় হিসাবেও সহায়ক হতে পারে, যদিও বৌদ্ধ ত্রিরত্ন- শরণের ক্ষেত্রে শেষ পয়েন্টটি নির্দিষ্ট করার প্রয়োজন হয় না। নিজেকে দুঃখ থেকে রক্ষা করার জন্য এটাকে জীবনের নিরাপদ দিক হিসাবে উপস্থাপন করা যেতে পারে।
আসুন, আমরা পরম পূজ্যের সুপারিশটি সন্ধান করি। সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য সর্বাধিক সাধারণ পদগুলির মধ্যে দুটি সত্য সম্পর্কে আমরা যেমন একদিকে বিশ্বাস করি যে মিথ্যা উপস্থিতিটি সত্য, ঠিক তার উল্টোদিকে আছে প্রকৃত বাস্তবতা। আমরা বিশ্বাস করি যে, যেভাবে বস্তুগুলি আমাদের কাছে প্রদর্শিত হয় সেটা সত্য, কারণ এটা সহজভাবে আমাদেরকে আবেগগত ভাবে অনুভব করায় যে সেগুলি বাস্তবে সত্য। তাই নিরপেক্ষ ভাবে আমরা স্বীকার করি যে সেগুলি বাস্তবের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। কিন্তু আমরা যদি এই বিভ্রান্তিকর উপস্থিতিগুলিকে পরীক্ষা করি তাহলে আমরা সনাক্ত করতে পারব যে সেগুলি একটি মায়ার মতো; সেগুলির সাথে বাস্তবের কোন সামঞ্জস্য নেই। আসল বাস্তবতা সত্যের উপর ভিত্তি করে এবং সেটাকে যাচাই করা যেতে পারে; কাছাকাছি থেকে পরীক্ষা করলে মায়া মিথ্যা প্রমাণ হয়ে যায়। সমস্ত ভারতীয় বৌদ্ধ এবং অ-বৌদ্ধ উভয় তত্ত্বব্যবস্থা এই বিষয়ে একমত। এমনকি ছোট শিশুরা নিম্ন উদাহরণের ক্ষেত্রে সম্পর্ক স্থাপন করতে পারেঃ যেমন তাদের মধ্যে একটি কল্পনা জাগে যে তাদের বিছানার নিচে একটা দানব আছে কিন্তু পরে সেখানে গিয়ে তাকিয়ে দেখে সেখানে কোন দানব নেই।
একবার শিশুরা দুটি সত্যের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারলে তাদেরকে চারটি সত্যের সবচেয়ে সাধারণ ধারণা সম্পর্কে পরিচয় করানো যেতে পারে। তারা যদি বিশ্বাস করে যে তাদের কল্পনাগুলি বাস্তব তাহলে তারা ভয় পেয়ে যায় এবং ঘুমোতে অক্ষম হয়ে ওঠে। তারা পীড়িত হয়। তাদের দুঃখের কারণটা এই বোধগম্যতাটা নয় যে তারা যা কিছু বাস্তবরূপে কল্পনা করে সেটা আসলে বাস্তব নয়। তারা যখন তাকাবে এবং দেখতে পাবে যে তাদের বিছানার নীচে কোন দানব নেই, এই বোধগম্যতা জাগলে তাদের ভয় এবং অসুখীতা কেটে যাবে।
দুঃখের এই চারটি সত্য বোধগম্যতার ভিত্তিতে আমরা জানতে পারি যে অজ্ঞতাই হল এর কারণ এবং সত্যের বোধগম্যতা হল দুঃখ থেকে মুক্তি। এই বোধগম্যতার পরে শিশুদের চিন্তা-ভাবনা করার জন্য পরিচালনা করা যেতে পারে, “আর কখনো ভয় না পেলে অথবা দুঃখ ভোগ না করলে কী চমৎকারই না হবে! বিষয়গুলি স্পষ্টভাবে বুঝতে পারলে কী চমৎকারই না হবে! শিক্ষা এবং মনকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আমি সেই অবস্থায় পৌঁছতে পারি। সেটাই হল সেই দিক যেদিকে আমি যেতে চাই; সেই নিরাপদ দিকে গিয়ে আমি ভয় এবং দুঃখ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারি।”
এইভাবে দুটি সত্য থেকে শুরু করে চারটি সত্যকে জীবনে অনুসরণের নিরাপদের দিকে এগিয়ে যাওয়া শুধু শিশুদের ক্ষেত্রে নয় বরং সব বয়সী লোকজনরাও শিখতে পারেন যে আসলে তাদের ভয় ও অসুখী হওয়ার মূল উৎস হল তাদের মন এবং বিরক্তিকর আবেগ (ক্লেশ)। তারপর তারা ঐ সমস্যাগুলি কাটিয়ে ওঠার জন্য মানসিক আবেগপ্রবণ স্বাস্থ্যবিধির লাভ এবং মূল্যবোধকে উপলব্ধি করা এবং এটাকে প্রাপ্ত করার জন্য কাজ করার ইচ্ছা এবং উদ্দেশ্য বিকাশ করা হল সমস্ত প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয় ভিত্তি।
একবার ভ্রান্তিজনক উপস্থিতি এবং বাস্তবতার মধ্যে পার্থক্য বোধগম্যতার এই ভিত্তিটি সুরক্ষিত হয়ে গেলে পরবর্তী পদক্ষেপে আবেগপ্রবণ স্বাস্থ্যবিধির সরঞ্জামগুলি প্রবর্তন করা হয়। যেহেতু বৌদ্ধ এবং অ-বৌদ্ধ তত্ত্ব ব্যবস্থার মধ্যে প্রত্যেকেই এই সরঞ্জামগুলির বিভিন্ন বিষয়ে বিভিন্ন ধরণের মতবাদ প্রস্তুত করে, সুতরাং শুরুতে সরঞ্জামগুলির সম্পূর্ণ সেটের একটি সাধারণ ভূমিকা ব্যাখ্যা করতে হবে। উক্ত ভূমিকাটি যেন সাধারণভাবে ব্যাখ্যা করা হয়ে থাকে, সেটা যেন সমস্ত ব্যবস্থায় গ্রহণযোগ্য হবে এবং সেটা আমাদের প্রয়োজনেও। তারপরে আরও উন্নত শিক্ষার্থীদের জন্য বিশদভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। সবকিছু স্টু-এর মতো একসাথে মিশিয়ে ফেলাটা এই প্রাচীন ব্যবস্থাগুলির সাথে অন্যায় হবে।
মন এবং আবেগকে বোঝা এবং প্রশিক্ষণের জন্য সর্বপ্রথম আমাদের বুঝতে হবে যে মন এবং আবেগগুলি আসলে কী। সাংখ্য এবং বৈশেষিক-এর মতো কিছু বৌদ্ধেতর ব্যবস্থা মন এবং আবেগকে বস্তুগত সত্তারূপে চিহ্নিত করে। এই দৃষ্টিভঙ্গিটি পাশ্চাত্য বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিকে স্মরণ করিয়ে দেয় যা মন এবং আবেগকে মস্তিষ্কের শারীরিক প্রক্রিয়াকে হ্রাস করে। অ-বৌদ্ধ ন্যায় সিদ্ধান্তবাদী বৈশেষিক বস্তুবাদী মতকে মেনে চলে, তবে এর সাথে একটা পৃথক সত্তারূপে বোধগম্যতা অর্জন করার বৈধ উপায় যুক্ত করে। এর বিপরীতে বৌদ্ধ ব্যবস্থাগুলি মনকে বিশুদ্ধভাবে শারীরিক সত্তা বা শারীরিক প্রক্রিয়ায় পরিণত করার পরিবর্তে প্রভাস্বর ও সচেতনতার সংজ্ঞা উপস্থাপন করে। পরম পূজ্যজী যেমন ব্যাখ্যা করেছেন- প্রভাস্বরতা হল আয়নাতে ভেসে ওঠা প্রতিবিম্বের মতো কোন বস্তুর জ্ঞানগত দিককে নিষ্পন্ন করার ক্রিয়াকলাপ আর অন্যদিকে সচেতনতা হল কোন বস্তুর সাথে কোন প্রকারে জ্ঞানগত ভাবে যুক্ত থাকার যুগপত কার্যকলাপ। সুতরাং প্রভাস্বরতা এবং সচেতনতা একই মানসিক ঘটনা বর্ণনা করে।
সমস্ত বৌদ্ধ এবং অ-বৌদ্ধ ব্যবস্থা সেভাবে মন আবেগের সাথে জ্ঞানকে জন্ম দেয় তার উপস্থাপনাগুলি সম্পূর্ণভাবে আত্মার ভূমিকা তুলে ধরে। কিন্তু এই ব্যবস্থাগুলিতে আত্মা এবং মন ও আবেগের সাথে তার সম্পর্ক বিষয়ে বিপরীত দৃষ্টিভঙ্গি না তুলে এনে এই ভিন্ন-ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি যা সাধারণভাবে গ্রহণ করতে পারে সেটা হল আবেগপ্রবণ স্বাস্থ্যবিধি এবং আবেগসহ জ্ঞানগত বস্তুগুলির জন্য বিষয়গত অভিজ্ঞতাকে বোঝা। সাধারণ অনুশীলনের সাহায্যে মানুষ বুঝতে পারে যে এই সংজ্ঞাটি বলতে কী বোঝায়।
এরপর যেটা আসে সেটা হল এই সাধারণ ভিত্তির উপর মন এবং আবেগের একটা মানচিত্র তৈরী করা। সবচেয়ে সাধারণ মানচিত্রে চেতনার ভাগগুলি অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়োজন হয় অর্থাৎ সংবেদনশীল এবং মানসিক ভাগ। এর সাথে যেটা অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন সেটা হল মৌলিক চৈত্তগুলিতে (চেতসিক) আগ্রহ, মনোযোগ, সমাধি, সুখ বা দুঃখের অনুভূতির স্তর। মৈত্রী থেকে ক্রোধ পর্যন্ত আমাদের বিভিন্ন আবেগকেও অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন হয় এবং দেখতে হবে সেগুলি কীভাবে আমাদের কথা বলা এবং আচরণের পদ্ধতিগুলি প্রভাবিত করে। সমস্ত ভারতীয় ব্যবস্থা দ্বারা সাধারণ ভাবে বিবেচিত মৌলিক চৈত্ত এবং আবেগগুলির একটি তালিকা সংকলন করার জন্য আরও গবেষণা প্রয়োজন। এর কারণ হল তারা সকলেই কাম, ক্রোধ এবং অজ্ঞতাকে প্রাথমিক সমস্যা-সৃষ্টিকারী হিসাবে চিহ্নিত করে।
এরপরে কীভাবে অধারণামূলক এবং ধারণাগত জ্ঞান কাজ করে তার একটি উপস্থাপনা অনুসরণ করবে। এর মধ্যে প্রত্যেকের সাথে যুক্ত বিভিন্ন বিষয়ের আলোচনা অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এই উপস্থাপনাটি তখন বিষয়কে জানার বিভিন্ন বৈধ এবং অবৈধ উপায়ের পরিচয়ের সাথে প্রসারিত করা যেতে পারে, বিশেষ করে নগ্ন জ্ঞান এবং অনুমানকে। অনুমানের আলোচনাটি স্বাভাবিক ভাবেই তর্ক বিতর্কের উপস্থাপনা এবং বৈধ এবং অবৈধ যুক্তির উপায়ের দিকে পরিচালনা করে। অবশেষে এই সাধারণ অধ্যয়নের পরিপূরক হিসাবে সমাধি এবং অন্তর্দৃষ্টি বিকাশের জন্য প্রাথমিক ধ্যান পদ্ধতি চালু করা যেতে পারে।
সমস্ত প্রাচীন ভারতীয় ব্যবস্থাগুলির মধ্যে শেয়ার করে নেওয়া আবেগপ্রবণ স্বাস্থ্যবিধির সরঞ্জামগুলির এই সাধারণ সমীক্ষার সমাপ্তির পর শিক্ষার্থীরা তখন তাদের দক্ষতা, ক্ষমতা এবং আগ্রহের উপর নির্ভর করে একের পর এক প্রত্যেকটি ব্যবস্থার গভীর অধ্যয়ন করতে পারে অথবা শুধু একটি ব্যবস্থায় বিশেষজ্ঞ হতে পারে। তবে প্রশিক্ষণের সমস্ত স্তরে তাদেরকে প্রতিটি পদক্ষেপে অনুশীলন দেওয়া পারে। এর উদ্দেশ্য হল দৈনন্দিন জীবনে উদাহরণস্বরূপ তারা যা শিখছে তার এবং স্বীকৃতি অর্জনের জন্য প্রয়োগের জন্য। আমাদের স্টাডি বুদ্ধিজম ডট কম ওয়েবসাইট (studybuddhism.com), বরজিন আর্কাইভস্ দল ইতিমধ্যে এইরকম অনেক অনুশীলন বিকাশ করেছে।
এখানে বর্ণিত এই ধরণের প্রশিক্ষণ কর্মসূচী আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কিত প্রাচীন ভারতীয় মূল্যবোধকে পুনর্জীবিত করার জন্য পরম পূজ্যের প্রতিশ্রুতি পূরণে অনেক দূরে এগোতে পারে। যেমন, পরম পূজ্য প্রায়শই বলেন, “মানুষ হিসাবে আমরা বুদ্ধিমান এবং বিষয় সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করার ক্ষমতা রাখি। আমরা কীভাবে সুখ বিকাশ করতে এবং দুঃখ কমাতে চিন্তা-ভাবনা করি তার পরিবর্তনের জন্য আমরা আমাদের মনকে ব্যবহার করতে পারি।”
ধন্যবাদ!